আহমাদ মাযহার
[পূর্বকথা: আগে দুয়েক বার দেখা হলেও রাবেয়া খাতুনের জীবনের উপান্তের বছর দশেকের বেশি সময় আমি তাঁর সান্নিধ্য পেয়েছি। এমনকি নিউ ইয়র্কে বসবাস শুরু হবার পরও প্রতি বছর ঢাকায় গেলে তাঁর সঙ্গে বার কয়েক দেখা করেছি বা আড্ডা দিয়েছি। অনুভব করেছি তাঁর আলোকিত ও মুক্ত মনকে। বিচ্ছিন্ন ভাবে ক্যামেরার সামনে তাঁর সঙ্গে কথা বলা ছাড়াও সময় নিয়ে ধীরস্থির ভাবে তাঁর সাক্ষাৎকারও নিয়েছি একাধিক বার। একবারের সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে, আরেকবারেরটা জাতীয় জাদুঘরের ‘মৌখিক ইতিহাস’ হিসেবে সংরক্ষিত আছে। আমি তাঁর অনেক বইই পড়েছি। তবে মনে পড়ছে ‘শঙ্খ সকাল প্রকৃতি’ উপন্যাসটি আমার তখনও পড়া হয়নি। তিনি বেশ কয়েকবার আমাকে পড়তে বলেছেন, শুনতে চেয়েছেন আমার প্রতিক্রিয়া। ভাসা ভাসা ভাবে পড়ে একদিন কথাও বলেছি এ নিয়ে। কিন্তু বলতে দ্বিধা নেই, যাকে যথার্থ পাঠ বলা যায়, তেমন ভাবে পড়া না হওয়ায় তাঁর সঙ্গে বইটি নিয়ে আমার আলোচনা একেবারেই জমেনি। বইয়ের বিষয়বস্তু, লেখক হিসেবে তাঁর জীবনদৃষ্টি এবং চরিত্রায়ণ এবং এসবের সাংস্কৃতিকতা নিয়ে কোনো ভালো আলাপ হয়নি। আমাদের দুর্ভাগ্য যে, বইটি নিয়ে কলকাতার নতুন গল্পপত্র পত্রিকায় প্রকাশিত [জানুয়ারি ২০১৪ সংখ্যা, সম্পাদক : শংকর চক্রবর্তী] অভিজিৎ সেনগুপ্তের অন্তর্দর্শী আলোচনাটি ছাড়া আর কেউ কোনো আলোচনাও করেছেন বলে জানি না। রাবেয়া খাতুনের বই নিয়মিতই প্রকাশিত হলেও তাঁর লেখা প্রকৃত পাঠকের কাছে সাম্প্রতিক কালে পৌঁছতো না। মোটকথা যখন থেকে রাবেয়া খাতুন নিজের মতো করে নয়, অনেকটা বয়স জনিত কারণে পারিবারিক পরিচালনায় নিজের জীবন যাপন করতে শুরু করেন তখন থেকে সাহিত্যিক মহলে তাঁর সংযোগ হয়ে পড়ে পরোক্ষ। বাংলাদেশের সাহিত্যের তাঁর সমসাময়িকদের অনেকের প্রয়াণও এর অনেকটা কারণ। শেষের বছর চারেক কিছু লিখতে ভালো না লাগার কথা বলতেন আমাদের। তবু তাঁর শেষের বছর দশেকের প্রকাশনা সমাদর তো দূরের কথা পাঠকের কাছেই পৌঁছেনি।
অন্তর্জাল ঢুঁড়ে নিশ্চিত হয়েছি তাঁর সম্পর্কিত কয়কটি মাত্র লেখা সামান্য অদল বদল করে পুনর্মুদ্রিত হয়েছে। মোটকথা আশির দশক পর্যন্তও তাঁর লেখা নিয়ে যাঁরা আলোচনা করেছেন তাঁরা সক্রিয় রাবেয়া খাতুনকেই অন্বেষণ করেছেন। কিন্তু শেষ পর্বের অন্তত দশ বারো বছরের লেখা সচেতন পাঠকের কাছে পৌ্ছেছে খুবই কম।
আমাদের পুস্তক প্রকাশনা যে এখনো প্রকৃত পুস্তক-প্রকাশনা ব্যবসায় নয়, প্রধানত কেবল অর্থ আহরণের মাধ্যম তার প্রমাণ অনেক ক্ষেত্রে প্রকাশকেরা বহু বছর ধরে নিয়মিতই বই বের করেন কিন্তু পাঠকদের সামনে যথামর্যাদায় উপস্থাপন করেন না। তা না হলে আমার মতো বইয়ের জগতের নানা প্রান্তে পৌঁছার সামর্থ্যবান মানুষ হওয়া সত্ত্বেও তাঁর শঙ্খ সকাল প্রকৃতি বইটি সংগ্রহ করতে পারিনি কেন? এমনকি আমীরুল