[কবি মহিবুর রহিম (১৫ জানুয়ারী ১৯৭৩–১৬ জুলাই ২০২৫) এর অকস্মাৎ মৃত্যুতে ভাষাহীন হওয়া ছাড়া আর কোন উপায় ছিলো না। প্রথমে ফেসবুক পোস্টে কবি শাদমান শাহীদ ও পরে কবি আবিদ আজম তার এ মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন। তিনি তার নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন। ইন্না-লিল্লাহ। তিনি (কবি মহিবুর রহিম) ছিলেন আমাদের সমবয়সী–সতীর্থ। আমরা একই কালের, একই দশকের। নব্বইয়ের কবি। আরেকটি দিক দিয়ে আমি ছিলাম তার কাছের। আমরা উভয়েই পেয়েছিলাম কবি আল মাহমুদের বিরল ও গভীর সান্নিধ্য। যে জন্য আমরা নিজেদের ভাগ্যবান ও গৌরবান্বিত মনে করতাম। তিনি আমাদের লিটল ম্যাগাজিন “স্বল্পদৈর্ঘ্য”তে লেখা পাঠাতেন। লেখা পাঠানো শুরু করলেন “বাংলা রিভিউ” এর জন্য। আমরাও সাধ্যমতো তার লেখা প্রকাশ করতাম। তার লেখা নিয়ে মূল্যায়ন করতাম। ফোনে কথা বলতেন, তিনি। তার যথাযোগ্য মূল্যায়ন না হওয়ায় আফসোস করতেন। কিন্তু তিনি জনপ্রিয় বা অতি-পরিচিত মুখ না হলেও, সাহিত্যবোদ্ধাদের/যোদ্ধাদের কাছে একেবারে অপরিচিত ছিলেন না। ছিলেন না স্বীকৃতিহীন। তিনি ছিলেন আমাদের কালের একজন শক্তিমান কবি ও গদ্যকার। তার প্রকাশিত কবিতা ও কবিতারবই প্রমাণ করবে, তিনি আমাদের সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ।
‘বাংলা রিভিউ’তে প্রকাশের জন্য তার পাঠানো অনেক লেখা থেকে কয়েকটি কবিতা প্রকাশ করছি।
—সম্পাদক : বাংলা রিভিউ ]
মহিবুর রহিম
……………
লরা ভেগলিয়েরি স্মরণে
……………
রোমের হলুদ বাতাস আর আসন্ন সন্ধ্যার চোখে অশ্রু
অনেকেই তাকে সভ্যতার কান্না বলে মেনে নিতে দ্বিধান্বিত
কিন্তু দুর্দশা পতন সচেতন আত্মার কাছে চিরকালই বিব্রতকর
তাই দুঃখিত লরা তার ঝিনুক খোলসে বিষাদের রঙ ঢেলে
গড়ে তুলেন এক অনিবার্য উত্থানের নীরব প্রাচীর
তখন নিয়ন আলোতে জ¦লে উঠেছিল অদৃশ্য উদ্বেগ
প্রাচীন এই নগরীর রাস্তায়
নৈশব্দের ইমারতে ধ্বসে পড়েছিল কামনার রাত
যেন মানুষের মনে অর্ন্তদাহনের মতো মৃত্যুর মহোৎসব
কোটি কোটি ভ্রুণ মৃত্যু আলোর নিউরণে ঝরে
হয়তো দেখে না কেউ উপলব্দির সৈকতে ঢেউয়ের গর্জন
নির্জন খোলসে ঢেকে ধেয়ে আসে নৈতিক মৃত্যু
অব্যাহত কোলাহল সাইল্যান্সারে মহাপতনের আগাম গোঙানি
কে প্রশ্ন করবে, কে দেবে উত্তর? এমন অমীমাংসিত সন্ধিক্ষণে
সন্তপ্ত হৃদয়ে আশার আলোতে রক্ত ঢেলে
লেখেন তিনি অনিবার্য সাক্ষ্যদানের মতো
তার প্রতিটি অক্ষর অন্ধকারে জ্যোতির্ময় সত্ত¡া হয়ে জ্বলে!
