তাজ ইসলাম
জামায়াত বিলুপ্তই কী সমাধান?
বলা হয় জামায়াত তার নাম বিলুপ্ত ঘোষণা করে দিতে। তারপর নতুন নামে রাজনীতি করতে। প্রশ্ন হল এতেই কী সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে? আর কেনই বা জামায়াতের নাম বিলুপ্তির দাবি ওঠে? এর পিছনের কারণও অজানা নয়।
১৯৭১ এ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এদেশ স্বাধীন হয়। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বের দাবিদার দল আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনীতি ছিল নিয়মতান্ত্রিক। তিনি রাজনীতি করেছেন ক্ষমতায় যাবার। নির্বাচন করেছেন,নির্বাচিত হয়েছেন। পাকিস্তানের শাসকবর্গের পশ্চিমা শক্তি নির্বাচিত প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে শটতা করে। শেখ মুজিব নির্বাচিত প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের আন্দোলন অব্যহত রাখেন। তিনি প্রকাশ্য স্বাধীনতার ঘোষণা কখনো দেননি।
এ নিয়ে ইতিহাসের অনেক বাকবিতন্ডা আছে। ২৫ শে মার্চে নিরস্ত্র বাঙালীর উপর পাকিস্তানি সেনা আক্রমণ পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নেয়।
পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের মাঝখানে হাজার মাইলের ব্যবধান থাকলেও এটি ছিল একটি দেশ। ১৯৪৭ সালে ধর্মীয় জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতেই জন্ম নেয় পাকিস্তানের। হিন্দুদের দেশ ভারত।মুসলমান জাতির দেশ পাকিস্তান। পাকিস্তানের পক্ষে শেখ মুজিব নিজেও একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ১৯৭১ এ ২৫ শে মার্চের আগ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলোর রাজনীতি ছিল অধিকার আদায়ের রাজনীতি। ২৬ শে মার্চ যখন মেজর জিয়ার কণ্ঠে স্বাধীনতার ঘোষণা আসল, শুরু হল স্বাধীনতা যুদ্ধ। যখন একটি দেশ থেকে সেদেশের একটি অংশ স্বাধীনতার ডাক দেয় তখন স্বাধীনতাী ডাক দেওয়া জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে দুটো ভাগ হয়। একটি অংশ স্বাধীনতা চায়। অপর অংশ অখণ্ড দেশে থেকে সমস্ত দাবি দাওয়া আদায় করার রাজনীতি করে। এটি একটি জেলার দাবি দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করলেও হয়। কিছু লোক আগের জেলাতে থাকার পক্ষে থাকে। অধিকাংশ থাকে নতুন জেলা আদায় করার পক্ষে।
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে জামায়াত রাজনৈতিক সীদ্ধান্ত নেয় অখন্ড পাকিস্তানে থাকার। তারা চায় বৃহৎ পাকিস্তানের পক্ষে থেকে আদায় করবে নিজেদের দাবি দাওয়া। এখানে অনেক পর্যালোচনার বিষয় আছে। একটি দেশ ভেঙে দুর্বল ও ক্ষুদ্র দেশ হোক, তা হতে তারা চায়নি। বৃহৎ ভারতের পুতুল হবার আশঙ্কা থাকে তাদের মনে। এটি ছিল জামায়াতের রাজনীতি ও রাজনৈতিক দর্শন । তখন শুধু জামায়াত না ইসলামপন্থী অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, অধিকাংশ আলেম ওলামা এক পাকিস্তানের পক্ষেই থেকে যায়।
