spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদকবিতাকবিতাগুচ্ছ : গোলাম রসুল

কবিতাগুচ্ছ : গোলাম রসুল

যুদ্ধবিমান

আমার আঙুল গুলো কাঁদছে

এক ভয়ঙ্কর যুদ্ধবিমান

এটা কিভাবে একটি পৃথিবী হয়ে উঠল আমি তার খোঁজ খবর নিতে এসেছি যেন

একটা পাথর

যার দুই তৃতীয়াংশ ডুবে রয়েছে শূন্যে

আর আমি দাঁড়িয়ে রয়েছি তার ওপরে

যে গল্পগুলো নিয়ে অপেক্ষা করছি সেগুলো শরৎ বা গ্রীস্মকালের মতো অতি সাধারণ

হঠাৎ তুমি মনে করে দিলে ইথার সাজানো আমার স্বদেশের কথা

যখন আমি ঝুঁকেছিলাম নক্ষত্রপানে

এখন কিভাবে আমি খুঁজে পাবো জীবনের অপচয়রাশি

কিভাবে খুঁজে পাবো সে সব

অতলান্ত যে রঙ সঙ্গ দিত আমায়

একটি জলাধার বারোমাস বয়ে যায় যেন

নেপথ্যে প্রকৃতির ছলনা গুলো সত্যি মনে হয়

আর সব কিছুকে সরিয়ে দিয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ চাঁদ ওঠে

              —————————–

ছায়া

আকাশে একটা অসুস্থ মানুষের নক্ষত্ররা

সে পেয়ালা থেকে নিয়ে বিতরণ করছে হিম  চাঁদ

অনেক প্রশান্তভরা চাঁদ তার জমানো ছিল

চাঁদের মাংসের মধ্যে জরির সেলাই ঝকঝক করছে

রাস্তা

বাড়ি

প্রাঙ্গণ

সবটাই ব্যথার আলোড়ন

তার দাঁতে রূপোর চেন ছটফট করছে

চোখ কালো মোমবাতির মতো জ্বলছে

আর গলে যাচ্ছে তার মণিকাঞ্চন

তার হাতের  হাড় বেরিয়ে আসছে রাতের সূর্যের মতো

আর আঙুলগুলো ককিয়ে কাঁদছে

তার ঝুলি

ভেতরে এক দ্বীপ ঝুলছে

পাশে একটি খোলা বই

পৃষ্ঠা জুড়ে লক্ষ লক্ষ মাইল জঙ্গল

যেখানে শিশিরগুলো থেকে মায়া পড়ে পড়ে যায় শূন্যে

রাত্রি শীতল এবং শান্ত

নৈঃশব্দ্যের গতিবেগ নির্ণয় করা একটি দূরবর্তী শব্দ ডুবে যাচ্ছে কেবল

সে দেখছে একটি ভাঙা থার্মোমিটার

চামড়ায় ভরা একটি জীবন্ত কঙ্কাল

রাতের মেঘ ডাকছে অনাবিষ্কৃত এক সত্যে

ধনুক নামিয়ে মেঘেরা আত্মসমর্পণ করছে তার কাছে

আর সে তার অচিহ্নিত জীবনের জন্য কয়েকটি নক্ষত্রের সঙ্গে নিঃসঙ্গতার ছায়া স্থাপন করলো

মৃত্যুর যাবতীয় তৃষ্ণার মধ্যে জলের ওপরে পোকার ছায়ার মতো ভেসে ওঠে যে ছায়া

……

যেটা আমার জীবন

আমি নিরব থাকি

এই নিরবতা থেকে জেনে নিও আমার অনন্তকাল সম্বন্ধে

অবাস্তব কানে তুমি শুনতে থেকো একটি  ঘন্টার শব্দ

আমি কবরখানার অতিথি

এখন কবরখানার ওপর নক্ষত্ররা গাণিতিক

একটা ফ্ল্যাসলাইট শূন্যতা থেকে আসছে

আর তাকে বেঁকিয়ে আলো নিচ্ছে অন্ধকার চাপা পড়া পাখিরা

আমার দৃষ্টি হরিণ শাবক

সে পালাচ্ছে বিপদসঙ্কুল এক শিকারীর ভয়ে

আমার মেঘ অসুস্থ

ওপরে ব্যথার আলোড়ন

যেখানে চাঁদ একটি পিয়ানোর বাজাচ্ছে

কি শক্ত এটা বহন করা

যেটা আমার জীবন

          _________________

স্মৃতির পিছনে ছয়টি ঋতু

আমরা আবার মিলিত হবো সেই সর্বব্যাপী শূন্যে

সূর্যের কান্না শায়িত থাকবে সমুদ্রে

আমাদের তাগিদ থাকবে না বলে তারারা আর জ্বলবে না আকাশে

আর পৃথিবী আমার চেয়েও বয়েসে ছোটো

আমার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের আগেই আরো কৃশ হয়ে পড়বে

আমার কপালে কয়েকটি ভাঁজ পড়েছে যেগুলো সমুদ্রের ঢেউ

একসময় মরে আসে যেমন

আর আমার জীবন ভাড়া করা ছিলো

গৌরবান্বিত এক নৌকার মতো

যার বৈঠার দীর্ঘ সমুদ্র ভ্রমণের অভিজ্ঞতা ছিলো

আমি কখনও দেখিনি আমার হৃদয়ের আকৃতিটুকু

শুধু একটি এক্সরে প্লেট থেকে অনুমান করে নিয়েছি তার মেঘ

শেষ নেই জেনেও একবার আমি নৌকায় পাল তুলে ছিলাম

কিন্ত মেঘ ভাঙার জ্ঞান ছিলো না

আমি পৌঁছুতে পারি নি

যখন আমরা মিলিত হবো আবার

আমাদের স্মৃতির পিছনে চলে যাবে ছয়টি ঋতু

                 ——————————

সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

গোলাম রসুল, ঠিকানা — ৫৬/১৫,সেখপাড়া লেন,

পোষ্ট– সাঁতরাগাছি, হাওড়া – ৭১১১০৪, পেশা — অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। কবিতা লিখি। কয়েকটা কবিতার বইও রয়েছে। যেমন– ” মেঘ এখানে এসে অন্যমনস্ক হয়ে যায় ,  ‘ একটি গল্প হয়ে উঠুক” ,  ” বালকের বইয়ে কয়েক পৃষ্ঠা”

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