spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদসাম্প্রতিকআপ বাংলাদেশ এবং জুলাই ঐক্যের পথচলা

লিখেছেন : রেজা তানভীর

আপ বাংলাদেশ এবং জুলাই ঐক্যের পথচলা

রেজা তানভীর

মার্চের মাঝামাঝিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা ও জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক আলী আহসান জোনায়েদ ঘোষণা দেন, তারা একটা রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম করতে চাচ্ছেন।

জোনায়েদ এর আগে জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন। সেখানে বিভাজন দেখা দেয়ায় পরবর্তীতে নবগঠিত রাজনৈতিক দল এনসিপিতে তাঁকে আর দেখা যায় নাই।

মার্চের মাঝামাঝিতে জোনায়েদ গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন প্ল্যাটফর্মটি ‘প্রেশার গ্রুপ’ হিসেবে কাজ করবেন।

৯ ই মে ইউনাইটেউ পিপল বাংলাদেশ সংক্ষেপে আপ বাংলাদেশ সংগঠনটি আত্মপ্রকাশ করে। এই সংগঠনটির উদ্যোক্তারা সংগঠনটিকে রাজনৈতিক দল বলতে চায় না। তারা এটিকে রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম বলতে চায়। 

বাংলাদেশে রাজনৈতিক দল না হয়ে  ‘রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম’ এই শব্দ ব্যবহার করতে আগে দেখা যায়নি। কেমন হতে পারে এই রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মের কার্যক্রম? তারা কী ধরনের ভূমিকা রাখতে পারেন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে? দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম ‘আপ বাংলাদেশ’ কেমন রাজনৈতিক ও সামাজিক ভূমিকা পালন করতে পারে তা দেখার জন্য মুখিয়ে আছে সুধীজনরা।

আপ বাংলাদেশের আহবায়ক আলী আহসান জোনায়েদ এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন,

“জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন করাই হবে এই প্লাটফর্মের প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা। আর দীর্ঘমেয়াদে আমরা বাংলাদেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন করে যোগ্য ও নৈতিক নেতৃত্বের বিকাশ, সুবিচার ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করতে চাই। ধর্মীয় বিশ্বাস ও মূল্যবোধের আলোকে সামাজিক চুক্তির পুনর্বহাল করে সাম্প্রদায়িক বন্ধন ও পারষ্পরিক শ্রদ্ধাপূর্ণ সমাজ গড়ায় কাজ করতে চাই। ফ্যাসিবাদ, আধিপত্যবাদ, ধর্মবিদ্বেষ ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে এই প্লাটফর্ম কাজ করবে ইনশাআল্লাহ। আপনাদের সকলের পরামর্শ, দোয়া ও সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই।”

ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং সাম্প্রদায়িক বন্ধন ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাপূর্ণ সমাজ গড়ার লক্ষ্যে  আপ বাংলাদেশ যে পথচলা শুরু করেছে তাতে আগামীর বাংলাদেশকে তারা নতুন কিছু দিতে পারবে বলে মনে করি। তারুণ্য নির্ভর দলটিতে আছে মেধাবী, উদ্যমি ও দেশপ্রেমিক তরুণ। যাদের চেতনায় আছে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব।

এর আগে ৭ ই মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে ৩৫ টি সংগঠন নিয়ে ‘জুলাই ঐক্য’ নামে জুলাইকে কেন্দ্র করে প্রতিষ্ঠিত হওয়া দলগুলো নিয়ে একটা জোট গঠিত হয়। এই জোটের বেশিরভাগ সংগঠনই ৫ ই আগস্ট পরবর্তী সময়ে প্রতিষ্ঠিত হয়। জুলাইকে কেন্দ্র করে যে সংগঠনগুলো এক হয়েছে, তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন। সেদিনের প্রোগ্রাম থেকে জোটের মূল উদ্দেশ্য জানা যায়, 

“জুলাই বিপ্লবে অংশগ্রহণকারীদের সাংবিধানিক নিরাপত্তা নিশ্চিত, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সব রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ এবং চব্বিশের গণহত্যা, শাপলা ট্রাজেডি, পিলখানা ট্রাজেডি, গুম-খুন, দুর্নীতিসহ বিগত সাড়ে ১৫ বছরে যেসব অপকর্ম সংগঠিত হয়েছে, তার সঙ্গে জড়িত সবার বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে প্রয়োজনীয় কর্মসূচি জারি রাখা।”

