spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদসাম্প্রতিকমাইলস্টোন দুর্ঘটনায় যা দেখলাম

লিখেছেন : রেজা তানভীর

মাইলস্টোন দুর্ঘটনায় যা দেখলাম

রেজা তানভীর

২১ শে জুলাই দুপুরের পর যখন ফেসবুক স্ক্রল করছিলাম, তখন মাইলস্টোন স্কুলে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার খবরে খুবই ব্যথিত হয়ে উঠি।

ছোট ছোট শিশু যাদের জীবনের পাঠশালা সবেমাত্র শুরু হয়েছে, তাদের জীবন শুরু হওয়ার আগেই এরকম একটি দুর্ঘটনার মাধ্যমে মৃত্যু কোনোভাবেই কোনো অভিভাবকের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব না।

এই দুর্ঘটনাকে গোটা জাতিকেও স্তম্ভিত করেছে। গত বছর জুলাইতে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ এই জাতির উপর একটি গণহত্যা চালিয়েছিল। বছর না যেতেই আরেকটি বিমান দুর্ঘটনা জাতিকে আবারও আতঙ্কিত করেছে। 

অভিনয় শিল্পী দিলারা জামান, যিনি ২৬ বছর শিক্ষকতা করেছেন, তিনি একটি গণমাধ্যমকে বলেন, “উত্তরা থেকে ঢাকায় যেতে হলে ওই রাস্তাটা দিয়ে যাই আমরা। মাইলস্টোন বিরাট একটা কমপ্লেক্স করেছে, ওটা দেখলে মনটা জুড়িয়ে যায়। কিন্তু এখন যেন পুরো পরিবেশ কেমন হয়ে গেছে। আমার মেয়ে কানাডা থেকে দেশে এসেছে। সে বলল, আম্মা, তুমি একটু বাইরে যাও। পরে আমি আমার বাসার রাস্তার উল্টো দিকে যে ১২ নম্বর সেক্টরের পার্ক আছে, ওখানে গিয়ে বসলাম সবার সঙ্গে। সবারই মন খারাপ। আমার তো আরও বেশি খারাপ লাগছে, আমি নিজেও শিক্ষক ছিলাম। যেভাবে একজন শিক্ষিকা বাচ্চাদের বাঁচাতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত মারা গেলেন। আসলে শিক্ষকেরা তো সব সময় বাচ্চাদের জন্য নিবেদিত থাকেন, নিজের সন্তানের মতো বাচ্চাদের ভালোবাসেন।’

যে বিমানটি উত্তরার মাইলস্টোন কলেজে বিধ্বস্ত হয়েছে সেটি ছিলো একটি পুরনো প্রশিক্ষণ বিমান। পুরনো বিমান প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হতে পারে কিন্তু সেটি ঢাকার মত জনবহুল এলাকায় কেন এটা নিয়ে অনেকের মত আমিও ফেসবুকেও প্রশ্ন রেখেছিলাম।

বিশ্লেষকদের মতে, “জনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে প্রশিক্ষণ বিমান ওড়ানোই হোক আর কমার্শিয়াল এয়ারক্রাফট ওড়ানো হোক, দুটোই সমভাবে দোষী। আমাদের মূল সমস্যা হলো শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটা যে লোকেশনের আশেপাশে সেটা ডেনসেলি পপুলেটেড এরিয়া। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে ক্যাজুয়াল্টি মারাত্মকভাবে হওয়ার আশঙ্কা থাকে।”

দুর্ঘটনার পরদিন এইচএসসি পরীক্ষা পেছানোর ঘোষণা দেরিতে প্রকাশ করার প্রতিবাদে একদল শিক্ষার্থীকে সচিবালয়ে ঢুকে পড়তে দেখা যায়। সেখানে তারা পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। যখন এই রকম একটি দুর্ঘটনায় জাতি শোকে মুহ্যমান তখন একদল শিক্ষার্থী সেজে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার ষড়যন্ত্র করছে তা বুঝতে বাকি থাকে না।

একটি দৈনিক পত্রিকা রিপোর্ট করেছে, “শিশু শিক্ষার্থীদের লাশ নিয়ে নয়া ষড়যন্ত্র আর রাজনীতিতে মাতার পূর্ব পরিকল্পনা করছে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ। হোয়াটসঅ্যাপের একটা গ্রুপে তাদের বলতে শোনা যায়, আন্দোলনকারী ছাত্রদের মধ্যে আমাদের ৪০-৫০ জন ঢুকে পড়েছে। মূলত নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সেই সব নেতা-কর্মীরাই গতকাল অস্থিতিশীল করে তোলার চেষ্টা করে দেশের পরিস্থিতি। হামলে পড়ে পুলিশ সদস্য থেকে শুরু করে দেশের ত্রাণকর্তা সোনাবাহিনীর ওপরও।”

