spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদতরজমাফিলিস্তিনি কবিতা : নাজিব ওয়াদুদ অনুদিত

ফিলিস্তিনি কবিতা : নাজিব ওয়াদুদ অনুদিত

আহমদ দাহবুর

আরবী (ফিলিস্তিনী) সাহিত্যের অন্যতম কবি আহমদ দাহবুর ১৯৪৬ সালে হাইফায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৮ সালে ইজরায়েলের দখলদারিত্বের শিকার হওয়ার পর থেকে তিনি সপরিবারে সিরিয়া ও তিউনিসিয়ায় নির্বাসিত জীবনযাপন করেছেন। আর্থিক অনটনের কারণে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেননি। তিনি একজন স্বশিক্ষিত মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সমর্থ হন। ইসরায়েল-পিএলও শান্তিচুক্তির পর গাজায় ফেরেন। ১৯৭২ সালে সিরিয়ায় ফিলিস্তিনী ব্রডকাস্টিং এজেন্সির রাজনৈতিক সম্পাদক এবং ১৯৮৮ সালে তিউনিসিয়ায় তিউনিস ম্যাগাজিনের প্রধান সম্পাদক নিযুক্ত হন। বর্তমানে তিনি ফিলিস্তিনী কর্তৃপক্ষের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক হিসেবে কাজ করছেন। ১৯৯৮ সালে তিনি ‘প্যালেস্টাইন অ্যাওয়ার্ড ফর পোয়েট্রি’ লাভ করেন।

নতুন পরামর্শ

পৃথিবীর উৎপীড়করা কোন খোঁয়াড় থেকে পালিয়েছে?

নিরো রোমকে জ্বালিয়েছে দু-দুবার, তারপর রচনা করেছে একটা খাপছাড়া সুর

গোটা নগরী তার সঙ্গে কণ্ঠ না মেলানো পর্যন্ত সে বাজনা বন্ধ করেনি।

হালাকু সেই সুরের উত্তরাধিকার, সে আগুন দিল পৃথিবীর গ্রন্থাগারে,

নদীতে বইল কালির স্রোত, সেই পাগল লোকটাকে ধন্যবাদ জানাতে

আর সেই ছাই থেকে জন্ম নিল পঙ্গপালের ভাষা— ।

মত্ততাকে অভিবাদন জানানোর পর এল হিটলার

তৃপ্ত হতে না পেরে 

তার অপিরহার্য ধ্বংশযজ্ঞের অন্তর্ভুক্ত করল সে সমুদ্রকেও,

হাঙ্গামা ছড়াল সাগরে, স্থলে,

সব কিছুকে জড়িয়ে নিল তার ক্রুদ্ধ মহাযুদ্ধে।

আমিও এক নিপীড়ককে দেখেছি—

যার কর্তৃত্ব অন্য তিনজনকে ধ্বংশ করেছে;

চালিয়েছে সব ধরনের নৃশংসতাই,

তারপরেও, আজকেও,

কবি পাঁচ জনা

মৌনতাকে আশ্রয় করেছেন।

মাহমুদ দারবিশ

আধুনিক আরবী সাহিত্যের প্রধান কবি। বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়। জন্ম গ্রামে, ১৯৪১ সালের ১৩ই মার্চ, উত্তর ফিলিস্তিনের পশ্চিম গ্যালিলির আল-বিরওয়া গ্রামে। ১৯৪৮ সালে ইসরাইল কর্তৃক বিতাড়িত হয়ে সপরিবারে লেবাননে আশ্রয় গ্রহণ করেন। পরে দেশে ফিরে লেখাপড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফিলিস্তিনী মুক্তিসংগ্রামে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। বারবার জেল খেটেছেন। ১৯৭১ সালে আবার তাকে দেশত্যাগ করতে হয়। কায়রো, বৈরুত, তিউনিস, প্যারিস এবং আম্মানে নির্বাসিত জীবন কাটান। শেষে ১৯৯৬ সালে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি বিভিন্ন সময় প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও)-এর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বহ পুরস্কার লাভ করেছেন। ২০১০ সালের তার মৃত্যু হয়।

