spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদসাম্প্রতিকমাইলস্টোন স্কুলে বিমান বিধ্বস্ত, নাগরিকদের নিরাপত্তা কোথায়?

লিখেছেন : আবু তাহের সরফরাজ

মাইলস্টোন স্কুলে বিমান বিধ্বস্ত, নাগরিকদের নিরাপত্তা কোথায়?

আবু তাহের সরফরাজ

শোকে মূহ্যমান বাংলাদেশ। কচি-কচি মুখের নিষ্পাপ শিশুর আগুনে পোড়া মরদেহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে দেখে আমাদের চোখ ভিজে উঠছে। মৃত শিশুদের বাবা-মায়ের বুকভাঙা আর্তনাদে কেঁপে-কেঁপে উঠছে বাতাস। শিশুদের এই মৃত্যু মেনে নেয়ার মতো নয়। যে শিশুরা এখনো জগতের ক্রুরতার সঙ্গে ঠিকঠাক পরিচিত হয়ে ওঠেনি, সামান্য একটু হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলে ব্যথায় কেঁদে ওঠে মায়ের বুকে গিয়ে ঝাপিয়ে পড়তো, সেই শিশুরা আগুনে পুড়ে তীব্র যন্ত্রণায় কাতরাতে-কাতরাতে মারা গেছে। এই শোক কিভাবে সামলে উঠবেন তাদের পিতা-মাতা? একসঙ্গে এতগুলো শিশুর এহেন মর্মান্তিক মৃত্যু কি এর আগে বাংলাদেশ দেখেছে? যার যায়, সেই বোঝে সন্তান বিয়োগের মর্মছেঁড়া যন্ত্রণা কতটা অসহনীয়। নাহ, সেই যন্ত্রণা আসলেই সহ্য করার মতো নয়। সকল সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে সেই যন্ত্রণা পিতা-মাতাকে মহাশূন্যের নিঃসীম শূন্যতায় নিয়ে ফেলে দেয়। বেঁচে থাকার কোনো মানেই তারা খুঁজে পান না। কিন্তু আশপাশের মানুষের শোকের চেয়েও আদিখ্যেতা দেখে আমরা মানুষের মানবিক অনুভূতি সম্পর্কে বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ি। মাইলস্টোনের আঙিনায় পুড়ে ঝলসে যাওয়া শিশুটি উলঙ্গ হয়ে দৌড়াচ্ছে। এই দৃশ্য চোখের সামনে দেখলে চোখের পানি আটকে রাখা সম্ভব নয়। যদিও গাজায় প্রতিদিন ইজরায়েলি সেনাবাহিনী শিশুদেরকে গুলি করে মারছে। তবে সেটা আমরা গণমাধ্যমে পড়ি, আর ধিক্কার দিই নেতানিয়াহুকে। কিন্তু চোখের সামনে দেখা জীবন্ত বাস্তবতায় আমরা কী করেছি? মৃত্যু যন্ত্রণায় কাঁদতে থাকা শিশুটির সাহায্যে আমরা কেউ এগিয়ে যায়নি। বরং হাতে থাকা স্মার্টফোন দিয়ে ভিডিও করেছি। ছবি তুলেছি। এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করেছি। কারণ, ভিডিওতে যত ভিউ তত টাকা। লাইক, কমেন্ডস। আমাদের এহেন মনেবৃত্তি ইজরায়েলি বর্বরতা থেকে কোনো অংশেই কম নয়। ছোটবেলায় আমরা ভাব-সম্প্রসারণ লিখতাম, বিজ্ঞান আমাদের দিয়েছে বেগ, কেড়ে নিয়েছে আবেগ। আজকের প্রযুক্তি-সভ্যতায় মানুষের অন্তর্নিহিত মনুষ্যত্ব রূপান্তরিত হয়ে গেছে যান্ত্রিক কাঠামোতে। মানুষ এখন মানুষ নয়, যন্ত্র। বুধবার এনসিপির সমাবেশ ঘিরে আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের হামলা নিয়ে কয়েকদিন দেশের মানুষ উত্তেজিত ছিল। সোমবার মাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর থেকে সেই উত্তেজনা নতুন ঘটনায় মোড় নিয়েছে। এটাই বাঙালির জাতীয় চরিত্র। যখন ঘটনা তখনই উত্তেজনা। এরপর সেই ঘটনার নেপথ্যের কারণ কিংবা বিশ্লেষণের কোনো দায় বাঙালি আর উপলব্ধি করে না।

