সুগন্ধি সুনামি
নীল ফ্রক পড়া বালিকার বুক থেকে ওড়ে আসা ফড়িঙ
দেহের থরে থরে সাজায়–রূপালি রোদের ক্যানভাস
কেড়ে নেয়–চোখের সারল্য; দৃশ্যশিকারির সাম্পান।
সমুদ্রপকূলে দিয়েছে কারফিউ–ওড়ে পর্যটকের চোখ
নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে দাঁড়কাকের প্রবাল প্রাণপ্রাচীর
বালিকার ঠোঁটের চাতালে হালের হাওয়া পাল তুলে
মগ্নতার প্লাবনে ভেসে যায়–উপকূলীয় বিলবোর্ড।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে দিয়েছে–দশ নম্বর সংকেত;
বালিকার খোলাবুকের ফাঁদ থেকে ওড়ে আসে সুনামি
আর নিরাপত্তাকর্মীরা জানে না–
তবুও কেনো পর্যটকরা বালিকা পূজারি…
অন্ধ বিশ্বাস
মেঘের আঁচলে মোড়ানো মুখে কীসের এতো লাজফুল
গোপনে বিলি করে মগ্নতার মৌন বাতাস।
চোখের চাতালে কুয়াশার কুসুম খুঁজে সাধের নিবাস
কাচের চুড়ি ভাঙ্গার রিমিঝিমি শব্দের উল্লাস–
এক পলকে বিবর্ণ করে দিতে পারে প্রণয়ের নিঃশ্বাস।
দৃষ্টির বৃষ্টিতে ভিজে দেহের ফিনিক্স
লাজের কূপি নিভিয়ে দাও–দেখবো দেহের দরিয়া
ভাসবো জলের পরাণ প্রান্তরে–দেখবো দেবীর বিশ্বাস।
মাঝির কবজ নাভির ভাটিতে–চোখে শুধুই মগ্নতা
জলেই সাধের জীবন গড়ে; জলেই আসে শুদ্ধতা…
জঙলি পরির অরণ্য দখল
পৌরসভার পাড় দিয়ে যে পথ চলে গেছে অরণ্যে
সে পথেই কুঠুরি বাড়ি
পাশ দিয়ে সবুজের চাদর জড়ানো নদী
ঢেউয়ের পিয়ানোর সুরে ভাঙ্গে–মাঝির ঘুম মনমঞ্জরি
পাড় ঘেষা বালির বাকলে পড়ে থাকা হারানো মাস্তুল
কেড়ে নিতে চায়–মাছরাঙার শিকার সঙ্গীত
মাঝির চোয়ালে জেগে থাকা জুয়াড়ি জলের ফেনা
দ্যাখেনিÑঅন্ধপুরোহিত
কুঠুরির উঠোনে হারানো হিজলের পাতা
হালের হ্যারিকেন দিয়ে খুঁজেছিলো মাঝি
তা দেখে ফেটেছিলো বাঁশের খোঁড়ল;
জঙলি পরি– অরণ্য করেছিলো দখল…
বৃষ্টিচুম্বন
দরজার ওপারে চেনা পায়ের শব্দ–বৃষ্টির বাকলে মুদ্রিত।
মেঘেরমলাট খুলে গেছে–খড়ের গাদায় জমাট অভিমান
কলাপাতার গতরে লেপ্টানো কুমারী বৃষ্টির জলঅভিধান।
আর আজ সবুজ শৈশবে চাপাপড়া স্মৃতির প্রজনন প্রকল্পে
বেগুনি বাঁশের খোড়লে আটকে পড়া হীরের জল চন্দ্রচ্যুত।
কে তুমিÑবিজলী দৃশ্যকল্পের আগুন সুন্দরী?