ইসলাম, যিনি রাবেয়া খাতুনের রচনাবলির নাড়ি-নক্ষত্রের খবর রাখেন তিনিও মাসখানেকের চেষ্টায়ও সংগ্রহ করে দিতে পারেননি বইটি। বইটির প্রকাশক অন্যপ্রকাশেও কোনো কপি পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্টরা জানেন খ্যাতিমান লোকেদের বই অধিকাংশ প্রকাশক প্রকাশ করেন কেবল নিজেদের কৌলীন্য বোঝানোর জন্য। স্বল্পসংখ্যক ঔষধি কপি প্রকাশ করে অর্থ আহৃত হবার পর এসবের আর কোনো খোঁজ থাকে না সে সব প্রকাশকের। রাবেয়া খাতুনের এই বইয়েরও ভাগ্যে এমনটিই ঘটেছে।
দিনকয়েক আগে নিউ ইয়র্কের মুক্তধারার বুকসেলফে বহু বছর ধরে পড়ে থাকা রাবেয়া খাতুনের রচনা-সংকলন শুভেচ্ছা সাত প্রথম খণ্ডের একটি কপি পেয়ে যাওয়ায় তাঁর এই উপন্যাসটি পড়তে সমর্থ হই। কিন্তু এত অসতর্ক ও অসম্পাদিত প্রকাশনা এই সংকলনটি যে, লেখকের অভিপ্রায়কে পাঠ করতেও রীতিমতো সাধনা করতে হয়েছে আমার। তবু জন্মদিনের লগ্নে তাঁর উল্লেখযোগ্য এই বইটি যে পড়তে পারলাম তাতেই আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি। কারণ তাঁর এই বইয়ের তাৎপর্য তা না হলে হয়তো আমার অজানাই থেকে যেত।
আরেকটা কথা, বইটি নিয়ে আমার আলোচনা অনুপুঙ্খ পর্যবেক্ষণের স্বার্থে আরো দৈর্ঘ্য দাবি করে। কিন্তু তা সত্ত্বেও যে রচনার দৈর্ঘ্য এখানে সীমিত রয়ে গেল তার কারণ জন্মদিনের আগেই আমার এই রচনাটি প্রকাশের অভিপ্রায়। ফেসবুকে দীর্ঘ লেখা পড়বার লোকের অভাবের আশঙ্কাও এখানে কাজ করেছে। আমার লেখাটিরও পাঠক যে খুব বেশি হওয়া সম্ভব নয় সে ব্যাপারে আমি ‘সন্তুষ্ট’! তবু যাঁরা পড়তে সমর্থ হবেন তাঁদের আগাম ধন্যবাদ জানিয়ে রাখি। আমার রচনাটি নিম্নরূপ:]
রাবেয়া খাতুনের মৃদু কিন্তু দৃঢ়ভাষ স্মৃতিকথা থেকে কিছুটা জানা যায়, বিগত শতাব্দীর প্রথম ভাগে নিতান্ত কৈশোরক বয়স থেকেই তিনি ছিলেন সময়াতিক্রমী সাহসী-সত্তার অধিকারী। কৈশোরোত্তীর্ণ কালেই যাঁর উন্মুখতার সূচনা, তিনি যে ক্রমশ অদম্য হয়ে উঠবেন, সে তো সহজেই অনুমেয়! মুসলমান পরিবারের মেয়ে হয়েও পত্রিকায় লেখা পাঠানোর অপরাধে তাঁর পারিবারিক মহলে দেখা দিয়েছিল তীব্র অসন্তোষ। মুসলিম পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের মূল্যবোধ এমন যে, একটি মেয়ের হাতের লেখাও সংসারের বাইরের পুরুষদের দেখতে মানা। নারী হিসেবে এ রকম অবরুদ্ধ এক সমাজের বাসিন্দা হয়েও তিনি স্বপ্ন দেখতে সমর্থ হয়েছেন বাংলা ভাষার একজন ঔপন্যাসিক হওয়ার, নিজের জীবন-জিজ্ঞাসার মুক্তি ঘটাতে চেয়েছেন লেখক সত্তার নিয়মিত ও ধারাবাহিক অনুশীলনের মধ্য দিয়ে। শঙ্খ সকাল প্রকৃতি উপন্যাসটির গভীরে প্রবেশ করার আগে ওপরে উল্লিখিত এই কথাগুলো মনে রাখা ভালো।
