spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদকবিতাকবিতাগুচ্ছ

লিখেছেন : নয়ন আহমেদ

কবিতাগুচ্ছ

নয়ন আহমেদ

বিবাহ
………..
.
ঘরের পাশ দিয়ে যেতে যেতে দেখলাম পরিবেশপরিচিতি নেই।
ছিন্নভিন্ন পড়ে আছে খড়কুটো; ভেঙে গেছে অঙ্কুরোদগমী কুসুম- বাসনা।
জোড়া লেগে লেগে হতে পারতো খড়ের গম্বুজ।
হবে না, হবে না, হবে না!
লাল ডাকবাকসের মতো কোনও ঘটকালি নেই!
.
বাগানে বেড়াতে বেড়াতে দেখলাম কোনও আলিঙ্গন নেই!
গাছে ও পাতায়,ডালে ডালে ঝুলছে গুচ্ছ গুচ্ছ শূন্যতা।
পাখির সংসার ছিলো; মুখরিত কলরব ছিলো।
ভোর বলতেই ছিলো পাখিদের অনন্ত জিকির; ছিলো তোমাদেরও
পাখি পাখি সম্পাদনা।
আছে কেবলই মেহগনিখচিত অসম্পূর্ণ বাস্তুজ্ঞান।
পূর্ণ জীবন পাবে না, পাবে না, পাবে না!
জারুলের মতো প্রথাসিদ্ধ কোনও বর-কনে নেই!
.
আহা! আহা! ভাঙা হাহাকারকে আর বিবাহিত বানানো গেলো না!
.
২৪ বৈশাখ ১৪২৪

…………..
তেত্রিশ বছর পর
………….
.
তেত্রিশ বছর পর তোমাকে দেখলাম আবার-
আমাদের দেখা হলো ।
এই জটিল শহরের মানচিত্রের মতো বাঁক ঘুরে দেখা হলো ।
বিলুপ্ত ধানখেতের আলের চিহ্ন মুছতে মুছতে দেখা হলো ।
শিল্পবিপ্লবের মধ্যপথে এসে দেখা হলো ।
অথচ তুমি এ শহরেই ছিলে ।
অথচ তুমি এই জ্যামিতি পড়ুয়া গ্রহেই ছিলে ।
.
তোমার সাথে অবশেষ দেখা হলো।
যেন প্রতিদিন সূর্য ওঠার মতো অবধারিত ছিলো ।
যেন একটা ইদের মতো মীমাংসিত ছিলো ।
যেন একটা ভোরের মতো নির্ধারিত ছিলো ।
.
তোমার চোখে ভিড় করলো কত স্বপ্ন ।
কেশদামে এখনও একটা প্রজাপতি ক্লিপের সযত্ন প্রতিষ্ঠা ।
লতাপাতা আঁকা ওড়নায় বসন্তের আগমন ।
যেন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাণবন্ত কিশোরী;
দাঁড়িয়েছে মুঠো মুঠো আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ।
দ্বিধা মুছতে মুছতে ফুটলো অজস্র গোলাপ ।
.
তেত্রিশ বছর পর বার্ধক্য মোছা যায় ।
তেত্রিশ বছর পর হৃদয়ের শিল্পবিপ্লব শুরু হয় ।
তেত্রিশ বছর পর চোখে চোখে সহজ ভূগোল পাঠ।
তেত্রিশ বছর পর ব্যাকুল সমাজ বিজ্ঞান ।
তেত্রিশ বছর পর মুগ্ধ পরিবেশ পরিচিতি ।
.
তেত্রিশ বছর পর তোমাকে দেখলাম আবার;
আমাদের দেখা হলো ।
.
৭ জুন ২০১৯
২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৬
৭ মে ২০১৭

……….……
এই যে শুনছেন
……………..

কারও হারানো পায়ের ছাপ , তাতে পড়ে থাকা কিছু গোধূলি
কারও একজোড়া আটপৌরে চোখের কিছু দৃষ্টি
কারও দুটো আঙুলের ডগায় লেগে থাকা সামান্য আবেগ
একটা নাকটেপা উহু
ঈষৎ লজ্জা মেশানো লাল শাড়িতে ঢাকা মুখ
এবং পড়ে থাকা পাতার মতোন তুচ্ছ
কিন্তু প্রয়োজনীয় কিছু ফেলে গেলেন কি?

এই যে শুনছেন !
আমি কিছু ঢেউ, দুটো বিকেল আর কয়েকটা চিউ চিউ করা জিনিস পেয়েছি।

শুনছেন তো!

৫ জুন ২০২৫

…………..…
চা-বাগান
…….……….
.
কিছু তৃণলতা আছে; মাটিনিষ্ঠ-
কিছু সান্ত্বনার পত্রপুষ্প আছে;
শেখায় আদর্শ জীববিজ্ঞান।
কিছু পাঠ আছে;
সর্বদা উচ্চকিত করে ভাষাবোধ।
তুমি আছো কিছু চা-পাতার ব্যাকরণে;
লিকারে লিকারে একপ্রস্থ জীবন।
.
এখন কি একটা সিলেটের চা-বাগান হবে?
বলো, হবে?
.
ভালোবাসা আশ্রয় নিয়েছে চা-পাতার মতো ঠোঁটে।

…………….
আমার কবিতা
……………..
.
কুমড়োর ফুলে ফুলে
লাউয়ের বিনয়ী লতায়
পানের বরজে বরজে
দোল খাচ্ছে আমার কবিতা।
.
টিয়ের অবসরহীন লাল ঠোঁটে
শালিকের পবিত্র উড়ালে
দোয়েলের নিবিড় দাম্পত্যে
আবৃত্তি হচ্ছে আমার কবিতা।
.
রজনীগন্ধার শাদায় শাদায়
গোলাপের নিভৃত বৈঠকখানায়
বকুলের চুমুভরা প্রকোষ্ঠে প্রকোষ্ঠে
সংলাপ করছে আমার কবিতা।
.
রক্তাক্ত হিরোশিমা পার হয়ে
কুৎসিত অসুখ তাড়িয়ে
তোমার চালধোয়া হাত স্পর্শ করে
নদীর কাছে আবাস গড়েছে আমার কবিতা।

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

শিকদার মুহাম্মদ কিব্রিয়াহ on কবিতাগুচ্ছ
নয়ন আহমেদ on কবিতাগুচ্ছ
নয়ন আহমেদ on মা দিবসের কবিতা
ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম on শিপা, আমি তোমার বয়ফ্রেন্ড হতে পারিনি