যুদ্ধবিমান
আমার আঙুল গুলো কাঁদছে
এক ভয়ঙ্কর যুদ্ধবিমান
এটা কিভাবে একটি পৃথিবী হয়ে উঠল আমি তার খোঁজ খবর নিতে এসেছি যেন
একটা পাথর
যার দুই তৃতীয়াংশ ডুবে রয়েছে শূন্যে
আর আমি দাঁড়িয়ে রয়েছি তার ওপরে
যে গল্পগুলো নিয়ে অপেক্ষা করছি সেগুলো শরৎ বা গ্রীস্মকালের মতো অতি সাধারণ
হঠাৎ তুমি মনে করে দিলে ইথার সাজানো আমার স্বদেশের কথা
যখন আমি ঝুঁকেছিলাম নক্ষত্রপানে
এখন কিভাবে আমি খুঁজে পাবো জীবনের অপচয়রাশি
কিভাবে খুঁজে পাবো সে সব
অতলান্ত যে রঙ সঙ্গ দিত আমায়
একটি জলাধার বারোমাস বয়ে যায় যেন
নেপথ্যে প্রকৃতির ছলনা গুলো সত্যি মনে হয়
আর সব কিছুকে সরিয়ে দিয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ চাঁদ ওঠে
—————————–
ছায়া
আকাশে একটা অসুস্থ মানুষের নক্ষত্ররা
সে পেয়ালা থেকে নিয়ে বিতরণ করছে হিম চাঁদ
অনেক প্রশান্তভরা চাঁদ তার জমানো ছিল
চাঁদের মাংসের মধ্যে জরির সেলাই ঝকঝক করছে
রাস্তা
বাড়ি
প্রাঙ্গণ
সবটাই ব্যথার আলোড়ন
তার দাঁতে রূপোর চেন ছটফট করছে
চোখ কালো মোমবাতির মতো জ্বলছে
আর গলে যাচ্ছে তার মণিকাঞ্চন
তার হাতের হাড় বেরিয়ে আসছে রাতের সূর্যের মতো
আর আঙুলগুলো ককিয়ে কাঁদছে
তার ঝুলি
ভেতরে এক দ্বীপ ঝুলছে
পাশে একটি খোলা বই
পৃষ্ঠা জুড়ে লক্ষ লক্ষ মাইল জঙ্গল
যেখানে শিশিরগুলো থেকে মায়া পড়ে পড়ে যায় শূন্যে
রাত্রি শীতল এবং শান্ত
নৈঃশব্দ্যের গতিবেগ নির্ণয় করা একটি দূরবর্তী শব্দ ডুবে যাচ্ছে কেবল
সে দেখছে একটি ভাঙা থার্মোমিটার
চামড়ায় ভরা একটি জীবন্ত কঙ্কাল
রাতের মেঘ ডাকছে অনাবিষ্কৃত এক সত্যে
ধনুক নামিয়ে মেঘেরা আত্মসমর্পণ করছে তার কাছে
আর সে তার অচিহ্নিত জীবনের জন্য কয়েকটি নক্ষত্রের সঙ্গে নিঃসঙ্গতার ছায়া স্থাপন করলো
মৃত্যুর যাবতীয় তৃষ্ণার মধ্যে জলের ওপরে পোকার ছায়ার মতো ভেসে ওঠে যে ছায়া
……
যেটা আমার জীবন
আমি নিরব থাকি
এই নিরবতা থেকে জেনে নিও আমার অনন্তকাল সম্বন্ধে
অবাস্তব কানে তুমি শুনতে থেকো একটি ঘন্টার শব্দ
আমি কবরখানার অতিথি
এখন কবরখানার ওপর নক্ষত্ররা গাণিতিক
একটা ফ্ল্যাসলাইট শূন্যতা থেকে আসছে
আর তাকে বেঁকিয়ে আলো নিচ্ছে অন্ধকার চাপা পড়া পাখিরা
আমার দৃষ্টি হরিণ শাবক
সে পালাচ্ছে বিপদসঙ্কুল এক শিকারীর ভয়ে
আমার মেঘ অসুস্থ
ওপরে ব্যথার আলোড়ন
যেখানে চাঁদ একটি পিয়ানোর বাজাচ্ছে
কি শক্ত এটা বহন করা
যেটা আমার জীবন
_________________
স্মৃতির পিছনে ছয়টি ঋতু
আমরা আবার মিলিত হবো সেই সর্বব্যাপী শূন্যে
সূর্যের কান্না শায়িত থাকবে সমুদ্রে
আমাদের তাগিদ থাকবে না বলে তারারা আর জ্বলবে না আকাশে
আর পৃথিবী আমার চেয়েও বয়েসে ছোটো
আমার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের আগেই আরো কৃশ হয়ে পড়বে
আমার কপালে কয়েকটি ভাঁজ পড়েছে যেগুলো সমুদ্রের ঢেউ
একসময় মরে আসে যেমন
আর আমার জীবন ভাড়া করা ছিলো
গৌরবান্বিত এক নৌকার মতো
যার বৈঠার দীর্ঘ সমুদ্র ভ্রমণের অভিজ্ঞতা ছিলো
আমি কখনও দেখিনি আমার হৃদয়ের আকৃতিটুকু
শুধু একটি এক্সরে প্লেট থেকে অনুমান করে নিয়েছি তার মেঘ
শেষ নেই জেনেও একবার আমি নৌকায় পাল তুলে ছিলাম
কিন্ত মেঘ ভাঙার জ্ঞান ছিলো না
আমি পৌঁছুতে পারি নি
যখন আমরা মিলিত হবো আবার
আমাদের স্মৃতির পিছনে চলে যাবে ছয়টি ঋতু
——————————
সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
গোলাম রসুল, ঠিকানা — ৫৬/১৫,সেখপাড়া লেন,
পোষ্ট– সাঁতরাগাছি, হাওড়া – ৭১১১০৪, পেশা — অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। কবিতা লিখি। কয়েকটা কবিতার বইও রয়েছে। যেমন– ” মেঘ এখানে এসে অন্যমনস্ক হয়ে যায় , ‘ একটি গল্প হয়ে উঠুক” , ” বালকের বইয়ে কয়েক পৃষ্ঠা” ।