…………….
স্বপ্নের অধিক এক উদ্যানে
……………..
শৈশবের ঘোর লাগা সবুজ সময়ে
কতবার স্বপ্নে দেখেছি সৌম্যকান্তি রবীন্দ্রনাথকে
আর মানুষ মানুষ শব্দে দিশেহারা চিরদ্রোহী
কবি কাজী নজরুল ইসলামকে
তাহারা আমাকে আশীর্বাদের ফুল দিয়েছিল হাতে
সেসব স্বপ্নকে সব সময় স্বপ্ন বলেই মনে হয়েছে
বয়ে যাওয়া নদী আর অরণ্য শস্যের মাঠ
কতোবার স্বপ্নের ডানায় উড়াল দিয়ে পার হয়ে গেছি
কোনদিন তাকে বাস্তব বলে ভাবিনি
কিন্তু ইদানিং আমার স্বপ্নগুলোকে অধিকতর কোন সত্য বলে মনে হয়
যখন বিশাল এক উদ্যানের সবুজ গালিচা হাঁটতে হাঁটতে পার হয়ে যাই
ক্লান্ত হওয়ার আগেই আমার জন্য প্রস্তুত থাকে পরিদের ডানা
বিস্ময়কর সেই নিসর্গের নদী ঝর্ণা আর প্রস্তুতকৃত পাহাড়
দেখতে দেখতে বিমুগ্ধ হয়ে বলি সোবহানাল্লাহ
আমার শোকরিয়ায় সত্তর হাজার ফেরেশতা গুঞ্জনের মতো প্রতিধ্বনি তোলে
পাখি ফুল পতঙ্গ ভোমরা গান গায় আমাকে ঘিরে
আর অসংখ্য সুরের ঝর্ণা আমার পায়ের কাছে বইতে থাকে
যেন আমি যা কোনদিন দেখিনি তা আমাকে দেখানো হয়
আমি যা কোনদিন শুনিনি তা আমাকে শুনানো হয়
আর আহারের জন্য হাজির করা হয় একটি গ্রহের সব ফল ফলাদি
যার অধিকাংশই নাম না জানা
এসব ফলের গন্ধ এমন যে আহারের আগেই ক্ষুধা ও তৃপ্তি মিটে যায়!
আমি দেখি পৃথিবীর কোন যুদ্ধ ক্ষতই আর আমার শরীরে থাকে না
মন্দার উদ্বেগ দারিদ্র্যের কষাঘাত আর যত শোকের আঘাত নিমিষেই মুছে যায়!
সে উদ্যানে ঘুরে ফিরে মনে হয় কত কাল পার হয়ে যায়
আমি কোন ক্লান্তি বোধ করি না
সমুদ্র সৈকতগুলো ঘুরে দেখি যেন এ সবই অপার্থিব
ফুলের রেণুর মতো স্নিগ্ধ ঢেউ তীরে তীরে আছড়ে পড়ে
মেঘগুলো উড়ে এসে পঙ্খিরাজ ঘোড়ার মতোন আমাকে উঠিয়ে নেয়
আর সব জ্যোতির্ময় আত্মারা সার্থক সঙ্গী হয়
যাদের হৃদয় থেকে শৈল্পিক সুন্দর আর কিছুই নেই
তারা নীরব বিছিয়ে দেয় জোছনার মতোন আচ্ছাদন
খুলে দেয় ইন্দ্রিয়জ থেকে অতিন্দ্রিয় সব আকাক্সক্ষার ভাজ
আমার আহার রূপে আনা হয় প্রতিশ্রæত মাছের ব্যঞ্জন দুগ্ধ সুস্বাদু আনার
এক ঝুরি মেওয়া ফলের শরাবন তহুরা
আমি শুধু জাগতিক অশ্রæ ভেজা আনন্দের মতো বলি আলহামদুলিল্লাহ
আমার শোকর শুনে সমস্বর ধ্বনি তুলে অগণন মালাইকা
আমার উদ্যান লেকে সম্মানিত মেহমান করে আনা হয়
কামিয়াব সকল স্বজন আর ছয় লক্ষ ফিলিস্তিনি শিশুদের
যাদের অনেকে মহান শহিদ আর সকৃতজ্ঞ ধৈর্যশীল বলে খ্যাত
তারা এডেনিক ভাষায় অর্থবোধক কবিতার তিলাওয়াত শোনায়
আর সার্থকতার অজ¯্র ঝর্ণাধারা বইয়ে দেয়
মেঘ পাখি নদী ফুল সুবাসিত বৃক্ষদল সকলেই আজ সংগঠক
হুর নামে খ্যাত সেই সঙ্গীতময়ী রমণীরা কণ্ঠে তুলে মুগ্ধ করা সুর
যা শেষ হয়ে গেলেও কোনদিন শেষ হয় না!
