spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদপ্রবন্ধরাজনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে হাতিয়ার সাঈফ ইবনে রফিকের কবিতা

লিখেছেন : আবু তাহের সরফরাজ

রাজনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে হাতিয়ার সাঈফ ইবনে রফিকের কবিতা

আবু তাহের সরফরাজ

নব্বইয়ের দশকের কবিতার ভাষাশৈলী ও বিষয়-ভাবনার ঘেরাটোপ ভেঙে বাংলা কবিতায় নতুন ভাষাশৈলীর কাজরুকাজ নিয়ে আর্বিভূত হয় প্রথম দশকের একঝাঁক কবি। এই দশকের বেশির ভাগ কবির কবিতায় শব্দের অহেতুক বাড়-বাড়ন্ত নেই। নেই বাগ-আড়ম্বর। বলার কথা ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে না-বলে সোজাসাপ্টা বলে দেয়ার বিশেষ ঝোঁক তাদের কবিতায় লক্ষ্যণীয়। মূলত এসব বৈশিষ্ট্য প্রথম দশকের বিশেষ ধরনের কাব্য-প্রবণতা। তবে ওই দশকের সকল কবিই যে সার্থক কৌশলে এসব বৈশিষ্ট্য কবিতায় ফুটিয়ে তুলতে পেরেছে, তা কিন্তু মোটেও নয়। বরং অল্প কয়েকজন কবির কবিতাতেই এসব বৈশিষ্ট্যের সার্থক রূপায়ণ আমাদের চোখে পড়ে। এসব কবিতা একদিকে প্রকৃতির যোগসূত্রে স্থাপিত; আরদিকে সমাজ, ধর্ম ও মানবিক সম্পর্কের জটিলতায় শব্দের কারুকাজে সমকালকে করেছে উৎকীর্ণ। এই ধারাবাহিকতায় সাঈফ ইবনে রফিক বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তার কবিতায় দেখা যায় মানবিক অনুভূতি, প্রতীকের আড়ালে ইসলামি দর্শনের শৈল্পিক উপস্থাপনা এবং সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অন্তঃসার-শূন্যতা। তার কবিতায় আবেগ থাকলেও তা উচ্ছ্বসিত নয়। বরং আবেগ তার কবিতায় গভীর দার্শনিক ও নৈতিকতার ঝাণ্ডা বহন করে।

সাঈফ ইবনে রফিকের কবিতার প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, মানুষের অনুভূতি ও মানবিক মূল্যবোধকে সবার ওপরে জায়গা দেয়া। তার কবিতায় ধর্ম, আধ্যাত্মিকতা ও প্রকৃতির সকল উপাদান মানুষ-কেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিশ্লেষণ করা হয়। ‘কুফুরি কালাম’ কবিতাটি পড়া যাক:

প্রভুকে বললাম, আমাকে মুক্ত করে দিন।
আবদারে আবদারে বিরক্ত হয়ে প্রভু বললেন,
‘পালিয়ে যা, তোকে বেঁধে রেখেছে কে!’
পালালাম। অনভ্যস্থ দুনিয়ায় ঘুরপাক খেয়ে
আবারও ফিরতে চাইলাম খাঁচায়।
এসে দেখি, দরজা বন্ধ। ৯৯ নামে ডেকে-ডেকে
যখন প্রভুর সাড়া পেলাম, তিনি বললেন,
‘তওবা ছাড়া এ দরজা খুলবে না।
বললাম, ‘এভাবে হবে না। পালিয়ে প্রশান্তি নেই।
আপনি বরং আমাকে স্বাধীন করে দিন।
একটা দাস মুক্ত করে দিলে আপনার শ্রেষ্ঠত্বে ঘাটতি হবে না।’
প্রভু বললেন, ‘সম্ভব নয়। আমি নিজেও আমার ওয়াদার কাছে
পরাধীন। তোর কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতার কোনো অস্তিত্বই নেই।’

