মীর সালমান শামিল
“হেফাজতে ইসলাম” নামটা কিন্তু দারুণ, এক উস্তাদ এই নামের তাৎপর্য বলেছিলেন, হেফাজতে ইসলাম নাম মানে আমরা ইসলামকে হেফাজত করছি না, এর অর্থ হল একমাত্র ইসলামই আমাদের হেফাজত করবে।
বাংলাদেশের ভেতরে যে ভারতীয় ট্রুপস ঢোকে নাই তার প্রধান কারন সম্ভবত দুইটা:
১। হেফাজতে ইসলাম।
২। বেগম খালেদা জিয়া।
৫ তারিখ বেগম খালেদা জিয়া ঢাকাবাসীকে আহ্বান জানিয়েছিলেন বাসা থেকে বের হয়ে এসে হেফাজতের কর্মীদের স্বাগত করতে। ঢাকার রাস্তায় রাস্তায় মানুষ পানি, শুকনো খাবার নিয়ে দাঁড়িয়েছিলো। সন্ধ্যার পরে ম্যাসাকারের প্রক্কালে বেগম জিয়া ঢাকাবাসীকে হেফাজতের কর্মীদের জন্য বাসা খুলে দিতে বলেন, এটা সফল হয় নাই।
ঢাকার মিডিলক্লাসের কাছে মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্রদের রক্ত যথেষ্ট আপিল করতে পারেনি। তার কাফফারা মিডিলক্লাসকে দিতে হয়েছে ১২ বছরের গোলামি এবং জুলাই গণহত্যার মাধ্যমে…
২.
কোন আন্দোলনের সফলতার মানদণ্ড হতে পারে দুইটা:
এক– তারা কি অর্জন করলো। অথবা,
দুই– তারা কি কি ড্যামেজ ঠেকালো।
শাপলা ছিল রি-একশনারি আন্দোলন। হিন্দুত্ববাদী শাহাবাগিদের আগ্রাসন ঠেকাতে শাপলার সূচনা।
৫ মে খুনী হাসিনার শাহাবাগি সরকার গণহত্যার মাধ্যমে শাপলা চত্ত্বর থেকে সমাবেশকারীদের বের করে দেয়৷ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ঢাকার নাগরিকদের আহ্বান জানিয়েছিলেন শাপলার সমাবেশকারীদের সাহায্য করতে। ঢাকার মানুষ সকাল থেকে রাস্তার পাশে পানি, কলা, পাউরুটি নিয়ে সাহায্য করেছেও। কিন্তু র্যাব লীগ, বিজেবি লীগ এবং পুলিশ লীগের অস্ত্রের সামনে আসলে সাধারণ মানুষের তেমন কিছু করার ক্ষমতা থাকে না।
এরপর হেফাজতের প্রায় সব নেতাকে সরকার আটক করে কার্যত হেফাজতকে নিস্ক্রিয় করে দেয়। এখনো হেফাজতের শত শত নেতা জেলে বন্দী। হেফাজতের কোন কার্যক্রম নেই। খোলা চোখে শাপলা এবং হেফাজতকে নিশ্চিত ভাবেই ব্যর্থ আন্দোলনই মনে হবে।
আসল ঘটনা এতটা সরল পাটিগণিত নয়। শাপলার কিছু অর্জন আছে—
এক– হেফাজত শাহবাগের বিশাল মহিরুহ মচ্ছবকে থামিয়ে দেয়। শাহাবাগি শব্দটাই এখন একটা গালি।
দুই– সকল ইসলামপন্থীদের একত্রিত করেছে।
তিন– আল্লামা আহমেদ শফীর নেতৃত্বে হেফাজত পাঠ্যবই থেকে হিন্দুত্ববাদী বায়ান সম্বলিত গল্প, কবিতা বাদ করার ব্যবস্থা করে।
চার– সকল শাহাবাগি প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তির গ্রহনযোগ্যতা জয় বাংলা করে দিয়েছে।।
পাঁচ– আওয়ামী লীগের জনসমর্থনকে ইতিহাসের তলানীতে পাঠিয়ে দিয়েছে। ৫ মের পর পর কয়েকটি সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচন হয়েছিলো তাতে আওয়ামী লীগের সবাই বিশাল ব্যবধানে হারে।
ছয়– শাপলা কওমি মাদ্রাসা অঙ্গনের একটা বিরাট অংশকে প্রথম বারের মত “রাজনৈতিক” জনগোষ্ঠী বানায়। জুলাই বিপ্লবে কওমি মাদ্রাসার অংশগ্রহণ শাপলার কনটিনিউয়েশন বলা যায়।
একটা রি-একশনারি আন্দোলন হিসেবে শাপলার সফলতা খারাপ না। হেফাজত আরো কি কি করতে পারতো সেই খতিয়ানে হিসাব করলে হয়তো অনেক কথা আসতে পারে৷ তবে আমার মনে হয় কোন এক আন্দোলনের রি-একশনে যে আন্দোলন হয় অর্জন দিয়ে তার বিচার করাটা সবচেয়ে ভাল উপায় না।
এর আগে লিখেছিলাম সরকারের পতন হলে সম্ভবত আওয়ামী লীগ আরেক দফা ৫ মের তেজ টের পাবে। সেটা পাওয়া শুরু করবেই সহসা।
৫ মে এখনো জাতীয় রাজনীতি থেকে মুছে যায়নি।
৩.
