হাফিজ রশিদ খান
চিন্তা ও চৈতন্যের এক আকালখণ্ডে বসবাস করছি এখন। এক টুকরো এমন দীপ্র সবুজ-সতেজতা সত্যি বিরল, যেখানে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব থেকে পাওয়া রক্তাক্ত উত্তরাধিকারের সপক্ষে সামান্য স্তুতি করি মনপ্রাণ খুলে। আমাদের জীবনের সকল স্তরে যেন তটস্থ-সন্ত্রস্ত এক দুঃসময় বইছে সাঁই-সাঁই শব্দে। স্বদেশ এবং অন্তর্নিহিত জাতীয়তাবোধের জন্যে আমাদের যেসব পৌরুষ মাটির স্তরে দ্রবীভূত স্নেহের মতো সোনার শস্যের স্বপ্নদোলা দিয়ে যায়, গভীর প্রযত্নে বৃক্ষের হরিৎপাতায় রেখে যায় সঞ্জীবনের স্পর্শ, তাদের প্রতি নিবেদনে একটি মাত্র ঐক্যবদ্ধ মন্ত্রে আমরা সুন্দর হতে পারলাম কই! বীর পূর্বপুরুষের যশোগাথায় বিশ্বের অপরাপর মহান জাতিগুলো যেমন নিজেদের গরিমায় জীবনসুন্দরের ললিতকলায় থিতু হয়, তেমন গরীয়ান কিছু কি জাতি হিশেবে আমরা যাপন করতে পেরেছি এই নিছক গণপ্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশে? এখানে ঔপনিবেশিক ‘উত্তরাধিকার’ থেকে পাওয়া ধ্যানধারণার সবকটা রোঁয়াই এখনও বড় গোলমেলে অবস্থায় রয়ে গেল যেন আজতক। বেদনাদায়ক হলেও সত্য যে, ধনগর্বী রাষ্ট্রগুলোর শর্তসাপেক্ষে প্রদেয় নানা ভূরাজনৈতিক চালাকি ও চাণক্য-হিস্যার কূটনৈতিক জালে আমাদের পূর্বাপর রাজনৈতিক সংস্কৃতি কেমন যেন সারগর্ভহীন, প্রায় জ্যালজেলে, বাসি বা পরিত্যক্ত পণ্যের মতো হয়ে আছে। উপরন্তু, রাজনৈতিক দলগুলোর হর্তাকর্তাদের বাকচাতুর্যভরা, আশাভরা মিথ্যাচারের দীর্ঘ ট্র্যাডিশনের তালে বলির ছাগশিশুর অসহায়তা নিয়ে উদ্বেগতাড়িত এদেশের প্রতিটি মানুষ। এ হলো এমন এক বাংলাদেশ, যেখানে জন ও দেশদ্রোহীরাও অনায়াসে তাদের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কারণে গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ শিরোনাম দখল করে থাকে, তাদের অপকীর্তির পুনর্বয়ানের সুবাদে।
এই যখন আমাদের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক পারিপার্শ্বিক পরিপ্রেক্ষিত, তাতে বিচলিত-জর্জরিত প্রায় ‘মূঢ়-ম্লান’ মানুষগুলো কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, খোঁজ করবে কোন্ অলৌকিক বরাভয়ের? এ অবস্থায় বিবেকিতার তাড়নায় গ্রিকপুরাণের হারকিউলিসের মতো সর্বাগ্রে জনতার দুয়ারে দুর্বার দায়ভারে ছুটে আসা চাই কাদের? ইতিহাস বলে, এমনতর সংকট সময়ে মাতৃভূমির কল্যাণে ছুটে এসেছে রাজনীতিসচেতন সংস্কৃতির মানুষজনেরাই সবার আগে। স্বার্থের গলিত পুঁজে ঠোঁটডুবানো, কুটিল তার্কিক কিংবা ‘শ্যামা’ নৃত্যনাট্যের উত্তীয় ধরনের তরলপ্রেমিক নয় এরা। যেমন, দেশ এখন ভরে গেছে ওসব সুবিধাসন্ধানী কূপমণ্ডূকের কোরাসে আর বেআব্রু কোলাহলে। বিশ্বভুবনের ধাতব ইতিহাস