মধ্য পঞ্চাশের দশক থেকে তিনি ছোটগল্প ও উপন্যাস লিখছেন। তাঁর সমসাময়িক লেখকদের মধ্যে নারীরা সংখ্যায় অঙ্গুলিমেয়। তাঁর চারপাশে সাহিত্যিক পরিমণ্ডলও ছিল। কিন্তু প্রথম উপন্যাস ‘মধুমতী’ ছাড়া তাঁর লেখাপত্র নিয়ে আলোচনা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হয়নি। এমনকি তাঁর আশির দশকের পরের লেখালিখি নিয়ে উল্লেখযোগ্য আলোচনা হয়ইনি বলতে গেলে। নিজর সাহিত্য কর্ম সম্পর্কে কাউকে দিয়ে পর্যালোচনা লেখানোর জন্য তাঁর নিজের দিক থেকেও কোনো আকুতি বা তৎপরতা ছিল না। কিন্তু নিজের কাজ নিয়ে সবসময় ছিলেন আন্তরিক। এক সাক্ষাৎকারে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছিলাম তাঁর লেখাপত্র সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য আলোচনা না হওয়া প্রসঙ্গে। উত্তরে তিনি বলেছিলেন,
‘আমার নিজের লেখা সম্পর্কে আমার ভাবনাটা অনেকটা এ রকম যে, আমি লিখে দিয়েছি। আমার যা সাধ্য আমি করেছি। এগুলোর যদি সত্যি কোনো শক্তি থাকে তাহলে তারা নিজের শক্তিতেই পরের প্রজন্মের কাছে পৌঁছে যাবে। শক্তি কিছু না থাকলে যাবে না।’
সাপ্তাহিক ২০০০, ঈদসংখ্যা, ২০১১ [সম্পাদক: মঈনুল আহসান সাবের]
২.
একজন ব্যক্তির পক্ষে ঔপন্যাসিক হিসেবে ঘর ও বাইরের যে ব্যাপ্ত জীবনাভিজ্ঞতার ভিতর দিয়ে যেতে হয় তা রাবেয়া খাতুনের মতো একজন নারীর পক্ষে অর্জন ও শনাক্তি কতটা অনতিক্রম্য-প্রতিকূল বিষয় তা সহজেই অনুমেয়। যে গ্রামীণ ও সীমিত নাগরিক সংস্কৃতিতে একজন নারী হিসেবে তাঁর শৈশব-কৈশোর ও তারুণ্যের কাল কেটেছে তাতে মুক্ত জীবনদৃষ্টি অর্জনই যেখানে প্রায় অসম্ভব সেখানে শঙ্খ সকাল প্রকৃতি উপন্যাসে উপস্থাপিত জীবনদৃষ্টিকে একটি উপন্যাসের বিষয় হিসেবে কল্পনা করা কতটা সুদূরকল্পনারও বিষয় তা আমাদের ভাবায় বটে! এই উপন্যাসে তিনি শিল্পবোধ, প্রেম ও যৌনতাকে নরনারীর নানামাত্রিক সম্পর্কের আলোকে যেভাবে সামলেছেন তা গুরুত্বসহ প্রণিধানযোগ্য।
৩.
উপন্যাসটির বিষয়বস্তু গড়ে উঠেছে শিল্পীর অন্তর্জীবন ও দৈনন্দিন যাপিত জীবনের দ্বন্দ্বদীর্ণ পরিস্থিতিকে অবলম্বন করে। এর প্রধান চরিত্র তিনটি, একটি নারী আর অন্য দুটি পুরুষ! মূলত নারী চরিত্রটিকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়েছে উপন্যাসটি। প্রধান তিনটি চরিত্রের নাম ‘শঙ্খ’, ‘সকাল’ ও ‘প্রকৃতি’। তিন চরিত্রের প্রত্যেকেই তিন মাধ্যমের শিল্পী! এই তিন নামের একত্র উচ্চারণেই উপন্যাসের নামকরণ! কিন্তু এর কেন্দ্রীয় নারী চরিত্রটির নাম প্রকৃতি; শঙ্খ তার প্রেমিকের নাম–তারা দুজনেই চিত্রশিল্পী; সকাল নামের অপর চরিত্রটি অভিনেতা ও চলচ্চিত্র পরিচালক।
উপন্যাসের শুরুতেই জানা যায়, প্রকৃতির প্রেমিক শঙ্খ সাদিক বিবাহিত ও সংসারী পুরুষ। কেন্দ্র চরিত্র বিলকিস জাহান প্রকৃতি বাংলাদেশের খ্যাতিমান চারুশিল্পী। অন্য দিকে চারুশিল্প দিয়ে শুরু হলেও জীবনের ন্যূনতম চাহিদা মেটাতে পারে না বলে এখন শঙ্খ সরে গেছে কমার্শিয়াল আর্টে। দুজনেই যার যার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত ও ব্যস্ত। শুরুতেই