spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদসাম্প্রতিকতিনটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ও জুলাই বিপ্লবের ছাইচাপা আগুন

লিখেছেন : আমান আবদুহু

তিনটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ও জুলাই বিপ্লবের ছাইচাপা আগুন

আমান আবদুহু

আবুল বারকাত, তসলিমা নাসরিন এবং সায়মা ওয়াজেদ পুতুল — পরপর তিনটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় আশা জাগলো। জুলাই বিপ্লবের ছাইচাপা আগুন হয়তো এখনো কোথাও না কোথাও জ্বলছে। 

হঠাৎ দেখা গেলো বারকাতকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আচমকা, কিন্তু অনেক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। বারাকাত বাংলাদেশে বিশেষ একটা শ্রেণীর প্রতিনিধিত্ব করে। শিক্ষিত সুশীল প্রগতিশীল শ্রেণী। ক্ষমতার পেছনের ক্ষমতাবান শ্রেণী। হাসিনার ফ্যাসিবাদী ক্ষমতার শক্তিশালী একটা ভিত্তি ছিলো এই শ্রেণীটা। 

বাংলাদেশে বারাকাতদের ক্ষমতা এখনো অনেক বেশি। হাসিনার পতনের পরও। মিডিয়ার শিরোনাম দেখি, জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল বারাকাত গ্রেফতার। অথচ শিরোনাম হওয়া উচিত ছিলো, তিনশ কোটি টাকা আত্মসাৎকারী ব্যাংক লুটেরা আবুল বারাকাত গ্রেফতার। কেবল আমার দেশের ইউটিউব চ্যানেলে শিরোনাম পেলাম “অবশেষে ‘ব্যাংক খেকো’ বারকাত গ্রেপ্তার’। প্রথম আলোর শিরোনাম “অধ্যাপক আবুল বারকাত গ্রেপ্তার”। এই যে শিরোনামের পার্থক্য, এটাই হলো বাংলা প্রগতিশীলদের ক্ষমতা। এ ক্ষমতার কারণেই বিএনপি এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সওদা করতে ভুখা কুকুরের মতো জানপ্রাণ লড়িয়ে দিচ্ছে। 

বারকাতের একটা ঘটনা শুনেছিলাম। ঘটনা খুব ছোট, কিন্তু অর্থবহ। বারাকাত কিন্তু আসলেই বিশাল ধনকুবের। সে নিজেকে “শিক্ষক মানুষ” দাবী করে, রাশিয়ান গান্ডু শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে বালছালের গবেষণা করে কিন্তু তার আসল শক্তি হলো টাকা। অনেক শিল্পপতিরও তার মতো টাকা ও সম্পত্তি নাই। সুতরাং একবার ঢাবি এলামনাই এসোসিয়েশন তার কাছে অনুদান চাইলো, সে দশ লাখ টাকা দিবে এইরকম একটা এগ্রিমেন্ট হইলো। তারপর সে এলামনাই এসোসিয়েশনের অফিস পরিদর্শন করতে আসলো। 

অফিস ঘুরেফিরে দেখতেছে। এইটা এই রুম, ঐটা সেই রুম ইত্যাদি দেখতে দেখতে এক সময় তাকে দেখানো হলো এইটা হলো নামাজের রুম। সাথে সাথে তার মাথার তার ছিড়ে গেলো। নামাজের রুম কেন? আপনারা সাম্প্রদায়িক ইত্যাদি ইত্যাদি। সে ওখান থেকেই চলে আসলো এবং অনুদানের টাকাটা আর দেয়নাই। 

বাংলাদেশের বারকাতদের সাম্প্রদায়িক চেহারা ও বর্ণবাদী ঘৃণা এতোটাই কদর্য। নামাযের জায়গা থাকবে, এইটা একটা সামাজিক অধিকার ও বিষয়। এটাও তারা সহ্য করতে পারে না। বাংলাদেশের মানুষের জন্য এতোটাই তারা গণশত্রু। 

