spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদসাম্প্রতিকবাংলাদেশ যেন যুদ্ধে না জড়ায়

লিখেছেন : শান্তা মারিয়া

বাংলাদেশ যেন যুদ্ধে না জড়ায়

শান্তা মারিয়া

আবারও ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ।  দুটিই পরমাণু অস্ত্রে শক্তিধর দেশ। এদের মধ্যে যুদ্ধ মানেই হুমকিতে গোটা মানবজাতি। শত অভাব অনটন সত্ত্বেও দক্ষিণ এশিয়ায় এতদিন কিছুটা হলেও মোটাসুটি শান্তি বজায় ছিল। এখন দুটি বড় দেশের মধ্যে এমন যুদ্ধ পুরো দক্ষিণ এশিয়ার পরিবেশকে বিনষ্ট করার সূচনায় রয়েছে। পাকিস্তানে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ২৬ জন নিহত অন্যদিকে ভারতের বিমান ভূপাতিত করে জবাব পাকিস্তানের।

ভারতের হামলার নিন্দা জানিয়েছে চীন। হামলাকে ‘লজ্জাজনক’ বলেছে ট্রাম্প প্রশাসন। ঘটনাটিকে উদ্বেগজনক বলেছে জাতিসংঘ।

ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পহেলগাও এলাকার যে জঙ্গী হামলাকে কেন্দ্র করে জল এতদূর গড়িয়েছে, সেই হামলার দায়ী ব্যক্তিদের কিন্তু একজনকেও পাওয়া যায়নি। প্রশ্ন হলো কাশ্মীরের মতো এমন সেনা নিয়ন্ত্রিত জায়গায় জঙ্গীরা এলোই বা কিভাবে আর হাওয়ায় মিলিয়েই বা গেল কোন মন্ত্রবলে? পাকিস্তান প্রথম থেকেই এই জঙ্গী হামলার দায় অস্বীকার করেছে। এজন্য নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।

সন্দেহ জাগে যুদ্ধ শুরুর অযুহাত হিসেবেই ওই জঙ্গী হামলা ঘটানো হয়েছিল কিনা।

প্রকৃত ঘটনা যাই হোক যুদ্ধ কোনভাবেই কাঙ্খিত নয়। এর মধ্যে বাংলাদেশের কিছু ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা ‘জয় হিন্দ’ আর ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গরম করছে।

বাংলাদেশের উচিত হবে এই যুদ্ধে নিরপেক্ষ থাকা। কোনভাবেই যুদ্ধে জড়ানোর ঝুঁকি যেন বাংলাদেশ না নেয়। বরং সম্ভব হলে আন্তর্জাতিকভাবে বন্ধুমহলের সাহায্য নিয়ে এই যুদ্ধকে থামানোর চেষ্টা করা উচিত।

ফ্যাসিজম যেমন বিপদজনক তেমনি ফ্যানাটিজমও মারাত্মক। ফ্যাসিস্ট শাসক ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য হেন কোন অপরাধ নেই যেটা করে না। জুলাই বিপ্লবের পর বাংলাদেশ ফ্যাসিজম থেকে মুক্তি পেয়েছে। পতিত স্বৈরাচারের খুন, গুম, আয়নাঘর, মানবাধিকার লংঘন আর তার দলবলের দুর্নীতির বিবরণ দেখলে শিউরে উঠতে হয়। ফ্যাসিস্টমুক্ত হলেও আমরা কিন্তু ফ্যানাটিজমের আশংকার মধ্যে রয়েছি। ধর্মোন্মাদনা হলো খুব খারাপ ধরনের রোগ। এই উন্মাদনা একের থেকে অন্যের মধ্যে সংক্রামিত হয়।