স্বাধীনতার যৌক্তিক দাবির পরও কোন দেশই চায় না তার দেশ ভেঙে যাক। জনতার বহু অংশও চায় তার দেশ অখণ্ড থাকুক। পৃথিবীর বহু দেশে এমন অসংখ্য নজির আছে। জামায়াত এক পাকিস্তানের পক্ষে ছিল। ভুল কি ঠিক তা নির্ধারিত হয় ইতিহাসের আলোকে।পরবর্তী জয় পরাজয়ে।
দেশ স্বাধীন হয়ে না গেলে মুক্তিযোদ্ধারা হতেন দেশদ্রোহী। স্বাধীন হয়ে যাওয়ায় স্বাধীনতার বিপক্ষে যারা ছিলেন তারা স্বাভাবিকভাবেই হয়ে গেলেন নতুন দেশের স্বাধীনতার বিরোধী।
স্বাধীনতার বিরোধী হওয়া ছিল রাজনীতি। এই অপরাধ ও গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ সম্ভবত এক পাল্লার বিষয় না।
যুদ্ধে জড়িত থাকলে,অপরাধ করলে সেটা হল অন্য অপরাধ।
দেশ স্বাধীন হয়ে গেলে বিরোধীতা করা রাজনৈতিক দলের জন্য সাবেক নামে নতুন দেশে রাজনীতি করা দুরূহ হয়। ক্ষমতাসীনরা তাদের সামনে বারবার এই কাঠিটি নিয়ে গেইম খেলে। এর থেকে মুক্তি পেতে দল বিলুপ্ত করা হল রাজনীতির মাঠে রাজনীতির খেলায় এগিয়ে থাকার প্রতিযোগীতায় নিজেদের এগিয়ে রাখা। জামায়াত তা করেনি। হয়তো করবে না। ইতোমধ্যে এই দাবি জামায়াতের মাঝে তার নেতাদের কেউ কেউ সময়ে সময়ে করে ব্যর্থ হয়েছে।
জামায়াত তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ মোকাবেলা করেই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছে।
ভবিষ্যতে তারা দল বিলুপ্ত করবে কি না,বা যেসব অভিযোগ আছে তা মোকাবেলা করেই রাজনীতি করবে কি না সে আলোচনায় আমরা যাচ্ছি না।
স্বাধীনতার ৫৪ বছর অতিক্রম করার পর রাজনীতিতে তাদের অবস্থান কি হতে পারে, জনতার কাছাকাছি কতটুকু যেতে পারছে,কতটুকু দূরত্ব আছে এসব বিষয় নিয়ে অবশ্যই তারা ভাবছে।
তবে বাস্তবতা হল বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ পালিয়ে যাওয়ার পর আলোচনা, সমালোচনা,প্রশংসা নিন্দা মিলিয়ে জামায়াত রাজনৈতিক দল হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে আছে।
এবং সব সময়ের তুলনায় তারা ভালো অবস্থানে আছে।
সব মিলিয়ে বড় দল,সংগঠিত দল,রাজনৈতিক প্রজ্ঞার দল হিসেবে এ মূহুর্তে জামায়াতকে গুরুত্বপূর্ণ দলই ভাবতে হবে।
আওয়ামীলীগ পালিয়ে যাওয়ার পর রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা উল্লেখ করতে পারি বিএনপি,জামায়াত।