সকল প্রতিষ্ঠানে অগ্নি-নির্বাপক রাখা বাধ্যতামূলক। কিন্তু দুর্ঘটনার সময় মাইলস্টোনে কি অগ্নি-নির্বাপক ব্যবস্থা কার্যকর ছিল? থাকলে হয়তো হতাহতের সংখ্যা অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব হতো। প্রতিষ্ঠানটি দেশের একটি নামি ও দামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অভিভাবকরা সন্তানদেরকে এই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করেন ভবিষ্যতের সুন্দর জীবনের প্রত্যাশায়। আর তার জন্য প্রতি মাসে তাদের দিতে হয় মোটা অঙ্কের টাকা। সত্যি যে, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বলতে যা বোঝায় দেশে এখন সেই রকম প্রতিষ্ঠান নেই বললেই চলে। শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের নামে সবই এখন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। কিন্তু ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানেও তো অগ্নি-নির্বাপক ব্যবস্থা রাখা বাধ্যতামূলক। সেটি কেন রাখা হয়নি? হয়নি কারণ, অব্যবস্থা এই জাতির মৌলিক বৈশিষ্ট্য। যে-কোনো ঘটনা ঘটে যাওয়ার আগে এই জাতি প্রস্তুতি নিয়ে রাখে না। ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে প্রতিরোধমূলক প্রস্তুতি গ্রহণ করে, তা-ও লোক-দেখানো। জাতীয় এই অব্যবস্থা যে রাষ্ট্রের বৃহৎ পরিসরে বিস্তৃত তার প্রমাণ পাওয়া গেল যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের মধ্য দিয়ে।

জনবসতিপূর্ণ এলাকায় যুদ্ধবিমান প্রশিক্ষণ কি বাঞ্ছনীয়? এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের কিছু নীতিমালা ও নির্দেশনা রয়েছে। যেমন: জনবসতিপূর্ণ এলাকার আকাশে যুদ্ধবিমান প্রশিক্ষণ করা যাবে না। মহড়ার আগে স্থানীয় জনগণকে অবহিত করা। বিকল্প স্থান হিসেবে জনবসতিহীন এলাকার আকাশ বেছে নেয়া। কিন্তু আমাদের দেশে কি এসব নীতিমালা অনুসরণ করা হয়? ঘয় না কারণ, আমাদের রাষ্ট্রের রন্ধ্রে-রন্ধ্রে রয়েছে অব্যবস্থাপনা। আর সেজন্যই আমরা দেখি, নিয়মিত প্রশিক্ষণের জন্য ঢাকার আকাশ দিয়ে উড়ে যায় যুদ্ধবিমান। বিশেষ করে মিরপুর ও তেজগাঁওয়ে এই দৃশ্য প্রায়ই চোখে পড়ে। অথচ প্রশিক্ষণের জন্য দেশে বেশ কয়েকটি এয়ারফিল্ড রয়েছে। সেগুলো ব্যবহার করা হয় না। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে থেকে সামরিক বাহিনীর যুদ্ধবিমানগুলো প্রশিক্ষণের জন্য উড্ডয়ন ও অবতরণ করে। একই রানওয়ে থেকে যাত্রীবাহী ও বাণিজ্যিক প্লেনও ওঠানামা করে। বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর আর কোনো দেশে এই অব্যবস্থা নেই। সব দেশেই দুই ধরনের বিমানের জন্য আলাদা-আলাদা রানওয়ে রয়েছে। তবে সব সম্ভবের দেশ বলেই বাংলাদেশে একই রানওয়েতে যুদ্ধবিমান ও যাত্রীবাহী বিমান ওঠানামা করে। দেখা যাচ্ছে, আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের নীতিমালার তোয়াক্কা করছে না বাংলাদেশ। এর ফলে প্রাণ দিতে হলো আমাদের নিষ্পাপ সন্তানদের।

বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ৬টি পুরনো ও পরিত্যক্ত এয়ারফিল্ড রয়েছে। যেখানে নিয়মিত কোনো বাণিজ্যিক কিংবা সামরিক কার্যক্রম নেই। অথচ সামান্য মেরামত করে নিলেই এসব এয়ারফিল্ড যুদ্ধবিমান প্রশিক্ষণের উপযোগী করা সম্ভব। পাবনা-নাটোর সীমান্তে অবস্থিত ঈশ^রদী এয়ারফিল্ড থেকে একটা সময়ে বাণিজ্যিক বিমান চলাচল করতো। ২০১৪ সালে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে এই ফিল্ডকে সীমিতভাবে ব্যবহার করছে সেনাবাহিনী,  নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী। এর ৪ হাজার ৭০০ ফুটের রানওয়ে থাকলেও  নেই রক্ষণাবেক্ষণ। ১৯৪০ সালের ঠাকুরগাঁও এয়ারফিল্ড ১৯৮০ সালে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। এই এয়ারফিল্ডও সংস্কার করে নেয়া যেতে পারে। প্রশিক্ষণের জন্র কুমিল্লা এয়ারফিল্ডও ব্যবহার করা যেতে পারে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই ফিল্ডটি নির্মিত হয়। ১৯৮৬ সালের পর এটি বন্ধ হয়ে যায়। লালমনিরহাট এয়ারফিল্ডটি সংস্কার করে নেয়া যেতে পারে। একসময় এটি এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বিমানঘাঁটি ছিল। বর্তমানে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ও বাংলাদেশ অ্যারোস্পেস অ্যান্ড অ্যাভিয়েশন ইউনিভার্সিটি এখানে সীমিতভাবে কার্যক্রম চালায়। তবে প্রশিক্ষণ বিমান চালানো হয় না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তৈরি এই বিমানবন্দরটি ৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। টাঙ্গাইলের এয়ারফিল্ডটি বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণের জন্য সীমিতভাবে ব্যবহার হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মার্কিন বাহিনীর বেজ হিসেবে ব্যবহৃত হতো ফেনী এয়ারফিল্ড। এয়ারফিল্ডের ৪৮ একর জায়গার ওপর একটি রানওয়ে হওয়ার কথা থাকলেও সেখানে ২০০৬ সালে ফেনী গার্লস ক্যাডেট কলেজ স্থাপন করা হয়। বাকি অংশ এখন সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এখানে আমরা পেলাম ব্যবহার করা যেতে পারে এমন কয়েকটি এয়ারফিল্ড। কেবলমাত্র সরকারি উদ্যোগের অভাবে সেগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে না। এতদিন এই বিষয়ে কেউ কথা বলেননি। মাইলস্টোনের মতো বড় কোনো দুর্ঘটনা এতদিন ঘটেনি বলেই এ বিষয়ে কেউ গা করেননি। কিন্তু এবার করছেন। নৌপরিবহন, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম. সাখাওয়াত হোসেন গণমাধ্যমকে বলেছেন, “ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য সব সংস্থা ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে বলব, এ ধরনের ট্র্রেনিং কোথায়, কী করলে,  কোন চ্যানেলে করতে হবে সেটা নতুন করে দেখা প্রয়োজন। ঢাকা শহর ঘনবসতিপূর্ণ। যে-কোনো কিছুতে একটা ট্র্যাজেডি ঘটতে পারে। নানা কারণেই বিমান বিধ্বস্ত হতে পারে। এর মধ্যে প্রধান কারণ,  টেকনিক্যাল এরর ও পাইলট এরর। যদিও উড়োজাহাজগুলো পুরোনো।”