জোটের প্রধান উদ্দেশ্য জুলাই বিপ্লবে যারা অংশগ্রহণ করেছে তাদের অবশ্যই সাংবিধানিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এই দাবিটি খুবই গ্রহণযোগ্য একটি দাবি। কারণ, আমরা দেখেছি, যারা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করেছে তাদের সবাইকে পরাজিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। হাসনাত আবদুল্লাহকে কয়েকদিন আগে হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করা হয়। জুলাইতে যে লাখ লাখ তরুণ তরুণী রাস্তায় নেমেছিল তাদের অবশ্যই নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরী।

আওয়ামী লীগ বিগত পনের বছরে বেশ কয়েকটি গণহত্যা চালিয়েছে। তাদের গণহত্যার বিচার করা না গেলে যারা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন তাদের স্বজনরা ন্যায় বিচার পাবেন না। দল হিসেবে আওয়ামী লীগ যে অপকর্ম করেছে তাদের সে অপকর্ম মানুষের মনে সজাগ রাখার জন্য এবং আওয়ামী লীগ যেন আর কখনো ফিরে আসতে না পারে সেজন্য জুলাই ঐক্যের সাথে সংশ্লিষ্ট দলগুলো সচেতনভাবে ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করি।

জুলাইয়ের স্মৃতিকে আরো তাজা রাখার জন্য পাড়া মহল্লায়, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রজেক্টরের মাধ্যমে ডকুমেন্টারি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা উচিত। জুলাইয়ের সবচেয়ে বড় বেনিফেশিয়ারি দল হচ্ছে, বিএনপি এবং জামাত। আওয়ামী লীগ পলায়নের পর তারা তাদের স্বাভাবিক রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছেন। বড় দুটো দলের ফান্ড আছে। তারা চাইলে আওয়ামী লীগের পনের বছরের দুু:শাসন এবং জুলাই গণহত্যা নিয়ে ডকুমেন্টারি ও নানা কর্মসূচী পালন করতে  পারে। জামায়াত জুলাইতে শহীদ হওয়াদের নিয়ে পুস্তক বের করেছে এবং তারা বেশ কয়েকটি প্রোগ্রাম করেছে। জামায়াত দল হিসেবে সংগঠিত হওয়ার কারণে তারা কাজটা করতে পেরেছে৷ কিন্তু বিএনপি এত বড় দল হওয়ার পরও তেমন কিছু করতে পারছে না। তাদের বড় বড় নেতাদের কথায় মনে হবে, তারা জুলাইকে সত্যিকারভাবে ধারণ করতে পারছে না।

বিএনপি জুলাইকে সঠিক ভাবে ধারণ করতে না পারলেও আপ বাংলাদেশ, ইনকিলাব মঞ্চ এন্টি ফ্যাসিস্ট কোয়ালিয়েশন, জুলাই রেভুলুশনারি জার্নালিস্ট এলায়েন্স, জুলাই রেভুলুশনারি এলায়েন্স, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট এলায়েন্স অব বাংলাদেশ, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-পুনাব, স্টুডেন্ট এলায়েন্স ফর ডেমোক্রেসি, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ, একতার বাংলাদেশ, রক্তিম জুলাই, সোচ্চার, নিরাপদ বাংলাদেশ চাই, ফ্যাসিবাদ মুক্ত গণমাধ্যম চাই, এইচআরএসএস, জুলাই বিগ্রেড, স্টুডেন্ট রাইট ওয়াচ, পিপলস অ্যাকটিভিস্ট কোয়ালিশন, আজাদ ফিলিস্তিন এই সংগঠনগুলো জুলাইকে ধারণ করার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে।

ছোট ছোট সংগঠনগুলোর ফান্ডিং কম হওয়া সত্ত্বেও তাদের আবেগ ও সততা দিয়ে তারা বিভিন্ন কর্মসূচী চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের প্রত্যাশা আগামীর বাংলাদেশে আর কখনো যেন ফ্যাসিস্ট শক্তির আগমন না হয়। আগামীর বাংলাদেশে যেন আর কেউ কখনো গণহত্যা সংগঠিত করার পরিকল্পনা করতে না পারে।

আরও পড়তে পারেন

1 COMMENT

  1. আপ বাংলাদেশ কতটুকু কী অর্জন করতে পারবে বলা মুশকিল এত দল ও সংগঠন এর ভীড়ে সতন্ত্র ধারা সৃষ্টি করতে না পারলে কিছুই হবে বলে মনে হয় না। তাছাড়া মূল রাজনৈতিক দলের তৎপরতা দেখে হতাশা ছাড়া তো আর ভালো কোন কিছুই আশা করতে পারছি না!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

নয়ন আহমেদ on কবিতাগুচ্ছ
নয়ন আহমেদ on মা দিবসের কবিতা
ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম on শিপা, আমি তোমার বয়ফ্রেন্ড হতে পারিনি
কাজী জহিরুল ইসলাম on কাজী জহিরুল ইসলাম এর কবিতা