ইসলামী শাসনতন্ত্র দল হিসেবে আলোচিত। সারাদেশেই কর্মী সমর্থক আছে। তবে রাজনীতিতে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা তৈরী হয়নি। এনসিপি এখনও রাজনীতিতে শিশু দল। তারা জুলাই বিপ্লবোত্তর দল।ক্ষমতার কাছাকাছি অর্থাৎ অনেকের মতে ক্ষমতার মদদপুষ্ট তাদের অবস্থান। মাঠে এখনও অগোছালো, অপরিণত। তবে আশা করা যায় দূর ভবিষ্যতে তারা রাজনীতির একটি শক্তিশালী পক্ষ হয়ে ওঠবে। এই পক্ষ এনসিপি হতে পারে। এনসিপির মতো অন্য কোন নাম হতে পারে। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশে বিএনপি জামায়াতের বাইরে আরেকটি রাজনৈতিক শক্তির সম্ভাবনার সূর্য উঁকি দিয়েছে জুলাই বিপ্লবের রেশ ধরে। এরা ইতোমধ্যে নানা নামে, নানা ফরম্যাটে কাজ করছে।এনসিপি,বৈছাআ,আপ বাংলাদেশ এই সম্ভব্য শক্তিরই চক্র।
এবি পার্টিও ক্রমশঃ এগিয়ে যাচ্ছে।
হেফাজত ইসলাম বিষয় তবে রাজনৈতিক সীদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে তারা এখনও পরিপক্বতার নজির রাখতে পারেনি।
বাম দলগুলো বাংলাদেশে বরাবরের মতো ভোটের মাঠে জিরো থিওরিতেই পড়ে আছে। ভোট নাই,জনসমর্থন শূণ্য। কোথাও এক নেতার দল।মিছিলে সেই পরিচিত গোটা কয়েক লোক। একটা অফিস,একটা কমিটি। কি কেন্দ্র,কি জেলা! কমিটির আট,দশ,বিশজন ছাড়া আর কোন অস্তিত্ব নাই। তবে বুদ্ধিবৃত্তিক অবস্থান প্রশংসনীয়। শিল্প,সাহিত্য,সংস্কৃতিতে তারা প্রায়ই পরিচালকের ভূমিকায়।
আওয়ামী লীগ বামদের পৃষ্ঠপোষক। জামায়াত শিল্প সাহিত্যে সংকীর্ণ মানসিকতার। মূলধারার গুণীদের কদর বা চিহ্নিত করণে তারা অনেকটাই উদাসীন। তারা প্রচুর ব্যায় করে এই খাতে।তবে ভুল পাত্রে।সাহিত্যের অপাত্রেই ব্যায়ের পরিমাণ বেশি তাদের।
বিএনপি কালচারাল দৈন্যতায় আছে। ধান ভানতে ঢেকির বিবরণে চলে গেলাম।
চলে আসি জামায়াত ও তাদের নাম বিলুপ্তির প্রসঙ্গে। সংস্কৃতি বা কোন দল কোন অপস্থানে আছে আলোচনার বিষয় এইখানে তা না।
আমাদের আগ্রহ অন্য বিষয়ে।
স্বাধীনতার পরপরই দল বিলুপ্ত ঘোষণা করলেই কি রাজনীতি তাদের জন্য সহজ হয়ে যেত? এই প্রশ্নের আবর্তেই আমাদের আগ্রহ।
মোটেই না।
তারা তখন দল বিলুপ্ত ঘোষণা করে নতুন নামে রাজনীতিতে ফিরে এলেও খোঁচা খেতেই হত।
আগামী দশ বছর পরে ৭১ প্রজন্মের প্রথম সারির প্রায় সবাই মৃতদের কাতারে চলে যাবে। মুক্তিযোদ্ধা বা অমুক্তিযোদ্ধা কেউই থাকবে না।
নাগরিক হিসেবে ৭১ এর দ্বিতীয় প্রজন্ম ও তার পরের প্রজন্মই বেঁচে থাকবে।
দল হিসেবে দলের ভেতর জামায়াতকে যুদ্ধাপরাধী, মানবতা বিরোধী অপরাধ,স্বাধীনতা বিরোধী (কোন ব্যক্তি) বলতে কেউ থাকবে না। জামায়াতের বর্তমান নেতৃত্বের যারা আছে দেখা যাবে তারা প্রায় সবার জন্মই ৭১ এর পর।অথবা দুয়েকজন থাকলে তখন হয়তো অবুঝ শিশু। জামায়াতের বর্তমান আমীরকে দিয়ে হিসাব করলেই কথা পরিস্কার হয়ে যায়।
তাদের জন্য দল হিসেবে থাকবে দলীয় একটি অভিযোগ।
জামায়াত দল বিলুপ্ত করলে এই উপকারটুকুই হবে।
স্বাধীনতা বিরোধীদের দল বলে যে অভিযোগের কটাক্ষটা আছে তা বলার আর সুযোগ থাকবে না।