হেফাজতের উচিত কেউ কোন অনাকাঙ্ক্ষিত শব্দ ব্যবহার করে থাকলে দুঃখ প্রকাশ করা। ভুল সংশোধন করার মধ্যে গ্লানি নাই।
প্লাস শাহাবাগিদের আমলনামা ঘেটে বের করা এরা ধর্ম ব্যবসায়ী, যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার, পাকিস্তানের দালাল জাতীয় শব্দ কতবার ব্যবহার করেছে। এগুলো বের করে তাদেরকে বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।
নিজের ভুল স্বীকার প্লাস শাহাবাগি নাৎ-সিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা; এই দুইটা পদক্ষেপ বাংলাদেশের জনপরিসরের একটা ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে।
৪.
প্রথম আলো ২০১৩ সালের মে মাসের ৫ এবং ৬ তারিখে হেফাজতের সমাবেশ নিয়ে ৪৫ টির বেশি রিপোর্ট করে। রিপোর্টগুলোর শিরোনাম ছিল এমন:
— ধ্বংস, তান্ডব আর সবুজ উপড়ানোর চিত্র।
— ইসলামের হেফাজতের কথা বললেও হেফাজতের তান্ডব থেকে রক্ষা পায়নি পবিত্র কুরআনও।
— হেফাজতের ধ্বংসযজ্ঞে নিঃস্ব অনেক ব্যবসায়ী।
— হেফাজতের কর্মকাণ্ড ধ্বংসাত্মক, ঢাকায় ব্যাপক সহিংসতা।
— বক্তব্য উসকানিমূলক।
— হেফাজতের হামলায় পুলিশ বিজেপির তিনজন সদস্য নিহত।
— ৪০০ বছর বয়সী ঢাকায় এক কালো অধ্যায়।
— হেফাজতের ধ্বংসযজ্ঞ।
— তাণ্ডবে বাদ যায়নি রাস্তার গাছগুলোও।
— সংবাদপত্র কার্যালয়ে আগুন সাংবাদিকের উপর হামলা।
রাতের বেলা লাইট অফ করে দিয়ে, সরকার বিরোধী দুইটা টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করে, লাইভ এমিউনিশন দিয়ে ২০ লক্ষ গুলি করা হয়েছে নিরস্ত্র সিভিলিয়ানের উপরে। পরদিন সকালে ওই এলাকায় কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। কতজন মারা গেছে আমরা জানি না। আর প্রথম আলোর সিস্টেম্যাটিকালি কয়েক সপ্তাহ নিউজ এবং মন্তব্য প্রতিবেদন করে গেছে এমন ভাবে যেন হেফাজত নিরীহ পুলিশের উপর হামলা করেছে।
এই করে প্রথম আলো চোর হাসিনাকে গণহ-ত্যাকারী হাসিনা বানিয়েছে। যদি আমরা শাপলা ম্যাসাকারের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারতাম তাহলে ২০২৪ সালে দুই হাজার ছাত্রকে শহীদ এবং ৩০ হাজার ছাত্রকে আহত হতে হয় না। বাংলাদেশের ট্রু গণশত্রু হল প্রথম আলো।
ফাহাম প্রথম আলোর বিরুদ্ধে এত এক্টিভিজম করেছেন কিন্তু আজ সেই প্রথম আলোর সাথে ফাহামের বিএনপির ঘেটু। আর ২০০০ শহীদের রক্তের উপর দিয়ে মন্ত্রী হয়ে আসিফেরা প্রথম আলো থেকে বই বের করছে।
তাই আমাদের শংকিত হবার যথেষ্ট কারন আছে…