spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদকবিতাকবিতাগুচ্ছ

লিখেছেন : আবু তাহের সরফরাজ

কবিতাগুচ্ছ

আবু তাহের সরফরাজ

১.তোদের বলি, থাম

তোদের বলি, থাম
ফাল্গুনে যে আগুন লাগায়
তাকে পাঠালাম।

তেপান্তরে ছুটছে সে ওই
চাদ্দিকে রব, মাভৈ মাভৈ
আরবীয় ঘোড়ার হ্রেষা
শুনতেছে আর ধরছে নেশা
পায়ের নিচে ভাঙছে পাথর
ধরিত্রী মা হচ্ছে কাতর
ছুটছে তবু চক্রনিধি
সময় ভেঙে সময়বিধি
হঠাৎ দ্যাখে, সামনে একি
সবুজ সবুজ একটা দিঘি
দিঘির জলে ভাসতেছে ডিম
বুদবুদে প্রাণ, কাঁপতেছে হিম
ডিমের ভেতর বিস্ফোরিত
প্রাণ কি তবে সংক্রমিত?
ভাবনা এলো যবে
দেখি, সকাল হবে হবে
সূর্যস্নানে যেতে যেতে তোদের বলি, থাম
ফাল্গুনে যে আগুন লাগায় তাকে পাঠালাম।
সে চন্দ্রাহত প্রাণ
রাতবিরেতে গেয়ে ওঠে
নৈঃশব্দ্যের গান।
ভবে ঘুঘুপাখি ডাকে
সে এই ছবিটা আঁকে
হঠাৎ দ্যাখে ছবির ভেতর
একটা মানুষ হচ্ছে কাতর
চাদ্দিকে তার সূর্যজাগা ভোর
নানা রঙের ঘরগেরস্তি ওর।

২.মরুরাত্রির ঝড়

উটের গ্রীবার নিচে মরুরাত্রির ঝড়
বয়ে যায়, আর কাঁপে থত্থর।
কাঁপতেছ তুমি
সমতল ভূমি
পেরিয়ে এসেছো বলে
পৃথিবীর আদি
বাদী ও বিবাদী
বাস করে স্থলে।

তোমার গ্রীবার নিচে শীতের দৃশ্য
মুগ্ধতা হয়ে বধূ মুছে দ্যায় বিশ্ব।
ভাবো তো এবার
দৃশ্যে কে আর
দৃশ্যায়িত থাকে!
ইথারে ইথারে
ভেসে থাকা ছবি
ভ্যানগগ কেন আঁকে?

৩. মুখোশ

হয়তো আমি নিজের কাছে ভদ্রবেশি মুখোশ
হঠাৎ যদি জিগেশ করো, ‘মুখটা কোথায় লুকোস?’
বলব না তা, বলার মতো মুখটা যে আর নেই
মুখের গড়ন নানান বরণ, মোদ্দা কথা এই।
মানুষ আমি মানুষ তুমি এই যে মানবদেহ
মানুষ কিনা, ভাবছে না কেউ করছে না সন্দেহ।
মানুষ ছাড়া সকল প্রাণী ন্যাংটো খোলামেলা
এই পৃথিবীর নিয়ম মেনে করছে বাঁচার খেলা।
ভদ্রবেশি পোশাক পরে মানুষই একমাত্র
ন্যাংটো হয়ে ঘুরছে তবু দেখছে না কেউ গাত্র!

৪. সাঁকো

রাত্রি এখন ভয়াল ভীষণ
অন্ধকারে ঢাকা
অন্ধকারেই আলোর রোপণ
ঘুরছে সময়চাকা।

পথের ওপর উঁচুনিচ
কত্ত রকম বাধা
সূর্যোদয়ে আলোর উদয়
কালোই তখন শাদা।

ভয়ের কাঁটা বিঁধেই আছে
কালো-শাদার মাঝে
তাদের উভয় রূপ যে একক
বোঝার বিষয় আছে।

বুঝতে শেখা জানতে চাওয়া
মানুষগুলো একা
এক পৃথিবীর একক নিয়েই
একটি বইয়ের লেখা।

বইটা কোথায়? বইটা কোথায়?
খুঁজছ কোথায়? দ্যাখো
আল্লাহ এবং তোমার মাঝে
রয়েছে এক সাঁকো।

৫. মিলেমিশে

মিলে আর মিশে তারা
দুইজন দেহ ছাড়া
দেহ কেন বায়বীয়?
বিষয়টা মরমীয়।

মিলেমিশে দুই দেহ
এক, তবু সন্দেহ
আত্মায় কান পেতে
দেহ ফুঁড়ে চায় যেতে।

পাঁচভূত এই দেহে
থাকতেছে সন্দেহে।

মিলেমিশে নেড়ে ঘাড়
বলতেছে, যার যার
জগৎটা বহুরূপী
বলে রাখি চুপিচুপি।

যে দ্যাখে যেই চোখে
জগৎটা ভাবে লোকে
এই তো…
যার যার আয়নায়
জগতের ভাবনায়
সেই তো…

মিলে আর মিশে তারা
জগৎটা করে ভাড়া
এরপর গোলগাল পৃথিবী নিয়ে
ফুটবল খেলে তারা মাঠ পাড়ি দিয়ে

মাঠে মাঠে ছড়ানো কত কত গ্রহ
আয় তো, এইসব করি সংগ্রহ।

৬.কুয়াশা আমার বোন

কুয়াশা আমার বোন
শীত শীত শিহরন।
নদীবুকে ছোট সাঁকো
কুয়াশায় ভেসে থাকো।
এই ছবি ফটোগ্রাফ
কুয়াশার ঋতুস্রাব।
আমি তার সহোদরা
লিখতেছি এই ছড়া।
ছড়া নাকি কবিতা?
মূলকথা, ছবি তা।
ছবি তাই কুয়াশায়
ভেসে ভেসে উড়ে যায়
ভিজে ওঠে রঙছাপ
মুছে যায় ফটোগ্রাফ।
স্মৃতি তাই ডানা মেলে
উড়ে যায় শীত এলে।

……….
কবি ও গবেষক। বাংলাদেশ।

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

শিকদার মুহাম্মদ কিব্রিয়াহ on কবিতাগুচ্ছ
নয়ন আহমেদ on কবিতাগুচ্ছ
নয়ন আহমেদ on মা দিবসের কবিতা
ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম on শিপা, আমি তোমার বয়ফ্রেন্ড হতে পারিনি