ওপরের কবিতায় সাঈফ ইবনে রফিকের প্রজ্ঞাসঞ্জাত দার্শনিক-উপলব্ধি গভীরভাবে ব্যক্ত হয়েছে। প্রকৃত প্রস্তাবে, মানুষের মৌলিক কোনো স্বাধীনতা নেই। সৃষ্টিগত-সূত্রেই মানুষ প্রকৃতির বিধি ও বিধানের খাঁচায় বন্দি। এই বন্দিত্ব আসলে মানুষকে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতেই প্রতিবেশ রক্ষা করে। কিন্তু স্থূল বুদ্ধির প্ররোচনায় কখনো-কখনো মানুষ স্রষ্টার নির্ধারিত সীমা পেরিয়ে মৌলিক ভাবে স্বাধীন সত্তা নিয়ে গড়ে উঠতে চায়। মানুষের সেই চাওয়া যে ভিত্তিহীন সেই সত্য কবিতার শেষে এসে আমরা বুঝতে পারি। যেখানে সৃষ্টিকর্তা নিজেই তার ওয়াদার কাছে পরাধীন সেখানে মানুষের স্ব-অধীনতার মূল্য কোথায়? কুরআনে আল্লাহ বলছেন, সৃষ্টিজগতের সকল কিছুর নির্দিষ্ট সময়সীমা রয়েছে। এই সীমা আগে থেকেই নির্ধারিত। ফলে, সৃষ্টিকর্তা মাঝপথে সেই সীমার কোনো হেরফের করতে পারেন না। এটাই সৃষ্টিজগতের বিধান।

সামাজিক ও রাজনৈতিক বৈষম্য ও নিষ্পেষণের বিরুদ্ধে শব্দের ধারালো হাতিয়ার সাঈফের কবিতা। তার কবিতায় আমরা দেখি সাধারণ মানুষের নিষ্পেষিত জীবনযাত্রা, অসাম্যের চালচিত্র এবং আধুনিক জীবন-ব্যবস্থার অস্থিরতা ও নৈতিকতা-বর্জিত সমাজ ও রাষ্ট্রকাঠামো। সাঈফের কবিতার ভাষা খুবই প্রাঞ্জল, আটপৌরে। যেন তিনি পাঠকের সামনে বসে গল্পচ্ছলে কিছু বলছেন। সত্যিই যে, সাঈফের প্রত্যেকটি কবিতায় এক কিংবা একের বেশি গল্পের ঢং থাকে। আর সেই গল্প বলার যে কৌশল সেই কৌশলেই মিলেমিশে থাকে কবিতার শৈল্পিক সৌন্দর্য। কারণ, সাদামাটা ভাষায় বর্ণিত তার গল্পের ভেতর থাকে প্রতীক, যা কবিতার বিষয়কে শিল্পের আলোক-ছটায় বিম্বিত করে তোলে।

যে সমাজে আমরা বসবাস করছি, সেই সমাজে আমরা বসবাস করতে চাই না। এরপরও বাস করতে হয়। বর্তমান সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতি জটিল এক পরিক্রমায় ঘূর্ণায়মাণ। যেন সময়ের কৃষ্ণগহ্বর। এই গহ্বর ন্যায়নীতি ও সততার বোধকে গিলে খাচ্ছে প্রতিদিন, প্রতিমুহূর্তে। কোণঠাসা হতে হতে সাধারণ মানুষের ভেতর বেড়ে উঠছে ক্ষোভ, কিন্তু সেই ক্ষোভ প্রকাশের ভাষা তাদের জানা নেই। অথবা জানা থাকলেও ক্ষোভ তারা প্রকাশ করছে না। আর কেউ যদি তা প্রকাশ করেও, তাহলে রাষ্ট্রদোহী কিংবা কাফির হিসেবে আখ্যায়িত করে তাকে হাপিশ করে দেয়া হচ্ছে। সমাজ ও রাষ্ট্রের এই চালচিত্র আমাদের সাম্প্রতিক কাব্যসাহিত্যে খুব একটা দেখা যায় না। বেশির ভাগ কবি মত্ত থাকেন কল্পনার ঘোড়দৌড়ে। আমি-তুমি, তুমি-আমি অথবা ফুলপাখিলতাপাতা আমার বারান্দায় আইভিলতা— এই জাতীয় মনোলোভা চিত্রকল্প তাদের কবিতাকে পৌনঃপুনিক করে রেখেছে।