চাঁদের দামে কেনা বেদনাগুলো মৌনতার ভায়োলিন,
অনুভূতির অধিবেশনে বেজে ওঠে–বৃষ্টিচুম্বন গান
আর শরণার্থী শিবিরে সেবিকার খোলা চুলে ভীর করে
বৃষ্টিবিলাসী লাল নীল প্রজাপতি…
বৌদির নকশিকাঁথা
বিধবা বৌদির রঙিন সূতোর নকশিকাঁথায়–জমে আছে দীর্ঘশ্বাসের সূঁচ
হাতের তালুতে লেগে আছে হারানো সময়–ব্লাউজের বোতামখোলা রাত
নারকেল পাতার পাটিতে জমে আছে–খোলস খোলা লাজ
বুকের সবুজ প্রান্তরে–ঘুড়ি উড়ার বিকেলে ভরে ছিলো বীজতলা
সুখের কোকিল সুরে সুরে ভরে দিয়েছিলো বৈঠকখানা…
আহা! সেই দিন–চোখের বাগানে ঝরে কাচের কুয়াশা
সিঁথির সিঁদুর শীতের ঝড়ে উড়ে গিয়ে হয়েছিলো সোনালি কফিন
সেই থেকে বৌদির মুখে হাসির প্রজাপতি একদম মলিন।
আর আমার চোখের তারায় বৌদির নকশিকাঁথা
জোছনারও জাগে বাসনা; নামায় পূর্ণিমা…
কাশপরি
শরতের শ্যামলা শহরেরজুড়ে কাশপরির খোঁপাখোলা মিছিল…
ঘুমহীন সেতারাবাদক–সরল সুরে জাগাবে দরদের দারুচিনিদ্বীপ
ভরাবে ভালোবাসাহীন ভোরের ভবভূবন; গঙ্গাফড়িঙ গাঁও
জোছনার নাভিমূলে বাজাবে হাওয়ার পালতোলা শুভ্রতার গান।
দাঁড়কাক দাঁড়িয়ে–বাদামী বেদনার বাগানে ঘুমঘোরের ঘুঙুর
উঁলু দেয়–মনের মন্দিরে, খুলে যায় শুভ্রতার কাঁঠালি দরজা।
চোখের পর্দা খুলে রেখো–যমুনা যুবতি দিয়েছে জলের ঘোমটা
কাশপরি দ্যাখে–সেলাইকলের শব্দে ঘুমহীন শারদীয়া পূর্ণিমা।
উড়ে উড়–ক উড়ুক্ক উৎসবের প্রজাপতি–বাজুক ঢোলের ময়না
গায়েবি রোদের গোলাপে ভরে যাক–কাকাবাবুর বৈঠকখানা।
তোমরা জানো না হয়তো–বায়নাসূত্রে ফলিয়েছি রোদের ফসিল
তবু ভুল করেও কাশপরি পড়ে দ্যাখেনি– শরতের সমবায়ু দলিল।
মানুষ ও পিঁপড়ার দাওয়াখানা
প্রিয় মুখের পতন–নক্ষত্র হারানোর মতোন
জমেছে খোয়ারি খোয়াব; ফেটেছে ছনের খোঁড়ল,
জেগেছে হাওরের হাওয়া; ভাতের বলকে তখন–
ওঠেছে দরিয়াপাড়ের দরদি দহন।
একা কাদার বিকেলে–যে মুখ খুঁজি নি গোপনে
সে মুখেই গোরখোদকের মৌনতা;
রহস্যের ফ্রক পরা শব্দহীনতা।
অথচ, পুরো পৃথিবীটা আজ–
নতুন-পুরাতনের দাওয়াখানানামা;
হলুদ ও সবুজে মোড়ানো পিঁপড়াবনের বেদনা।
পিঁপড়া’রা জানে না–
গোরখোদকের চোখে কখন ফোটে জলজোছনা।
দুঃখবাড়ির গল্প
প্রেমসংক্রান্ত যে স্মৃতি জেগে ওঠে মনের উদগ্রীব প্রজাপতির ডানায়
