ড. সৈয়দ আব্দুল আজিজ
…..
প্রসঙ্গ কথা
আমি নিজে ছড়াকার বা কবি নই, ছড়া-কাব্যপ্রেম আমাকে স্পর্শ করলেও তা যেন ঠুনকো প্রেমের মতোই রয়ে গেছে, আমায় গ্রাস করেনি। “বন্ধুরা খোঁজে সুন্দরী মেয়ে, যে সংসার আগলাবে, আমি খুঁজি কবিতা সুন্দরী যে সংসারে আগুন জ্বালাবে” আমি সাজ্জাদ বিপ্লবের এই কবিতা সুন্দরী ধারণায়ও বিশ্বাসী নই। সাজ্জাদ বিপ্লব আমার অনুজপ্রতিম এবং আমি তাঁর সাহিত্যকর্মের একজন হিতার্থী। একারণে তাঁর তাবৎ সাহিত্যকর্মের প্রতি যথাসম্ভব অনুপ্রেরণা দিয়ে এসেছি। আমেরিকায় প্রবাস জীবন শুরুর প্রাক্কালে (২০০৮ খ্রিঃ) জানতে পারি সাজ্জাদ ঢাকা থেকে এসে বগুড়ায় অবস্থান করছেন (আমার জানা মতে এ সংকলন কাজে প্রায় তিন মাসের স্বেচ্ছা গৃহবন্দীত্ব তিনি অবলম্বন করেন)। আমেরিকা যাবার প্রাক্কালে আমার হাতে এই পান্ডুলিপি হস্তান্তর করে জানান যে, বগুড়ার ছড়া সাহিত্যে একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস আছে এবং বিশেষত সত্তর হতে নব্বই দশকে বগুড়ায় ছড়াসাহিত্যে যে কাজ হয়েছে তা সংকলনভূক্ত হওয়া আবশ্যক। এ বিবেচনাতেই তিনি বগুড়া কেন্দ্রিক ছড়াচর্চার অর্ধশতকের (১৯৫৮-২০০৮) কার্যক্রমকে নিবিড়ভাবে অধ্যয়ন, বিশ্লেষণ ও সংকলন করেছেন। বলাবাহুল্য সাজ্জাদ নিজেও এসময়েরই একজন বলিষ্ঠ ছড়াকার-ছড়া সংগঠক-ছড়া কাগজের সম্পাদক। সাহিত্যকেন্দ্রিক বহুমুখী কাজে নিজকে নিয়োজিত করেছেন, সৃষ্টিশীল সাহিত্য কর্ম আর কুশলী সম্পাদনায় সীমানা পেড়িয়ে এপার-ওপার দু’বাংলাতেই সমানভাবে আলোচিত ও সমাদৃত হয়েছেন। সংকলনটির সম্পাদনা যেন আমি করি সে প্রত্যাশাও তিনি ব্যক্ত করেন। পাণ্ডুলিপি পাঠের পর দুটি বিষয়ে আমার মনোযোগ আকৃষ্ট হয় : এক– সাজ্জাদ অত্যন্ত সাহসিকতা ও নিষ্ঠার সাথে তাঁর সমকালীন ছড়াকারদের কাজগুলোকে সংকলিত করেছেন, যার আকার বেশ স্থূল। বেশ কিছু ছড়ায় পরিমিতিবোধের বিষয়টি নিয়ে আমি দ্বিধাগ্রস্ত ছিলাম। সাজ্জাদ সংকলন সশোধনের বিষয়টি সহজ করে দেন, ফলে কিছু ছড়া ও সংকলিত অংশকে বাদ দেয়া হয়। দুই– সাজ্জাদ ছড়া সংকলনের পাশাপাশি বগুড়ার লোকজ ঐতিহ্য, বিশেষ করে জাতীয় জীবনের সবচেয়ে গৌরবজনক অধ্যায় ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা আন্দোলনের পর্বে রচিত ছড়া সংক্রান্ত ঐতিহাসিক ঘটনাবলী এ সংকলনে ধারণ করেছেন, যা এতদঅঞ্চলের ইতিহাস-ঐতিহ্য পাঠের অংশ হিসেবেও গণ্য। এসব ইতিহাস-ঐতিহ্য আমাদের ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতির এক