ফজলুল হক সৈকত
……………
এইখানে কবিতা থাকে
……………
কয়েকটি কবিতা এইখানে আছে
সভাঘরে কোলাহলের ভেতরে
মানুষের মৌলিক অবস্থানের পার্থক্য
তৈরি করে দিয়েছে এইসব কবিতার পঙক্তি।
কিছু কবিতা রয়ে গেছে ঠিক এইখানটায়
টেবিলে সাজিয়ে-রাখা মাফিনের পাশে প্রিয়তমের বানানো লালচায়ের ফ্ল্যাক্সের মতন।
কয়েকটি কবিতা এখনও লেখা শেষ হয়নি
কেননা পঙক্তির প্রতীক্ষায় থাকা শব্দগুলো এখনও ঘুরছে মাথার ভেতরে ; ঘামেভেজা চুলের গন্ধ পেরিয়ে বেরিয়ে আসতে এখনও খানিকটা পথ বাকি।
কিছু কবিতা লেখা হবে না কোনোদিনই
অফিসে কাজের ফাঁকে কিংবা বিরতিতে কফি অথবা সেই লালচায়ের অন্তরালে ঘাপটি মেরে বসে থাকা কথাগুলো কবিতা হয়ে বের হবে না কখনও।
কিছু কবিতা এইখানে আছে
লেকের ধারে
বাগানের নিরব রাস্তায়
মঞ্চে ওঠার ঠিক আগের সময়টায়
অথবা নাম জানতে চাওয়া অচেনা কোনো মানুষের বুকপকেটে ; সুগন্ধিমাখা রঙিন রুমালে।
কিছু কবিতা এইখানে থাকে
এইখানে!
………….
এই মেয়েটি
…………..
এই মেয়েটি
এই মেয়েটি জানে না সে কীসের প্রভা বয়ে বেড়ায়
এই মেয়েটি সকালগুলো রাঙিয়ে দেয় আলোর মেলায়
এই মেয়েটি দুপুর হলে কথা বলে চুপিচুপি
এই মেয়েটির মনটা বিরাট উঠান যেন।
এই মেয়েটি
এই মেয়েটির কপাল জুড়ে মস্ত টিপের লাইট জ্বলে
দুই ভুরুতে কত্ত আবেগ এই মেয়েটির
এই মেয়েটি জানে না তা।
এই মেয়েটির চোখে জমা প্রেমের কথা
এই মেয়েটি শোনেনি তা
কেউ শোনেনি কেউ দেখেনি নিবিড়
চোখের আদরখানি।
এই মেয়েটির নাকটি যেন সুরের আগুন
বাজিয়ে চলে গানের ডালি
এই মেয়েটি সন্ধেবেলা প্রেমকথা কয় একলা হলে
এই মেয়েটির মস্ত মনে বাতাস দোলে।
এই মেয়েটির চুলে আছে মাদকতা
নেশার মতো ডুবতে-থাকা প্রেমিক কোনো টের পাবে তা
এই মেয়েটির চুলের গন্ধ কেমন জানি।
চুলের ভেতর কানের লতি লুকিয়ে আছে আপন মনে
কেউ দেখেনি।
এই মেয়েটি
এই মেয়েটির ঠোঁটের কোণে শুধুই হাসি
নরম ঠোঁট গরম হলে কেমন লাগে
জানি না তো।
এই মেয়েটির চিবুকখানি আকাশ যেন
মস্ত নদীর ছায়া আছে এই মেয়েটির গলার নিচে
এই মেয়েটির বুকের মধ্যে রাধা আছে
মনের ভেতর প্রেমের বাতির
শিখাগুলো জ্বলে থাকে সারা রাত্তির
ঘুমের মধ্যে এই মেয়েটি স্বপ্ন হয়ে ফিরে আসে সঙ্গোপনে।
এই মেয়েটি।
এই মেয়েটি।
…………..
সবুজে ‘মাখো মাখো’
…………..
এ জগত জানিবার
বহুবার জানিয়াছি তা
শতবার দেখা যায় যেমন ছোট্ট কালো টিপ
তিল
আর
টোলে
ডুবে থাকা চলে চোখ বুজে
মরা মাছের চোখ নয়
খুঁজে ফিরি গিরিকুমারী
মন তার কচি তেতুলের পাতা
শুধু ঘটিহাতা ব্লাউজের কঠিন বোতামে রেখেছি মন
অথবা বালিকা রমনার কুচিতোলা হাফপ্যান্ট;
এইটুকু চাওয়া
শীতের সকালে কুয়াশার আড়ালে কবে তুলেছিলে তুমি
জমেথাকা নারিকেল তেল
চিকন কাঠি দিয়ে নেড়েনেড়ে
কুয়াশার কদমের কোকিলের
বাদলের হেমন্তের বিকেলের
লুকোচুরি খেলার মতন
চুলের গভীরতা ছিল এইখানে
আর ছিল জীবনের কাদা
একদিন ভোর নামবে আবার
নতুন সকাল ফিরবে তার মায়াবী আঙুলের ছোট্ট টোকায়
তিল হয়ে টিপ হয়ে টোল হয়ে
ঝুলবে চিবুকের বুকে
কোনো কোনো বিকেল
দমকা বাতাস বয়ে আনে
‘আশায় বসতি’
কোনো কোনো সন্ধ্যায় নামে মিলে মিশে একাকার অদেখা গল্প কোনো ; ‘মেঘ বলে চৈত্রে যাবো’
কখনো কেবল ‘পুঁইশাক ছুঁয়ে দেখা’র স্বপ্নে জমে ওঠে মোনালিসার মুখ!
শাকের নরম পাতা সবুজে ‘মাখো মাখো’ হয় যে আঙুলের পরম পরশে
মিলে যদি যায় তার খোঁজ
কাটিয়ে দিতে পারি রোজ
ঘুমহীন রাত।
চোখে মেখে নিয়ে তার তিল
মনে রেখে দিয়ে তার দিল
গালের টোলে ঢেলে দিয়ে শ্রাবণের ধারা নীরবে
হাত পেতে তুলে নেবো তার করুণার জল!