আর অবশিষ্ট সব অপবাদ,নিপীড়ন, রাজনৈতিক অপশক্তির অপচাপ সবই সয়ে যেতে হবে অথবা মোকাবেলা করতে হবে।
বরং আগামীকাল সকালে জামায়াত যদি নিজেদের দল বিলুপ্ত করে আর নতুন নামে রাজীনীতিতে আসে তবু তাদের গাল খেতে হবে ‘ সাবেক জামায়াতী ‘ বলে।
বাংলাদেশে জামাতী,মোল্লা,জঙ্গি,রূহানীপুত্র,সাম্প্রদায়িক,প্রতিক্রিয়াশীল,পাকিস্তানপন্থী ইত্যকার শব্দ হল ইসলামপন্থীদের প্রতি নিক্ষিপ্ত ইসলাম বিদ্বেষী বাম,ভারতপন্থী,আওয়ামী রাজনীতির হিংসাত্মক শব্দাস্ত্র।
জামায়াত তাদের নাম বদল করতে পারতো স্বাধীনতার পরপরই।এই নামের দলটি বিলুপ্ত হতে পারতো ঐ সময়েই। এতে সরাসরি অপবাদ থেকে মুক্ত হলেও ট্যাগ মুক্ত হত না। প্রতিপক্ষ খোঁটা ও খাঁটো করে রাখত সাবেক সাবেক বলেই। আইনের মারপ্যাঁচ দলীয় ভাবে না থাকলেও ব্যক্তিগত ভোগান্তি পোহাতেই হত। এবং নতুন নামে নতুন দলের নেতা হয়েও তাদের আওয়ামী হিংসা থেকে মুক্তি পেত না।
এখন তাদের দল বিলুপ্তি বা ক্ষমা চাওয়ার পর্ব অতিক্রম করে তারা চলে এসেছে আইনের পাঠে। তাদের জিৎ বা হার নির্ণয় হবে আদালতে।
বিগত দিনগুলোর, ৫৪ বছর বয়সী বাংলাদেশে শেষের কুড়ি বছরের রাজনীতির গতিবিধি যাছাই করলে অনেক কিছু উপলব্ধি করা যায়।
বাংলাদেশে জামায়াতকে কোনঠাসা করে রাখা হয় ৭১ দিয়ে। এবং বিগত বছরগুলোতে ইসলামী বেশভূষার যেকোনো মানুষ রাজনৈতিক এক্টিভিটি দেখালেই তাকে এই কার্ডে কাবু করে রাখা হত।
এরপরই ব্যবহৃত হত জঙ্গি,সাম্প্রদায়িকসহ নানা ট্যাগীয় কার্ড।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে জামায়াত ৭১ এ বিশ্বাস করত অখণ্ড পাকিস্তানে। শেখ মুজিবুর রহমান নিজেও স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি। বাম ছাত্র নেতাদের চাপে পড়ে শেষ পর্যন্ত বিশাল জনসমাবেশে ঘোষণা দিয়েছিলেন কৌশলী স্লোগান, ‘এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম।’ জামায়াতসহ অনেক রাজনৈতিক দল ও রাজনৈতিক নেতার আকাঙ্খা ছিল এক পাকিস্তানে থেকে নিজেদের দাবিসমূহ আদায় করা।
বিশ্লেষকেরা মনে করেন এটিও দেশপ্রেমেরই অংশ। এটিকে তারা অপরাধ মনে করেননি।
পরবর্তীতে একটি দেশের নাগরিক হয়ে একজন নাগরিক,একটি রাজনৈতিক দল দেশের অখণ্ডতার পক্ষে অবস্থান নিতেই পারে। কিন্ত দেশ যখন বিভক্ত হয়ে পৃথক রাষ্ট্রের জন্ম নেয়, নতুন রাষ্ট্রের,স্বাধীন রাষ্ট্রে বিরোধীতাকারী দল হয়ে পড়ে স্বাধীনতা বিরোধী দল। রাজনৈতিকভাবে নতুন দেশে রাজনৈতিক দলটি সাবেক নামে রাজনীতি চালিয়ে যাওয়ার পথে তৈরী হয় নানা জটিলতা। সে হিসেবে জামায়াত তখন বিলুপ্তি ঘোষণা করলে তারা নিষ্কৃতি পেত স্বাধীনতা বিরোধী বলে ফেনা তোলা কার্ড থেকে।
বিগত দিনগুলোতে আওয়ামী লীগ, বাম সেকুলাররা ডান বলয়ের রাজনীতিতে ইসলামী লেবাসের সকলের উপর প্রয়োগ করেছে। জামাত বিলুপ্ত হলে সমগ্র ডান বলয় অপপ্রয়োগ থেকে রেহাই পেত।