ফিলিস্তিনের প্রেমিক

তার চোখ দুটি ফিলিস্তিনী

তার নাম ফিলিস্তিনী

তার পোশাক এবং দুঃখ ফিলিস্তিনী

তার রুমাল, তার পা, তার দেহ ফিলিস্তিনী

তার মুখরতা এবং নীরবতা ফিলিস্তিনী

তার কণ্ঠস্বর ফিলিস্তিনী

তার জন্ম এবং তার মৃত্যুও ফিলিস্তিনী

আমি সেখানে ছিলাম

আমি সেখানকার মানুষ, এবং আমার স্মরণ হয়,

আমি জন্মেছিলাম আর সবার মতোই, আমার একজন মা আছেন,

আর আছে অনেকগুলো জানালাওয়ালা বাড়ি,

আমার ভাইরা আছে, আছে বন্ধু এবং কারাগার।

আমার একটা ঢেউ আছে যা ছিনিয়ে নিয়েছে গাংচিলেরা।

আমার একটা নিজস্ব দৃষ্টি আছে, আছে ঘাসের অতিরিক্ত পাতা।

আমার একটা চাঁদ আছে শব্দগুচ্ছের চূড়ার পেছনে।

আমার আছে পাখিদের জন্যে খোদার পাঠানো খাবার

এবং কাল-স্তম্ভের চেয়ে দীর্ঘ জলপাই গাছ।

তরবারি দেহগুলোকে ভুরিভোজে পরিণত করার আগে

আমি সেই দেশ ভ্রমণ করেছি।

যদি পাথর হতাম

আমি কোনো কিছুর জন্যেই লালায়িত নই

কোনো গতকাল বিগত হয় না

আসে না কোনো আগামীকাল

আমার আজ-এর কোনো জোয়ার-ভাটা নেই

কিছুই ঘটে না আমার জীবনে।

আমি বলি আমার ইচ্ছা আমি পাথর হই

যাকে আঘাত করবে মৃদু ঢেউ

হই যেন সবুজ অথবা হলুদ

যেন আমাকে রাখা হয় ঘরের ভিতের ওপর

ভাস্কর্যের টুকরো কিংবা খোদাই-কর্মের প্রদর্শনী

অথবা যা নয় তার থেকে দরকারীটুকু উদ্ধার করার যন্ত্র হিসেবে।

আমার ইচ্ছে করে আমি পাথর হই

তাহলে আমি অনেক কিছুর আকাক্সক্ষা করতে পারব।

গাস্সান জাক্কতান

জন্ম ১৯৫৪ সালে, বেথেলহেম-এ। শিক্ষক প্রশিক্ষণের ওপর ডিগ্রী নেন জর্দান থেকে, তারপর কলেজে ফিজিক্যাল এডুকেশন টিচার হিসেবে কাজ করেন। তিনি ফিলিস্তিনী প্রতিরোধ আন্দোলনে যোগ দেন। পিএলও-র সাহিত্য পত্রিকা বায়াদার-এর সম্পাদক ছিলেন। রামাল্লাহ থেকে প্রকাশিত দৈনিক আল-আইয়াম-এর সাহিত্য সম্পাদক। আল-শুআরা নামে একটি কবিতাপত্র সম্পাদনা করেন। তার কবিতা ফরাশী ভাষায় অনূদিত হয়েছে।

গাইড

সে আমাদের আঙ্গুল তুলে দেখালো…

এই পথে।

তারপর হারিয়ে গেলো

বাড়িগুলোর ধ্বংশস্তুপের ভেতর 

বিস্ফোরণের পর দেখা গেলো

দেওয়ালের ফাঁকে

এখনো সে আঙ্গুল উঁচিয়ে আছে:

এই পথে…

এই পথে।

বালিশ

মাগো, এখনো কি সময় আছে,

আমি তাকে বলতে চাই─ শুভ সন্ধ্যা,

আমি ফিরে এসেছি

বুকে নিয়ে বুলেটের ক্ষত।

ওই তো আমার বালিশ─

আমি শুতে চাই

নিতে চাই বিশ্রাম।

যদি যুদ্ধের নাকাড়া কখনো বাজে

ওদেরকে বোলো:

আমি বিশ্রাম নিচ্ছি।

ইবরাহিম নাসরাল্লাহ

জন্ম ১৯৫৪ সালে, জর্দানের ইলবিহ্দাত শরণার্থী শিবিরে। শিবিরের জাতিসংঘ স্কুল ও কলেজে লেখাপড়া। ১৯৭৬ থেকে ১৯৭৮ সৌদী আরবে শিক্ষকতা করেন। তারপর জর্দানে ফিরে শুরু করেন সাংবাদিকতা। কবিতার জন্যে অনেকগুলো বড় বড় পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।