বলে, প্রকৃত দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক ও সংস্কৃতিকর্মীরাই দেশ ও জাতির অস্তিত্বরক্ষার সপক্ষে আপাদচুলাগ্র নিবেদিতপ্রাণ যোদ্ধা। এদেরই দেখা গেছে ১৯৩৬-৩৭ সালে স্পেনের গৃহযুদ্ধে, ১৯৬০-এর দশকে নিকারাগুয়ায় অন্নাস্তাসিও দেবী’র স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে সেখানকার ঘরে-ঘরে, ১৯৭৩ সালে প্রতি বিপ্লবোত্তর চিলির মাটিতে দেশোদ্ধারে, ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরগুলোতে। বুলেট আর রক্তের হোলিখেলার ভেতরে এরাই জাগ্রত মানবাত্মার সুরক্ষায় প্রকৃত গ্ল্যাডিয়েটর চরিত্র। রাজনীতি থেকে সৃজন ও মননশিল্পে এমন ওতপ্রোত, এমন প্রাসঙ্গিক, এমন দায়বদ্ধ ইহরাগ বিস্ময়ের যোগে আমরা দেখেছি একসময় ভিয়েতনাম যুদ্ধ বা দ্বিতীয় ইন্দোচীন যুদ্ধেও (১৯৫৫-১৯৭৫)। এমনকি বাংলাদেশের মাটিতে সর্বসাম্প্রতিক ২০২৪-এর ফ্যাসিবাদ হটানোর রক্তঝরা জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের কুরুক্ষেত্রেও । চলতি শতকের ২০২২-এ দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলংকায় নির্দলীয় বিক্ষোভে সে দেশের রাষ্ট্রপতি গোতাবায়া রাজাপক্ষ ও তার প্রশাসনের গণপদত্যাগ, বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপূর্বক দেশত্যাগকে যদি (৫ আগস্ট ২০২৪) আমরা বিবেচনায় রাখি আর বাংলাদেশের আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক প্রবণতাগুলো বিচার-বিশ্লেষণ করি– অনেকটাই উল্লিখিত দেশগুলোর প্রতিরূপই দেখতে পাবো। এই কিছুদিন আগের বাংলাদেশও দেখেছে অধিপতি স্বভাবের, লুটেরা স্বৈরতন্ত্রীদের দেশোদ্ধারের নামে খল অথচ সুমিষ্ট সম্ভাষণ, গণতন্ত্রের নামে বারবার নির্বাচনী প্রহসন মঞ্চায়ন, বেনিয়া-আমলা ও পেশিতন্ত্রের সর্বত্র বিস্তারিত বহুবর্ণ মুখোশ, প্রচ্ছন্ন গৃহযুদ্ধের আলামত, ক্ষমতাবানদের খুদকুঁড়োয় নধরকান্তি একশ্রেণির রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক টাউটদের গলাবাজি, তোষণ ও তদ্বিরের পুরস্কার-পদকের প্রাবল্যে সারাদেশজুড়ে মাৎস্যন্যায়ের রাজত্ব কায়েম। একই সঙ্গে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের প্রতি বেপরোয়া-গোপন নিপীড়নের বীভৎস ত্রাসে প্রকৃত বোদ্ধা ও সংবেদীজনেদের আতঙ্কগ্রস্ত নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান– সব মিলিয়ে আমাদের ‘সে বড় সুখের সময়, সে বড় আনন্দের সময়’ ছিল না।
দুই
