spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদসাম্প্রতিকইউনূস-তারেক বৈঠক : কার লাভ কার ক্ষতি?

লিখেছেন : তপু রহমান

ইউনূস-তারেক বৈঠক : কার লাভ কার ক্ষতি?

তপু রহমান

১৩ ই জুন, বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যকার লন্ডনের বৈঠক দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। গণমাধ্যম মারফত জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার হস্তক্ষেপে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে, অনেকের কাছেই প্রশ্ন উঠেছে, তারেক রহমান কী তাহলে নিজ আগ্রহে প্রফেসর ইউনূসের সাথে বৈঠক করেন নাই? বেগম খালেদা জিয়া এখন শারীরিক কারণে অনেকটাই রাজনীতি থেকে দূরে আছেন। হয়তো মাঝে মাঝে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করেন। তবে, খালেদা জিয়ার হস্তক্ষেপে যে ইউনূস তারেক বৈঠক হয়েছে এতে করে তারেক রহমানের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা কতটা সেটা নিয়ে কোনো কোনো মহলে প্রশ্ন উঠেছে।

ড. ইউনূস এই মুহূ্র্তে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রধান অভিভাবক। বিএনপি বাংলাদেশের বড় দল। কিন্তু বিগত কয়েক মাস ধরে বিএনপির বেশ কিছু নেতা ইউনূসের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে আসছিল। বিএনপির একটা অংশ সরকারের সাথে দূরত্ব তৈরী করে চলেছে। আমরা জানি না, তারেক রহমান সেসব থামানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন কি না! এই মুহুর্তে দেশে যে সংকট চলছে তাতে করে যদি ইউনূস এবং বিএনপি দূরত্ব তৈরী হয় তাহলে দেশ এক গভীর সংকটে পড়ে যাবে। বিএনপিরই একটা অংশ ইউনূসকে ব্যর্থ করতে চায়। এদের সাথে বিএনপির সেক্যুলার এবং বামপন্থী অংশটা সরাসরি জড়িত৷ অনলাইনে বিএনপির পক্ষে যে অংশটা কথা বলে, এদের বড় অংশটাই বাম, সেক্যুলার অংশ। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, এরা সব সময় দেশকে বিভাজিত করতে চায়। কখনো ইউনূসকে কখনো জামায়াতকে কখনো এনসিপিকে এরা আক্রমণ করে। এদের কাছে ঐক্যের কোনো ধারণাই নাই। তারা সব সময় চায় ইউনূস ব্যর্থ হোক, দেশ কোথায় চলে যাক সেটা নিয়ে তাদের ভ্রুক্ষেপ নাই। ঠিক এমন একটা সময়ে বেগম জিয়ার সরাসরি হস্তক্ষেপে এই বৈঠক তাদের মুখে চুনকালি মেখে দিলো। যেসব বিএনপির পাতি বুদ্ধিজীবী এক্টিভিস্ট ইউনূসকে গালাগালি করত তারা এখন চুপ হয়ে গেছেন অথবা ইউনূস তারেক বৈঠককে মনে চাপা কষ্ট দিয়ে মেনে নিচ্ছেন।

তারেক রহমানকে বুঝতে হবে, ইউনূসকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে বিএনপির কোনো লাভ হবে না। দেশ এক ক্রান্তিকাল পার করছে, আপনারা ক্ষমতার লোভে অন্ধ হয়ে যাবেন না, দেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে বিতাড়িত করেছে, জনগণ চায় পুরনো কাঠামোকে ভেঙে নতুনভাবে দেখতে, সরকারের অন্য উপদেষ্টাদের বিশ্বাস করতে না পারলেও জনগণ ইউনূসকে বিশ্বাস করতে পারে। কারণ, আন্তর্জাতিকভাবেও ভালো মানুষ হিসেবে স্বীকৃত। দেশ গঠনের ব্যাপারেও তিনি খুবই সুদৃঢ় ও আন্তরিক। তিনি চান সংস্কার ও গণহত্যাকারীদের বিচার সম্পন্ন করে জাতিকে একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে।

ইউনূস তারেক বৈঠকের পর টকশো উপস্থাপক জিল্লুর রহমান তার ইউটিউব চ্যানেলের জন্য একটি পডকাস্ট বানিয়েছন। পডকাস্টটির শিরোনাম দিয়েছেন, “বিএনপি কোণঠাসা, তারেক রহমান অসহায়, রাজনীতিতে নতুন মোড়।”

তিনি তার পডকাস্টে এমনভাবে কথা বলছেন যেন তারেক রহমান ইউনূসের সাথে বৈঠক করে অনেক ভুল করে ফেলেছেন। সরকার নাকি কোনো নির্বাচন করবে না। 

এই যে দেখেন, এই সব সেক্যুলার বুদ্ধিজীবীরা কী পরিমাণ অসন্তুষ্ট হয়েছে ইউনূসের সাথে তারেক বৈঠকের ফলে। এখন বিএনপিকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে এসব বুদ্ধিজীবীদের কথা তারা শুনবে কি না! যদি শুনে তাহলে বিএনপির রাজনীতিই ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

ড. ইউনূস ঈদের একদিন আগে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে বলেছিলেন, এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন আয়োজন করার কথা ভাবছেন। তবে,বিএনপি চেয়েছিল ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন।

ইউনূস তারেক বৈঠকের যৌথ বিবৃতিতে উঠে আসে, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে।

সরকার চেয়েছিল, এপিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন, বিএনপি চেয়েছিল ডিসেম্বরে নির্বাচন। তবে, দুপক্ষের আলোচনার ফলে নির্বাচনকেন্দ্রিক যে দূরত্ব সেটা অনেকটাই নিরসন হয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

ইউনূস তারেক বৈঠকের ফলে যে অংশটা দেশে বর্তমান সরকারকে ব্যর্থ করে সেনাশাসন চাইছিল তারা সম্ভবত ব্যর্থ হয়ে গেল। বিএনপির কিছু নেতা যে ইউনূস বিরোধী বক্তব্য দেয়া শুরু করেছিল তারাও আর সুবিধা করতে পারবে না। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এটা একটা ইতিবাচক ঘটনা।

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

আমিনুল ইসলাম on কবিতাগুচ্ছ
শিকদার মুহাম্মদ কিব্রিয়াহ on কবিতাগুচ্ছ
নয়ন আহমেদ on কবিতাগুচ্ছ
নয়ন আহমেদ on মা দিবসের কবিতা
ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম on শিপা, আমি তোমার বয়ফ্রেন্ড হতে পারিনি