কিন্তু সাঈফ ইবনে রফিক সেই পথে তার কবিতার ঘোড়াকে ছোটায়নি। যাপিত সময়কে ধারণ করে সাঈফ উপলব্ধি করে নিষ্পেষণের মর্মযাতনা। জনসাধারণ এই মর্মযাতনায় ক্ষুব্ধ। কিন্তু তা প্রকাশের শৈল্পিক উপায় তাদের জানা নেই। কারণ, তারা কবি নয়। সকলেই কবি হতে পারেও না। কেউ কেউ কবি। সাঈফ যেহেতু কবি, সেহেতু সে জনসাধারণের প্রতিনিধি হিসেবে কবিতার ভেতর দিয়ে প্রকাশ করে যাপিত বাস্তবতার বিরুদ্ধে শৈল্পিক প্রতিবাদ। সাঈফের বোধের জগতে ধ্বনিত হয়ে ওঠে মানুষের শাশ্বত সেই আকাঙ্ক্ষা, শুভবোধ মুক্তি পাক। কেউ কেউ বলবে, কবিতায় এসব স্লোগান আজকাল আর চলে না। আমি বলব, তারা কবিতা বোঝে না। কবিতা সর্বগ্রাসী। কবিতা সর্বভূতে বিরাজমান। সবকিছুই কবিতা। অন্তর্জগতের গূঢ় অনুভূতি থেকে শুরু করে সমাজ, রাষ্ট্র ও রাজনীতি— সবকিছুই কবিতার শৈল্পিক নিগড়ে বাঁধা পড়তে পারে। তবে তার জন্য কবিকে জানতে হয় শিল্পকৌশল।

আমরা তো জানিই, জীবন কুৎসিত। আর তাই, কুৎসিত জীবনকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে শিল্প আমাদেরকে বেঁচে থাকার রসদ যোগায়। যাপিত জীবনের যে কোনো বিষয়কেই শিল্পের মোড়কে উপস্থাপন করা যায়। কে কত শৈল্পিক উপায়ে উপাস্থাপন করছে, সেটাই বিবেচ্য। কী উপস্থাপন করছে, সেটা বিবেচ্য নয়। বর্তমান সভ্যতা যে সঙ্কটে প্রতিমুহূর্তে দিশেহারা, সেই সঙ্কট উত্তরণের উপায় ইসলাম অনেক আগেই দেখিয়ে দিয়ে গেছে। ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। ব্যক্তিজীবন থেকে আরম্ভ করে সমাজ ও রাষ্ট্র কিভাবে পরিচালিত হবে, তার খুঁটিনাটি সব বিষয়ে কোরআন ও হাদিসে উল্লেখ করা আছে। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, ইসলামি বিধানকে এখন বেশির ভাগ মানুষ বাঁকা চোখে দ্যাখে। ইসলামের নাম শুনলে অনেকের শরীরে চুলকানি শুরু হয়ে যায়। এর কারণও আছে। সাধারণত এই দেশে যারা ইসলামের ধারক ও বাহক, তারা যে ইসলামের কথা বলে সেই ইসলামের সঙ্গে কোরআন ও হাসিদের কোনো সঙ্গতি নেই। মানে, প্রচলিত ইসলাম প্রকৃত ইসলাম নয়।

মহানবি (স.) বলেছেন, তোমরা নিচু স্বরে কোরআন পড়ো। উঁচু স্বরে পড়লে তোমার আশপাশের ভাইদের সমস্যা হতে পারো। তুমি তো আর জানো না যে, কে কোন অবস্থায় রয়েছে। কোরআন আল্লাহর বাণী। সেই বাণী যদি নিচু স্বরে পড়তে হয়, তাহলে আর বাকি রইল কী! অথচ শীত মওসুম এলেই আমাদের দেশে শুরু হয়ে যায় ওয়াজের ডামাডোল। চারদিকে মাইক লাগিয়ে ওয়াজিগণ যেভাবে চিৎকার করতে থাকেন, তাতে কী অবস্থা সৃষ্টি হয়— ভুক্তভোগী সকলেই তা জানেন। প্রচলিত ও প্রকৃত ইসলামের এটা একটি উদাহরণ। এরকম অসংখ্য বিষয় রয়েছে। এসব দেখেশুনে সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষ ধারণা করে নিয়েছে, প্রচলিত ইসলামই প্রকৃত ইসলাম। অথচ তারা যদি কোরআন ও হাদিস পড়তেন, তাহলে তাদের ভুল ভাঙতো। ফলে ইসলামবিদ্বেষী মনোভাব এখন ঘরে ঘরে। যদিও অনেকে নামাজ পড়েন, সিয়াম সাধনা করেন, কিন্তু এসব ইবাদতের মর্ম তারা ধারণ করতে পারেন না।