হতবুদ্ধি

ঘোড়াগুলো বলল, আমরা চারণভূমি চাই

ঈগলরা শোর তুলল, ওড়ার জন্যে চাই উঁচু আসমান

সাপেরা বলল, আমাদের দরকার গর্ত

কিন্তু মানুষেরা থাকলো হতবুদ্ধি হয়ে।

দিনগুলি

প্রথম দিন

আমি হাত ধরলাম যেন একটা কফিন তুলছি

সুতরাং তারা আমার জন্যে মালা পাঠালো

দ্বিতীয় দিন

আমি এমনভাবে হাত ধরলাম যেন ফুল তুলছি

তাই তারা আমার জন্যে একটা কফিন পাঠালো

আর তৃতীয় দিন আমি যখন

বাঁচতে চাই বলে চীৎকার করলাম

তখন তারা আমার জন্যে একজন ঘাতক পাঠালো।

প্রথম সেদিন

ধরলাম হাত, যেন শীতল কফিন

আমার সামনে এলো বরণের ডালা

গলায় পরালো তারা ফুলের মালা

দ্বিতীয় সে দিন

ধরলাম যেই হাত যেন কোমল গোলাপ

পাঠালো সে শীতল কফিন

নির্মম কঠিন, —এ নয় প্রলাপ।

অন্য কোনো দিন

আমি অর্বাচীন

বাঁচার উদগ্র নেশায় যেই চেঁচালাম

বলল সে, তোর জন্যে ঘাতক পাঠালাম।

কবিরা

সেই সুন্দর দূরবর্তী শহরে

ঘাসে ঢাকা একটা উঠোন

সবকিছু গান গায়

এবং সবাই নাচে

সে বলল: যাও, ছেনালটাকে নাচতে বলো

কী যে লজ্জা পেলাম!

সে বললো: যদি কবিরা হেরে যায়

তাহলে পৃথিবী জিততে পারবে না

স্বীকারোক্তি

হ্যাঁ

বাড়িটা দরোজা ও জানলাঅলা কবর

শয়নঘরটি অর্ধেক কাফন

এবং বিছানা অর্ধেক কফিন

তুমি, নারী, এবং আর কেউই

এই দৃশ্য বদলাতে পারবে না

স্বাধীনতা

ফুলদানি আর গৃহিনীদের

কাঁচি থেকে দূরে

গোরস্থানের গোলাপ বন ফিসফিস করে বলে:

খুবই দুঃখের সাথে… এখানে… সময় বহে যায়

কিন্তু কুঁড়িরা ভয় পায় না

শৈশব

তিনটে ছোট ছোট স্বপ্ন, একাকী

রাত্রি অতিক্রম করে

একটা বাড়ির সন্ধানে

যে মুহূর্তে শেলটি

শিশুটির হৃদয় চূর্ণ করে

বাসভূমি

আমাদের ভোরের চোঁয়ালের নিচে

সূর্যটা গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে ঝরে

এবং আমাদের সিঁড়ির অন্ধকারে

আমাদের হাঁসফাঁস নিঃশ্বাসে আগুন জ্বলে ওঠে

এইসব অসমাপ্ত বাসভূমিতে

আমাদের আবির্ভাব যুদ্ধবন্দীর মতো

তার চেয়ে বেশি কিছু নয়

প্রভাতের চোঁয়ালের নিচে

সূর্যটা গুঁড়ো হয়ে ঝরে

আমাদের সিঁড়ির আঁধারে

নিঃশ্বাস হাঁসফাঁস করে

শ্বাসের হলকায়

আগুন ঝলকায়

আমাদের আবির্ভাব

যুদ্ধবন্দী প্রায়

আমাদের এইসব বাসভূমি

কেবল স্বপ্নই থেকে যায়…

ইউসুফ আবদ আল-আজিজ

জন্ম ১৯৫৬ সালে, জেরুসালেমের কাছে বেইত ইনান-এ। তিনি অ্যারাব ইউনিভার্সিটি অফ বৈরুত থেকে ১৯৮৬ সালে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি লাভ করেন। বর্তমানে জর্দানে বসবাস করছেন। পেশায় শিক্ষক। নিরীক্ষাধর্মী কবিতা তাকে ইতোমধ্যেই ফিলিস্তিনের অন্যতম প্রধান কবির মর্যাদা এনে দিয়েছে। তিনি জর্দানিয়ান রাইটার্স সোসাইটি অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।

