বদরুজ্জামান আলমগীর
|| খোদার আরশ ||
দেয়ালে ছাঁট বৃষ্টির দাগ, ছায়া ঝিনুকের পিঠ
মনে বলে দেয়াল তড়পায় কেমন সময়ের গিঁট!
ও যে অশীতিপর বুড়োর ছানিপড়া চোখের মোহ
জেগে আছে ঘুমে, জেগে আছে স্মৃতির উপগ্রহ।
বুড়ি সূর্যের মা ওই কপোতাক্ষ নদের ভাঙা ঘাটলায়
নামতে নামতে হাটুরে লোকদের অবিরল ডেকে যায়
হাশরের ময়দানে এমন ঢেউ খেলানো আগুন হাওয়া
যাও জালাক্ষেত, খুতবায় বসো সুপারি বন ছাড়িয়া।
উদ্বেগে অন্ধ আকুল মাঠভর্তি গ্রাহক ও দোকানীর দল
ভয়ে কাতরায় মুষড়ে পড়ে খণ্ডবিখণ্ড মেঘ ডানার সকল
আরও ভাঙনের বৃংহতি মাথা কুটে আদিঅন্ত ঠিকানাহীন
বিধবার চোখে কাঁপে খোদার আরশ একফোঁটা ফিলিস্তিন।
|| দুধের নহর ||
নিজেই ভাঙাচোরা শত ছিন্ন এক ম্যানহাটনের মীন
তারউপর নিউইয়র্কের দিনানুদিন বাসে-ট্রামে মলিন।
বাড়ি থেকে বেরিয়ে প্রতিরোজ ১৭৯ বাস টার্মিনালে,
ধরতে হয় এফ ট্রেন- স্কুলের ছেলেমেয়েরা মিছিলে বলে
ফ্রি প্যালেস্টাইন, লৌহ কপাট খুলে দাও ফরএভার
সেখান থেকে ই ট্রেনে সে যায় ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার।
চোখের সামনে ধর্মগুলো, বোবাকালা বর্ণবাদ বদলায়
সব থেকে বেশি বদলায় শরীরের নুন স্মৃতির অছিলায়।
ফিলিস্তিনি মা-হারা বাচ্চারা কালের শিঙ্গা ফুঁকতে থাকে
ভাঙাচোরা মেয়েটির সামনে বাস ট্রেন বুঝি ঘুরতে থাকে।
উদ্বাস্তু শিশুদের জন্য নিউইয়র্কার মেয়েটির অনাদি বুকে
কাঁচাদুধ জমতে থাকে, শালদুধ নহরে নহরে বইতে থাকে।
|| গলাকাটা হাঁসগুলি ||
উজাবন ঠেলে প্রশান্ত পাড় আর কেনান তার নাম
দূর দুনিয়ার কোন মাথায় সইষ্যাপুর ও বাড়ৈগ্রাম!
মনে মনে ঘুরতে যাই সইষ্যাপুর দেওচান্দি ইকরাটিয়া
কিন্তু ঢুকে পড়ি ফিলিস্তিনের আত্তিরা বা ইনসিনাইয়া।
বলুহাজির উঠানে জবাইয়ের গলাকাটা হাঁস চিলকায়
উঠানজুড়ে মস্তকবিহীন কবন্ধ হাঁস বেজান দৌড়ায়
ব্যাকুল গলাকাটা হাঁস নিজ ঘরের দরজায় মাথা কোটে
কাটামুণ্ডু হাঁস চক্ষুহারা তবু নিজ ঘরে রক্তবানে ফোটে।
গলাকাটা হোমোস্যাপিয়েন হাঁস ফিলিস্তিন জুড়ে গাজায়
সারাদুনিয়ায় কারবালা ফুরাত নদের পাড়ে কী খুলনায়
কবন্ধ প্রাণ জননী আমার গলাকাটা করবীর ছিন্ন কায়ায়
রক্তবানে ছোটে তারা দরজার মুখে যেখানে ঘরখানি নাই।