সেই পুরনো উড়োজাহাজ কেন ঢাকার আকাশে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালালো, সেই প্রশ্ন এখন আমাদের। বিধ্বস্ত বিমানটি ছিল চীনের  Chengdu কোম্পানির উৎপাদিত  FT‑7 BGI (trainer), বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর FT‑7 BGI প্রশিক্ষণ বিমান। বিমানটির প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য হচ্ছে:  ডাবল‑ডেল্টা উইংস, মাক ২.২ পর্যন্ত গতি (≈২,৭০০ কিমি/ঘণ্টা), ৩টি গঋউ ও ঐটউ সহ ডিজিটাল ককপিট। কেএলজে‑৬ এফ রাডার দিয়ে ≈৮৬ কিমি দূর থেকে লক্ষ্য শনাক্ত ও একাধিক লক্ষ্য ট্র্যাকিং, ছয় হার্ড পয়েন্টে চখ‑৫/৭/৯, বোমা ও রকেট বহন সক্ষমতা। এফ-সেফেন বিজিই বিমান আসলে চীনা চেংডু জে-সেভেন জঙ্গি বিমান। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ চীন থেকে এই মডেলের ১৬টি বিমান কিনেছিল। ওই বছরই চীন এসব বিমানের উৎপাদন চিরতরে বন্ধ করে দেয়। ২০২৩ সালের পর চীন এসব বিমানের উড্ডয়ন পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। এই রকম বিমান ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাও এখন আর ব্যবহার করে না।

যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেই যে বিমানটি মাইলস্টোন স্কুলের ওপর বিধ্বস্ত হয় তার প্রমাণ হিসেবে গণমাধ্যমে আমরা দেখছি, পাইলক তৌকির ইসলাম উড্ডয়নের সময় বিমানটির যান্ত্রিক ত্রুটি লক্ষ্য করেন। এরপর তিনি প্রাণপণে চেষ্টা করতে থাকেন বিমানটিকে সরিয়ে জনশূন্য স্থানে নিয়ে যেতে। এক্ষেত্রে তিনি নিজের জীবনের মায়াও করেননি। এটাই মহত্তের পরিচয়। কেবল একটি বোতামে চাপ দিলেই খুলে যেত প্যারাসুট। বেঁচে যেতেন তিনি। কিন্তু ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির তা করেননি। কারণ, তিনি ভেবেছিলেন নিচে থাকা মানুষগুলোর কথা। যে ভাবনা আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা কখনোই করেন না। অথচ তৌকিরের মতো মহৎপ্রাণ যদি রাজনীতিবিদরা হতে পারতেন তাহলে এই জাতির জাতীয় জীবনে বারবার স্বৈরশাসক নেমে আসতো না। দেশের দুর্নীতি ও লুটপাট বন্ধ হতো। সাধারণ মানুষ শান্তিতে জীবন কাটাতে পারতো। শত চেষ্টা করেও তৌকির বিমানটিকে সরাতে পারেননি। ফলে ফুলের মতো নিষ্পাপ শিশুদের সাথে বিসর্জন দিলেন নিজের জীবনটাও। মূলত যান্ত্রিক ত্রুটিই যে দুর্ঘটনার প্রধান কারণ সেটা আমরা নানাভাবে জানতে পারছি। তবে সরকারি তদন্তে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে। কিন্তু সেই তদন্ত কতটা নিরপেক্ষ ও সত্য হবে সেটাও দেশবাসীর প্রশ্ন হয়ে উঠেছে। কারণ, দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা নিয়ে এরই মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। মঙ্গলবার দুপুরে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৩১। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মাইলস্টোন স্কুলের শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ দাবি করছে, মৃতের সংখ্যা দুশো।  