আমার ইচ্ছার অগ্রে আমাকে নিয়ে যায় অদেখা দৃশ্যের গুলিস্তানে
সেইসব ঝর্ণা পাখি ফুল উদ্ভিদ ও ঘাসেদের কাছে
যাদের সৌন্দর্য সুগন্ধ মর্মমূল ভেদ করে চেতনায় উঠে আসে
যে কল্পনা চিরকাল আমাকে টেনেছে তার সম্মোহন অজানার দিকে
যে অলিক সুখরাজ্য কোনদিন ধরা দেয়নি কারো কাছে
যে সার্থকতার জন্য লড়াই করেছি যুগ-যুগান্ত অবধি
আজ সবই এখানে একান্ত স্বপ্রণোদিত হয়ে দৃষ্টি ¯œায়ু ও হাতের নাগালে
সকাল দুপুর রাত এক সাথে জ্যোতির্ময় উপলব্দির গুলবাগে আলো ফেলে
আমার স্বপ্নের বিরতি ঘটে এই নান্দনিক নিসর্গে উদ্যানে ঘুরতে ঘুরতে
অথচ স্বপ্নের শেষে তার শিশির সুগন্ধ প্রাণবন্ত চেতনায় লেগে থাকে!
…………
স্বীকৃতি
…………
পথের ক্লান্তির অবসরে জুতার সুকতলি পর্যন্ত ছিড়ে যায়
পায়ে পড়ে উনুনের মতো দগদগে ব্যর্থতার ফোস্কা
সে শুধু চেয়েছিল তার স্বোপার্জিত কবিতার কিছুটা স্বীকৃতি
যা সে অর্জন করেছিল বিপন্ন মানুষের অন্তিম আকাঙ্ক্ষা থেকে
কিন্তু তার স্বীকৃতি তো তিরিশ বছরে কোথাও মেলেনি!
পন্ডিতেরা তা শোনার আগেই কেমন গিধরের মতো গোদ গোদ করে
আর উত্তরাধুনিক কবিতা ক্যাফেতে বাসি কদমের গন্ধ
অথচ বুঝি না এইসব ভাগাড়ে কী ভাবে তারা এতো এতো বগল বাজায়
আহা, শিখবার বহু আগেই তারা অভিজ্ঞ শিক্ষক হয়ে যায়!
গোপনে গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে অযোগ্যেরা রাতারাতি স্বীকৃতি বাগায়
আর অন্বেষী কবির কৃতী কর্পোরেট স্রোতে ভেসে যায়!
তবু কবি হারানো স্বপ্নের খোঁজে এ শহরে জনপদে তন্ন তন্ন ঘুরে
স্বার্থ দ্বন্দ্বর ক্রসফায়ারে নিহত নদীদের দীর্ঘশ্বাস সযত্নে তুলে আনে
গুম হয়ে যাওয়া সম্ভাবনাগুলোর সন্ধানে অবিরত পথ হাঁটে
মধ্য দুপুরে অবিচল দাঁড়িয়ে থাকে দুঃসহ রোদের রিমান্ডে
…………….