তাহলে এই নষ্ট-বাস্তবতার পাঁকে পড়ে জীবন ও সংস্কৃতির যোদ্ধারা জমায়েত হবে কোথায়, কোন্ গুরুগম্ভীর শব্দে পারলৌকিক মুক্তিসাধনের রেওয়াজ কিংবা ওয়াজ চলছে– সেই খানকায়, আখড়ায়, আশ্রমে বা বিহারে? প্রকৃত ইসলামি পরিভাষায় এসব তো ‘ইবাদত’-এর পরিপূরক নয়, তার বাড়তি কিছু অনুভব-অনুভূতি প্রকাশের আঞ্জাম মাত্র। ইসলামে মানবজীবনের সমস্ত কর্মকাণ্ডকে মূলত দু-ভাগে ভাগ করা হয়েছে : ১/ ‘ইবাদত’ ও ২/ ‘মুয়ামালাত’। মানুষকে জীবনধারণ করতে জাগতিক ও জৈবিক প্রয়োজনে যা-যা করতে হয় এবং বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী ও ধার্মিক-অধার্মিক সকলেই যা করে বা করতে বাধ্য হয়, তা ‘মুয়ামালাত’ বা জাগতিক কর্ম বলে স্বীকৃত। আর জাগতিক প্রয়োজনের ঊর্ধ্বে শুধু মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যে-কর্ম করা হয় তা ‘ইবাদত’। এই ‘মুয়ামালাত’ বা ইহজাগতিক চাওয়া-পাওয়াকে মুখে ধুয়ো দেয়া অথচ তারই আগাপাছতলা চেটেপুটে খাওয়া কিছু আত্মপ্রতারক ও দূষিত প্রেতাত্মা ছাড়া ওমুখো কাফেলায় ঋদ্ধ ইতিহাসজন বা পরিশুদ্ধ মানবেরা প্রয়োজনীয় ভারসাম্যমূলক বৈমুখ্য দেখিয়ে এসেছেন যুগে-যুগে জীবনেরই প্রকট, পবিত্র প্রয়োজনে, আহ্বানে। তাই এই সময়ের এবং আগামীকালের দেশপ্রেমিক আমজনতা ও কবি-সংস্কৃতিকর্মীরা জীবনের সত্য ও সুন্দরের দিকে ধাবিত হবেন, এটাই ইতিহাসের দেখিয়ে দেয়া সুস্পষ্ট পথনকশা। প্রকৃত জীবনরসিক মানুষ তার তাবৎ ক্রিয়াকর্মে, ক্ষোভে কি শান্তিপ্রয়াসে থাকতে চান ইতিবাচক দ্বন্দ্বাত্মক জীবনযাপনের সহবতে। সেই জীবনের সৌন্দর্যে বশীভূত হয়ে ঝুঁকিময় যাপনেই সে নিশ্বাস নিতে চায় প্রতিনিয়ত।
এভাবে এই জনপদের অতীতের দিকে তাকালে দেখতে পাই, ১৯৪৭ সালের ভারতবিভক্তিজনিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, দুর্ভিক্ষ, অভিবাসন– এইসব বিপুল, উদ্বেল ঘটনাপ্রবাহে এদেশের মানুষ প্রবলভাবে পীড়িত হয়েছে, দুর্দশাগ্রস্ত জীবনে পতিত হয়ে জীবনের সৌন্দর্য ও তাৎপর্য থেকে দুর্বিষহ যন্ত্রণার সাগরে নিক্ষিপ্ত হয়েছে সকরুণভাবে। অন্যদিকে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জনগণের রক্তার্জিত মহান স্বাধীনতার ইতিহাস ও তার পরম্পরা তরুণপ্রজন্মের মননে-মজ্জায় মহত্তম এক স্মৃতিকোষ হয়ে আছে জ্বলজ্বলে নক্ষত্রের মতো। কেননা ওই ঘটনাপ্রবাহ ছিল সামগ্রিকভাবে এই ভূখণ্ডের জনমানুষের আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তিলাভের রক্তক্রোধঘাম-সংঘর্ষের এক মহাকাব্যিক বিলোড়ন। কিন্তু এই চেতনার দৃঢ়তা আজ ক্ষীণায়ু দীপশিখার মতো বড়ই ম্রিয়মাণ, নিবু-নিবু। জাতি আজ যেন নতুন-নতুন ঠগি আশ্বাসের ভিড়ে নতুন-নতুন শোষণের, নব্য কিসিমের লুণ্ঠনের কৃষ্ণবিবরে ডুবে যাবার অপেক্ষায়। এ যেন অপ্রত্যাশিত অলুক্ষণে ঝড়ে মুখ থুবড়ে পড়া থাকা ছায়াবান শালপ্রাংশুর কর্তিত, শুকনো ও অতঃপর ফনফনে হয়ে চুলোর গহ্বরে ছাই হয়ে যাবার পূর্বদশা মাত্র। প্রশ্ন, এমনটি ঘটে চলেছে কোন্ অশুভ দানবের স্নায়ু নিস্তেজকারী প্রলয়ঙ্করী ফুৎকারের জোরে? এসব নিশ্চয়ই আমাদের ভাবতে হবে নিবিষ্ট মনে, ইতিহাস-সম্বুদ্ধ প্রাণে।