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় শতাধিক ব্যক্তি মারা গেছে বলে ধারণা করছেন 

মঙ্গলবার বিকেলে রংপুর সদরের মমিনপুর স্কুলমাঠে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান বলেন, “গতকাল ঢাকার উত্তরায় একটি সামরিক প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে পাইলট মারা গেছেন। আমাদের ধারণা, সঙ্গে শতাধিক লোক মারা গেছে। এরা কারা? এরা কচি কচি বাচ্চা, স্কুলের বাচ্চা। মায়ের বুকের খাঁচা থেকে ওরা চলে গেছে। আমরা এই পরিবারগুলোর প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করছি।”

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলামোটরে জাতীয় নাগরিক পার্টির  অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম বলেন, “বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের সঠিক সংখ্যা প্রকাশ করতে হবে। পুরো ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত। সোমবার রাত থেকে মরদেহ গুম করা নিয়ে এক ধরনের প্রচারণা দেখছি। সেক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে সঠিক বক্তব্য রাখা উচিত ছিল। দুর্ঘটনার সময় কতজন শিক্ষার্থী ছিল, সেগুলো প্রকাশ করা উচিত।”

সুতরাং, নিহতের সংখ্যা নিয়ে জনমনে যে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে সেই প্রশ্নের আলোকেই বোঝা যায়, দুর্ঘটনার তদন্তে এদিক-ওদিক করা হতে পারে। ছয় দফা দাবি নিয়ে মঙ্গলবার বিকেলে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ের প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভ করে। একপর্যায়ে তারা ফটকের ভেতর ঢুকতে চেষ্টা করে। এসময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়। আহত ৮০ শিক্ষার্থীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। এরই পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা মাইলস্টোন কলেজে ৯ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, শিক্ষা উপদেষ্টা ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমকে। শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবি মেনে নেয়ার পরই তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়।

দেখা যাচ্ছে, রাষ্ট্রের দায়িত্বহীনতায় বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষ। জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে গঠিত নতুন বাংলাদেশের অন্তবর্তী সরকারের কাছে দেশবাসীর অনেক দাবি ছিল। বিগত সরকারের সময়ে মৃতপ্রায় দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে মেরামত করবে নতুন সরকার, সাধারণ মানুষ এই আশায় বুক বেঁধেছিল। অন্তবর্তী সরকার সংস্কারের আশ্বাস দিলেও কার্যত কোনো সংস্কার এখনো দৃশ্যমান দেখতে পায়নি দেশের মানুষ। রাষ্ট্রের সামান্য অব্যবস্থাপনায় কী পরিমাণ মারাত্মক বিপদ ঘটে যেতে পারে তার প্রমাণ সোমবার আমরা দেখলাম মাইলস্টোন স্কুলে। ভোটাভুটি নির্বাচনের চেয়ে দেশের মানুষের সবচেয়ে বেশি জরুরি রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের সুষ্ঠু কার্যক্রম ও নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা। আমরা আশা করবো, দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তায় সেই পথেই এগোবে বিপ্লবোত্তর অন্তবর্তী সরকার। রাষ্ট্রের উদাসীনতায় যেন আর কোনো মানুষের মৃত্যু না-হয়, সেজন্য যথোপযুক্ত সংস্কার সাধন করেই যেন নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।  

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
- Advertisment -

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

তনজিম আতিক on কবিতাগুচ্ছ
নয়ন আহমেদ on না
খান কাওসার কবির on লুৎফর রহমান রিটন নামা
নয়ন আহমেদ on কবিতাগুচ্ছ
সাজ্জাদ সাঈফ on বাছাই কবিতা
নয়ন আহমেদ on বাছাই কবিতা