অখণ্ড রূপ যা সুদূর অতীতের সাথে আজকের এবং অনাগতকালের অবিচ্ছিন্ন স্রোততধারা সৃষ্টি করবে। আমাদের অনুভবে যুক্ত হবে এতদ্অঞ্চলের লোকোজ ঐতিহ্য, নৃতাত্বিক চরিত্র, সামাজিক রীতি ও রুচিবোধ, দিনযাপনের নানা অনুসংগ। এ যেন কালের গভীরে বিস্মৃত হয়ে যাওয়া ঐতিহ্যের বন্ধনরেখা, যা ছড়া, গীত, প্রবাদ, অনুকাব্য, ধুয়া গান, লোককথার মাধ্যমে আমাদের স্বকীয়তাকেই নির্ধারণ করে দেবে। এ প্রেক্ষাপটে “বগুড়ার ছড়া : চর্চার অর্ধশতক”গ্রন্থটিকে শুধুই একটি ছড়া সংকলন হিসেবে না দেখে ভাষা, সাহিত্য-সংস্কৃতি, সমাজ বদলের পরিক্রমায় বাংলা ছড়ার অগ্রসরমানতার একটি পদচিহ্ন হিসেবে দেখা বাঞ্ছনীয়।
এই সংকলনে বাংলাভাষায় ছড়া চর্চার সূচনালগ্নের নানা তথ্য সংযোজিত হয়েছে। এতদ্অঞ্চলের ছড়াকারগণের অবদান নির্দিষ্ট হয়েছে সমকালীন সাহিত্যে এবং প্রতিষ্ঠিত কবি-সাহিত্যিক-লেখকগণের উদ্ধৃতিতে। ছড়া সংকলন ও গ্রন্থবদ্ধ করার কয়েকটি মাইলফলকও এখানে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। ১৮৯৯ সালে প্রকাশিত বাংলাছড়ার প্রথম সংকলন খ্যাত যোগেন্দ্রনাথ সরকার এর ‘খুকুমনির ছড়া’, ১৯৭০ সালে বাংলা একাডেমী প্রকাশিত অধ্যক্ষ খোদেজা খাতুন এর “বগুড়ার লোক সাহিত্য” গ্রন্থে’র “গ্রাম্য ছড়া”, ১৯৭৭ সালে প্রকাশিত সুলতানা রহমান এর “কাকের ছা বকের ছা ” ছড়াগ্রন্থ, ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত আবদুল মান্নান সৈয়দ, আবিদ আজাদ এবং শাহাবুদ্দিন নাগরী সম্পাদিত “ বাংলাদেশের ছড়া” ইত্যাদি। বিচ্ছিন্নভাবে হলেও এসব ছড়া সংকলন ও প্রকাশনার ধারাবাহিকতাসহ ২০০৮ সাল অবধি ছড়াসাহিত্যের একটি পদচিহ্ন প্রদর্শনে সাজ্জাদ সচেষ্ট হয়েছেন। তিনি ১৯৫৮-২০০৮ সালের সময়কেই অর্ধশতক কাল হিসেবে বিবেচনা করেছেন এবং স্বাভাবিকভাবেই নব্বই দশক এর প্রকাশনায় অধিক প্রাধান্য লক্ষ্য করা গেছে। তিনি সংকলন করেছেন প্রতিষ্ঠিত অনেক বড়ো মাপের লেখক-কবির পাশে অখ্যাত এবং আনাড়ি ছড়াকারদের, সংকলনের ক্ষেত্রে তিনি বর্জন করেছেন সাহিত্য আভিজাত্যের পোশাকী পর্দা। এই সময়কালে বগুড়া থেকে প্রকাশিত অথবা বগুড়ার ছড়াকারগণের রচিত ছড়ার বিশ্লেষণাত্বক বর্ণনা দিয়েছেন, ভূমিকা ও প্রেক্ষাপট লিখেছেন। বাড়তি ব্যঞ্জন হিসেবে পাঠককে উপহার দিয়েছেন ছড়াকারদের উদ্দেশ্যে রবীন্দ্রনাথ হতে শুরু করে বিশিষ্ট কবি সাহিত্যিকগণের স্বীকৃতি-সম্মাননা পত্র ; দিয়েছেন ছড়া বিষয়ক অভিমত, সমালোচনাসহ গুরুত্বপূর্ণ সংযোজনী। উল্লেখ করেছেন ছড়া রচনার