spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদসাম্প্রতিককেমন হলো ২০২৫-২৬ বাজেট?

লিখেছেন : রেজা তানভীর

কেমন হলো ২০২৫-২৬ বাজেট?

রেজা তানভীর

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় ৮ হাজার কোটি টাকা কম। প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। বাজেট ঘাটতি ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং এডিপি ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি বর্তমান সরকারের দৃষ্টিতে সংকোচনমূলক বাজেট।

২০২৫-২৬ অর্থবছরে মোট ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা, যা জিডিপির ৯ শতাংশ। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা, যা ৬৩ দশমিক ২ শতাংশ। এছাড়া অন্যান্য উৎস থেকে ৬৫ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বৈদেশিক অনুদান থেকে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ, বৈদেশিক ঋণ ১২.২ শতাংশ, অভ্যন্তরীণ ঋণ ১৫ দশমিক ৮ শতাংশ, কর ব্যতীত প্রাপ্তি ৫ দশমিক ৮ শতাংশ এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডবহির্ভূত কর ২ দশমিক ৪ শতাংশ।

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের মতে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের মূল লক্ষ্য হলো সম্পদের সুষম বণ্টনের মাধ্যমে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তোলা এবং রাজস্ব আয় ও ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট প্রণয়ন। এই বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, কর্মসংস্থান, সামাজিক নিরাপত্তা এবং পরিবেশ সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

ইতিবাচক দিক: শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তায় বড় বরাদ্দ টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কর সংস্কার ও ডিজিটালাইজেশন আধুনিক অর্থনীতির দিকে এগিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের জন্য বরাদ্দ সামাজিক সংহতি বাড়াবে।

চ্যালেঞ্জ: দুর্নীতি, দুর্বল বাস্তবায়ন ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা বাজেটের সাফল্যে বাধা হতে পারে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বেকারত্ব কমানোর কৌশলের অভাব এবং বৈদেশিক ঋণের নির্ভরতা দীর্ঘমেয়াদে ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

সব প্রসঙ্গ ছাপিয়ে এবারের বাজেটের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা প্রসঙ্গ– বৈদেশিক ঋণের ক্রমবর্ধমান চক্র থেকে বেরিয়ে আসার অনুকূল নীতিমালা প্রণয়ন। যদিও বাস্তবে তা কতখানি করে উঠতে পারে সেই কর্মক্ষমতার নজির স্থাপনেই এর সাফল্য নির্ধারিত হবে। ১৯৮২ থেকে ১৯৯০ সালে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়েছিল। অন্যদিকে ২০০৯ সালে ২৩.৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ ২০২৩ সালে হয়েছে ৯৯ বিলিয়ন ডলার। তার মানে ঋণের বোঝা বেড়েছে ৩২২ শতাংশ। বৈদেশিক ঋণ ও স্থানীয় ঋণ দুটোই বিপজ্জনক সীমানা ডিঙিয়েছে আগেই। এগুলো কতটা সামাল দিতে পারবে বাজেট ২০২৫-২৬, তা সামনের দিনগুলোতে জানা যাবে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর বিপরীতে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি ও সামাজিক বৈষম্য দূর করা এবারের বাজেটের বড় চ্যালেঞ্জের জায়গা বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

বিশ্লেষকদের মতে,

“জুলাই গণঅভ্যুত্থানের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বৈষম্যবিরোধী চেতনা ও কর্মসংস্থান। কিন্তু বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা না গেলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে না। কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাসহ বিভিন্ন কারণে নতুন বিনিয়োগ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে, করের আওতা না বাড়িয়ে সরকার যেভাবে করের হার বাড়িয়েছে, তাতে করদাতাদের ওপর চাপ বেড়েছে।

কিন্তু এই করহারের বিপরীতে তাদের তাদের সামনে এমন কোনো সুযোগ-সুবিধা তুলে ধরা হয়নি, যা দেখে তারা কর দিতে উৎসাহিত হবে।

বাজেট নিয়ে বিএনপি নেতা আমীর খসরু বলেন, 

“দেশে এখন যেহেতু সংসদ বা গণতান্ত্রিক কোনো সরকার নেই, তাই তাঁরা আশা করেছিলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ন্যূনতম জাতীয় ঐকমত্য স্থাপনের মাধ্যমে বাজেট প্রণয়ন করবে। সরকার চাইলে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামত নিতে পারত। বিশেষজ্ঞ, নাগরিক সমাজ, ব্যবসায়ী ও তরুণ প্রতিনিধিরাও অংশ নিতে পারতেন। কিন্তু সেটি করা হয়নি।”

বাজেট নিয়ে জামায়াতে ইসলামী এক বিবৃতিতে বলে, 

“জুলাই গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী প্রথম বাজেটে নতুন বাংলাদেশ পুনর্গঠনের প্রত্যয় আশানুরূপভাবে প্রতিফলিত হয়নি। বিদেশে পাচারকৃত অর্থ এবং অন্যান্য অবৈধ অর্থ উদ্ধার করে ফিরিয়ে আনার স্পষ্ট কোনো পরিকল্পনা প্রস্তাবিত বাজেটে লক্ষ করা যায়নি, যা জাতিকে হতাশ করবে। এ ছাড়া কালোটাকা সাদা করার সুযোগ বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। এই অপচেষ্টা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।”

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

শিকদার মুহাম্মদ কিব্রিয়াহ on কবিতাগুচ্ছ
নয়ন আহমেদ on কবিতাগুচ্ছ
নয়ন আহমেদ on মা দিবসের কবিতা
ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম on শিপা, আমি তোমার বয়ফ্রেন্ড হতে পারিনি