বিগত বিশ শতাব্দীর আশি’র দশক হয়ে এই সময় পর্যন্ত এই ভূখণ্ড আর তার সংগ্রামশীল জনসাধারণ সংখ্যার বিচারে বেড়েই চলেছে দিন দিন পঙ্গপালের মতো। পাশাপাশি দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন, অর্থ ও সম্পদপাচার, লুণ্ঠন, বেকারত্ব, সন্ত্রাসের রাহুগ্রাস, ধর্ষণ, শিশুহত্যা-নারীহত্যা, উচ্ছৃঙ্খল ‘মব’ কালচারের প্রাদুর্ভাব, ধর্মীয়তার আবরণে ভণ্ডদের জঙ্গিপনার হুংকার আর রাষ্ট্রের পুলিশি-সক্ষমতার পরিধিও বেড়ে গেল অস্বাভাবিক গতিবেগে। আবার প্রাগুক্ত সময়ের চেয়ে এই নিষ্ঠুর বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরের সমতলী ও পাহাড়ি আদিবাসীসহ ধর্মীয় ও ভাষাগত সংখ্যালঘু মানুষেরা কিছু ভূরাজনৈতিক ও দেশীয় পারিপার্শ্বিক ঘটনাবলির শংকা জাগানো অভিঘাতে নিরাপত্তাহীনতার আবহে বিপন্ন-বিপদগ্রস্ততার বোধ নিয়ে জীবনধারণে বাধ্য হচ্ছে অসহায়ের মতো। তবু কেন দেশমাতৃকার সমৃদ্ধি অর্জন ও তার ভূমিজ আব্রুরক্ষায় কাক্সিক্ষত প্রতিবাদ-প্রতিরোধ আসে না দুর্বার বেগে এ দুর্ভাগা দেশে উচ্চমাত্রার আমূল বৈপ্লবিক পরিবর্তনের ‘সুনামি’ নিয়ে? এ বিষয়ের কিছু অনুসন্ধান প্রারম্ভিক কয়েকটি ছত্রে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে বিগতকালের রাজনৈতিক নেতৃত্বের দাস্য ও লাস্য মনোভাবের উল্লেখে।
এই দায়ভার রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে প্রবুদ্ধ নেতৃগুণের কাঁধেই সিংহভাগ বর্তায়, তা আগেও কিঞ্চিৎ বলেছি। কিন্তু ওই যে প্রাণের আলোয় উদ্দীপিত সাংস্কৃতিকযোদ্ধাদের কথা বলা হলো, ধারণা করি, আমাদের মেরুদণ্ডহীন রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি প্রথমত অনাস্থা, সেই সূত্রে পারহীন অশ্রদ্ধা বা বীতশ্রদ্ধতায় তরুণ প্রজন্মের ব্যাপক অংশ আজ গ্রিকমিথের বীর একিউলিসের অনুরূপ আবেগী অভিমানে, চাপা ক্ষোভে, কখনও-বা ঝড়ো ওজর-অজুহাতে চলমান স্থবিরতাকে ঘোলাজলের রাজনৈতিক শিকারিদের জন্য অবাধ আনুক‚ল্য পাইয়ে দিচ্ছেন নিজেদেরই অলস জাবরকাটার অবকাশে। এরূপ দায়িত্বহীনতার অন্ধক‚পে পড়ে সর্বনাশের এক ব্যাপক অমানিশার আয়োজনকে ত্বরান্বিত করছেন কি তারা নিজেদেরই অজান্তে, তারও গভীরতর অনুসন্ধান দরকার। গ্রিক পুরাণের একিউলিস-এর মতো এই আত্মসর্বস্বতা সর্বাত্মকভাবে বিসর্জন দিয়ে দেশজসম্ভারের লোকায়তিক সাংস্কৃতিক-শেকড় উদ্ধারে এক জায়গায় এসে দাঁড়াতে হবে। এই যুদ্ধপ্রতিম সময়ে আরও কালক্ষেপণ করা হলে ভয়ানক বিপর্যয় নেমে আসা আর কতক্ষণ পুরো দেশ আর জাতির ভাগ্যাকাশ জুড়ে– এ অনুধাবনে সামর্থ্যবান হতে হবে একালের তরুণদেরই।