আকার ও বিষয় বৃত্তান্ত; দু লাইনের ছোটো ছড়া থেকে শুরু করে দীর্ঘ ৮৬ লাইনের কাহিনী ছড়া ‘গন্ডার’ এর উল্লেখ রয়েছে এই গ্রন্থে’ (মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ডাঃ কসির উদ্দিনের কন্যা জেব উন নেসা জামাল রচিত)। ছেলেভুলানো মনোরঞ্জনমূলক ছড়া থেকে শুরু করে রাজনৈতিক ও বিশ্ব পরিস্থিতি কেন্দ্রিক ছড়ার প্রেক্ষাপট ও বিশ্লেষণ দিয়েছেন; যা সময় ও বিষয়কে নানাভাবে বিশেষায়িত করেছে। বিশেষ করে ছড়া সমকালীন রাজনৈতিক বিষয়কে কীভাবে প্রতিনিধিত্ব করেছে তার চমৎকার উপস্থাপন লক্ষ্য করা গেছে এসময়ের ছড়ায়।
সাজ্জাদ এই ছড়া সংকলনে আমাদের জাতীয় জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন অধ্যায়ে (ভাষা ও স্বাধীনতা আন্দোলন) রচিত ছড়া ও প্রকাশনাসমূহ সংকলনভূক্ত করেছেন। এ সময়কে আমাদের জাতিরাষ্ট্র গঠনের হাজার বছরের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় হিসেবেই গণ্য করা হয়; যখন এতদ্অঞ্চলের মানুষের মধ্যে সদ্য স্বাধীন (?) পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের পরপরই ১৯৪৮ সাল হতে ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে
ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবোধের উন্মেষ ঘটে, “আজকে একুশ শপথ নিলাম, ধান দেব না ধান গো, মায়ের মুখের ভাষা জোগায় ধান যে আমার জান গো” (আলতাফ আলী হাসু রচিত) এ ধরনের জাতীয়তাবোধ সম্পন্ন ছড়া রচনা লক্ষ্য করা গেছে। জাতীসত্তার স্বকীয়তা নির্ধারণ প্রশ্নে, আঞ্চলিক স্বায়ত্বশাসনের প্রশ্নে নানা মিথস্ক্রিয়ার জন্ম নেয়। এসময়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণের হাতে দেশের শাসন ব্যবস্থা ন্যস্ত হবার পরিবর্তে সামরিক শাসনের নিগড় সৃষ্টি হয়, মানুষের মধ্যে স্বাধীনতার চেতনা বিকশিত হতে থাকে, শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ছড়ার বিষয় প্রকাশের সবকিছু গ্রাস করে নেয় জাতীয়তাবাদী চেতনা, পাকিস্তানী স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে মানুষ প্রতিবাদ মুখর হয়ে উঠে। মুক্তিযুদ্ধের শেষে স্বাধীন জাতিরাষ্ট্রের পথচলা, রাষ্ট্রের স্থপতি এবং জাতির জনকের নৃশংস হত্যাকাণ্ড, সামরিক শাসন-স্বৈরশাসন, গণতান্ত্রিক আন্দোলন, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার পূনঃপ্রবর্তন সবকিছু এই সময়ের ফ্রেমে (সত্তর হতে নব্বই দশক) সংগঠিত হয়েছে। এ জন্য সত্তর থেকে নব্বই দশকের ছড়াগুলোতে সমকালীন