সেই ডানার রঙিন ক্যানভাসের ভিতর আশ্রয় চায়–সিঃসঙ্গ দুঃখবাড়ি
প্রতিদিন সবুজ ধানপাতার মানচিত্র ফুঁড়ে যে রোদ ভিড় করে উঠোনে
চোখ ফেরালেই হয়ে যায়–বিরহ প্রেতের ধূ-ধূ ছায়াঘেরা পথপরিক্রমা
সেই পথের মাঝখানে দাঁড়িয়ে শুনালে–প্রেমের পূণ্যদৈর্ঘ্য রূপকথা
অধৈর্য্য বাতাসের মাদুরে হলুদ সুখের আত্মসমর্পণ
বিনাশর্তে বুকের বরেন্দ্রভূমি রক্তাক্ত করে– যন্ত্রণার গোপন ঈর্ষায়।
যখন প্রথা ভাঙ্গার শ্লোগান দেয়–মহাকালের ভূমিজমন
ঠিক তখন বহু মৃত্যুর প্ররোচনায় পড়ে
উদগ্রীব প্রজাপতি গড়ে তুলে ধূসর স্মৃতির খামারে দুঃখের প্রজনন ।
সাঁতার বিষয়ক কবিতা
সব বেদনাবৃত্ত মুছে যাক–লেগে থাক চুম্বনের সুগন্ধ
চিকন চকমকে ঠোঁটের ফাঁক ফেরা হাসির ফসিল
পরাণপ্রান্তরে বসন্ত ফোটায়–সুগন্ধে ভরে ওঠে পৃথিবী
ধূলির ধবধবে রূমালে মোড়ানো দীর্ঘশ্বাসের বিষকাঁটা
লুফে নিলো গোপন পথের মগ্নতা, তখনি দেখি
গোলাপি বিকিকিনি পড়া গতরে নেমেছে পূর্ণিমা
আর তোমার বুকের ফাঁদ থেকে ওড়ে আসা ফড়িঙ
আমাকে শিখায় ওড়ার ব্যাকারণ
আমি জানতাম না–
পুরুষদের উড়তে সাঁতার জানা প্রয়োজন…
৫০০এমজি কবিতা
বিছানার চাদরে ছড়িয়ে থাকা দেহের দরদ–বড্ড কবিতা বান্ধব
শোধ
হারানো দিনের হনুমান হারিয়ে ফেলেছে ঘামের ঘন্টা।
হামলে পড়ে, চোখের চাতালে হলুদ হরিণের চাতুরতা
মাঝরাতের মাঝামাঝি খাটের খট্খট্ চালাকি সূত্রকলা
বুঝেনি প্রণয়ের প্রবণতা; রাত্রির গতরে লেগে থাকা ফুঁ
গড়ে কামের শিল্পবোধ–দেহে দেহে হবে পিরিতি শোধ।
আমার কবিতার ভাবনাবলয়
কবিতা ভাবনা সব সময়ই স্বতঃস্ফূর্ত নিস্তব্ধতা–আর আমার নিস্তব্ধতা অনুভূতির সূত্রপাত প্রথম কবিতা লেখা ও প্রকাশের মধ্য দিয়ে। অনেক গুলি কবিতার নক্ষত্রকে সাদৃশ্য বিস্মৃত করে গ্রন্থ। ঝাঁকঝাঁক শব্দগুচ্ছের শস্যক্ষেতে অস্তগামী কিছু ভাবনা, প্রদোষের অন্ধকার থেকে দৃশ্যমান করে–কবিতা। আর কবিতা শাস্ত্র্যপাঠ্যের মতো বারবার আবেগস্নাত মানুষের হৃদয়ে–দরদের কাঠামো গড়ে তুলে। আমাকেও তাই করেছে। আমার ভাবনাবলয়ের সাথে পাঠকের কল্পনা সংগতিপূর্ণ হবে কিনা জানি না। সমসাময়িক সাহিত্যমোদীরা–ভাবনাবলয়ের মানদণ্ড কাটাছেঁরা করবে কিনা। আমার ছোট্ট মনের অবলোকিত