কপালে জন্মের দাগ
………………
সেই পুরনো নদীটা, যে এখন বয়সের ভাড়ে প্রায় নত
আমাকে সে পথ আগলে বলেছিলো-
তোমার কপালে একটা দাগ আছে
ঢেউ জাগা জনপদের মতন
যেখানে শস্যের স্বপ্ন দানা বাধে রাতের প্রহরে
হাওর বিলাসি এক জননীর ঘরে
আদিম কান্দার চরে শস্যগন্ধী চাঁদ নেমে এলে
অতীতের কাহিনির মতো যেন অবশেষ স্বপ্নেরা কথা বলে
সেই রাতে যুবা পুরুষেরা ফিরে আসেনি বলে
অকাল রাত্রির হিম থেকে থেকে ঝরে
সে আশঙ্কা বুকে নিয়ে স্বপ্ন বুনে হাওর জননী
তার স্বপ্নে নিষ্কলুষ শস্যগন্ধী ভোর ছিলো
আর ছিলো আজানের অক্তে জেগে ওঠা কর্মমুখী পাখি
যারা রোজ বয়ে আনতো সবুজ সোনালি ভাবিকাল
…………..
ঈদ ও হারানো সোনার পাখি
…………..
কত শত বছর পেরিয়ে গেছে
সময়ের যান্ত্রিকতা পেয়েছে নতুনতর গতি
আমি এই ক্ষুদ্র বুকে ধরে রাখি কত আশা
যা আমার অতি পুরাতন অমূল্য সম্পদ
আমি বুক ভরে রাখি কত প্রেম
যার ডালপালায় কখনো কখনো আসে রঙিন ফুলের সমারোহ
কোথা থেকে একটা সুখের প্রজাপতি উড়ে এসে বসে
আমি প্রায় নির্বাক লোচনে তাকিয়ে থাকি
আমি আমার সর্বস্ব দিয়ে উপলব্ধি করি
যেন নিস্তরঙ্গ সাগরে জাগে ঢেউ
কত বার অতীতকে একটা হারানো সোনার পাখি ভেবে বিষণ্ণ হয়েছি
কিন্তু আমার আশার চারাগাছে এলো বসন্তের সওগাত
আমি অতীত ও বর্তমানকে দেখলাম এক মহা সম্প্রীতির ময়দানে
যুদ্ধ ভুলে মহা ক্রান্তিকাল ভুলে
মারি ও মড়কের বিষণ্ণতা ঝেড়ে
সে আমাকে টেনে নিয়ে যায়
সেই শহিদি ঈদগাহে
আমি দাঁড়িয়ে থাকি শুদ্ধতম লোকারণ্যে
দেখি আমার অতীত ও বর্তমান
সব রকম ভুল ও বিবাদের রাস্তা পেরিয়ে
মিশে যাচ্ছে পবিত্র প্রাণের সান্ত্বনায়
যেন সত্যি ফিরে এলো সেই হারানো সোনার পাখি
মনে হয় যেন তার গান আমরা কতকাল শুনিনি !
আমি তার পালকের অপার্থিব গন্ধ শুঁকি
তার অনন্য বিশ্বস্ততার বুকে হাত বুলাই
আর অন্যরকম আনন্দে ভেসে বেড়াই…
…………….
ফসল তোলার মওসুম
……………..