চব্বিশের জুলাই বিপ্লব বাংলাদেশের ইতিহাসে অনেক বড় ঘটনা। হয়তো আমরা বামনের দল কামড়াকামড়ি করে এইটাকে শেষ করে দিতে পারি, ভবিষ্যতেই বলে দিবে, কিন্তু ঐ সময়টা বাংলাদেশের ইতিহাসে অনন্য থেকে যাবে। এই সময়টার মূল পরিচয় খুনী হাসিনার পতন, কিন্তু এই পতনের অনেকগুলো আঙ্গিক আছে। আমার বিশ্বাস ও ধারণা, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম একটা শক্তিশালী আঙ্গিক ছিলো বাঙালি মুসলমানের আত্মরক্ষার চাহিদা। হিন্দুত্ববাদের দালাল হাসিনা ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের সীমাহীন গোলামী আচরণ বাংলাদেশের মুসলমানদেরকে এ নিরুপায় অবস্থায় নিয়ে এসেছিলো। সুতরাং চব্বিশের অনেক স্টেকহোল্ডার আছে। এমনকি কিছু বাম শাহবাগি স্টেকহোল্ডারও আছে, এবং তারাও গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সবচেয়ে বড় স্টেকহোল্ডার মুসলমানরা। এইটা একদিক থেকে যেমন ভালো, আরেক দিক থেকে আশংকার বিষয়। 

বিপ্লবে মুসলমানিত্বের এ বিষয়টা উপস্থিত থাকার আরেকটা বড় প্রমাণ হলো তসলিমা নাসরিনদের কান্নাকাটি। হিন্দুত্ববাদের দাসীটা বিএনপির ফজলু গুন্ডার ভিডিও শেয়ার দিয়ে লিখেছে “এই সেকুলার দেশপ্রেমিক মানুষটি প্রধানমন্ত্রী হলে দেশের উন্নতি হবে।” সেকুলার শব্দের আড়ালে ভারতের গোলামি করা পক্ষটাই হলো চব্বিশের পরাজিত পক্ষ। সুতরাং একাত্তরের আড়ালে তারা মরণ কামড় দিতে চায়। তাদের টিকে থাকার আর কোন অবলম্বন নাই। একটাই রাস্তা এখন। একাত্তর। মুক্তিযুদ্ধ। আবারও, দুঃখজনক বিষয় হলো বিএনপি একাত্তর চোষা শুরু করেছে। বিএনপি আসলেই ধীরে ধীরে চব্বিশের বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছে। এই রাস্তায় চলতে থাকলে শীঘ্র দেখা যাবে বিএনপি বাংলাদেশের মুসলমানদের মুসলমানিত্বের বিরুদ্ধেও দাঁড়িয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের মতো।

চলমান কামড়াকামড়ি দেখে হতাশ লাগতে পারে। হাসিনার পতনের পর যেখানে দেশ গঠনের কথা ছিলো, সেইখানে কামড়াকামড়ি চলতেছে। মনে হয় চব্বিশ মৃত হয়ে গেছে। তারপর হঠাৎ এমন কিছু ঘটে, মনে হয়, না!! এখনো চব্বিশ মরে নাই। বারকাতের গ্রেফতার এমন একটা ঘটনা। ডাইনির মেয়ে পুতুলের হু থেকে সাসপেন্ড হওয়াও তেমন আরেকটা ঘটনা। এইসব ঘটনায় আবার মনে হয়, চব্বিশ পুরোপুরি দুর্বল না। শক্তিসামর্থ্য আছে এমন কিছু মানুষ কোথাও সম্ভবত চব্বিশের জন্য এখনো কাজ করতেছে। 