বাড়ি

তার সঙ্গে আমার দেখা ভাগ্যক্রমে

এই সেই মেয়ে যার ঠোঁট এবং খোঁপা

দীপ্তি ছড়াচ্ছিল।

সে আমার পাঁজর থেকে একটা ফুল ছিঁড়ে নিয়ে

উড়ে গেল উৎসমূলে, সেখানে

সে তার জ্বলজ্বলে রেশম দিয়ে নিজের জন্যে একটা ঘর বানাল।

যখন আমি তাকে চুমু খেলাম

সে হরিণীর মতো ঝিকমিক করতে করতে

ছুটে পালাল খোদার মুক্ত দেশে।

আমি বললাম, ‘তুমি কে, ওগো পানির ঘোটকী?’

সে বলল, ‘আমি রাণী।’

আমি যখন তাকে আলিঙ্গন করলাম

সে আমাকে তার ঢেউ দিয়ে গ্রাস করে নিল

এবং আমার চেতনার নক্ষত্র জ্বালিয়ে দিল।

আমি বললাম, ‘কে তুমি, ওগো কোমল কুসুম?’

সে বলল, ‘আমি বুলবুল পাখির পালক,

চুম্বনের রস।’

যখন আমি তাকে আমার মধুরতম আলিঙ্গন দিলাম

এবং আমার আনুষ্ঠানিক প্রার্থনা সারলাম,

সে আমার মধ্যে ঝড় তুললÑ প্রত্যেকটি কোষ এবং শিরায়

এবং আমার মৃতদেহের ওপর গড়ে তুলল জীবনের বাড়ি।

জুহাইর আবু শায়েব

জুহাইর আবু শায়েব আরবী সাহিত্যের প্রতিশ্রুতিশীল কবি। ১৯৫৮ সালে দিয়ার ঘুসুন গ্রামে তার জন্ম। তিনি জর্দানের ইয়ারমুক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৩ সালে আরবী সাহিত্যে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি লাভ করেন।

শহীদ

তাকে খুঁজে পাওয়া গেল মাঠে

উজ্জ্বল, তীব্র সবুজময়

হাত দুটি তুলে দেখা গেল তার

নিচের ঘাসগুলি সব হৃৎপিণ্ডময়।

কথিত আছে যে তার জামার আস্তিনে

প্রস্ফুটিত হয়েছিল গমের ডাঁটা।

লোকে বলে, পাখিরা তার

রক্ত বয়ে নিয়ে গিয়েছিল

তার প্রিয় জ্ঞাতিদের কাছে।

সে আসবে ফিরে

অগ্নিগিরির উদ্গীরণ নিয়ে,

আাবার ভরিয়ে দেবে তার মায়ের স্তন।

যখন তাকে পাওয়া গেল সে তখন আলোর মতোন সবুজ

তারা তাকে গোলাপকুঁড়ির কাফন পরিয়ে দিল,

তাকে শোয়ানোর জন্যে দিল আকাশ বিছিয়ে

এবং সূর্যকে বানাল তার মাথার বালিশ।

নাথালি হান্দাল

আমেরিকা প্রবাসী ফিলিস্তিনী কবি, নাট্যকার, গবেষক ও সম্পাদক নাথালি হান্দাল-এর জন্ম ১৯৬৯ সালে হাইতিতে। তিনি সিমন্স কলেজ থেকে ইংরেজী সাহিত্য এবং ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন্স এন্ড কমিউনিকেশন্স-এ গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি, ভারমন্টের বেনিংটন কলেজ থেকে ক্রিয়েটিভ রাইটিং এন্ড লিটারেচার এ মাস্টার অফ ফাইন আর্টস এবং ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডন-এর কুইন মেরি কলেজ থেকে ইংরেজী সাহিত্য ও নাটকে এমফিল ডিগ্রি লাভ করেন। ইউরোপ-আমেরিকার সাহিত্য জগতে তিনি একটি পরিচিত নাম। 