কিন্ত এটিই নিরাপদ পন্থা না। জামাত এই নাম বিলুপ্ত করলেও রাজনীতি থেকে দূরে থাকত না। অন্য নামে হলেও রাজনীতি করতই। যে নামেই তারা রাজনীতিতে নাম লেখাত সেটিকেই কটাক্ষ করত।
তখনও তারা খোঁচা দিত স্বাধীনতা বিরোধীদের দল।বলা হত নতুন নামে পুরাতন দল।
রাজনীতিতে বিরোধ তৈরী হয় আদর্শের কারণে। ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বী মনে হলেও বিরোধ তৈরী হয়।
জামাতের সাথে প্রথম বিরোধ আদর্শ,চিন্তা ও বিশ্বাসের কারণে।
বিশ্বাসগত কারণেই সকল ইসলামী দলের সাথেই বৈরী আচরণ করে বাম ও সেকুলার চক্র। ছোট দলেরও বলিষ্ঠ কণ্ঠ হলেই আরোপিত শব্দ সন্ত্রাসে ঘায়েল করে রাখে। হাসিনার ১৫ বছর আলেম,ওলামা,মুসুল্লি, সচেতন ডানপন্থীরা নির্যাতিত,নিপীড়িত হয়েছিল। নানা শব্দ সাঁটিয়ে দিয়েছে তাদের নামের সাথে।
সরকারী দলের পক্ষ থেকে এসব শব্দ মূলত নিপীড়নের ক্ষেত্র তৈরীর প্রচেষ্টা। সেকুলাররা করে সবসময় ধর্ম বিদ্বেষ থেকে।
ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করলেও বিরোধিতা অনিবার্য হয়ে যায়।
এ জন্য এনসিপির বিরোধিতা করে যাচ্ছে বিএনপি।
এনসিপি কোন বড় দল না।রাজধানীর বাইরে তারা এখনও দল গোছাতেই পারেনি। তবু বিএনপি তাদের ভাবছে প্রতিদ্বন্দ্বী দল।
এনসিপি জুলাইয়ের পক্ষ শক্তি, নবীন দল। ক্ষমতায় আপাতত যাওয়ার সম্ভাবনা নাই।রাজনীতির মাঠে এনসিপি নানা ধাপ মোকাবেলা করে টিকে থাকতে পারলে ধর্তব্যের দল হওয়ার সম্ভাবনা আছে । এজন্যই শুরুতেই এনসিপি বড় দলের প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠছে। বাংলাদেশে ছোট বড় অনেক ইসলামী দল আছে। পাওয়ার পলিটিক্সে অনেকের থেকে জামাত এগিয়ে। এজন্যও জামাত আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিপক্ষ হয়ে ছিল। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নিশ্চিহ্ন করার জিঘাংসায় জামাতকে একাত্তর ছুরিতে জবাই করেছে বারবার । দমনে,নিপীড়নে রেখেছে বিএনপিকেও।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ না পালালে এখন চলত বিএনপি নির্মূল অভিযান ।
বামেরা, সেকুলারেরা ক্ষমতায় যেতে পারবে না।আদর্শগতভাবে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী জামাত।শত্রুও তাই জামাতই। জামাতকে এসব প্রতিপক্ষ, প্রতিদ্বন্দ্বী মোকাবেলা করেই রাজনীতি করতে হবে,করছেও।
ক্ষমা কি সব অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত? বিশেষত রাষ্ট্র,রাজনীতি,আন্তর্জাতিকতা, দেশ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে! আওয়ামী লীগ ও তার দলীয় প্রধান জুলাইয়ে গণহত্যার দায় নিয়ে ক্ষমা চাইলেই সব সুরাহা হয়ে যাবে? আওয়ামীলীগের ওবায়দুল কাদেরের একটা ডায়লগ ভাইরাল,’ সরি বললেই সব শেষ হয়ে যায়?