তোমার ডান হাতের জন্যে শুভ সংবাদ
এসেছে তার ফসল তোলার মওসুম
বাম হাতের পণ্য দাহ হবে
আর ভার মুক্ত হবে জরাগ্রস্ত তোমার সময়
ইমানের মাটিতে পুঁতে দাও তোমার সংযম
ধৈর্যের উপত্যকায় আবাদ করো সবুজ ঐশ্বর্য
শৃঙ্খলিত অমঙ্গল তোমার সাফল্যে হবে হতাশ
তোমার ভান্ডার ভরে উঠবে পুণ্যের সওদায়
ঝরে যাক তোমাকে ঘিরে কর্পোরেট গ্লানির সফেন
ধৌত করে নাও তোমার মলিন সত্ত¡াকে
চারদিকে ছড়িয়ে পড়ুক তাকওয়ার সুবাস।
………….
ইফতার
…………..
ক্ষুধা তৃষ্ণা লোভ নিস্তব্ধ হয়ে থাকে
তোমার অথৈ সংযমের সামনে
বেহেস্তের উদ্যানে তখন অপার বিস্ময়
ও হার না মানা মনুষ্যত্ব
ক্লেদাক্ত দুনিয়ার নির্জন মাঠের ফুল
এ তোমার নিজস্ব গৌরব
কোথাও পাহাড় টলে তবু তোমাকে টলাতে পারে না
কোথাও পাথর গলে তবু তোমাকে গলাতে পারে না
তোমাকে ঘিরে থাকে আল্লাহর সন্তোষ
যেন ইস্পাতের মতো সুদৃঢ় রোজাদার
যখন ক্ষুধায় কাতর দিনান্তে
সামনে থাকে ইফতার।
…………..
আমি তোমারই সন্তান
…………..
আমার গতরে আজও তোমার উষ্ণ কাঁথার গন্ধ
ঝরা শিউলির মতো স্মৃতি কাতরতা ছড়িয়ে দেয় মনে
শীতরাতে হারকাঁপুনে ঠান্ডায় জমে গেলে
এখনো তোমার কথা পিদিমের আলো হয়ে জ্বলে
কার্তিকের মখমল উষ্ণ রোদে শুকানো দরদ
এখনো যে বুক বেয়ে নামে
মা গো আমি তোমারই সন্তান
আমার অস্তিত্ব জুড়ে তোমারই মাটির ঘ্রাণ
……………
তৈরি হয় ইতিহাস
…………….
সময় তো বয়ে যায় নীরবে নিভৃতে
আমি কোন অসীমের উৎস ধরে হাটি
শৈশব কৈশোর আর যৌবন পেরিয়ে
আমার হাটার চিহ্নে তৈরি হয় ইতিহাস
তারপর ধূলোঝড়
রাতের শিশির মেঘ হাতছানি দেয়
আরও দূরে আরও দূরে
আরও কোন দূরতম জীবনের প্রেমে
রিসেপ তাইয়্যেব এরদোয়ান
পূণ্যভূমি তুরস্কের বিস্ময় সন্তান
রিসেপ তাইয়্যেব এরদোয়ান
তার স্নিগ্ধ মুখ দেখে নিপীড়িত মানুষের মনে
সহসা ছড়িয়ে পড়ে জীবনের সুঘ্রাণ
ইস্তাম্বুল থেকে উড়ে আসে মুক্ত ডানার দুরন্ত গাংচিল
কৃষ্ণ সাগরের তীরে হেসে ওঠে অকুতোভয় স্বাধীন নিখিল
জয়ধ্বনি তুলে চির অপরাজেয় ভ‚মি আনাতোলিয়া
আঙ্কারা ইজমির গাজিয়ানটেক কুনিয়া
মানুষের মনে দানা বাঁধে শান্তিপূর্ণ জীবনের গান
অনুঘটক জননেতা রিসেপ তাইয়্যেব এরদোয়ান
গোটা পৃথিবী দেখে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় ষড়যন্ত্রের জাল
নতুন হিসেব কষে কলোনিয়াল ভাবের পঙ্গপাল!
দিকে দিকে জাগে মানুষের প্রাণ আসে নব উত্থান
অনুঘটক জননেতা রিসেপ তাইয়েব এরদোয়ান।
………..