অল্প কথায় ঔপন্যাসিক আভাসিত করে দেন, শিল্পীদেরকে সমাজশাসিত সরল ও সাধারণ জীবন যাপনে সীমিত রাখা যায় না। তাদের যাপিত জীবনে এই ব্যতিক্রমের পরিচয়ও আভাসিত। খুব অল্প কথায় লেখক বুঝিয়ে দেন প্রকৃতি যখন স্টুডিওতে কাজ করে তখন সে চায় নিমগ্নতার জন্য নিরিবিলি পরিবেশ। এমন কি স্টুডিওতে ছবি আঁকায় নিমগ্ন থাকার সময় অন্য পুরুষসঙ্গী চলচ্চিত্র পরিচালক সকালের উপস্থিতিকেও সে পছন্দ করতে পারে না। সামান্য ইংগিতে লেখক বুঝিয়ে দেন, চিত্রসৃষ্টির প্রেরণা প্রকৃতির নিজের কাছে দৈনন্দিন ও বাহ্যিক পরিচিত জীবনের চেয়ে বেশি মূল্যবান। ঔপন্যাসিক একজন জগৎবিখ্যাত চিত্রশিল্পীর জীবনের কথা ইঙ্গিতে উল্লেখ করেছেন এখান, যদিও নামটা বলেননি; সম্ভবত যে কেউ অনুমান করবেন তিনি ভিনসেন্ট ভ্যান গখকেই বোঝাতে চেয়েছেন। এই সূত্রের ইংগিতে লেখক এটাই আভাসিত করেছেন যে, শিল্পীর অন্তর্জীবনের স্বাতন্ত্র্য তার সামাজিক জীবনকে প্রভাবিত করলে সমাজে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া হয়! এই আভাসটুকুও উপন্যাসটির বিষয়বস্তুগত তাৎপর্যকেই নির্দেশ করে।
সংসারের সাধারণ গতানুগতিক নারীপুরুষ বিয়ে করে, সন্তানের জন্ম দেয়, বৈষয়িকতার চর্চা করে; অর্থাৎ অনেকটা এমন যে, খাওয়ার পর রাঁধা ও রাঁধার পর খাওয়ার মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করে তারা। ব্যক্তির যে অন্তর্জীবনকে লেখক এই উপন্যাসে তুলে ধরতে অভিপ্রায়ী সে রকম চরিত্রদের দিয়ে এই উপন্যাসে দৃশ্যমান সম্পর্ক প্রকাশ করতে গেলে অস্বাভাবিক ও অনৈতিক শোনাতে পারে; তাঁর লেখকীয় বিচক্ষণতাই তাঁকে দিয়ে এমন তিনটি মূল চরিত্র আঁকিয়েছে বলেই তারা সকলেই ব্যক্তিসত্তায় সৃষ্টিশীল শিল্পী।
উপন্যাসটির তিন চরিত্রের নামের একত্রে উচ্চারণের তাৎপর্যও বিশেষ! এই বিশেষত্বও পাঠ করতে করতে ক্রমশ অনুভব করা যায়!
৪.
সাধারণ সামাজিক মানুষের দৃষ্টি দিয়ে দেখলে ফরাসিদেশের বড় বড় শিল্পীদের জীবন যাপনকে পাগলামি মনে হতে পারে। সাধারণ মানুষের চোখে যা পাগলামি, যে ধরনের আচরণ আমাদের সাধারণ সমাজদৃষ্টির কাছে মোটেও গ্রহণযোগ্য নয় একজন শিল্পীর সেই ধরনের আচরণকে তাঁদের মনে হতে পারে জীবন-অতিক্রমী কাণ্ড! এই ধরনের কাণ্ড যাঁরা করেন তাঁদের শিল্পী হিসেবে বিবেচনা করতে গিয়ে সামাজিক পটভূমিতে মেনে নেয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
‘…আমাদের পূর্বসূরিদের অনেক মহান শিল্পী শুধু ব্যক্তিগত কারণে ধ্বংস হয়ে গেছেন। সমাজ মানুষটির প্রথাবিরোধী জীবনকে ধিক্কারের চোখে বিচার করেছে, বিবেচনা করেনি তার শিল্পমানের। মানুষটি ভাবীকালের জন্য কী রেখে যাচ্ছে বা রেখে যেতে পারত সেদিকটা থেকেছে গৌণ, মুখ্য হয়ে উঠছে শিল্পীর যাপিত জীবন। ফলে তারা ধ্বংস হয়েছেন। কেউ অনর্গল যুদ্ধ করে গেছেন ভগ্ন স্বাস্থ্য, বিরূপ সময়, মুখ ফিরিয়ে থাকা সমাজ-সংসারের সঙ্গে। কষ্ট কোনো কোনো ক্ষেত্রে শিল্পসৃষ্টির সুতিকাগার। কিন্তু কষ্টের সঙ্গে যদি জড়িত থাকে অসম্মান-অপমান, সে কষ্ট শিল্পীকে জীবন্ত হত্যা করে।’
