………..
ক্ষমতা
………..
সে ছিল নিতান্ত ক্ষুদ্র, এবং এসেছিল একা, রাতের প্রগাঢ় অন্ধকারে;
নতুন চরের একদলা উষ্ণ কর্দমের ছোঁয়া।
অসীম দাপুটে এই দেহ,
চিন্তার উদ্ধত পেশীপুঞ্জ,
কুপোকাৎ নরোম কাদার উপুর্যপরি আঘাতে।
সে-আমার ঋজু দেহ, প্রায় পুরোটাই, গিলে নিলো!
আজও কৃষ্ণপক্ষ, খোলা অন্ধকার হাঁটে;
প্রতীক্ষার ডাল ভারী হয়,
ভেঙে পড়ে জন্মের গুহায় উঁকি দেয়া
ভোরের নতুন এক রেখার ওপর;
না যদি সে বোঝে তার নিজের ক্ষমতা,
তবে সে বদলে যাক, অভিশাপ দিচ্ছি।
হলিসউড, নিউইয়র্ক। ১১ এপ্রিল ২০২৫
…………..
মিছিল
…………..
পতঙ্গ, বিহঙ্গ নয়, উড়ছে মানুষ।
অপরিণত মৃত্যুর বীজ থেকে গজিয়েছে আগুনের ডানা।
খুলে গেছে পৃথিবীর সকল সীমান্ত,
সুবিস্তৃত মানবতা
নির্মাণ করেছে সার্বভৌমত্বের নতুন সীমানা।
পৃথিবীর সব রাস্তার এখন একটিই লক্ষ্য।
নানান বর্ণচ্ছটায় উদ্ভাসিত জনস্রোত অপ্রতিরোধ্য, উড়ন্ত
মানুষের দেশে ছুটে চলেছে কাফনে আবৃত মিছিল।
এ-মিছিল দীর্ঘ হতে হতে ছুঁয়ে ফেলবে গাজার
অন্ধকারে অপসৃয়মান
আল-আকসার কম্পন তরঙ্গ,
পৃথিবীর প্রথম আজান।
হলিসউড, নিউইয়র্ক। ১২ এপ্রিল ২০২৫
……………
দস্যু বাতাসেরা
……………
ভেঙে পড়া গ্রীষ্মের বিশাল
নাভীর ওপর একা দাঁড়িয়ে সবুজ,
তিরতির করে কাঁপে খুব হলুদ হবার ভয়ে।
দস্যু বাতাসেরা দেখো কী অবলীলায় লুটে নেয়
সঞ্চিত সকল ক্লোরোফিল।
বিকেলের খোলা বারান্দায় নিস্তরঙ্গ জলাশয়,
একদল অতিশুভ্র হাঁসের ডানার নিচে নীল।
হলিসউড, নিউইয়র্ক। ১৩ এপ্রিল ২০২৫
…………..
আমার দুঃখেরা
…………..
আকাশের বাগানে উজ্জ্বল এক দুঃখ ফুটে আছে।
তখনও পুরোটা অন্ধকার
ছড়িয়ে পড়েনি সবখানে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম শূন্যে দৃষ্টি রেখে,
দু’চোখে তমিস্রা ঘন হয়ে নেমে এলো;
এবং তখন অতি দ্রুত দুঃখদের পরিবার-পরিজন
বন্ধ দরোজার তালা খুলে হুড়মুড় বেরিয়ে আসতে শুরু করে দিল।
আমি কী এখন বুকের গভীর অন্ধকার
দুহাতে খনন করে তুলে আনবো ওদের নাম, ধাম,
পরিচয়? এইসব উজ্জ্বল দুঃখদের?
সবচেয়ে বড়ো যিনি, পরিবারের প্রধান, আমার কষ্টলুব্ধক;
হাসপাতালের শুভ্র বিছানায় শুয়ে থেকে থেকে মিইয়ে গেল
ভোরের আলোর নিচে;
একটির নাম ধ্রুবকষ্ট,
সড়ক দুর্ঘটনার নিচে কয়েকটি চিৎকার মাত্র।
কৃত্তিকাদুঃখের কথাও বলি,
মানুষ কখনো দুঃখ-কষ্টের চুক্তিপত্রে স্বেচ্ছায় স্বাক্ষরও করে,
খুব স্থায়ী একটি দুঃখকে একান্ত আপন করে নেয়।
জন্মের আগেই ঝরে গেল যে গভীর ক্ষত,
সে রইল স্বাতী,
ওই তো, কী তীব্র জ্বলে আছে
মেঘেদের আসা-যাওয়া সদর্পে উপেক্ষা করে।
বিশাখাকে দেখো, স্কুলের উঠোনে ওর সঙ্গে…
সেবারই প্রথম,
কিছু হয়েছিল বুঝি?
বুঝে উঠবার আগেই চম্পট।
শুনে রাখো রোহিণীর কথাটিও,
ওর চুলে মেঘনা নদীর উত্তাল তরঙ্গ ছিল,
ঢেউ ওকে টেনে নিল নাভীর গভীরে;
এদেশের মেয়েরা রোহিনী হয়ে যায় কৈশোরোত্তীর্ণ কালেই…
চিত্রা, অনুরাধা, থাক…
রাত্রি দীর্ঘ এবং ঘন হচ্ছে,
কষ্টাম্বরে ফুটে উঠছে অসংখ্য উজ্জ্বল দুঃখ।
হলিসউড, নিউইয়র্ক। ২৪ এপ্রিল ২০২৫
………………
ভেঙে পড়া এক দুপুরে
………………
ভেঙে পড়া দুপুরের টুকরোগুলো যখন মার্বেলের মতো গড়াচ্ছিল বুলনোজ স্টোনের ওপর,
তখন ওদের ভিজিয়ে দিচ্ছিল চারজন বৃষ্টি।
নুয়ে পড়া যৌবনের বারান্দায় আমি;
যে টুকরোগুলো অনিচ্ছাকৃত লাফিয়ে ওঠে,
কাচ ঠেলে আসুক না ওরা,
উষ্ণ করে তুলুক পড়ন্ত শীত।
বৃষ্টি-বালকদের দুরন্ত স্প্রিঙ্কলার ঠেলে রোদের বিস্রস্ত
খণ্ডগুলো সারা বিকেল নিস্তেজ
পড়ে রইল
ধীরপ্রবণ বসন্ত-বিছানায়, ঋতুচক্রের ধুলোয়।
এককাপ ধুমায়িত কফির গরম পেয়ালা দু’হাতে চেপে বসে আছি
নিরাপত্তার কুশনে;
আবিসিনিয়া হাসছে খুব,
ছলকে ছলকে ওঠে আকেকি নদীর বিস্মৃত বিকেল।
চারজন স্প্রিঙ্কলার বালকের সঙ্গে খুনসুটি করে লুসি,
হাসে,
নেচে নেচে এস্কিস্তার প্রাচীন মুদ্রার তাল বুনে দেয়
সভ্যতার প্রবীন বাগানে।
হলিসউড, নিউইয়র্ক। ২৮ এপ্রিল ২০২৫।
অনেক অনেক ভালো কবিতা
অনেক ধন্যবাদ প্রিয় কবি
অনেক গুরুত্বপূর্ণ কবিতা।