spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদগদ্যআহমাদ মাযহার : সাহিত্যের সাংবাদিক

লিখেছেন : ড. ইসরাইল খান

আহমাদ মাযহার : সাহিত্যের সাংবাদিক

ড. ইসরাইল খান 

     বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সাবেক কর্মকর্তা, চ্যানেল আই এর বইমেলার সরাসরি সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানের উপস্থাপক,  বিভিন্ন সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পরিচালক, জনপ্রিয় সাহিত্য-পত্রিকা  `বইয়ের জগৎ’ এর সম্পাদক , কবি, সমালোচক, অনুবাদক, লেখক, গবেষক– অনেক পরিচয়ে আমাদের সমাজে  সুখ্যাতি রয়েছে জনাব  আহমাদ মাযহার এর। কিন্তু তাঁর কাজের বৈচিত্র্য ও দক্ষতা বিবেচনা করলে তাঁকে আমার আমাদের সমাজের একজন দক্ষ ও অন্যতম শ্রেষ্ঠ ‘সাহিত্যের সাংবাদিক’ আখ্যা দিয়েই লিখতে ভালো লাগে। এবং তা মনে হয় যথার্থও হবে। 

    কারণ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতে হলে সেই-সেই প্রতিটি বিষয়ের বিশেষজ্ঞ জ্ঞান থাকা  আবশ্যক। আহমাদ মাযহার কোন্ বিষয় নিয়ে যে লেখেননি,আমি তাই খুঁজে বের করতে পারি নি ! সঙ্গীত,শিল্পকলা, কবিতা, গল্প, উপন্যাস, সিনেমা, নাটক, ইতিহাস, রাজনীতি ও সমাজ প্রতিটি বিষয়ে তাঁর লেখা রয়েছে এবং সেসবের কোনোটাই দ্বিতীয় শ্রেণির নয়। তাঁর প্রকাশিত বইগুলোতে এর লিপিবদ্ধ পরিচয় রয়েছে। 

      শুধু আলোচনা আছে তাই নয়, আছে সেসব বিষয়ে লেখা তাঁর মৌলিক গ্রন্থাদিও। আর প্রতিটি বিষয়ে সৃজনশীলতা থাকার কারণে তাঁর সমালোচনা-সাহিত্যও হয়ে উঠেছে ‘সৃজনশীল সাহিত্য’। এই জিনিসটির আমাদের দেশের সাহিত্যে ছিলো প্রচন্ড অভাব বা খরা কবলিত অবস্থা। বাংলাদেশের সাহিত্যের  অনুন্নতি বা পশ্চাৎপদতার এটা একটা অন্যতম কারণ বলে আমি মনে করেছি সব সময়। অবশ্য বিষয়টি আপেক্ষিক।

       কোনো দেশের মূল বা মৌলিক সাহিত্য উন্নত না হলে যেমন সে-দেশের সমালোচনা-সাহিত্য উন্নত হতে পারে না, তেমনি উন্নত সমালোচনা সাহিত্যের অভাব থাকলে সেদেশের সৃজনশীল সাহিত্য তথা কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক প্রভৃতিও উন্নত বা শ্রেষ্ঠ হয়ে উঠতে পারে না। আর এই বিষয়টাকে চিহ্নিত করে আমার শিক্ষানবিসী কালে আমি একটা প্রবন্ধ লিখেছিলাম–” সাহিত্যসমাজে অবক্ষয় ” শিরোনাম দিয়ে। ১৯৮৩ সালে আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক ,অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক স্যারের সম্পাদিত ‘সৃজনপ্রয়াসী মাসিক লোকায়ত’পত্রিকার একটি সংখ্যায় সেটি স্যার খুব যত্নে প্রকাশ করেছিলেন। পরে সেই লেখাটি স্যারের সম্পাদিত ‘ স্বদেশচিন্তা’ ( ১৯৮৫/ ২০১২ ) নামক বইয়ে আরও দশজন লেখকের দশটি প্রবন্ধের সাথে সংকলিতও করেছিলেন। সেই প্রবন্ধের প্রথম অংশের নাম ছিলো  ‘সাহিত্যের সাংবাদিক ’। এতে ঐ সময়ে আমি লিখেছিলামঃ