একটি ভিডিওতে মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনায় আন্দোলনকারীদের মধ্যে একজনকে বলতে শোনা যায়, ‘হাসিনাই ভালো ছিলো, টাকা তুলে হলেও তাকে দেশে ফিরিয়ে আনবো’

দুর্ঘটনার দিন রাত বাড়তেই গুজব ছড়ালো মাইলস্টোনের ঘটনায় নাকি লাশ গুম হয়েছে। নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের বিভিন্ন পেইজের পাশাপাশি গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তির কেউ কেউও সে গুজবে তাল মেলালো। অনেকে না বুঝে সে গুজবের কারণে রাস্তায়ও নামলো। জুলাইতে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেছে এমন মানুষও সে গুজবে কান দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামলো।

লাশের তথ্য সরকার এবং সেনাবাহিনী গোপন করেছে কি না এই কথা সবচেয়ে ভালো বলতে পারবে এই স্কুলের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরাই। কারণ, উনারা জানেন, কোন ক্লাসে কতজন শিক্ষার্থী। বুধবার (২৩ জুলাই) মাইলস্টোন স্কুলের শিক্ষক পূর্ণিমা দাস নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে একটি স্ট্যাটাসে  বলেন, ‘হাত জোর করে বলছি ভুল তথ্য ছড়াবেন না। মানুষের ইমোশন নিয়ে খেলবেন না।’ 

তিনি নিজেও আগুনের মধ্যে আটকা পড়েছিলেন। তার সেই অভিজ্ঞতা, বাচ্চাদের নিরাপত্তা এবং লাশ গুমের অপতথ্য নিয়েও লিখেছেন নিজের ফেসবুকে।

তিনি লেখেন, “আমি মাইলস্টোনের হায়দার আলী ভবনের একজন শিক্ষিকা। আপনাদেরকে দুই হাত জোর করে বলছি ভুল তথ্য ছড়াবেন না। আমিও আগুনের মধ্যে আটকা পড়েছিলাম আমার চেয়ে বেশি আপনারা ফেসবুকবাসী জানবেন না তাই না?”

তিনি আরো লেখেন, ‘স্কুল ছুটি হয় দুপুর ১টায়, আমি ঠিক তার এক থেকে দুই মিনিটে স্কাই সেকশনে ঢুকে দেখি ওখানে শুধু একটা বাচ্চা দাঁড়ানো। কেউ ছিলো না, সবাই চলে গেছিলো। আপনারা জানেন না ছুটির সময় হলে বাচ্চারা তিন-চার মিনিট আগে থেকেই কীভাবে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে বাসায় যাওয়ার জন্য এবং আমি চলে আসার পর অভিভাবক আসেনি বলে আবার স্কাই এ কিছু বাচ্চা ঢুকেছিলো তাদেরকেও আমাদের আরেকজন টিচার ক্লাস থেকে নিয়ে অন্য সেকশনে বসায়। এরপরেও আবার কয়েকজন (৫ -৬ জন) ঢুকেছিলো তাদেরকেই আমরা হারিয়ে ফেলেছি বা যারা করিডোরে খেলছিলো বা সিঁড়িঘরে ছোটাছুটি করছিলো বা ওই মুহুর্তে ওই জায়গায় কাকতালীয়ভাবে ছিলো’।

তিনি যোগ করেন, “তাই হাত জোর করে বলছি। ভুল তথ্য ছড়াবেন না। মানুষের ইমোশন নিয়ে খেলবেন না। নিহতের সংখ্যা সামনে বাড়বে আপনাদের বাড়াতে হবে না, আসেন আমরা প্রার্থনা করি প্রতিটা ফুলের জন্য যারা অকালে ঝড়ে গেলো। আমাদের শিক্ষক-শিক্ষিকা স্টাফ আর ছোট ছোট বাচ্চাগুলোর জন্য আসেন আজ প্রার্থনা করি।”

বিশ্লেষকদের মতে, “গত আওয়ামী লীগ সরকার ১৫ বছরে তথ্য গোপন করার সংস্কৃতি চর্চা করার কারণে মানুষের মনে এক ধরনের অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে।

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
- Advertisment -

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

তনজিম আতিক on কবিতাগুচ্ছ
নয়ন আহমেদ on না
খান কাওসার কবির on লুৎফর রহমান রিটন নামা
নয়ন আহমেদ on কবিতাগুচ্ছ
সাজ্জাদ সাঈফ on বাছাই কবিতা
নয়ন আহমেদ on বাছাই কবিতা