শঙ্খের সঙ্গে প্রকৃতির সম্পর্ককে লেখক যে পরিণতির দিকে নিলেন না বা নিতে পারলেন না সেটা তো এই সমাজদৃষ্টির আলোকে লেখকের বাস্তবতা বোধেরই পরিচায়ক; শিল্পীয় ব্যক্তিস্বভাবে অন্তর্লীন মুক্তপ্রাণতা সামাজিক প্রচলের সঙ্গে দ্বান্দ্বিকতায় লিপ্ত হয়! এই দ্বন্দ্ব-উদ্ভবের কারণগুলোও সৃষ্টি হয় শিল্পীর অন্তর্জীবনে। কিন্তু ব্যক্তির অন্তর্জীবনকেও প্রভাবিত করে সমাজদৃষ্টিই; চরিত্রগুলোর পরস্পরের মধ্যে বিনিময় হওয়া সামান্য কয়েটি সংলাপই উপন্যাসের উপজীব্য বুঝিয়ে দেয়ার জন্য দরকারি ঘটনাপরিস্থিতিকে উপস্থাপন করতে পারে। এ ক্ষেত্রে লেখকের পরিমিত কথন উপন্যাসের বিষয়বস্তুকে করতে পারে আভাসিত। এখানে দেখা যায় লেখকের করণকৌশলগত মুন্সিয়ানাকে!
দীর্ঘ একাকী জীবন যাপনে অভ্যস্থতা প্রকৃতির ইন্দ্রিয়জ তৃষ্ণাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু শঙ্খ ও সকালের হার্দিকতা তার শিল্পীহৃদয়কে জাগিয়ে দেয়; অতিক্রম করে যায় বাস্তবের বোধ ও অবোধ্য দেহজতৃষ্ণার দ্বন্দ্বরক্তিমতাকেও! শঙ্খের সঙ্গে শরীরী প্রেমে লিপ্ত প্রকৃতির চৈতন্য কিন্তু ততক্ষণে পাপবোধ থেকে মুক্ত। কেননা তার মনে হয়, নিষিদ্ধ এই প্রেমের স্বর্গীয় অনুভূতি থেকেই সৃষ্টি হয় বৃহত্তর সৌন্দর্য অনুভবের জগৎ; এটাই শিল্পকলার বিষয়বস্তু! তার অন্তরে জেগে ওঠা সৌন্দর্যের সেই জগৎকে শিল্পরূপ দেওয়ার আর্তি ওঠে প্রবল হয়ে। শঙ্খ ও তার মধ্যেকার এই সম্পর্কে যদি কোনো ক্লেদ থাকত তাহলে তার পক্ষে সেই অনুভবকে শিল্পরূপ দেয়া সম্ভব হত না। প্রকৃতি মনে করতে থাকে, সাধারণ গতানুগতিক জীবনের যে পবিত্রতা তার চেয়েও বেশি পুণ্যময় শিল্পকাঙ্ক্ষিত সত্তা।
৫.
রাবেয়া খাতুনের অপরাপর গল্প-উপন্যাস পাঠ করে তাঁকে সংকীর্ণ অর্থে নারীবাদী মনে হয় না, তিনি নিজেকে নারীবাদী বলে দাবিও করেননি কখনো। বরং নারীপ্রশ্নে তাঁর অবস্থান বৃহত্তর অর্থে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে মানবিকসত্তার অনুকূলে। তবে নারী বলতে সচরাচর যে কুণ্ঠিত, দ্বিধান্বিত, সন্ত্রস্ত ব্যক্তিত্বের কথা মনে পড়ে রাবেয়া খাতুনের ব্যক্তিত্ব যে তেমন দুর্বল নয় তা অনেক প্রবল ভাবে অনুভব করা যাবে শঙ্খ সকাল প্রকৃতি উপন্যাসটি পাঠে!
নিজের কথা বলতে গিয়ে তিনি নির্ভীক; সমকালীন ও সমস্থানীয় সমাজ বাস্তবতাকে ছাপিয়ে তিনি মুক্ত মনে কথা বলতে নির্দ্বিধ। ব্যক্তিত্বের মানবিক বিকাশে স্বসমাজের নিরন্তর প্রতিবন্ধের মধ্যে বাস করেও তিনি এক বৈশ্বিক মানবসত্তায় উত্তীর্ণ হয়ে উঠেছিলেন। প্রকৃতির মতো একটি চরিত্র সৃষ্টির জন্য যে মুক্ত মন দরকার তা আমাদের গ্রাম প্রভাবিত মুসলিম মধ্যবিত্ত সমাজে রাবেয়া খাতুনদের প্রজন্মে প্রায় অলক্ষ্য!