ভাবনার বিস্তৃতির বর্হিঃপ্রকাশ মাত্র। যদিও কবিতা বিজ্ঞান কিংবা দর্শনের মতো বিষয় নয়। কবিতা–মনকুঠিরে লালিত কিছু শব্দমালা। দরদ, আবেগ, রস আর চিত্রকল্প, উপমা, ছন্দই কবিতাকে সার্থক ও পূর্ণ করে। আমার প্রথম জীবনের লেখা প্রকাশের মধ্য দিয়ে, অনুভূতি বিশ্লেষণের ইন্দ্রিয়বোধের ইঙ্গিতমাত্র। যার কারণে, মনপবনের জলবিছানায় স্বপ্ন–কল্পনা–অনুভূতির জয়যাত্রার পরিচর্যা মাত্র। ছোটবেলা থেকে অল্পঅল্প স্বপ্ন ভাবতাম, কবিতা লিখবো। কবি মনের বিচ্ছিন্ন স্বপ্ন স্বাভাবিক ভাবে লালন করতাম মনে মনে। কবিতার পাণ্ডুলিপির প্রতি অবুঝপৃষ্ঠায় সমর্পিত হতো আবেগ। গাঢ় অনুভূতি অনুভবের স্বতন্ত্র্য পথ খুঁজে পেতাম কবিতার মধ্যে। এটা স্বপ্নের পথে শুধু ধাবিত করলো না, আমৃত্যু কাব্যসাধনায় জাগ্রত করলো। দ্বিধা-বিভক্তি ছেড়ে, মানুষের কটাক্ষ সংলাপ ভুলে, কাব্যসাধনায় যথার্থ চেতনাকে বাস্তবতার দাসত্ব থেকে চিরমুক্তি দেবার চেষ্টায় কবিতা লেখার কথা মাথায় আসে। কবিতা সাহিত্যের মধ্যে সবচেয়ে রসসিক্ত বিষয়। পাঠকের কাছে দ্রুত পৌঁছা যায়। তা ছাড়া মনপ্রাণে কবিতা লালন করে এসেছি। কবিতা পড়তেও ভীষণ ভালোলাগে, সেই ভালোলাগা থেকেই কবিতা চর্চা করা। আর ভালোলাগার চর্চা সজীব, সতেজ ভাবে বেঁচে থাক কালোর্ত্তীণ হয়ে মনজমিনে।
মাঝে-মাঝে আরো ভাবতাম, কাব্য সাধনা বিজ্ঞান-দর্শন কিংবা অর্থনীতির মতো পাঠ্যপুস্তকের গাইড বই নয়। পন্ডিত’রা বিষয়তান্ত্রিক প্রশ্নোত্তর গাইডে লিখে যাবেন–শিক্ষার্থীরা রাত জেগে তা মুখস্থ করবেন। সাহিত্যের মতাদর্শ সম্পূর্ণ ভিন্ন। যুগেযুগে কালোর্ত্তীণ সব রচনা, সব গ্রন্থ পাঠক’রা গ্রহণ ও বর্জন করে আসছেন। তাই আমার উচিত, পাঠকদের মতততাত্বিক বিন্যাস উদ্ধার করা। যে লেখা মেধাবী পাঠকদের আলোড়িত করে না; সে লেখা বেশী দিন বাঁচে না। যুগযুগ ধরে এটাই প্রমাণিত। পাঠক’রা যেমন লেখকের জনপ্রিয়তা নির্ধারণ করে। আবার পাঠকদের মনে রাখা শ্রেয়–জনপ্রিয় লেখক মানে সব লেখা মানত্তীর্ণ নয়। তবে আমি পাঠকদের জন্য লেখি। পাঠকরা আমার লেখার মেরুদন্ড। আসলে আধুনিক কবিতার বিষয়বৈচিত্র্য এবং ভাষার নির্মাণশৈলী এমনই অভূতপর্ব যে, আধুনিক কবিতাকে কোনো একটি সংজ্ঞা