জন্মের এই ট্র্যাজেডি সার্থক
…………
আমি হেঁটেছি অনেক পথ
ঘুরেছি দৃশ্যের মোহে
আমি দেখেছি তোমার বিস্ময়
মেঘ ছুঁয়ে ছুঁয়ে গেছে মন
আকাশ নেমেছে মুগ্ধ প্রান্তরে
বুকে ধরে রেখেছি নদী
এঁকেছি জন্মের স্বাক্ষর
আমার কীসের ভয়?
কত দৃশ্য মুহূর্ত ক্ষণ
এই মনে দাগ কেটে যায়
তুমি নিশ্চয় করে বলো
নিঃস্বার্থ এই মনের দামে
ভালবাসা থাকে অক্ষয়।
আমি দেখেছি অন্তর্গত আলোকধারায়
ভিন্ন পৃথিবীর সম্মোহন
আকাক্সক্ষার বানানে থাকতে চেয়েছি
কয়েক জনম
পৃথিবীর মুহূর্তকে বলেছি
জন্মের এই ট্র্যাজেডি সার্থক
এই ক্ষণস্থায়ী প্রেম ও উদ্বেগ
এই জটিলতা সংসার আপত্যস্নেহে
ছিলো আমার অসম্ভব সংরাগ
আমি দেখেছি তোমার বিস্ময়
সংগীত ও নিপুণ গাণিতিক সমন্বয়
কী বিস্ময়কর তোমার উদারতা বরাভয়
ক্ষুদ্র ও বৃহতে ব্যাপ্ত আশার প্রান্তর
প্রতিটি অভিজ্ঞতাকে বলেছি
এই জীবন ও পরিভ্রমণ সার্থক
নৈরাশ্যকে বলেছি সমূহ ক্ষতির শঙ্কায়
আমার কীসের ভয়?
……………..
স্বরচিত ভুবনের নির্মাতা
(সালাহউদ্দিন আইয়ুবকে নিবেদিত)
……………….
নিগুম পৃথিবী ভরা মানুষের ভাগার পেরিয়ে
কতবার মানুষের নাম উচ্চারণ করেছি
যারা মূলত দূরদৃষ্টি সম্পন্ন মানুষ
মেধা প্রতিভা আর দায়িত্ব সম্পন্ন মানুষ
যাদের সান্নিধ্য ঘনিষ্ঠতা আলাদা রকম মনে হয়েছে
যাদের বাচনভঙ্গি ব্যক্তিত্ব চলার ধরন আলাদা মনে হয়েছে
আমিও মুগ্ধ হয়ে তাদের কথা বারবার বলতে চেয়েছি
যারা মূলত এই পৃথিবীকে জয় করার জন্য আসে
আর সত্যকে অবিচল উচ্চারণ করার সক্ষমতা রাখে
যারা স্বরচিত ভুবনের নির্মাতা হয়ে উদ্ভাসিত
আমি মুগ্ধ হয়েই তাদের কথা উচ্চারণ করেছি
সন্ন্যাস ও ভনিতায় কোনকালে আস্থা নেই বলে
যাদের মুঠোতে শুধু খড়িমাটি নিরর্থক বিবৃতি
আমি সেইসব ভাগার থেকে পালিয়ে এসেছি
ফলবান সবুজাভ মানুষের খোঁজে
যাদের হৃদয়ে আছে বৃক্ষের মতন সমৃদ্ধ উত্থান
যারা সবসময় নদীর মতন গতিশীল
আর যাদের মনন আকাশের মতো বিস্তৃত
আমি ব্যক্ত করেছি তাদের প্রতি আমার গভীরতম অনুরক্তি।
……………….
নির্জনতার কালো আখর
………………..