এসব বিষয় নিয়ে আমাদের সাহিত্যিকরা লেখেন না। বরং ইসলামবিরোধী লেখাতেই তাদের বেশি আগ্রহ। সাঈফ ইবনে রফিক ব্যতিক্রম। তার বেশির ভাগ কবিতায় ইসলামি ভাবাদর্শ চোখে পড়ে। সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে নানা ঘটনার ভেতর দিয়ে সাঈফ ইসলামি আদর্শকে তার কবিতায় তুলে আনে। মগজের আরাম কবিতায় দেখা যায়, শয়তান এসে সাঈফের মাথার চামড়া কেটে মগজের ভেতরটা চুলকে দিল। এরপর সাঈফ সবকিছু নতুনভাবে দেখতে শুরু করল। কেবল তা-ই নয়, ঘোষণা দিয়ে সে শান্তির ধর্ম ইসলাম ত্যাগ করল। এরপর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার চেয়ে বসলো। কী স্যাটায়ার! মগজের চুলকানিতেই হরহামেশা মানুষ ইসলামকে নিন্দেমন্দ করছে। অথচ প্রকৃত শান্তির পথের দিশারী যে এই জীবনব্যবস্থা, তা কেউ-ই বুঝতে পারছে না। ফলে বাড়ছে সভ্যতার সঙ্কট। কোরবানি ঈদের আগদিয়ে বিভিন্ন কোম্পানি ফ্রিজ বেচার জন্য নানা প্রলোভনে ডিসকাউন্ট দিতে থাকে। কার কোরবানির গরু কত বড়, তা নিয়ে চলে প্রতিযোগিতা। এসব দেখে সাঈফের কলমে আর্তনাদ জেগে ওঠে:

গরু নিয়া যে উল্লাস দেখবে ঢাকা শহর
তাতে লজ্জা পাবে মূসার সেই গো-পূজারি অনুসারীরাও।

জান্নাত ও জাহান্নাম কবিতায় সাঈফ লিখছে:

মানুষ বুঝল না,
দুনিয়াকে জান্নাত বানাতে পারলে মদ হালাল হতো
কেয়ামত আসতো না।
এটা খুব একটা কঠিন ছিল না।

খুবই সহজ সূত্র দেখিয়ে দিচ্ছে সাঈফ, অথচ মানুষ তা বুঝতে পারছে না। মানুষ ছুটছে ভোগের দিকে। ভোগেরও যে শৈল্পিক রূপ আছে, মানুষ তাও বুঝতে পারছে না। সভ্যতার এই ক্রান্তিলগ্নে বর্তমান সময়ের আর কোনো কবির কবিতায় আমি আত্মার আর্তনাদ শুনতে পাই না। সাঈফের কবিতায় ইসলামি আদর্শকে সুউচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করা হয়েছে। অথচ আরসব কবি ইসলামের পক্ষে তো দূরের কথা, ইসলামের বিপক্ষে কবিতা লিখতে পারলে ‘কিছু একটা করলেন’ ভেবে আত্মতৃপ্তি পান। এদেরই বিপরীতে দাঁড়িয়ে সাঈফ সভ্যতার সঙ্কট কাটিয়ে মুক্তির উপায় জানিয়ে দিচ্ছে তার কবিতায়:

ফিজিক্স দিয়ে আল্লাহকে খুঁজো না
হে আধুনিক।
যুক্তি তোমাকে জিততে শেখায়
অথচ আত্মসমর্পণেই নিহিত তোমার সার্বভৌম মুক্তি।

