spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদকবিতাখোরশেদ মুকুল এর কবিতা

খোরশেদ মুকুল এর কবিতা

১। স্পর্শের বাইরে তুমি

কুয়াশা ভেদ করে হাঁড়ি কাঁধে এগিয়ে আসা গাছিদের মত স্পষ্ট হয়ে উঠে তোমার স্মৃতি। শিউলির সুবাস ছড়ায়। মালা গাঁথে সোনালি ধান। স্মৃতির কোনো অতীত থাকে না৷ একই জোঁয়ালে পাড়ি দেয় নাতিশীতোষ্ণ মন। ভাপা পিঠা ধোঁয়া ছড়ায়, মায়া বাড়ায়, সতেজ করে সকাল। নিয়ন আলো নেই, নেই পিচঢালা রাস্তা। হাঁসেরা সাঁতার কাটে কচুরিপানা ঠ্যালে। তুমি প্রাকৃতিক, স্মৃতিরা জীবন্ত। স্পর্শের বাইরে হেঁটে যাও গ্রীষ্মের মেটোপথে।

২। আমার যাত্রাবিরতি

হয়তো জানবে না, কোনো এক দুপুরে বৈশাখী রোদ কাঁধে নিয়ে তোমার স্মৃতি ফেরি করবো নিঃসঙ্গ এই নগরে। ঝরে পড়বে ট্যাবেব্যুইয়া। কিন্তু কাঁঠালের গন্ধে খুঁজে নেবো লাল পাড়ের সাদা শাড়ি। তখন হয়তো মেলা থেকে কিনে দেয়া বাহারি রঙের কাচের চুড়িরা সমাবেশ করবে দুইহাতের পরিধি জুড়ে। আমি শুনবো না। শুনবে না ট্যাবেব্যুইয়ার ঝরে পড়ার শব্দ। সিআরবিতে শতবর্ষী গাছের নিচে আমাদের কোনো স্মৃতি নেই। তাই সেদিকে যাবো না। বসে থাকব ডিসি হিলের মঞ্চের সিঁড়িতে। সন্ধ্যা হলে হুডতোলা রিক্সায় বাসায় যাব শুকতারা না দেখার ভান করে। রাতে খাব না। স্মৃতির স্মৃতিরোমন্থন করে কাটিয়ে দেবো আরেকটি রাত। পবিত্র মিনার থেকে ভেসে আসবে মুয়াজ্জিনের “আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম”। সেদিন আর ঘুমাবোও না। একাত্ম হয়ে এগিয়ে যাব জামে মসজিদের দ্বিতীয় কাতারে। হাত তুলে বারবার বলব, তুমিই উত্তম পরিকল্পনাকারী।

স্মৃতির কাফেলায় ঢেউ আসুক দখিনা হাওয়ার। জারি থাকুক গ্রামের দুরন্তপনা। কদমের কদম পড়ুক অদমের দরজায়। প্লাবিত হোক নর্দমা। প্রতীক্ষার প্রহর ফুরিয়ে আসুক মোমবাতির পলতের মতোন।

৩। নেই কোনো পথ

গ্রামের স্নিগ্ধ ভোরের মত মনে পড়ে তোমার স্মৃতি। তোমার হেঁটে যাওয়া। হাঁটতে হাঁটতে গল্প করা। নিয়ন আলোর অভিমান। শহুরে উন্নাসিকতা তাড়িয়ে বেড়ায় শিশিরসিক্ত আলে৷ আমি ফিরে যাই ছইরা পুকুরের অগ্নিকোণে৷ যেখানে কেটেছে পবিত্র শৈশব। দুষ্টুমির আখ্যান। বয়সের ভারে স্মৃতিরা সতেজ হয় পুনর্জীবিত ঈগলের মত। লাঙল কাঁধে কৃষকেরা মাঠে যায়। আর আমি ফেরি করি তোমার স্মৃতি। শিউলিরা ঝরে যায়। ডানা মেলে কোকিল। সন্ধ্যায় ফিরে আসে। যাপিত জীবনে সন্ধ্যা নামে না। চলে যাওয়ার পথে নেই কোনো পথ, কোনো ডাকঘর।

৪। বহুগামী গোলাপ

জিন্স আর টপস পরে লালায়িত সাজে শপিংমলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা হিজাব পরা প্রিয়তমাকে দেখে অবাক হয় হয় না পুঁজিবাদী মন। এই আর নতুন কী! স্বাগতের বিপরীতে ভালোবাসা লেলিয়ে ভর্তি করেন ইনবক্সের নতুন নতুন মেমোরি। সাপে আঁকা ভ্রু জোড়ায় আছাড় খায় বিপদগামী ভ্রমর। উঠে দাঁড়ানোর আগেই পিছলে যায় ন্যুড কালারের লিপস্টিকে। ছোঁয়াছে রোগের মতই গ্রাস করে দেহ মন মগজ। উদার মনের বিস্তীর্ণ জলাশয়ে হাবুডুবু খায় নিষ্পাপ শয়তান।

