spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদগদ্যরবিঠাকুর ও আল মাহমুদ : কবি, তব মনোভূমি...

লিখেছেন : ফারদিন ফেরদৌস

রবিঠাকুর ও আল মাহমুদ : কবি, তব মনোভূমি…

ফারদিন ফেরদৌস

এই বাংলায় আল মাহমুদের কবিতা পড়েনি কিংবা তাঁর জীবনদৃষ্টিতে বিমুগ্ধ হয়নি এমন মানুষ খুব বেশি‌ নেই। আমারও প্রিয় কবি তিনি। এইসময় একাত্তরে ডিসাইডেড জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা’ বাতিলের বাতিক দেখা যাচ্ছে চারিধারে। এই ইস্যুতে রবীন্দ্রবিরোধিতার আরোপিত বাজারেও বিদ্বেষ আর ঘৃণার কাটতি এখন বেশ। যে মানুষটির কাছে একমাত্র আল মাহমুদ ছাড়া অন্য কারো কবিতা খুব পানসে লাগে, রবিঠাকুরকে পরদেশি জ্ঞানে আন্দামান-নিকোবরে নির্বাসনে রাখে। সেই মানুষটির প্রিয় কবি আল মাহমুদের কাছে রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যকৃতি ও জীবনবোধ কেমন ছিল?

কবি নিজেই স্বীকার করেছেন, ‘রবীন্দ্রনাথ আমার কাছে তেমনি জীবনধারণের এক অর্থবহ বিশ্রাম বা আশ্রয়ের মতো। যখন সমকালীন জীবনের উচ্চরোল আমার জীবন ও শ্রবণ ক্ষমতাকে বধির করে ফেলে আমি তখনই রবীন্দ্রনাথের শরণাপন্ন হই। শুধু রবীন্দ্রনাথের গান নয়, রবীন্দ্র সাহিত্যের অম্লান ভান্ডারই আমার অধিক প্রিয় ও শ্রেয়তর পাঠ্য বলে মনে হয়। আমি প্রকৃতপক্ষে রবীন্দ্রকাব্যের মধ্যে আমার তৃপ্তিকর বিষয়গুলো বেশি আবিস্কার করে আনন্দ পাই।’

আল মাহমুদ জানতেন বাংলাসাহিত্যের কথা আসলে প্রগাঢ় পাঠ ও অনুসন্ধিৎসায় রবিঠাকুরের সমালোচনা করা যায়; কিন্তু বাতিল করা যায় না কিছুতেই। তাইতো কবি সপ্রাণ আবেগ ও প্রজ্ঞা মিশ্রিত ভালোবাসায় লিখে ফেলতে পেরেছিলেন স্বাজাত্যবোধ ও দেশপ্রেমে উদ্দীপ্ত তাঁর প্রিয় কবিতা ‘রবীন্দ্রনাথ’!

এ কেমন অন্ধকার বঙ্গদেশ উত্থান রহিত
নৈশব্দের মন্ত্রে যেন ডালে আর পাখিও বসে না।
নদীগুলো দুঃখময়, নির্পতগ মাটিতে জন্মায়
কেবল ব্যাঙের ছাতা, অন্যকোন শ্যামলতা নেই।
বুঝি না, রবীন্দ্রনাথ কী ভেবে যে বাংলাদেশে ফের
বৃক্ষ হয়ে জন্মাবার অসম্ভব বাসনা রাখতেন।
গাছ নেই নদী নেই অপুষ্পক সময় বইছে
পুনর্জন্ম নেই আর, জন্মের বিরুদ্ধে সবাই
শুনুন, রবীন্দ্রনাথ আপনার সমস্ত কবিতা
আমি যদি পুঁতে রেখে দিনরাত পানি ঢালতে থাকি
নিশ্চিত বিশ্বাস এই, একটিও উদ্ভিদ হবেনা
আপনার বাংলাদেশ এ রকম নিষ্ফলা, ঠাকুর!
অবিশ্বস্ত হাওয়া আছে, নেই কোন শব্দের দ্যোতনা,
দু’একটা পাখি শুধু অশত্থের ডালে বসে আজও
সঙ্গীতের ধ্বনি নিয়ে ভয়ে ভয়ে বাক্যালাপ করে;
বৃষ্টিহীন বোশেখের নিঃশব্দ পঁচিশ তারিখে।

১৯৬৬ সালে প্রকাশিত ‘কালের কলস’ কাব্যগ্রন্থের এই কবিতাটিতে কোন সময়ের বাংলাদেশের কথা বলতে চেয়েছেন কবি আল মাহমুদ? তাঁর সময়কাল বাংলার স্বাধিকার আন্দোলনের অঙ্কুরোদগমের চিন্তার ক্ষণ নাকি ২০২৪ এর ঠিক এই সময়ের বাংলাদেশ। ভাবুন। ভাবতে থাকুন।

আল মাহমুদের পূর্বসূরী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর যোগ্যতম উত্তসূরীর জন্য বলে গিয়েছেন, ‘সেই সত্য যা রচিবে তুমি, ঘটে যা তা সব সত্য নহে। কবি, তব মনোভূমি, রামের জন্মস্থান অযোধ্যার চেয়ে সত্য জেনো।’

১৯৭৩ সালে প্রকাশিত আল মাহমুদের ‘সোনালি কাবিন’ কাব্যগ্রন্থের সনেট দশের সেই সত্য আবার নামুক এই বাংলায়।

আমাদের ধর্ম হোক ফসলের সুষম বণ্টন,
পরম স্বস্তির মন্ত্রে গেয়ে ওঠো শ্রেণীর উচ্ছেদ,
এমন প্রেমের বাক্য সহাসিনী করো উচ্চারণ
যেন না ঢুকতে পারে লোকধর্মে আর ভেদাভেদ।

তথ্যসূত্র:
আমার সামনে রবীন্দ্রনাথ-আল মাহমুদ
সমকালে রবীন্দ্রকাব্যের উপযোগিতা-আল মাহমুদ
শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ-আল মাহমুদ
ভাষা ও ছন্দ -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
সোনালী কাবিন -আল মাহমুদ

…………..
লেখক : সাংবাদিক
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

নয়ন আহমেদ on কবিতাগুচ্ছ
নয়ন আহমেদ on মা দিবসের কবিতা
ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম on শিপা, আমি তোমার বয়ফ্রেন্ড হতে পারিনি
কাজী জহিরুল ইসলাম on কাজী জহিরুল ইসলাম এর কবিতা