বেথেলহেম

গোপনতা বাস করে আমাদের পদচিহ্নের মাঝে।

পিতামহের বাণী প্রতিধ্বনিত হয় আমার স্বপ্নের ভেতর,

যেহেতু কাল ধরে রেখেছে তার জপমালা ও শহর।

আমি বেথেলহেমকে দেখেছি─ সবখানে ধুলোয় ভরা, একটা শূন্য শহর

সরু রাস্তায় হারিয়ে যাওয়া খবরের কাগজের ছেঁড়া একটা টুকরোসমেত।

লোকেরা সব কোথায় গেছে? তার জবাব দেওয়ালচিত্র এবং পাথর।

আর সত্যিকার বেথেলহেম কোথায় যেখানে ছিল আমার পিতামহের ভিটে?

আমার হাত থেকে ব্যাথা মুছে দেয় রুমাল। জলপাই গাছ এবং অশ্রু মনে করতে থাকে।

আমি শহরে হাঁটতে থাকি যতক্ষণ না দেখা পাই শাদা ঢিলে পোশাক-পরা এক আরব বৃদ্ধের।

আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনি কি সেই লোক নন যার গল্প করতেন আমার পিতামহ?’

আমার দিকে তাকিয়ে তিনি প্রস্থান করলেন। আমি তাকে বললাম, চলে যাচ্ছেন কেন?

তিনি হাঁটতেই থাকলেন। আমি থামলাম, পেছনে ঘুরলাম, এবং উপলব্ধি করলাম─

তিনি তার পদচিহ্নের মাঝে আমার জন্যে রেখে গেছেন সব গোপনতাগুলি।

গাজা

ছোট্ট এক ফালি এক দেশ

আঁধার গহ্বর গিলে খেয়েছে তার সব হৃৎপি-গুলোকে

এক শিশু বলছে আরেক শিশুকেÑ

ফিরিয়ে নাও তোমার নিঃশ্বাস

কেননা স্বপ্নের দেশ আর নেই

রাতের বাতাস

গাজাবাসী

জীবন যাপনের আগেই আমি মৃত্যুকে করেছি বরণ

বসবাস করেছি কবরে একদা

এখন বলা হচ্ছে আমার এতসব মৃত্যু

তেমন বড় কিছু নয়।

এত্তটুকুন পা

একজন মা তাকালেন আরেক মায়ের দিকেÑ

শিশুদের ছোট ছোট শবের সমুদ্র চারপাশে

দগ্ধ নতুবা শিরñেদিত

শুধালেন তাকেÑ

কীভাবে কাঁদব আমরা, বলো?

ডালিয়া আল-নাজ্জার

যখন ঠিক-ঠাক হবে সবকিছু

শেল পড়ে অবিরাম, রাতগুলো ঘুমহীন

মৃত্যু ঘনিয়ে আসে সূর্যালোকের সাথে

বোমার আঘাতে ছিন্নভিন্ন মানুষের দেহ

নিহত শিশুর লাশ এখানে-সেখানে ছড়ানো

গাজার ওপর বসেছে চেপে উদ্ধত সন্ত্রাস

তবুও আমরা লড়াই চালিয়ে যাব

যতদিন থাকে একটিও অধিকার অনাদায়ী

যতদিন না হয় আগের মতো সবকিছু ঠিক-ঠাক

যতদিন না হয় লেখা মহান বিজয়ের ইতিহাস

শাদি আল-আজিজি

আক্রান্ত

আমি বিশ্বকে এক গল্প শোনাতে চাই

            —অদম্য এক দেশের গল্প এটা, লড়াকু এবং

আত্মসম্মান-প্রত্যাশী। চলবে এ লড়াই

যতদিন না দখলদারির হয় অবসান।

এক মনোরম নগরীর কাহিনী এটা

তার ওপর অকারণে বোমা ছোঁড়ে ওরা— যখন তখন,

যেখানে-সেখানে; মানে না আইন, নিয়ম, মওসুম।

বোমায় পন্ড একটা বিয়ের কেচ্ছা এটা,

এক কিশোরীর নিহত হওয়ার কাহিনী;

ট্যাংকের গোলার বিরুদ্ধে পাথরের এবং

কামারশালায় বানানো রকেটের প্রত্যাঘাত।

গাজায় যখন বোমা ও শেলের ম্যাসাকার

এই গল্প তখন চির-উড্ডীন এক অদম্য পতাকার।

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