বা বিশ্লেষণ দ্বারা চিহ্নিত করা যুক্তিযুক্ত নয়। এক্ষেত্রে কবিদের দায়িত্ব শতগুণ বেড়েই যায়, প্রগাঢ় বোধ,চেতনা,রুচি এমনকি ইমোশনাল বিষয়গুলো কবিতায় বহিঃপ্রকাশ করার। আমি সফল ভাবেই তা সম্পূর্ণ করার চেষ্টা করেছি। এরই পাশাপাশি চিরচলিষ্ণু জীবনের নানান খন্ড খন্ড ঘটনাবলী,স্মৃতিচারণ,হাসি-কান্না,আনন্দ-কল্পনা, প্রাত্যহিকতা এই সব মিলেই তো আমাদের জীবন। আর এই জীবনের জলছবি যদি, কবিতায় স্পষ্ট ভাবে ভেসে না ওঠে, তাহলে কবিতার অপূর্ণতা থেকে যায়। এই আধুনিক কবিতায় বুদ্ধিবৃত্তির প্রয়োগ প্রয়োজন। পাঠক, কবি জীবনানন্দ দাশকে আবিষ্কার করেছেন তাঁর কবিতার মধ্যে। আমি কবিতা লেখার আগে ভাবি, পাঠ্যচেতনা ও অভিজ্ঞতার শুদ্ধচিন্তার রোমান্টিক উপল্বদ্ধি প্রয়োগে কবিতা স্বার্থক হয়ে ওঠে। প্রাচীন কলা শাস্ত্রে বলেছে–‘বাক্যং রসাত্মক কাব্যম্’। আমি বিশ্বাস করি, রসতত্ত ছাড়া কবিতা রুগ্ন আপাতসাদৃশ্য মাত্র। একজন কবির জন্য প্রতিটি ঘোর স্বতঃস্ফূর্ত নিস্তব্ধতা। আর এই নিস্তব্ধতার ঘোরবৃত্তে¡ কবিতার নক্ষয়তন সাদৃশ্য উদ্ভাসিত হয়। ঝাঁকঝাঁক শব্দগুচ্ছের শস্যক্ষেতে অস্তগামী কিছু ভাবনা, প্রদোষের অন্ধকার থেকে দৃশ্যমানের মাধ্যমে কবিতার মুক্তিলাভ। যা কিনা শাস্ত্রপাঠ্যের মতো, বারবার আবেগস্নাত মানুষের হৃদয়ে কড়ানাড়ে। আমার ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে। আমি ভাবি বা আমার ভাবনায় এসে যায়–কবিতাকে কোনো পূর্বপরিকল্পিত বিধিনিষেধের শৃঙ্খল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত করা যায়নি কখনো। কবিতা কোনো একরৈখিক নির্দিষ্ট বৃত্তের সীমানায় আসতে পারে না। কোনো নির্দিষ্ট বৃত্তের সীমানায় আটকে গেলে –সাবলীল ভাবে কবিতার মাধুর্য খুঁজে পেতে কষ্ট হয়। কবিতা অনুভবের বিষয়। শৃঙ্খলমুক্ত শুভ্র পালকের মতো। কবিতাকে শব্দ, চিত্রকল্প, প্রকারণ, আঙ্গিক বিশ্লেষণ করে যাচাই করা সত্যি যুক্তিহীন। তবে এসব ব্যবহারের বিরোধীতাও আমি করি না। কবিতা নিয়ে বহু প্রবন্ধ লেখা হচ্ছে যুগেযুগে। এর ধারা চলবে আগামীতেও। আমি হাজার হাজার কবিতা পড়ি। বহু কাব্যগ্রন্থ পড়েছি। এই পড়া থেকে বুঝেছি–প্রত্যেক কবির মৌলিক স্বর থাকে। সেই স্বর কবির একান্ত নিজের। কারো স্বর গ্রহণযোগ্য; কারোটা নয়। সেই স্বরের কবি অনেক আছে বাংলাদেশে। যাদের কবিতা বহুবর্ণের উপমা।