৬.
লেখক তাঁর উপন্যাসের চরিত্রগুলোকে গড়ে তুলেছেন অনেকটা নিজের মত প্রকাশের বাহন হিসেবে; কিন্তু এ কথা মনে রাখা ভালো যে, চরিত্রগুলো যদি কেবল লেখকের ধারণার পুতুলই হয়ে ওঠে তাহলে শিল্প বিবেচনায় তাকে দুর্বলতা হিসেবেই দেখা হয়। কিন্তু শঙ্খ সকাল প্রকৃতি উপন্যাসের চরিত্রগুলো লেখকের কেবল কল্পভুবনের বাসিন্দাই নয়, বরং আমাদের সমাজে দৃশ্যমান রক্তমাংসের বাস্তবের মানুষ। বাস্তব জীবনের মধ্য থেকেই তাঁদের চিনে নিয়েছেন লেখক। শিল্পী-সাহিত্যিকদের মধ্যেই তাঁর জীবনদৃষ্টি প্রতিরূপ পেতে পারে মনে করেছেন বলেই এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্রগুলো শিল্পসাহিত্যের মানুষ। এই ভুবনের মানুষদেরই এধরনের জীবনজিজ্ঞাসার মুখোমুখি হওয়ার কথা; তাই লেখকের কল্পনা বাস্তব জীবন থেকেই এই ধরনের চরিত্রকে খুঁজে নিয়েছে! এই উপন্যাসের এও এক বিশেষত্ব!
৭.
বাংলাদেশের সমাজ পরিপ্রেক্ষিতে এই উপন্যাসের লেখক রাবেয়া খাতুনকে দুঃসাহসী ও ব্যতিক্রর্মী সাহিত্যিক বলতে হবে। এ ধরনের উপন্যাসের চরিত্রকল্পনার জন্য ঘটমান যে জীবনের অভিজ্ঞতা থাকা দরকার, সে রকম জীবন-অভিজ্ঞতা সম্পন্ন নারী আমাদের সমাজে তাঁর জীবন কালে খুব কম ছিল। ব্যাপ্ত জীবন-অভিজ্ঞতা সম্পন্ন পুরুষের পক্ষেও এই ধরনের চরিত্রের অন্তর্জগতকে অনুভব করা অনেক কঠিন হবার কথা। অন্য দিকে সংকীর্ণ অর্থে রাবেয়া খাতুন নিজেকে নারীবাদীর অবস্থানের ব্যক্তি বিবেচনা না করেও নারীসত্তর আলোকেই নৈর্ব্যক্তিক দৃষ্টিতে নারীর সাধারণ সামাজিক জীবন ও মূল্যবোধকে পর্যবেক্ষণের সাহস দেখাতে পেরেছেন। এই লেখকের সাহস এখানে যে, জীবনকে তিনি কেনো অনড় সামাজিক অনুশাসনবন্ধিত ব্যাপার মনে করেন না। যেহেতু তাঁর উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্রের সত্তা শিল্পবোধের একজন ব্যক্তি এবং সেজন্য সেই ব্যক্তি শিল্পের কাছেই কেবল নিজেকে দায়বদ্ধ মনে করে। ফলে ওপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া সামাজিক সংকীর্ণ ঔচিত্য-অনৌচিত্তকে সে অগ্রাহ্য করতে পারে। শিল্পীসত্তা স্বাধীন বলে তাঁর উচিত-অনুচিতের বোধও সমাজনিগড় মুক্ত, অর্থাৎ স্বাধীন। এই স্বাধীনতাকে কিভাবে জীবনে ধারণ করতে হয় তার রূপায়ণই এই উপন্যাসের বিষয়বস্তু!
৮.