চব্বিশের প্রাণ যদি পুরোপুরি মরে গিয়ে না থাকে, চব্বিশ যদি জ্যাতা থাকে, তাহলে এইসব কামড়াকামড়ি আখেরে বড় কোন ক্ষতিকর ঘটনা হবে না। ক্ষমতার জন্য কামড়াকামড়ি স্বাভাবিক বিষয়। বাংলাদেশের রাজনীতিও সবসময়ে নোংরা এবং পাশবিক। কিছুটা ঠিক হতেও সময় লাগবে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ের ইতিহাস যদি ভুল শিক্ষা না দেয়, বাংলাদেশ আজকে যেখানে দাঁড়িয়ে আছে, এই দেশের ভবিষ্যতের জন্য বড় হুমকি এখন হিন্দুত্ববাদ কিংবা হিন্দুত্ববাদের নব্য দালাল বিএনপি না, বরং বাংলাদেশের মানুষের এখন ইসলামী উগ্রপন্থা নিয়ে শংকিত হওয়া উচিত। চব্বিশে ইসলাম এলিমেন্টের উপস্থিতির কারণে এই আশংকা আরো বেশি যৌক্তিক ও প্রয়োজনীয়। তার সাথে যোগ হয়েছে ইসলামী দল জামায়াতে ইসলামীর এমপি পদ পাওয়া ও ক্ষমতার কাছাকাছি যাওয়ার জন্য পাগল হয়ে যাওয়া। চব্বিশকে জীবিত রাখতে পারলে, ভারতের দালালি করা বিএনপিকে বাংলাদেশের মানুষেই ঠেকিয়ে দিতে পারবে। কিন্তু ক্ষমতার জন্য পাগল জামায়াতে ইসলামী হলো বাংলাদেশের জন্য ট্রোজান হর্সের মতো বিপদজনক, বাংলাদেশের মুসলমানরা যাকে ভালোবেসে কোলে তুলে নিতে পারে। এই কোলে তুলে দিতে নিচ থেকে ঠেলবে তাহাজ্জুদি ইমাম হযরত ওয়াকার হাফি’র দল। তারপর একসময় দেখা যাবে আকাশ ভরা তারা। অর্থ্যাৎ জেমসের গানের মতো আর কি, তারায় তারায় ভরিয়ে দেবো। সম্প্রতি একজন ইমাম সাহেবকে যে এক আশেকে রসুল কোপাইছে, এইটা খুবই ভয়াবহ একটা সিম্পটম। 

বাংলাদেশের দরকার মাহাথিরের মতো নেতা। ইসলাম পরিচয়কে ইতিবাচকভাবে নিতে পারবে, হিন্দুত্ববাদের বিপক্ষে দাঁড়াতে পারবে, কিন্তু ইসলামের নামে ফাঁদগুলোতে আটকে যাবে না। ইসলামের গ্লাস থেকে যে পানি খাবে, কিন্তু মাথার উপর ইসলামের বালতি ঢেলে যে ভিজে জবজবে হয়ে যাবে না। যে ইসলামকে সমর্থন দিবে, একই সমর্থন দেবে সব ধর্মের মানুষদেরকে, এবং ইসলাম পরিচয় নিয়ে ধান্দা করবে না। দেশের নেতা নামাজ না পড়ুক, মদ খাক, এসব আমার সমস্যা না। কিন্তু আমি চাই ন্যায়পরায়ণ নেতা। যে আমাকে নামাজ পড়ার সুযোগ দেয়ার জন্য শক্ত থাকবে। বারকাতদের মতো সাম্প্রদায়িক ঘৃণাজীবি গোলামদেরকে ডান্ডার উপর রাখবে।

(সোনার পাথরবাটি)

বাংলাদেশের দরকার এমন নেতা যে হবে সিদ্ধান্ত গ্রহণে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, কিন্তু তার দরকার বিপুল জনসমর্থন। আমাদের দুর্ভাগ্য হলো বাংলাদেশে এখন সেই সমর্থন আছে টিংকু জিয়া ভাইয়ার। কিন্তু তিনি নিজে সিদ্ধান্ত নেয়া তো দূরের কথা, আশেপাশের সাঙ্গপাঙ্গদের দিয়ে পরিচালিত হন। যার কারণে চব্বিশের এক বছর যেতে না যেতেই যিনি ভারত আব্বুকে চাটতে শুরু করে দিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধ চুষতে শুরু করে দিয়েছেন। যার কারণেই বাংলাদেশে আজকে এতো অস্থিরতা। তার লেলিয়ে দেয়া ফজলু গুন্ডাদের মতো জানোয়ারেরা মুক্তিযুদ্ধ করা শুরু না করলে নয়নদের মতো চাঁদাবাজ খুনীরাও রাস্তায় রাজত্ব করতে সাহস পেতো না। অনেক আগেই পালিয়ে যেতো।

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

নয়ন আহমেদ on কবিতাগুচ্ছ
সাজ্জাদ সাঈফ on বাছাই কবিতা
নয়ন আহমেদ on বাছাই কবিতা
নয়ন আহমেদ on ১০ টি কবিতা