আমি মনে করি–কবিতা রুগ্ন আপাতসাদৃশ্য মাত্র নয়। কবিতা জীবন নিংড়ানো অনুভ’তি। এ কারণে এই কবির কবিতা পাঠকালে প্রকৃত কাব্যপাঠের মর্ম আবিষ্কার করতে পারবে মেধাবী পাঠকদ্বয়। সরল-সহজ-প্রাণবন্ত বাক্য সম্পূর্ণ স্বার্থক হয়েছেন। কবির প্রয়াস কাব্য সাধনা। সাধনাই কবিতার জন্ম হয়। আর একজন কবির কাছে একটি মানর্ত্তীণ কবিতা নিজের সন্তানের মতো প্রিয়। এটাই হওয়া স্বাভাবিক। কবি এমনটা বুকে লালন করেই কাব্যভূমিতে জেগে আছেন। একজন কবির লক্ষ্য হওয়া উচিত–সিরিয়াস ধারার কাব্য সাধনা। আর তাতে নি:সন্দেহে দরকার চিন্তাশীল পরিকল্পনা। কবিতার সুষমতা, বর্ণের বর্ণিলতা, বিষয়ের নতুনত্ব করাটা প্রতিটি কবির মঙ্গলকবজ। কিছু কবিরা যখন নিজেকে প্রচারের করতালিতে সঙ সেজেছেন। অনেকে স্বভাবগত ভাবে ভিড়, হৈচৈ পাশ কেটে সাধনার মধ্যে কবিতা চর্চায় নিমগ্ন। যত্ন করে কবিতায় রস, আবেগ, দরদ, নিজস্বভাবনার চিত্রকল্প এঁকেছেন চলেছেন আজও। পাঠকালে নি:সন্দেহে মানপূর্ণ প্রেমকাব্য রস আহরণ করতে পারবেন তাদের কবিতায়। আর আমার কবিতা আমার একার ভাবনা বলয়ের সমষ্টি। যা কাউকে ভাবাবে শব্দনদীর কোন অবাধ্য মাঝিকে।
মিজানুর রহমান বেলাল
জন্ম: ১লা জানুয়ারি ১৯৮২, জন্মস্থান: কাব্যভবন, বয়রা পাড়া, সিংসাড়া, আত্রাই, জেলা: নওগাঁ।
বর্তমান বসবাস: ইতালী হাউস [৪র্থ তলা] দেবিদ্বার,কুমিল্লা।
একাডেমিক শিক্ষা: প্রকৌশলীতে গ্রাজুয়েশন,
পেশা: চাকরি (সিভিল ইঞ্জিনিয়ার),
চেয়ারম্যান: দাগ কন্সট্রাকশন লিমিটেড ,
সম্পাদিত ছোটকাগজ: দাগ
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: * সীমান্তের কাঁটাতার (২০১১)
* জন্মান্ধের জবানবন্দি(২০১২)
* বিফল চাষের কীর্তন(২০১৩)
* বায়বীয় বায়োস্কোপ(২০১৪)
* বেদনাবৃত্তের বনখাগড়া(২০১৫)
* কর্কট রাশির কবিতা(২০১৬)
পুরস্কার: জাতীয় জাগরণে স্বীকৃতি স্বরূপ বাঙলা সাহিত্যিকী পদক-২০০২ (রাজশাহী),
অরণি গল্প লেখা প্রতিযোগীতায় সেরা গল্পকার-২০১৩,
লিটলম্যাগ সম্পাদনায় কবি আয়েশা আশরাফ স্মৃতি সাহিত্য সম্মাননা-২০১৬