সেই সাথে এই দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে যোগ হয়েছে এখন নতুনমাত্রার ধর্মীয় উগ্রতা ও সাম্প্রদায়িকতার আদ্যিকালের গলিত ‘অনুভ‚তি’র বিস্তার। এই ধর্মসাম্প্রদায়িকতার দানবীয় আশংকার দিকটি হচ্ছে এর কালসর্পসম উদ্যত ফণায় ‘গণতান্ত্রিক’ আল্পনার কারুকাজ থাকা আর তার নানা কিসিমের বিভেদাত্মক ছোবল বিতরণের সামর্থ্য থাকা। বিশেষ করে ভারতরাষ্ট্রের রাজনৈতিক আকাশে এই নতুনতর সাম্প্রদায়িকতার প্রাদুর্ভাব ঘটেছে সীমাহীন গতিতে ও প্রবল আশঙ্কাকে দোসর করে। ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃত্বে এই প্রবণতাটি ভারতের বুকে জনপ্রিয়তা অর্জনের মাধ্যমে দলটি রাষ্ট্রক্ষমতার শীর্ষে পৌঁছুলে নানা জাতি-ধর্মের সমন্বিত গণতান্ত্রিক ভারতের ভাবমূর্তিতে প্রকাণ্ড চোট লাগে আগের কালের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। সে দেশের বহুত্ববাদী মানবিকতা ও পরিশুদ্ধ গণতান্ত্রিক রীতিনীতিকে জনসাধারণের গহন মননের ধর্মীয় চেতনার আলখাল্লায় সংগুপ্ত করে রাখার এই কৌশলটিকে বৃহত্তর মানবিক সুস্থতার পরিচায়ক নয় বলে শনাক্ত করা যায়। কেননা তা চরম বিপর্যয়কর অশনি সংকেতবাহী, ক্ষেত্রবিশেষে বিপুল পরিমাণে ধ্বংসাত্মকও। নিঃসন্দেহে এটি সে দেশের সংখ্যাস্বল্প ভিন্নধর্ম ও সাংস্কৃতিক আচার-আচরণে বিশ্বাসীদের জন্যে উগ্রতা ও আধিপত্যকামিতার এক দানবীয় বহুমুখী ড্রাগনবিশেষ। বলতে গেলে একেবারে আমাদের দোরগোড়াতেই যা হা-মুখে অবস্থান নিয়েছে। ক্ষণে-ক্ষণে যার ভয়ংকর গর্জন ও তজ্জনিত ছড়িয়ে পড়া ত্রাস এদেশেও ধর্ম নিয়ে রাজনীতি-করাদের কাছে সহজলভ্য মোক্ষম হাতিয়ার হয়ে মিসাইল বেগে ভেসে আসছে এ জনপদের আবহমানকালের আচরিত বৃহত্তর ধর্মের অনুসারীদের সহজ-সরল মনে প্রভাব বিস্তারের সুবিধা নিয়ে– এবং তা বাড়ির পাশের উল্লিখিত প্রসঙ্গের দোহাই পেড়েই উত্থাপন করা হচ্ছে পথসভায়, ময়দানের ওয়াজ মাহফিলে। তাহলে দেখা যাচ্ছে, সমকালীন বিপন্ন মানবতার রক্ষা ও তার অগ্রযাত্রার বৈরীধারাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রসঙ্গটি দুর্বার-দুর্নিবার আকাঙ্ক্ষা হয়ে উঠে আসতে চাইছে সামনের কাতারে, একেবারে নতুন আঙ্গিকের সাজসজ্জায়। আর ঠিক এখানেই আমাদের অভীষ্ট বিষয়টি উত্থাপন করতে পারি। আর সেটি হলো, রাজনীতি তথা সমাজ সচেতনধারার আলোকে কবিতা ও শিল্পকলার সর্বমানবিক আবেদনের দিকটির পূর্ণ উদ্ভাসন ও বিস্তার সাধনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করা। আগে উল্লেখ করা দেশ-বিদেশের সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক লড়ুয়েদের সারিতে আমাদের দেশের কবি ও কবিতাকর্মীর ভূমিকা কি সমান গুরুত্বপূর্ণ আজ এবং আগামীকালের জন্যে?