তো আওয়ামীলীগ সরি বললেই সব ঠিক হয়ে যাবে?
আবার আগের মতো করতে পারবে রাজনীতি ? ক্ষমা পাবে? কে করবে কার ক্ষমা? রাষ্ট্র তার শত শত নাগরীকের হত্যা,গুম,আহত হওয়ার অপরাধ মাফ করে দিবে? রাষ্ট্রের দায়িত্বে যারা আছে তাদের সাধ্য আছে ক্ষমা করে আওয়ামী লীগকে সাধু ঘোষণা করার! যার ভাই,বাবা,বোন,বা অন্য আত্মীয় শহীদ হয়েছে,আহত হয়েছে তাদের হয়ে ক্ষমা করে দিবে কর্তৃপক্ষ? এটা আইন বা যুক্তিযুক্ত হবে?
কোন গণহত্যার অপরাধে দোষী দলকে ক্ষমা চাওয়ার আবদার উঠলে এই প্রশ্নগুলো উঠে।
এইসব অপরাধের জন্য বিচার দাবি করা যায়। দাবি উত্থাপন হয় বিচারিক প্রক্রিয়ায় আর উত্থাপিত হয় গণদাবী আকারে।
অপরাধের মাত্রা ভয়াবহ হলে গণ দাবিতে রাষ্ট্রকে তা জানানো হয়।
আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে উত্থাপিত দাবি গণ দাবি আকারে পেশ করা হয় সরকারের কাছে। এই প্রেক্ষিতে সরকার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধের পর নতুন করে আবারও আলোচনায় আসে জামায়াতের বিষয়টি। একাত্তর প্রশ্নে জামায়াতের ক্ষমা চাওয়ার প্রসঙ্গ আসে। তার আগেই আওয়ামী লীগ সরকার জামায়াতকে ৭১ বিষয়ে আদালতে তুলেছে। জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে। দল নিষিদ্ধ করেছে।
এখন জামায়াতের ক্ষমা চাওয়ার আর অপশন কোথায়? বরং তাদের সামনে আইন মোকাবেলা করার পথ উন্মুক্ত। জামায়াতের মতে তাদের নেতৃবৃন্দকে করা হয়েছে জুডিশিয়াল কিলিংয়ে। হাসিনার সময়ে আইনি লড়াই তারা করতে পারেনি। এখন পারবে। আইনি যুক্তি তর্কে যদি প্রমাণ হয় যে বিচারের নামে হয়েছিল প্রহসন, তখন পরিস্থিতি রূপ নিবে অন্যরকম।
আওয়ামী লীগের গণহত্যার দায় ও জামায়াতের বিরুদ্ধে অভিযোগে একটু ভিন্নতা আছে।
বলাই হয় জামায়াত গণহত্যার সহযোগী। সহযোগী কি, কেমন?