ভারতে মোদি সরকার এই ফ্যানাটিজমকে পুঁজি করে এবং অ্যান্টি পাকিস্তান বা অ্যান্টি মুসলিম কার্ড খেলে দেশকে যুদ্ধের মুখে ফেলে দিয়েছে। ভারতের কতিপয় মিডিয়া এই ফ্যানাটিজমকে উসকানি দিচ্ছে। ভারতের মতো একটি বিশাল দেশে সচেতন মানুষ নেই এমন নয়। সেখানে নিশ্চয়ই অনেক যুদ্ধ বিরোধী মানুষ আছেন। তারা এর প্রতিবাদও করছেন। কিন্তু মুশকিল হলো এখন সেখানে ফ্যানাটিজম এবং দেশপ্রেম মিলে মিশে এমন গুবলেট হয়ে গেছে যে যুদ্ধের বিরুদ্ধে বলতে গেলেই তাকে ‘গাদ্দার’ অভিধায় অভিহিত করা হচ্ছে। তার জীবনই ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এই যুদ্ধ যে ফ্যানাটিজমকে পুঁজি করে এগুচ্ছে সেটার প্রমাণ রয়েছে যুদ্ধের পোস্টারে। অপারেশন সিন্দুর। কেন সিন্দুর? ভারতের কি সকলেই সিন্দুরধারী? সেখানে কি মুসলিম, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ও অপরাপর সম্প্রদায়ের মানুষ নেই? কেন ভারত পাকিস্তান যুদ্ধকে ‘হিন্দুত্ব’বাদের তকমা দেয়া হচ্ছে?

পাকিস্তানেও ‘ইসলাম গেল’, ‘মসজিদ গেল’ জিকির তোলা হচ্ছে বৈকি। সেখানেও ফ্যানাটিজমের চাষাবাদ মোটেই কম নয়।

সচেতন ভারতবাসীর এখন প্রশ্ন তোলা উচিত কেন সরকার পুরো দেশকে যুদ্ধের মুখে ফেললো?

জয় পরাজয় তো পরের বিষয়। দুই দেশেরই সাধারণ মানুষের মৃত্যু, দুঃখ, সংকটের দায়ভার কার?

আর বাংলাদেশের অর্বাচীন মর্কটগুলোকে বলতে চাই শোল বোয়ালের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পুঁটি মাছের নাচার দরকারটা কি? বাংলাদেশের মিডিয়াকেও বলি উসকানি বন্ধ করুন।

বাংলাদেশে সব ধরনের ফ্যানাটিজমকে এখনই সমূলে বিনষ্ট করার সময় এসেছে। প্রগতিশীল ও সচেতন নাগরিকদের সম্মিলিতভাবে শান্তির পক্ষে দাঁড়াতে হবে। সকল প্রকার সাম্প্রদায়িকতা পরিহার করতে হবে। মূর্খরঞ্জনদের পক্ষে বিপক্ষে বাংলাদেশীদের যাওয়ার দরকার নেই। আপাতত আমরা উসকানির জবাবে নীরব থাকি আর শান্তির পক্ষেই শুধু মুখ খুলি।

মনে রাখবেন, এটা ভারত পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচ নয়। এটা যুদ্ধ। যে যুদ্ধে নারী ও শিশুরা মারা যায়। যে যুদ্ধে পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ বহন করতে হয়। যে যুদ্ধে অগণন বেসামরিক মানুষের জীবন দুর্বিসহ হয়ে ওঠে। ঈশ্বর, আল্লাহ, ভগবান যে নামেই সৃষ্টিকর্তাকে ডাকি না কেন, তিনি যেন নিরপরাধ মানুষের জীবন রক্ষা করেন।

…………..

কবি ও সাংবাদিক। 

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

নয়ন আহমেদ on কবিতাগুচ্ছ
নয়ন আহমেদ on মা দিবসের কবিতা
ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম on শিপা, আমি তোমার বয়ফ্রেন্ড হতে পারিনি
কাজী জহিরুল ইসলাম on কাজী জহিরুল ইসলাম এর কবিতা