চরিত্রগুলোর নামকরণেও লেখকের প্রতীক সামর্থ্যের পরিচয় পাওয়া যায়! চরিত্র তিনটির নামকরণে লেখকের প্রতীক বোধ যেমন ক্রিয়াশীল তেমনই সচেতন তাঁর সমাজ বোধও। শঙ্খ সাদিক, বিলকিস জাহান প্রকৃতি, সকাল আহমেদ–প্রধান তিনটি চরিত্রের পূর্ণ নাম। শঙ্খ, সকাল বা প্রকৃতি–শুধু এই তিন নামের প্রতীকে ধরা আছে তাদের সাংস্কৃতিকতা! তিনজনেরই পোশাকী নামের উল্লেখ না করলে তারা যে বাংলাদেশের মুসলিম পরিবার থেকে উঠে আসা মানুষ তা অনেক ক্ষেত্রে স্পষ্ট হচ্ছিল না; আবার তিন শব্দের তিনটি নাম পুরো না দিলে নামগুলো কেবল হয়তো নিষ্প্রাণ প্রতীক হয়েই থাকত! কিন্তু ঔপন্যাসিক হিসেবে রাবেয়া খাতুন চরিত্রগুলোকে চেয়েছেন সমাজ পরিপ্রেক্ষিতের প্রতিনিধি হিসেবে দেখতেই। তাঁর সমসাময়িক লেখকেরা তাঁদের উপন্যাসের চরিত্রগুলোকে বাংলাদেশের সমাজবাস্তবতার পটভূমিতেই দেখতে অগ্রাধিকার দিতেন। তিনিও চরিত্রগুলোকে কেবল ধারণার প্রতীক করে রাখতে চাননি। মাত্র একবার করে তিনটি চরিত্রের পরিচয় দেয়ার মধ্য দিয়ে লেখক তাঁর সমাজবোধকেই নির্দেশ করেছেন। কেবল এই তিনটি চরিত্রের নামের ক্ষেত্রেই নয়, অন্যান্য চরিত্রের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য! যেমন, বেলাল, সপ্তর্ষি, সংস্কৃতি, আহমদ, বেগুনের মা, সুমতি, মল্লিকা–এই নামগুলোর মাধ্যমে সামান্য ইংগিতে তাদের সমাজিক প্রতিনিধিত্ব ও সাংস্কৃতিক পরিচয় নির্দেশ করতে পেরেছেন। প্রকৃতির বান্ধবী সপ্তর্ষি একজন ব্যাংকার, প্রকৃতি ও সপ্তর্ষির উকিল বান্ধবীর নাম সংস্কৃতি, সপ্তর্ষির সন্তানদের নাম যথাক্রমে খেয়া ও টিয়া; অন্য দিকে প্রকৃতির ছেলের নাম সূর্য, তার বাড়ির কাজের মানুষের নাম বেগুনের মা, প্রকৃতির কেয়ার টেকারের আহমদ, বোনের নাম সুমতি, সুমতির মেয়ের নাম নয়না–এভাবে প্রতিটি চরিত্রের কেবল নামকরণের মধ্য দিয়ে রাবেয়া খাতুন যেভাবে তাদের সমাজ ও কালকে ধারণ করেছেন তাতে তাঁর পরিণত ও সমকালীন সমাজবোধই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে!
৯.
দীর্ঘ কালের পুরুষসঙ্গহীন জীবনকেই জীবনের অনেকটা সময় ধরে যথার্থ মনে হয়েছিল প্রকৃতির; কিন্তু একটা সময় স্বর্গীয় পরিতৃপ্তিতে তাই শঙ্খের নিবিড় আদরে আশ্লেষে যখন সে স্নান করে ওঠে তখন বহুদিনের ইন্দ্রিয়নিস্পৃহ সত্তা থেকে উত্তরণ তার নতুন শিল্পসৃষ্টির প্রেরণা হয়ে ওঠে। সুতরাং শঙ্খের বিবাহিতা স্ত্রী মল্লিকার কাছে সামান্যমাত্রও অপরাধী সে মনে করে না নিজেকে। তার প্রেমিক শঙ্খ অন্য নারীর স্বামী হতে পারে কিন্তু প্রেমিক একমাত্র তারই। স্বামীর সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়ে ফোনে তীব্র ঘৃণায় যখন তাকে অভিযোগ করে মল্লিকা তখন তা প্রকৃতির কাছে অপরাধের মনে হয় না। প্রকৃতি তাই মল্লিকাকে অনায়াসে জবাব দিতে পারে, শঙ্খ তার প্রেমিক; সে কারও কলমা পড়া স্বামীকে কারও কাছ থেকে কেড়ে নিচ্ছে না। প্রকৃতি স্পষ্ট বলতে পারে, যে মানুষটি তার প্রেমিক সেতো মল্লিকার কেউ নয়! অর্থাৎ গতানুগতিক দাম্পত্য সম্পর্কের ঊর্ধ্বে যে প্রেম সেই প্রেমকে অধিক মর্যাদা দেয়ার যে সাহসী মানসিকতা প্রকৃতির মধ্যে প্রবল লেখক তাকেই এখানে বড় করে তুলেছেন। এই জীবন বোধের প্রকাশই এই উপন্যাসের প্রকৃত শক্তির নিদর্শন। লেখকের বর্ণনায় আছে:
