তমিজ উদ্দীন লোদী
…………..
মানুষ খণ্ডিত হচ্ছে
………….
প্রেম কিংবা ভালোবাসা আমাদের মধ্যে অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেছে
মানুষের কাছ থেকে সরে গেছে মানবিক ছায়া
রক্ত গড়িয়ে নামছে ভূমধ্য সাগরে
এ রক্ত শিশুর , এ রক্ত নারীর , এ রক্ত চিকিৎসকের কিংবা সেবিকার
বোমা ফাটছে মসজিদে- গীর্জায়- প্যাগোডায়
বোমা ফাটছে হাসপাতালে , আশ্রয়কেন্দ্রে , বিদ্যালয়ে
আতঙ্কিত আর্ত চিৎকারে দৌড়াচ্ছে শিশু
জেনেভা কনভেনসন লঙ্গিত, জাতিসংঘ সনদ লঙ্ঘিত
অথচ তোমাদের কোনো দেশ ছিল না
দয়াপরবশ আমরা তোমাদের আশ্রয় দিয়েছিলাম
বিনিময়ে ধ্বংস করে দিলে আমাদের আয়ের উৎস অলিভ বাগান
হারিয়ে গেলো উপত্যকা , সমুদ্রের নোনা স্বাদ , অফুরন্ত হাওয়া
হারিয়ে গেলো সবুজ ব্রহ্মাণ্ড , পৃথিবী দেখার সাধ
আমরা দেখলাম খুলির খোলস ফাটছে , মগজের শ্লেষা ছড়াচ্ছে ভূমিতে
ভেঙ্গে পড়ছে পাঁজরের খিলান , হৃদপিণ্ড
দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে অঙ্গুলিফলক , করোটি ও সাইনাস
পেলভিস ভেঙ্গে যাচ্ছে , ফেটে যাচ্ছে হেপাটিক ডাক্ট
ডুয়োডেনাম , জেজুনাম , ইলিয়াম
অসংখ্য ঝিল্লির ভাঁজ , মহাধমনী , সোলার প্লেক্সাস
মিশে যাচ্ছে পিত্তাশয় , ধমনী ও শিরা
ধাতব দেহের সাথে মিশে যাচ্ছে জৈব শরীর
মানুষ খণ্ডিত হচ্ছে
পড়ে থাকছে কাটা জিহ্বা , নুলো হাত
ছেঁড়া জামার হাতায় জড়ানো মাংসের কুচি
দুধের গন্ধ , মায়ের স্তনের গন্ধ লেগে থাকা শিশুটির মুখ
থেতলে আছে বারুদের স্তূপে ।
………..
বসন্ত জড়ানো পাখির মতো
…………
তোমার সাথে আমি আলোয় অভ্যস্ত হয়ে গেছি,
কিন্তু চাপ দিচ্ছি না ! শুধু—
বিগত বসন্ত এখন আর ততটা ব্যথা দেয় না।
তোমার কোমলতা,
যেমন সবুজ আস্তে আস্তে জমে উঠছে।
আমার পকেটে কিছু টাকা
এবং কিছু আত্মা
তোমার জন্য ব্যয় করার।
হঠাৎ আলো ঝলসে ওঠে,
আমাকে হাঁটু গেড়ে বসে থাকতে দেখে।
গতকাল
আমি আমার কোট খুললাম
এবং তোমার হলুদ চুল উড়ে গেল
একটি পরিযায়ী পাখির মতো।
আমি দেখলাম বাতাস তাকে উপরে নিয়ে যাচ্ছে
এবং আমি তোমার পাশে উড়ছিলাম।
বসন্ত জড়ানো পাখির মতো আমাদের জড়িয়ে রেখেছিল ।
…………
সত্য বলবার জন্য
…………
সত্য বলবার জন্য সভাটি আহ্বান করা হয়েছিল
কিন্তু তারা যে যার মতো সত্য বলছিল
কারো সত্য কারো সাথেই মিলছিল না
এ সুযোগে প্রাগৈতিহাসিক গুহা থেকে বেরিয়ে পড়েছে টেরাডাক্টিল
বেরিয়ে পড়েছে বাদুড় ঝাঁকে ঝাঁকে
ভিত্তিহীন আকাশ থেকে ঝরে পড়ছে তারা
আগুনে পুড়ছে সুশীল মগজগুলো
বুদ্ধিগুলো আলঝেইমার্সে ভুগছে
সামনে পেছনে বেদনার তরবারি
এক কাঁধ থেকে আরেক কাঁধে সওয়ার হচ্ছে
মানুষের বোধ , হতাশা ও অভীপ্সা ।
…………
যেন এক মায়ার হরিণ
…………
নিজেকে জানার জন্য ডুব দিতে থাকি
তবু হায় নিজেকে জানি না
সক্রেটিস বলেছিলেন ‘ নিজেকে জানো’
জানাটা যে এতোটাই কঠিন কে জানতো আগে !
দৌড়াচ্ছি অলীক ব্রতে
কি যেন ধরার জন্য , আদৌ কি ধরা দেয় কিছু ?
যেন এক মায়ার হরিণ , লেজ নেড়ে যায় শুধু ।
…………..
প্রত্যাবর্তনের আশায়
………….
আয়নাটি ঝুলে আছে উল্টো হয়ে
ফেটে চৌচির হয়ে আছে তার মুখ
অবয়ব ঝাপসা , ফাটা
সাইকেলটি হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে দেয়ালের পাশে
প্রত্যাবর্তনের আশায় পথ চেয়ে ছিলেন একজন মা
সে নিহত হবার অনেকদিন পরও
সাইকেলটি এখনো দাঁড়িয়ে আছে
আয়নাটিও
প্রত্যাবর্তনের আশায় এখনো পথ চেয়ে আছেন মা।
পাঁচটি কবিতাই ভিন্ন স্বাদের।
আলাদা স্বর।
আলাদা সুর।
স্বতন্ত্র ভাষা।
এসবই লোদী ভাইকে অন্য কবিদের চেয়ে আলাদা করেছে।