কবিতা তথা সামগ্রিক সংস্কৃতিচর্চার চিন্ময় ধারাটি যুগে-যুগে সারাবিশ্বেই লোকপ্রিয়তা পেয়ে এসেছে এর ভেতরে নিহিত মাধ্যমগুলোর সত্য উচ্চারণ ও জনমনসম্পৃক্তার প্রবল শক্তিসম্ভাবনার কারণে। আর মনে রাখতে হচ্ছে যে, সাম্প্রতিক বাংলাদেশ ও তার ভূমিজ তরুণ-যুবারাও ঐতিহাসিকভাবে সমৃদ্ধ পিতৃপুরুষের মানসসম্পদের দায়ভার কাঁধে নিয়ে অপ আর অশুভের মোকাবিলায় যুযুধান রয়েছেন বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির বেলাভূমে। এই সময়ের লিটল ম্যাগাজিন ও কমিটেড সাহিত্যপত্রিকাগুলোর পাতায়-পাতায় কুৎসিত স্বৈরতন্ত্রী ও ধর্মীয় ছদ্মবেশধারী অপরাজনৈতিক মুখাবয়বগুলোর প্রতি ক্ষোভ ও ধিক্কার প্রদর্শিত হচ্ছে প্রতি পলে-পলে। সেই সঙ্গে আবহমানকাল ধরে এখানে চর্চিত ও আচরিত দ্রাবিড় ও কিরাত সন্তানদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও সহিষ্ণুতার সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় পরম্পরা আর তার প্রয়োজনীয়তার কথাও একই সঙ্গে এই সংশপ্তক কাগজগুলোর শিরায়-শিরায় মুদ্রিত ও ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এভাবে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের অবিনশ্বর জিজীবিষুতার প্রতি দুর্বার প্রেম আর মমতা চিন্ময় কবিতা ও গদ্যকথার মোড়কে প্রকাশের অকাতর স্ফূর্তি নজর এড়াচ্ছে না কারো। সমকালীন কবিতার ও সাহিত্যকলার বলিষ্ঠ ঋত্বিকেরা আমাদের বিশেষভাবে যা লক্ষ করতে বলছেন, তা হলো, নষ্ট ও ভ্রষ্টকালের পচা-পঙ্কিল স্রোতের বিরুদ্ধে নতুন সময় ও সমাজের জন্যে তাদের উচ্চারণসমূহের ওজস্বিতার বেগ ও প্রকৃত দরদাম উপলব্ধিতে সামর্থ্যবান হতে হবে যথামাত্রায়। যেখানে ফল্গুধারার মতো বয়ে চলেছে মানবে-মানবে সহমর্মিতার ওম, প্রাণস্পন্দিত অনুভূতির এদেশীয় পলিমাটির সোনালি প্রত্যাশার গান। কখনও-কখনও অবশ্য এও বেশ পীড়াদায়ক অভিজ্ঞতা যে, এসব তরুণ কবিতাকর্মীদের একটা অংশের লেখনিতে সমাজ-দায়বদ্ধতার ব্যাপারটা কখনও-সখনও বেশ ধোঁয়াশে, তরলীকৃত– বিপরীতে দুর্বোধ্য তাত্ত্বিকতার নামান্তর হয়ে উঠতেও দেখা যাচ্ছে খানিকটে। যা হোক, আলোচনার অনুষঙ্গে এ বিষয়ে যথাস্থানে আরো কিছু খোঁজ নেবার অবকাশ থাকছে। আপাতত ফেরা যাক কবিতায় সুস্থ জীবনধারার পক্ষে রাজনৈতিক প্রসঙ্গের সেই অবতারণায়।
তিন
রাজনীতি, দেখা যাচ্ছে যুগে-যুগে পৃথিবীর প্রায় সকল মহৎশিল্পেরই অন্তর্বিষয় হতে পেরেছে অঙ্গীকার ও গৌরবের অনুষঙ্গসমেত। কেননা, তার অবলম্বনে জীবনের সুগভীর সত্যকে প্রবল ও তাৎপর্যপূর্ণভাবে প্রকাশিত-প্রকটিত করা সম্ভব বিপুল-অধিকাংশ জনপরিসরে। যেমন, মহান গ্রিককবি হোমার-এর ‘ইলিয়াড’ ও ‘ওডিসি’ মূলত সেকালের গ্রীসীয় রাজনৈতিক-সামাজিক জীবনের দ্বন্দ্ব-কলহের মহাকাব্যিকরূপ। একইভাবে অ্যালিগিরি দান্তে-এর ‘ডিভাইন কমেডিয়া’ ইতালি দেশের সমাজ ও রাজনৈতিক জীবনের কাব্যকথা ‘ইনফার্নো’ আর ‘প্যারাডিসো’র উপমায়। এভাবে পি বি শেলির ‘প্রমিথিউস আনবাউন্ড’, জন মিলটন-এর ‘অ্যারিওপ্যাজিটিকা’, ‘প্যরাডাইজ লস্ট’ ও ‘প্যারাডাইজ রিগেইন্ড’, ‘স্যামসন অ্যাগানিস্টিজ’, পাবলো নেরুদার ‘ক্যান্টো জেনারেল’, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর ‘এবার মোরে ফিরাও মোরে’, ‘ওরা কাজ করে’, নজরুল-এর ‘বিদ্রোহী’, ‘দারিদ্র্য’, সুকান্ত ভট্টাচার্য-এর ‘রানার’, বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়-এর ‘মাতলামো’, দিনেশ দাশ-এর ‘কাস্তে’, ‘একটি গদ্যসনেট’, তামিল কবি চেরাবান্দারাজু’র ‘অধিকার’, ‘কাঠগড়ায় দাঁড়াতে দাও’, শামসুর রাহমান-এর ‘ইলেক্ট্রার গান’, ‘মেষতন্ত্র’. ‘আগামেমনন’, ‘ফিরিয়ে নাও ঘাতক কাঁটা’, ‘বুক তার বাংলাদেশের হৃদয়’, আল মাহমুদ-এর ‘ঊনসত্তুরের ছড়া’ ইত্যাদি। শিল্পকলায় রোঁদ্যার ‘দ্য থিংকার’, পাবলো পিকাসো’র ‘গের্নিকা’, র্যামব্রান্ট-এর ‘নাইট ক্যাফে’, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন-এর ১৯৪৬ সালের দুর্ভিক্ষের স্কেচসমূহ, সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ-এর ‘অপরাজেয় বাংলা’, নভেরা আহমেদ-এর শহীদ মিনারের ডিজাইন, হামিদুর রহমান-এর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ভাস্কর্যসমূহ। সংগীতকলায় পল রবসন, পিট সিগার, হেমাঙ্গ বিশ্বাস, ফকির আলমগীর-এর প্রাণজাগানো গণসংগীতগুলো মানুষের মুক্তিকামী আকাশ যে-ধারায় ও স্পর্ধায় স্পর্শ করে, তার প্রেরণা কোনো অমানবীয় শক্তি কিংবা জান্তা জেনারেলের বন্দুকের নলের তোয়াক্কা করে না। বরং এই সামাজিক ও রাজনীতির অভিমুখ শিল্পকলার সদর্থক সৌন্দর্যে ঋজু হতে থাকে অপ্রতিহত গতিতে। যার অন্যতর অর্থ দাঁড়াচ্ছে : ইহজাগতিক যেকোনো গভীরশায়ী সমস্যার একটা সর্বজনবোধ্য দিকনির্দেশনায় সদর্থক উদ্দীপনার সঞ্চার, যা আমাদের সূচনার বক্তব্য ‘মুয়ামালাত’-এর প্রসঙ্গকে খোলাসা করে আরও। একই ধারায় চলচ্চিত্রশিল্পী সের্গেই আইজেনস্টাইন, চার্লি চ্যাপলিন, ইলমাজ গুনে, ফ্রাঁসোয়া ক্রফো, জাঁ লুক গদার, ঋত্বিক ঘটক, সত্যজিৎ রায়, উৎপলেন্দু চক্রবর্তী, জহির রায়হান, সুভাষ দত্ত, নারায়ণ ঘোষ মিতা, আলমগীর কবির, তারেক মাসুদ, তানভীর মোকাম্মেল, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী প্রমুখ আর নাট্যকলায় উইলিয়াম শেক্সপীয়র, ইবসেন, বারটোল্ট ব্রেশ্ট, বাদল সরকার, সৈয়দ শামসুল হক, সেলিম আল দীন, মামুনুর রশীদ, আবদুল্লাহ আল মামুন, আবদুল্লাহ হেল মাহমুদ, মান্নান হীরা, মৃত্তিকা চাকমা, রবিউল আলম, সঞ্জীব বড়ুয়া, শান্তনু বিশ্বাস তাদের সমকাল-সম্পৃক্ত ও দেশজতামূলক চিন্তাধারাকে রাজনৈতিক অথচ মানবিক সহনশীলতার প্রেক্ষাপটে ভাষা ও ভাবের আলিঙ্গনে শৈল্পিকভাবে প্রকাশ করেছেন আর মানবিক দায়বদ্ধতার স্বাক্ষর রেখেছেন।
উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে যে-বিষয়টি প্রধান চরিত্রের আদল পেতে চাইছে এখানে, সেটি হলো সামাজিক দায়বদ্ধতার আলোকে শিল্পস্রষ্টার নান্দনিকবোধের পরম পরিমিতবিন্দুটি স্পষ্টতর করা। আর তারই ছায়ায়-ছায়ায় রাজনৈতিক চেতনার মাধ্যমে অঙ্গীকৃত হওয়া মানবমুক্তির পরিপ্রেক্ষিতটি। যেখানে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অথচ অতি তুচ্ছ হয়ে পড়া যুগসঞ্চিত বঞ্চনার বিরুদ্ধে আলোড়িত প্রেরণার উৎস হয়ে উঠছে বা উঠতে পারে শিল্পসাহিত্যের ভুবন। জীবনের অনুষঙ্গে নান্দনিক চেতনাগত উৎসারের বিষয়ে যে-কথা এতক্ষণ বলতে চাইলাম, চিলির কবি নিকানোর পারা (১৯১৪-২০১৮) যেন তারই দিকে আঙুল তুলে বলছেন তার একটি কবিতার নিচের পংক্তিগুলোতে :
Write as you will,
In whatever style you like.