‘দেহমনের বিবাদে মনকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। আসলে কি তাই? মনের হাজার কলুষ ঢাকা পড়ে থাকে বলে সে গ্রহণযোগ্য বিষয় নয়। দেহগত সম্পর্ক স্পষ্ট পরিচ্ছন্ন। যত লড়াই তার সঙ্গে। যত ‘গেল গেল’ রব যদি এরই জন্য, তাহলে ক্যানো ধরে নেয়া হবে না জাগতিক সমুদয় সম্মানের স্তম্ভ দাঁড়ানো রয়েছে নরনারীর সম্ভোগ নয়, ত্যাগে? মনের চেয়েও বড় ভূমিকা দেহের।’
আমাদের মুসলিম পরিবারে সামাজিক মূল্যবোধের ঘুর্ণির মধ্যে বিকশিত হওয়া একজন নারীর পক্ষে এই সমাজ পরিপ্রেক্ষিতের একজন নারী হয়েও প্রেমকে এই রকম জীবন বোধের আলোকে রূপায়িত করতে পারার জন্য যে সাহস দরকার রাবেয়া খাতুন তা এখানে দেখিয়েছেন।
চরিত্রের দৃষ্টিকোণই হোক আর লেখকের সর্বজ্ঞ দৃষ্টিকোণই হোক শিল্পবোধ, প্রেম, যৌনতা বিষয়ে নরনারীর অনুভবের রূপায়ণে রাবেয়া খাতুনের মন ছিল নারী অভিজ্ঞতার আলোকে পূর্বধারণাদূষণ থেকে থেকে মুক্ত। সেজন্যই তাঁর রূপায়িত চরিত্র প্রকৃতি তার মনকে শরীরের চেয়ে সম্মানজনক অবস্থানে রেখেও শরীরী সুখ বা তৃপ্তিকে খারাপ মনে করছে না, বরং তাকে উচ্চ মূল্য দিতে পারছে। শরীর ও মনের যৌথতা নিয়ে নারী অভিজ্ঞতার আলোকে তাঁর এই রকম মনস্তাত্ত্বিক উপলব্ধি উল্লেখ করার মতো লেখা বাংলাদেশে তেমন একটা পেয়েছি বলে মনে হয় না। নারীবাদী না হয়েও নারীর মনস্তত্ত্বের অনুকূলে রাবেয়া খাতুন তাঁর এই উপন্যাসের ঘটনাবলিকে যেভাবে বিন্যস্ত করেছেন তা-ও বইটিকে দিয়েছে স্বতন্ত্র এক মাত্রা।
সমাজ সংগঠনের শতবর্ষের কালানুক্রমিক মূল্যবোধ তীব্র ব্যক্তি অনুভবকে যে টিকতে দেয় না তা রাবেয়া খাতুনের মতো অভিজ্ঞ মনের ব্যক্তিমানুষের জানা আছে। তবে শিল্পী হিসেবে তিনি একে সীমিত হতে দেননি। তাই উপন্যাসটি রাবেয়া খাতুন শেষ করেছেন বাস্তবসম্মত ভাবে, তবে লেখকীয় দৃষ্টিকোণকে অপরাজেয় রেখে:
‘…ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দেশ হারাল দুটি ক্ষেত্রের মহান শিল্পীকে। কিন্তু নিসর্গ লাভ করেছে চিরন্তনী নারী-পুরুষের এক মোহন মূর্তি।’
একেবারে শেষের পরিচ্ছেদের পরিমিত পরিসরে লেখক যেন প্রবহমানতা দিয়েছেন তাঁর উপন্যাসের মূল দর্শনটিকে।
১০.
শঙ্খ সকাল প্রকৃতি খুব একটা দীর্ঘ উপন্যাস নয়। বর্ণনার দীর্ঘতার চেয়ে সংলাপের স্বল্প পরিসরে পরিস্থিতিকে তুলে ধরেছেন লেখক। তাঁর অপরাপর রচনার ভাষাও এমনই ইংগিত ও সংহতিপ্রবণ!
বর্ণনায় কোনো কোনো দৃশ্য যেন প্রায় পরিচ্ছন্ন স্থিরচিত্র হয়ে ওঠে। এ রকম ক্ষেত্রে কেবল যে দৃশ্যই তৈরি হয়ে উঠছে তা নয়, প্রকাশিত হচ্ছে বিপন্ন মানুষের প্রতি লেখকীয় মানবিক সমানুভূতিও। সাধারণ অর্থে রাবেয়া খাতুন কৌতুপ্রবণ নন বলেই মনে হয়, কিন্তু মাঝে মাঝেই সূক্ষ্ম স্বল্পভাষ বর্ণনায় তিনি কৌতুক রসে ভিজিয়ে তোলেন; কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা কেবল সরল অসঙ্গতিই প্রকাশ করে না, আঘাত করে ব্যঙ্গের সম্মার্জনীতেও। এমনকি সংলাপ রচনায়ও রাবেয়া খাতুন পরিমিত ও ইংগিতময়! চরিত্রের চৈতন্য প্রবাহ ও লেখকের সর্বজ্ঞ দৃষ্টিকোণ একাকার হয়ে যায় অনেক ক্ষেত্রে; এটাই আবার লেখকের আরেক ধরনের নিজস্বতাও।