spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদপ্রবন্ধষাট দশকের কবি ও কবিতা 

ধারাবাহিক আলোচনা লিখেছেন তৌফিক জহুর

ষাট দশকের কবি ও কবিতা 

তৌফিক জহুর 

প্রাককথন:

আমরা যারা নব্বই দশকের ট্রেনে চেপে অন্তহীন পথে যাত্রা শুরু করেছি, আমাদের চেয়ে তিন দশক আগে যারা একই ট্রেনের যাত্রী হিসেবে যাত্রা শুরু করেছেন, তাদের নিয়ে লেখা ও কথা বলা মুশকিল। কারণ, তারা একটা পথ ও নকশা ইতোমধ্যে তৈরি করে ফেলেছেন। তাদের সেই পথে অনুজ শব্দ সৈনিকেরা এগোচ্ছে। এই লেখায় ষাট দশকের কবি ও কবিতার বিষয়ে কথা বলবো। এবং অল্প কয়েকজন ষাটের নায়কদের প্রসঙ্গে কিছু বয়ান করবো। আমাদের নব্বই দশকের কবিদের শুরুর দিকে ত্রিশ, পঞ্চাশ ও ষাট দশকের কবিদের দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন কেউ কেউ। ত্রিশের পঞ্চ পান্ডবের দ্বারা পঞ্চাশ ও ষাট দশকের কবিরা ব্যাপক প্রভাবিত ছিলেন। সেখান থেকে তারা পরবর্তীতে আলাদা পথ নির্মাণে দুর্দান্ত সাফল্যের স্বাক্ষর রাখেন। ষাট দশকেই একঝাঁক মেধাবী কবির আগমন ঘটে বাংলা কবিতায়। তাদের কয়েকজনকে নিয়ে কিছু কথা, তাদের কবিতা নিয়ে কিছু আলোচনা থাকবে এ বয়ানে। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে কবিতা নিয়ে এসময়েই নানা ধরনের নিরীক্ষা চলে। বহু মতবাদের মধ্যে দিয়ে কবিতা হাঁটতে থাকে। আশ্চর্য সব বিষয় সামনে আসে এই সময়টায়। রিয়েলিজম, সুররিয়েলিজম, এক্সপ্রেশনিজম, দাদাইজম, কিউবিজম, হাংরিবাদ, মার্ক্সবাদ। স্যাড জেনারেশন একটা আস্তর ফেলে এ সময়ে। নতুন নতুন নিরীক্ষার মাধ্যমে কবিতাও নতুন ফরমেটে এগোয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ষাট দশকের শিল্প সংস্কৃতি সাহিত্যে ব্যাপক পরিবর্তন হতে থাকে।পৃথিবী নতুন সভ্যতার দিকে এগিয়ে যায়।

কবিতাও নতুন ধারায় লেখা হতে থাকে।

ষাট দশকের কয়েকজন কবি ও কবিতা– 

কবি বেলাল চৌধুরী :

ষাট দশকের একজন গুরুত্বপূর্ণ কবি বেলাল চৌধুরী। একটা বিপুল জীবন তিনি অতিবাহিত করেছেন কবিতার মধ্যে দিয়ে। বাংলাদেশ ও কোলকাতা মিলিয়ে তার কবিতার আকাশ নির্মাণ হতে থাকে। কোলকাতার ষাটের বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, শামশের আনোয়ার, দেবাশিস বন্দোপাধ্যায়, তুষার রায়, বাংলাদেশের বেলাল চৌধুরী গদ্য ভাষায় কবিতা চর্চায় মনোনিবেশ করেন। তাদের বিশেষত্ব ছিলো “গদ্যকেই কবিতা করে তোলা, ব্যক্তিগত, বহুবর্ণ স্ফূরণ ও বিস্ফোরণ ঘটানো, যে কোনো তুচ্ছ দিনানুদিনের জিনিসকে কবিতায় উত্তীর্ণ করা”…. এই কথাগুলো বলছেন তাঁদের সমসাময়িক কালের আর এক প্রখ্যাত কবি ও আলোচক আবদুল মান্নান সৈয়দ। তিনি আরো জানাচ্ছেন, ষাটের  গদ্য কবিতার এই ধরনটি ষাটের দশকেরই নিজস্ব। বেলাল চৌধুরীর কবিতার মধ্যে হৃদয়ের ব্যবহারের চেয়ে বেশি আছে দৃষ্টির দান। আমরা একটি কবিতা লক্ষ্য করি :

” বিশাল এক রূপালি ঢেউ যেন তার

পেলব ইস্পাত নির্মাণ–পেছনে

তাসের পিঠের ছবির মতন

চকচকে নীল এলুমিনিয়াম আকাশ

অদূরে অবিশ্রাম প্রবহমানতায়

গুঞ্জরিত সধূম রেলস্টেশন 

বিশাল ব্যাপক প্রসার ও

ক্যান্টিলিভার অবস্থিতি তার

তাকে চিরে পল্লবিত বাহুডোরের মতোন

অসংখ্য তার ও লোহা 

ধাতব পালকে তার

লৌহ টিপের ঝালর সজ্জা

নগর কলকাতার নাগরী

বিপ্রলব্ধা কম্পিত হৃদয় 

সে এক ধাতব রূপালি হাঁস

অটুট তার ছন্দসংহতি

উদ্বেলিত তরঙ্গে নৃত্যপর

তার দোদুল্যমান দেমাকী

ঠাট ও কারুকৃতি।

(হাওড়া ব্রীজের ঠাট ও কারুকৃতি)

কবি বেলাল চৌধুরী দীর্ঘ সময় গদ্য কবিতা লিখেছেন। কারণ, তিনি একটা নিজস্ব রঙ ও চিন্তায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন তাঁর সময়ে। তার গদ্য কবিতা বিমূর্ততার ফর্ম ছেড়ে একসময় মাটিমাখা কোমল, নরম, প্রগাঢ় রূপ ধারণ করে।

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