আযান দিলে উড়নাটা বুকে ছেপে স্থির হয় হৃদয়ের জায়নামাজে। প্রভুর প্রেম হার মানে বাজারের ফ্রেমে! উড়েঘুরে মন যায় পাহাড়ে, নগ্ন পায়ে হেঁটে চলা মাতাল সমুদ্রে। কালো লিরিকে গুনগুন করে বহুগামী গোলাপ। যার একটি কেন্দ্র আছে। আর কক্ষপথে ঘুরে বেড়ায় বেকার প্রজাপতি। আহ! মানবতা বেঁচে আছে বহুপ্রেমী নগরায়নে।

রাতের জীবনে ভেসে উঠে অন্ধকার আলো আর দিনের আলোতে ফিরে আসে চাঁদের অন্ধকার। সবুজ বাতির নিক্বণে ঝড় উঠে পুরাতন শরাবে। বরফ লাগে না, র ম্যাটেরিয়াল হজম হয় স্বাভাবিক গতিতে। দ্বান্ধিক নান্দনিকতায় ঢেউ তুলে পিথাগোরাসের ত্রিভুজ সূত্রে। তুমি ভালো। ওরাও ভালো। সবাই ভালো। সব ভালো মিশে থাকুক একই বৃন্তে!

মিথ্যার ফুলঝুরিতে গলে যায় অভিমানী বরফ। জোড়া লাগে না বিশ্বাসভঙ্গের স্বচ্ছ টুকরো। আঠালো কান্নায় জোড়া লাগলেও শিরদাঁড়া হয়ে উঁকি দেয় প্রতিটা দাগ। জানান দিচ্ছে ছলনার ষোলোকলা! কামকলায় মুছে না হৃদয়ের কালিমা।

৫। উসওয়ায়ে হাসানা

ভূলোকের ভরকেন্দ্রে জাহেলিয়াতের বুক চিঁড়ে নাযিল হয় শবনম চাঁন। মরুর বুকে ধুঁকেধুঁকে মরা মানবতা জেগে উঠে ঝঞ্ঝার মতন। সেই ঝড় আছড়ে পড়ে কাঞ্চীর তীরে, শঙ্খের নীড়ে। মৃতপ্রায় মুকুল পেয়ে যায় স্বর্গের সতেজতা। কৃষ্ণচূড়া পোয়াতি হয় লাল লাল স্বপ্নে। কাশফুল ফুটে থাকে মেঘবনের তেষ্টায়। মক্কার কলমা পড়ে বদ্বীপের মুয়াজ্জিন। মদিনার ধুলা মাখে আশেকে রসুল।

অদম্য ঘোড়ায় চড়ে নুরে মোহাম্মদী আলোকিত করে ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল। খান জাহান, শাহজালাল, শাহ পরান, তিতু হয় সওয়ারী। দিনের ললাটে দ্বীনের কারিশমা। রাতের নীরবতা। বান ডাকে বিশ্বাসীর লোনাজল৷ দাপিয়ে বেড়ানো তপ্ত হৃদয়, জাগে জাহান্নামের ভয়। যেন গোলাপী হাওয়ায় মিঠাই।

পদ্মা-মেঘনা-যমুনা-ব্রহ্মপুত্র-বুড়িগঙ্গা। বেশিদিন আর থাকেনি স্বচ্ছতোয়া ৷ পুঁজিবাদী ক্লেদ, পশ্চিমা ভেল্কিতে দূষিত হয় সোনালি আঁশের দেশ। জঙ্গিবাদ ফন্দি আঁকে। খান খান করে ঐতিহ্যের পাঠশালা। বোঁচকা বেঁধে আশ্রয় নিলে পাহাড়ে, নগরের বুকে খেলা করে ধোঁকাবাজ নাস্তি। এক হাতে মানবতা, অন্যহাতে নারী স্বাধীনতা। মাঝখানে খুলে যায় রূপালী ব্রোথেল। হুজুগে হুজুর হুমড়ি খেয়ে স্বাদ নেয় আলকাতরার মেজবান৷

জল গড়ায় উত্তর থেকে দখিন, পুব থেকে পশ্চিম। থির পানিতে বুদবুদের আশায় পার করে ঈমানী হৃদয়। বখতিয়ারের স্বপ্ন লালন করে নর্দমায় ভেসে। একদিন ধূমকেতু আসবে। জলজোয়ার উঠবে। প্লাবিত হবে প্রতি ইঞ্চি জমিন আর সব নীতি।

অবশেষে বুদবুদ এলো। কেঁপে উঠলো জালিমের কুরসি৷ দ্বন্দ্বের মোহনায় মুচকি হাসে বিনিদ্র দারোয়ান। ষড়যন্ত্রের আগাছা উপড়ে বুনে দেবে শাশ্বত শান্তির অশ্বত্থ। জারি থাকুক বুদবুদ…

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