আওয়ামী লীগের সাথে জাতীয় পার্টির সহযোগীর মতো? যদি জাতীয় পার্টির মতো সহযোগী হয় তাহলে আস্তে আস্তে জামায়াতের বিরুদ্ধে উত্থিত অভিযোগ ও অপরাধের পরিমান কমতে থাকবে।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন ও রাজনৈতিক দল ও এক সাথে দুটো পাওয়ারেই ছিল। জুলাই গণহত্যায় পুলিশের ভূমিকা আর আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মীর ভূমিকা ভিন্ন মাত্রার।
পুলিশ সরকারী কর্মচারী। সরকারে হুকুম পালন করতে গিয়ে অপরাধী। মানবতা বিরোধী অপরাধ প্রমাণিত হলে শাস্তি পাবে।আবার চাকরি বিধিও তাকে সেইফ করবে।
৭১ এ আল বদর,আল শামস,রাজাকার ছিল সরকারী বাহিনী।এসব বাহিনীর দায় বর্তাবে পাকিস্তান সরকারের উপর।
যুদ্ধের সময় গণহত্যায় জামায়াতের কর্মী বাহিনী হিসেবে অপরাধী ছিল কি না তা প্রমাণের জন্য আদালতই এখন উপযুক্ত ক্ষেত্র।
আদালতে জামায়াত দোষী হলে, নিষিদ্ধ হলে তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ হয়ে যাবে। তখন মাফ চাওয়া না চাওয়ায় আর কোন লাভ ক্ষতি থাকবে না।
আইনের প্যাঁচে যদি তারা বেরিয়ে আসতে পারে তখনও মাফ চাওয়ার আর কোন দরকারই পড়বে না।
জামায়াত তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়েই এতদূর এসেছে। জামায়াতের সামনে এখন স্পষ্ট পথ তারা আইনে লড়ে টিকতে পারলে রাজনীতি করবে,না টিকলে রাজনীতি বন্ধ।বন্ধ বলতে জামায়াত নামে বন্ধ থাকবে। কাজেই যারা বলে ক্ষমা চাইতে হবে, তাদের জবাবে জামায়াত ভাববে ক্ষমা চাইবে, না চাইবে না?
ক্ষমা না চাইলে রাজনীতি করতে পারবে না। এমন কথা বলার কোন মূল্য নাই। আগেই বলেছি জামায়াত এখন আদালতে ও রাজপথে লড়াইরত । রাজপথে তারা রাজনীতি করছে। সকল অভিযোগ থাকার পরও জামায়াত বাংলাদেশে রাজনীতি করছে। আওয়ামীলীগ বিতারিত ও নিষিদ্ধ হওয়ার পর তারা দ্বিতীয় পজিশনে আছে। ইসলামপন্থী দল হিসেবে শীর্ষে তাদের অবস্থান। আদালতে ফয়সালা হয়ে গেলে তাদের সামনে রাস্তা হল আইন জামায়াতের বিপক্ষে গেলে রাজনীতি এখানেই শেষ। পক্ষে গেলে আছে ও থাকবে।
৫ আগস্টের পর পুরাতন বিতর্ক নতুন করে আলোচনায় আসছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন এতে রাজনীতির মূলস্রোতে টিকে থাকা,প্রভাব বিস্তার করা দুরূহ হয়ে যাবে। ভোটের রাজনীতি বা ক্ষমতার রাজনীতিতে স্বাচ্ছন্দ নষ্ট হবে। প্রতিপক্ষ যারা তারা করে বিদ্বেষ। পক্ষের কেউ কেউ হয় তুমুল আবেগী। নিরপেক্ষ বিশ্লেষকরা করেন নির্মোহ মন্তব্য। প্রাচীন একটি দল হিসেবে তাদের নিজস্ব চিন্তা ভাবনাও আছে। জন সম্পৃক্ততা
বৃদ্ধির জন্য তাদের অবশ্যই চিন্তা ভাবনা আছে। তারাই ভাববে নিজের ভাবনা।