নির্জনতার গহন ভাষার ঝুরঝুরে কালো আখর
প্রায়শ আমার অনুভূতিকে বহুদূরে ভাসিয়ে নিয়ে যায়
সেখানে কোন দিগন্ত থাকে না
বাঁধা বন্ধন থাকে না
সেখানে অদ্ভুত ইনফ্রারেড তরঙ্গে আমার চেতনাকে ছড়িয়ে দিই
আমার সমগ্র কল্পনার জগত এই প্লাবণের অংশী হয়ে ওঠে
আমার প্রতিটি ক্ষতের ভেতর থেকে
দুঃখ অবসানের সংগীত ধ্বনি জেগে ওঠে!
প্রতিটি ব্যর্থতা আর দারিদ্র্যের ভেতর থেকে
আমার অনুভবও অনেকটা মওলানা রুমির মতন
মহাজাগতিকতার রহস্য পথের সন্ধান পেয়ে
মহাকবি হাফিজ সিরাজীর ছন্দের বারান্দায় নেমে যায়
সেখানে এক উর্ধ্বস্তরের জীবনকে প্রত্যক্ষ করে
যে জীবন কোনদিন আমাকে ধরা দেয়নি
যে জীবনের প্রত্যাশা ক্রমাগত রক্ত ঝরিয়েছে বুকের গহীনে
আমি হাত দিয়ে অনুভব করি
আমার সমস্ত ক্ষয়-ক্ষতি সিরাজের গুল বাগের মতোন
গহীন নির্জনতার বনে ফুল হয়ে ফুটে আছে
আর তার থেকে বয়ে যাচ্ছে পরম সার্থকতার ঘ্রাণ
আমার সব মর্মান্তিক দুঃখ-শোক, জাগতিক ব্যর্থতা, ক্লেদ
নির্জনতার গহন অনুভবে কোন এক নদী হয়ে ভাসে…
……….
ঈদ
………..
কোন সৌন্দর্যই আর এত সুর আকর্ষণ বহন করে না
যেমনটা দেখা যায় ঈদের চাঁদের ক্ষীণ আলোক প্রভায়
এভাবে কত না দিন অবিরত আসে আর যায়
ঈদের দিনের মতো রঙে রূপে তীব্রতর হয় না কোনটাই!
কত কিছু ক্ষয়ে যায় ঈদের প্রতীক্ষা নিয়ে মন জেগে থাকে
একটি বছর শেষে আসে ঈদ ঊচ্ছ¡সিত চাঁদের সংকেতে
কিংবা কোটি হৃদয়ের স্বপ্ন নিয়ে সহসাই নামে পৃথিবীতে
অপার্থিব আনন্দের দায়ভার মানুষেরে দিতে।
হয়তো বা তাই অন্তর্গত প্লাবনের ধারা নামে সব জনপদে
আকাশের সংগোপন রঙগুলো জন্ম নেয় মানুষের মনে
প্রাচীন মনের সুর ফিরে আসে অনাদি মনের অভিধানে
একটি দিনকে দেয় বিশেষ মহিমা তার সুরে আর ঘ্রাণে।
ঈদ এলে যেন সব ফুলের পাপড়ি পায় নিজের স্নিগ্ধতা
ঈদ এলে দিন-রাত্রি খুঁজে পায় প্রকৃতির ন¤্র সজীবতা
মন ভরে দিয়ে যায় আনন্দের সকল কবিতা
বুভুক্ষের বুক থেকে নেমে যায় হাহাকার চিতা!
…………..
কবি মহিবুর রহিম
সিরাজুল ইসলাম ভবন ৫মতলা
নিয়াজপার্ক, কাউতলী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
মোরাইলঃ ০১৭১০২৫৭৩১৯
কবি মহিবুর রহিম— এর আকস্মিক ইন্তেকালের খবর শুনে খুবই মর্মাহত হলাম। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
তিনি আমাদের নব্বই দশকের কবি।
তার কবিতা উজ্জ্বল আশাবাদের আলো জ্বেলে এগিয়ে চলে ।
শিল্পঋদ্ধ কবিতা লিখেছেন তিনি ।
তার কবিতা সমগ্র প্রকাশিত হওয়া দরকার ।