এই উচ্চারণ প্রকৃত মুসলিমের উচ্চারণ। মুসলিম শব্দের মানে, যে আত্মসমর্পণ করে। কিন্তু প্রচলিত মুসলিমরা আল্লাহর বিধানের কাছে কতটা আত্মসমর্পণ করেছে, তা বোঝা যায় আজকের সমাজব্যবস্থার দিকে তাকালে। ঘুষের টাকা পকেটে নিয়ে মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ছে মডারেট মুসলিম। সুদের টাকায় খাচ্ছে সেহরি ও ইফতারি। মুসলিমের এই দুরাবস্থা দেখে কাতর হয়ে ওঠে সাঈফ ইবনে রফিক। এই কাতরতা কবিতায় প্রকাশ করা ছাড়া তার তো আর কিচ্ছু করার নেই। চারদিকে মূল্যবোধের অবক্ষয়। একজন মানুষ অপেক্ষা করছে আরেক মানুষকে কখন ঠকাবে। পুঁজির পাহাড় নিয়ে বসে আছে কেউ কেউ। আর তাদের পায়ের ছায়ায় বসে স্তুতি গাইছে আজকের কবি-সাহিত্যিকসহ (অ)শুভবোধ সম্পন্ন মানুষ। এই দৃশ্য সাঈফের মানবতাবাদী চোখ সইতে পারে না। তাই তার কবিতায় দেখতে পাই:

কবি নয়, নিজেকে দালাল বল।
বল, তুই একটা গুটিবাজ।
কবিতা গ্যাং গড়ে সাহিত্যপাড়ায়
সংঘবদ্ধ ক্রাইম করে বেড়াস।

কী সাঙ্ঘাতিক চাবুকের আঘাত! কবিতা শুদ্ধ শিল্প। অথচ সেই শিল্প এখন চর্চা করা হচ্ছে নানাবিধ সুবিধে পেতে। এবং এইসব গুটিবাজদের সুযোগ করে দিচ্ছে গণমাধ্যম। আমাদের দেশের প্রতিটি গণমাধ্যমের সাহিত্যিক ম্যাপ আছে। এই ম্যাপের বাইরে তারা কাউকে পরিচিত করে তোলে না। আর যেহেতু এ দেশের পাঠক গণমাধ্যমমুখি, ফলে শুদ্ধ শিল্পচর্চা যারা করছেন, তারা নিভৃতেই থেকে যাচ্ছেন। সাঈফ দীর্ঘবছর সাংবাদিকতা করেছে। একটা দৈনিক পত্রিকায় একটা সময়ে আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি। সাঈফ এখন সাংবাদিকতা ছেড়ে দিয়েছে। সাংবাদিকতা এখন আর আগের অবস্থানে নেই। কোন অবস্থায় আছে সেটা নিউজ কবিতায় সাঈফ জানিয়ে দিয়েছে:

কে কাকে বিয়ে করল
কে কাকে ছাড়লো
কে কাকে নিয়ে পালালো
এইসব মুখরোচক গল্পে আড্ডা জমতেই পারে
অবদমনের সুড়সুড়িতে গসিপ-গুজব হতে পারে।
তাই বলে এগুলো মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার নিউজ হতে পারে কি?

প্রথম দশকের অনেক কবিই আজকে গুটিবাজি করে সহিসালামতে আছে। রাজনীতি ও প্রাতিষ্ঠানিক ছত্রছায় তারা প্রতিপালিত। তাদের বেশির ভাগই আর কবিতা লেখে না। হয়তো লিখতে পারেও না। কিন্তু সাঈফ লিখেই যাচ্ছে। কবিতা লেখার জন্যই যে সাইফ লিখছে, তা কিন্তু নয়। বরং কবিতার ভেতর দিয়ে সে কিছু মেসেজ পাঠকের চেতনার দরজায় পৌঁছে দিতে চেষ্টা করে। মানবিক ও নৈতিক অবক্ষয়ের এই সময়ে শান্তির বার্তা পাওয়া যাবে সাঈফের কবিতায়। সমকালীন যে কোনো সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে একমাত্র ইসলামি বিধানই যে সর্বজনীন ও কল্যাণকর, সাঈফ সেই মতবাদই শিল্পের বাতাবরণে প্রচার করতে চেয়েছে।

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
- Advertisment -

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

shahanarabanani@gmail.com on কবিতাগুচ্ছ
সাজ্জাদ সাঈফ on কবিতাগুচ্ছ
সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on রসূলের (স.) শানে সনেটগুচ্ছ
সাজ্জাদ সাঈফ on এক চিমটি মুজিববাদ
--অতনু রায় on কবিতাগুচ্ছ