জামায়াত তাদের বিরুদ্ধে ট্যাগ,অভিযোগ, চক্রান্ত, নিপীড়ন সব মোকাবেলা করে স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনীতি করে আসছে। এবং দল হিসেবে তারা পৌছেছে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে। রাজনীতিতে তাদের পরিপক্বতার ছাপ স্পষ্ট। এবং রাজনীতির মাঠে বর্তমানে আছে চালকের ভূমিকায়।
বাইরে বিরোধীতা,ভেতরের বিরোধ, নিজেদের দ্বিমত,অন্যদের অভিযোগ, সমালোচকদের সমালোচনা থেকে গ্রহণ ও বর্জন ক্ষমতা আশা করি তারা অর্জন করেছে।
এখন তাদের সামনে ক্ষমতার কাছাকাছি পৌছার রাজনীতিতে মনোযোগী হওয়া।
নির্মোহভাবে বলতে গেলে জামায়াত বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কাছাকাছি পৌছতে পারেনি। ৫ আগস্টের পর অনেকটা এই অভিযোগ কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে। জামায়াতের কর্মীবাহিনী প্রকৃত অর্থে আমজনতা না। এখনও তাদের কর্মীবাহিনী বিশেষ জনগোষ্ঠী হিসেবেই চিহ্নিত। জামায়াতকে হতে হবে আমজনতার দল। সোজা কথায় তাদের কর্মী সংখ্যা
এখনও সংসদীয় আসন উদ্ধারে যথেষ্ট না। যেমনটা একটা আসনে নির্বাচন হলে আওয়ামীলীগের ভোটার দিয়ে আওয়ামীলীগ বিজয়ী হতে পারে,বিএনপির নির্ধারিত ভোটার আছে।জামায়াতের সে পরিমাণ ভোটার নাই।
জামায়াতকে ইউনিয়নের মেম্বার হওয়ার ভোটার তৈরী করতে হবে,চেয়ারম্যান হওয়ার ভোটার তৈরী করতে হবে। উপজেলা চেয়ারম্যান, এমপি নির্বাচনে রিজার্ভ ভোটের রাজনীতিতে মনোযোগী হতে হবে। সেটা ব্যক্তির ইমেজে হোক,দলীয় আদর্শে হোক, জোটের কারিশমায় হোক।যদি সক্ষম হয় তাহলে জামায়াত হয়ে ওঠবে অপ্রতিরোধ্য হয়ে। না হয় থেকে যাবে স্লোগান,ফ্যাস্টুন, সভা সমাবেশ কেন্দ্রীক দল হিসেবে। এখনও জামায়াতের যে কোন মিটিংয়ে যথেষ্ট জনস্রোত থাকে।
এটা হওয়ার ভিন্ন ভিন্ন কারণ থাকে।
১. তারা কঠোর কঠিন সংগঠিত দল।
২. কোন এলাকায় সমাবেশ হলে সুশৃঙ্খল দল হওয়ায় চারপাশের জনবল একত্র হয়ে যায়।
৩. দলের প্রতি কর্মীদের আবেগ ভালোবাসা প্রশ্নহীন থাকায় নিঃস্বার্থ সেবার মানসিকতা।
মিছিল,স্লোগান,সভাসমাবেশে জনস্রোত হাজির করা একটি দলের বড় হাতিয়ার। এটি জামায়াত তার রাজনৈতিক যাত্রায় অর্জন করেছে। নির্বাচনের রাজনীতিতে এখনও তারা তাদের সক্ষমতা দৃষ্টান্তমূলক হাজির করতে পারেনি। প্রতিপক্ষ এই জায়গায় বারবার আঘাত করে। জামায়াত অবশ্য যুক্তি খণ্ডন করে বলে থাকে তাদের দর্শন আদর্শ ও চিন্তার কথা। বিশ্বাস বাস্তবায়ন, আদর্শ বিস্তার জনসেবাই তাদের লক্ষ। এসব করতে গেলেও ক্ষমতার আসনে পৌছা অবশ্যই জরুরি। অতীত রেকর্ড অতিক্রম করে নির্বাচনে আসন উদ্ধার করা জামায়াতের জন্য নতুন বাংলাদেশ রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জও বটে। চ্যালেঞ্জের পথের রাজনীতিতে জামায়াতের অর্জন কী তাই এখন অপেক্ষার বিষয়।