Too much blood has run
under the bridge.
To go on believing
that only one road is right.
লাতিন আমেরিকার প্রতিকবিতা বা ‘অ্যান্টি পোয়েট্রি’ কাব্য আন্দোলনের ঋত্বিক নিকানোর পারা’র আরেকবার শরণ নিয়ে শেষ করবো এই রচনা। তিনি বলছেন : ‘কবিতা, হয় যেন রোমশ বুকের, ঘামের, খোলা হাওয়ার আর সূর্যোদয়ের’। বলতে ইচ্ছে করে, নিকানোর পারা কবিতাকে ধ্যানজ্ঞান মেনে এই ভাষ্যরচনা করলেও তা ওই ভাবের গাঙেই কেবল ঘূর্ণিত ও বৃত্তায়িত হয়ে থেকে যায় না, স্পর্শ করে জীবনঘেঁষা শিল্পসাহিত্যের অন্যসকল দিগন্তের আলো-বাতাস, মৃত্তিকা ও মানুষের গরিমাকেও। যার আরও গভীরতর মর্মার্থ হচ্ছে : ‘একটাই শুধু শর্ত, বলাই বাহুল্য, শাদাপাতার চেয়েও উৎকৃষ্ট হতে হবে তোমাদের’।









“ কবিতা : রোমশ বুকের ও খোলা হাওয়ার ”–খুবই সমৃদ্ধ একটি প্রবন্ধ–মননশীলতা ও সৃজনশীলতার মেলবন্ধন ঘটেছে প্রবন্ধটিতে। সুচিন্তিত, সুবিবেচিত ও সুলিখিত। হাফিজ রশিদ খানকে সাধুবাদ জানাই। আসলে শিল্পের জন্য শিল্প এবং জীবনের জন্য শিল্প– এই দুটি পথকে রাত-দিনের মতো আলাদ না করে দুটোকে মিলিয়ে দিয়ে একটি অভিন্ন পথ সৃষ্টি করা হলে সেই কবিতা-শিল্প-উপন্যাস-ছোটগল্প-নাটক মহত্তর লক্ষ্য পৌঁছানোর শক্তি ও যোগ্যতা অর্জন করে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই। ধর্মীয় উগ্রতা যেমন ভারতে বিজেপির নেতৃত্বে ভয়ংকর আকার ধারণ করেছে, ইজরাইল প্রসঙ্গে একই কথা প্রযোজ্য; অনুরূপভাবে ডোনাল্ড ট্রাম্প শ্বেতাঙ্গ খৃস্টানবাদকেও বাব শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদকেও উগ্র করে করে তুলেছেন। বাংলাদেশের কথা তো প্রবন্ধে অনেক এসেছে। এটা ঠিক যে একটি মাত্র প্রবন্ধে সকল কবির কথা কিংবা প্রাসঙ্গিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ সব কবিতার নাম আসার সুযোগ নেই। তবু প্রাসঙ্গিকভাবেই আল মাহমুদের “জেলখানার চিঠি”, “ডানাঅলা মানুষ” , “ মিথ্যবাদী রাখাল”, “সীমা ছাড়ানো শিস”, ফররুখ আহমদের “ লাশ” , আবুল হাসানের “ অসভ্য দর্শন”, “নষ্ট ডিমের খোলসের শব্দ”, রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর “ ইশতেহার ”, ফরহাদ মজহারের “ আমাকে তুমি দাঁড় করিয়ে দিয়েছ বিপ্লবের সামনে” ,“ কর্তৃত্ব গ্রহণ করো নারী” , সুবোধ সরকারের “ আমি হর্ষ মান্দার বলছি”, নবনীতা দেবসেনের “ নাজমা”, চৈতালী চট্টোপাধ্যায়ের “ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস” প্রভৃতি কবিতাগুলোর নাম থাকলে প্রবন্ধটি অধিকতর তথ্যসমৃদ্ধ হতো— পাঠকের সুবিধার দিক থেকে। এমন একটি সাহসী ও সময়োপযোগী প্রবন্ধের জন্য কবি হাফিজ রশিদ খানকে আবারও ধন্যবাদ দিতে হয়। বাংলারিভিউ. নেট এর সম্পাদক কবি সাজ্জাদ বিপ্লবও ধন্যবাদ পেতে পারেন একই কারণে।