গাউসুর রহমান
উদাম পৃথিবীর উদাম কান্ড
……………….
ইতিহাসের অন্ধকার সম্পর্কে,
সৃষ্টির অনাদি বয়স কতোটুকু জানে?
সময় আমারে দিয়েছে ছুটি
বয়সের কারণে, যোগ্যতার অভাবে–
আর শরীর-মন, সেতো ব্যাধির মন্দির।
পৃথিবীতে টাকার ব্যবসা চলে হরদম
কেউ কেউ নক্ষত্রের দামে কিনে নেয় অবিরাম ধুলো,
কেউ কেউ হুন্ডি ফাঁদছে
লুটে টাকা, ব্যাংক।
কেউ আবার ঘুরে বেড়ায়
এদেশ, ওদেশ ভিক্ষা প্রার্থনা করে।
আমি কেবল শুনি শহর, বন্দর,
নগর, গ্রামের জীবনের সালতামামি,
ফুটা ভিক্ষাপাত্রের টাকা-পয়সাও
নাই হয়ে যায় কারও কারও।
এ বড় আজব পৃথিবী!
হানাহানি, মারামারি, খুন–
কেউ কেউ রক্তের ঝর্নায়
বৈতরণী পাড়ি দেয় তরঙ্গ উপেক্ষা করে, আকাশের মাঝ পথে
শূন্যে ওড়ে প্যারাসুট।
এ পৃথিবীতে তিনশ’ পয়ষট্টি দিন
যুদ্ধ চলে।
শান্তি নেই, স্বস্তি নেই–
তবুও নীল প্রজাপতি ওড়ে
লাল-নীল পাখনা দুলিয়ে।
…………..
ফুলের জ্যোৎস্না
…………..
পাতালের দরজা দিয়ে প্রবেশ করে
নীল নীল মরুভূমি
রমণীর ছায়া -চোখ পুরুষের চোখে চোখ রেখে
হয়ে ওঠে সুন্দর আরও।
পাতালের দরজা ভেঙে বেরিয়ে আসে
গুচ্ছ গুচ্ছ ফুলের জ্যোৎস্না।
রমণীর স্পর্শে জুঁই ফুলের গন্ধ নাকে আসে
জীবনে কেউ আসে, কেউ যায়–
অনেকটা ত্রিকোণমিতির ওঠানামার মতো।
যৌবনে নারী-পুরুষের শরীরে- স্নায়ুতে গেঁথে থাকে বিদ্যুৎ।
তখন এই নারী-পুরুষেরা হঠাৎ জ্বলে
আবার হঠাৎ নিভে যায়,
এক সময় মানুষ নিজের ছায়ার খুঁজে
মানুষ দৌড়ায়,
কার ছায়া, কার পিছনে ঘুরঘুর করে
বলা মুশকিল।
ছায়া-গণিত সবাই বুঝে না।
……………..
পৃথিবীর নিয়ম-অনিয়ম
……………..
পৃথিবীর আহ্নিক আবর্তের সঙ্গে
নড়িতে পারিতেছি না কিছুতেই,
আছি নীরব অন্ধকারে
অগণন ব্যক্তিগত গ্লানি নিয়ে আছি।
নিজেকে মনে হয় বন্দি মরুভূমি
দৈব অন্ধকারে আকাশের কথা শোনার ইচ্ছে আমার নেই ,
ইন্দ্রলোকের অপ্সরীদের সম্পর্কে জানার ইচ্ছে নেই-
মহানগরের আবাসের খামের দিকে
বিস্ময়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতাম।
এখন মানুষের সুখী আবাস দেখলেই
চোখ ফিরিয়ে নিই–
চাল-চুলাহীন নিজেকে করুণা করি।
প্রভাতে ঘুম থেকে জেগে ওঠতে কষ্ট হয়
মর্নিং সিকনেস আছে আমার,
সন্ধ্যায় ফিরতে পারি না ডেরায়–
রাত হলেই মনে হয় বারবার
চাঁদের এক পিঠ থেকে আলো আর
অন্য পিঠ থেকে নেমে আসে অন্ধকার।
মানুষ আগের চেয়ে অনেক বেশি
আত্মলোলুপ,
মানুষের প্রাণের বৃহৎ কাহিনী এখন
বিরল, প্রেমেও মানুষ আগের চেয়ে
অনেক বেশি আত্মলোলুপ।
পৃথিবীতে মানুষ কোনো ভাবেই হারতে
চায় না, হারকে মেনে নিয়েই পথচলা–
এছাড়া আর উপায় কি?
………………
এই উৎসবে ধনী একটু গরিব হোক
…………….
এখানে, সেখানে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য শত্রু
বন্ধু বিরল,
কে না জানে আমরা অনেকে মিলেও একাকী।
আজ এই উৎসবের দিনে, ত্যাগের মাহাত্ম্যে–
মনুষ্যত্বের পরশ-মণি ছুঁয়ে থাক–
আমাদের সকলের অন্তর।
ভেতরের পশুকে কোরবানি করে
আমরা হয়ে উঠি অভিনতুন মানবিক।
মানুষ ও মনীষী মিলে সব ছায়াসৈনিকেরা
ত্যাগের উনুনের অতলে দাঁড়িয়ে
রান্না করুক কোরবানির সুস্বাদু গোশত।
উপাদেয় খাবার বিলিয়ে দিক–
আর্ত-মানবতার তরে।
এই উৎসবে ধনী একটু গরিব হোক–
গরিব হোক একটু ধনী।
….…………
সংসারের তীরে
……………..
রাঙা মেঘ সাঁতরায়ে কেউ কেউ ঘরে ফিরে
তাহাদের ছায়া গড়িয়ে আসে
শঙ্খবালিকার রূপ, মানিকমালা ভোর,
আর আমি পথের ধুলো গায়ে মেখে
ধুলোর আড়তে শুয়ে থাকি।
আমিও শুনেছি বেহুলার লহনার
মধুর জগতের গল্প,
আমিও পেতেছি কান জ্যোৎস্নায় একদিন,
এখনো মজেনি আকাশ—
শুকায়নি জলসিঁড়ি।
এখনো রয়ে গেছে জীবনের ব্যথিত গন্ধের
ক্লান্ত নীরবতা—
এখনো নদীকে মনে হয় কালীদহ।
আমি কি দেখিনি কৃষ্ণা দ্বাদশীর জ্যোৎস্নাকে
মরে যেতে ব্রহ্মপুত্রের তীরে?
শুনিনি কি গাঙুরের জলে বেহুলার
ভেলা ভাসানোর গল্প?
এখন আমি আপনার মনে
নিজেকে ভাঙছি ধীরে ধীরে
এখন আমি গাঢ় বিষণ্নতায়–
অসহায় সংসারের তীরে।
Mailing Address :
Gausur Rahman
7/3 Alia Madrasa Road,
Mymensingh
Cell Number :01739048616