রাজনৈতিক বিষয়ের প্রাধান্য অনেক বেশী গুরুত্ব পেয়েছে। ১৯৬৬ সালে প্রকাশিত “ছড়ায় ছড়ায় ছন্দ” কে ছড়া রচনার বিষয় নির্ধারণে একটি বাঁক হিসেবেই উল্লেখ করা হয়েছে, কারণ সমকালীন রাজনীতির প্রভাব নাড়া দেয় ছড়াকে, ছড়া হয়ে ওঠে রাজনৈতিক বক্তব্য প্রকাশের এক ধারালো অস্ত্র। সে ধারা পরবর্তিতেও চলমান রয়েছে। বিশেষ করে এ সংকলনে মুক্তিযুদ্ধ পূর্ব ও পরবর্তীকালীন সময়ের ছড়ার বিষয় পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিত সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে অবহিত করতে বিশ্লেষণ ধর্মী বিবরণ সংযুক্ত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধকালীন ছড়া কীভাবে মুক্তিযুদ্ধের সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করেছে তার উপমাগুলো যুক্ত হয়েছে। জাতির এই ঘটনাবহুল সময়ের মূল্যায়নও এ সময়ের ছড়া হতে পাওয়া যায়। তাই এ সংকলন ছড়া রচনার চরিত্র অনুধাবনেরও এক স্মারকগ্রন্থ ।
পঞ্চাশ বছর সময়ের একজন অনন্য ছড়াযোদ্ধার নাম ও পরিচয় প্রণিধানযোগ্য হয়ে উঠেছে এ সংকলনে। আজীবন প্রচারবিমূখ ও নিভৃতচারী ছড়াকার প্রয়াত আলতাফ আলী হাসু (১৯৫০-২০০০) এ সময়ের সবচেয়ে আলোকিত ছড়াযোদ্ধা হিসেবে গণ্য; তাঁকে সংক্ষিপ্ত পরিসরে কিন্তু কার্যকরভাবে দেখা যাবে এ সংকলনে। তিনি ছিলেন তাঁর সময়ের শ্রেষ্ঠ ছড়াকার, ছড়া লিখেছেন অবিরত, কিন্তু ছড়াগ্রন্থ নিজ জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয়নি। মৃত্যুর পর তিনি প্রকাশিত হন গৌরবী অভিধায়। সাজ্জাদ এ সাহসী ছড়াকারকে উপস্থাপন করেছেন সার্থক উপস্থাপনায়। নানা গুনিজনের ক্রোড়বাক্য সংগৃহিত ও উৎসর্গ করা হয়েছে হাসু সম্পর্কে। দুটি কালোত্তীর্ণ প্রকাশনা সম্পন্ন করেছেন তিনি; একটি বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে “এ লাশ আমরা রাখবো কোথায়” এবং অপরটি ‘আসন টলে’ । এ দুটি সংকলন হাসু’কে দ্রোহী ছড়া রচনায় স্মরণীয় করে রাখবে। এ সময় তাঁর রাজনৈতিক ছড়া ষাট দশক হতে সত্তর দশক পর্যন্ত সর্বত্র মুগ্ধতা ছড়িয়েছিল। তাঁর আমেরিকা বিরোধী একটি উল্লেখযোগ্য শ্লেষমিশ্রিত ছড়া ছিলো এমন–‘আমেরিকা আম খেয়ে আঁটি দেয়, আঁটিটাকে চাটলেও চাটি দেয়’। আলতাফ আলী হাসুর উপর বগুড়াবাসীর ঐতিহাসিক দায়িত্বও কৌশলে সাজ্জাদ স্মরণ করে দিয়েছেন। উল্লেখ করেছেন কীভাবে হাসু ছড়ার মাধ্যমে সময়ের সাহসী দায়িত্ব পালন করেছেন, কীভাবে তিনি একটি অচল ও স্থবির সময়কে করাঘাত করেছেন? কীভাবে তিনি প্রতিবাদের বহ্নিশিখা জ্বালিয়েছেন? হাসুর এই সাহসী জীবনগাঁথা কালোত্তীর্ণ কাহিনী হয়ে প্রেরণা যোগাবে আগত প্রজন্মকে। জয়তু আলতাফ আলী হাসু। আশা করা যায় এই সাহসী ছড়াযোদ্ধার প্রকাশিত-অপ্রকাশিত সব ছড়া আর তাঁর কাজকে নিয়ে নতুন প্রজন্ম আরো উৎসাহী হবে।
বগুড়ার পঞ্চাশ বছরের এ ছড়া সংকলনের কিছু সীমাবদ্ধতা উল্লেখযোগ্য। পাঠকগণকে একাধারে পঞ্চাশ বছরের এই ছড়া পরিক্রমা অতিক্রম করতে হবে; সময় ও বিষয় বিন্যাস করা গেলে পাঠককগণের পক্ষে অনুধাবন আরো সহজ হতো। বলা অপ্রাসংগিক হবে না যে, একজন লেখকের পক্ষে তার সময়ের সকল প্রকাশ সমানভাবে মূল্যায়ন করা অসম্ভব, সাজ্জাদেরও সে দৃষ্টিভংগিগত ও বিবেচনাগত সীমাবদ্ধতা থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু সে সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করার চাইতে সময়ের কাজগুলোকে আগামীর জন্য রেখে যাওয়া অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ ও বিবেচনাযোগ্য মনে করি। বড়ো ধরনের বিচ্যুতি চিহ্নিত ও সংশোধনই একমাত্র সমাধান। সব সীমাবদ্ধতার বাইরে এ সংকলনের মাধ্যমে বগুড়া তথা এতদঅঞ্চলের ছড়াসাহিত্যের এমন এক প্রাংগণ সৃষ্টি হয়েছে যেখানে পাঠকগণ পরিভ্রমণ করবেন সে সময়ের ছড়া ছন্দের বাতায়নে। আশা করা যায় যে, ধীমান পাঠকবর্গ এই সীমাবদ্ধতা সুবিবেচনার সাথে মূল্যায়ন করবেন এবং অনাকাংখিত ভূল ক্রটি সংশোধনে এবং অপরিহার্য সংযোজনযোগ্য বিষয় সমূহ সম্পর্কে পরামর্শ দেবেন।
রচনার চেয়ে সংরক্ষণ যে সময়ের পরিক্রমায় অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ তা পাওয়া যায় বাংগালীর আদি কবি হিসেবে খ্যাত বগুড়ার ‘জীবন কৃষ্ণ মৈত্র’র লেখা ‘পদ্মপুরান’এর সংরক্ষণ ইতিহাস থেকে। ১৬৬৬ খ্রি: রচিত এই অমূল্য নিদর্শনটি পাওয়া যায় সৈয়দ বাহার উদ্দিন খন্দকার এর অসাধারন এক সংকলন কর্মের অবদানে। জীবন কৃষ্ণ মৈত্র’ ‘পদ্মপুরান’ গীতিকাব্য রচনার কয়েকশত বছর পরে তা স্বহস্তে লিখে গ্রন্থবদ্ধ করেন সৈয়দ বাহার উদ্দিন খন্দকার , ইতিহাসের সেই চিহ্ন এখন বগুড়া উডবার্ণ পাবলিক লাইব্রেরীতে সংরক্ষিত আছে। পঞ্চাশ বছরের এই সংকলন একইভাবে কালান্তরে হারিয়ে যাওয়া অথবা অপ্রকাশিত কাব্য ছড়া ঐতিহ্যকর্ম সংরক্ষণের যেন একটি নিদর্শন হয়, এটা যেন কালের সোনালী কর্মকে ইতিহাসের পাতায় টিকে রাখার প্রয়াস হসেবে গণ্য হয়। এটাই এ সংকলনের বড়ো প্রত্যাশা ও সার্থকতা হিসেবে বিবেচিত হবে।
বগুড়া, ফেব্রুয়ারি, ২০১৭