     ” সাংবাদিক যদি নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশনের দায়িত্বে নিষ্ঠাবান থাকেন, তার দ্বারা সমাজ দেশ খুবই উপকৃত হয়। দায়িত্বশীল সংবাদপত্রের এবং যোগ্য নিষ্ঠাবান সাংবাদিকের পরিবেশিত সংবাদ পাঠ করে জনগণ উপলব্ধি করতে পারেন  নিজ দেশের সামাজিক  অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ধারা কোন্ দিকে চলেছে এবং সেই ধারার প্রেক্ষিতে কি ভূমিকা তাঁদের পালন করা কর্তব্য। 

    দেশ অনেক সময় সাংবাদিকদের কাছ থেকে দিক-নির্দেশ পেয়ে অবলম্বন করে ন্যায়ের পক্ষ,  বিরোধিতা করে অন্যায়ের। সাংবাদিকদের ভূমিকা এমনি যে, তা একটা দেশের উত্থান পতন ত্বরান্বিত কিংবা সুদূরপরাহত উভয়ই করতে সক্ষম হন। নীতিনিষ্ঠ সংবাদপত্র ও বিবেকবান সাংবাদিকেরা দেশের জন্য মূল্যবান সম্পদস্বরূপ। সাংবাদিকগণ তাই সমাজের  দৃষ্টিতে শ্রদ্ধেয় ; সমাজে সভাতে তাঁদের স্থান অগ্রে নির্দিষ্ট। 

      সাংবাদিকদের বেলায় যে-কথা সত্য,  সাহিত্য-সমাজে সমালোচকদের  ক্ষেত্রেও  তা সমান সত্য। কারণ, দশজন সাধারণ সাহিত্যকর্মীর চাইতে একজন সমালোচকের দায়িত্ব অনেক মহৎ।  সাহিত্যক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা অপরিহার্য। সাংবাদিকের সঙ্গে সমালোকদের দায়িত্বের তাই তুলনা করা যেতে পারে। 

    সাংবাদিক যেমন সংবাদ পরিবেশনে পক্ষপাতিত্ব করে জনসাধারণকে ভুল পথে পরিচালিত করতে পারেন,  তেমনি সমালোচকও পক্ষপাতদুষ্ট সমালোচনার মাধ্যমে তরুণ লেখক,  সাহিত্যকর্মী ও পাঠকদের বিভ্রান্ত করে দিতে পারেন। 

      সাহিত্যের মূল্য নির্ধারণে সমালোচক যখন কোনো মানদন্ডের পরিবর্তে ব্যক্তিক বা গোষ্ঠীগত দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো গ্রন্থের বা সাহিত্যকর্মের যথার্থ বিচার বিশ্লেষণ না করে আন্তরিকতাহীন ভাবে কেবল প্রশংসা  করতে থাকেন,  তখন সমালোচকের দায়িত্ব থেকে তিনি বিচ্যুত ও দুর্নীতির পঙ্কিল আবর্তে পতিত হন। পঙ্ক জড়িত কোনো ব্যক্তি কোনো শূচি-শূভ্র কর্ম সাধন করতে পারেন না। নীতিনিষ্ঠাহীন সমালোচকও দায়িত্ব পালনে বিফল হন। 

     একথা অত্যন্ত পীড়াদায়ক হলেও সত্যের খাতিরে বলতেই হবে যে, আমাদের পুস্তক সমালোচকদের অধিকাংশই ছিলেন আদর্শবিচ্যুত।

     আজ আহমাদ মাযহার এর সাহিত্যকর্মের দিকে তাকিয়ে বলা চলে, একুশ শতকে এসে এই অবস্থার অনেক পরিবর্তন ঘটে গেছে। আমাদের স্বপ্নের,  আকাঙ্ক্ষার ‘সাহিত্যের সাংবাদিক’ আমাদের সমাজে দেখতে পাচ্ছি  আত্মপ্রকাশ করেছেন। এবং আরও বেশি আনন্দের খবর এই যে, আহমাদ মাযহার এর চারপাশে তাঁর মতো আরো কতিপয় ‘সাহিত্যের সাংবাদিক’এর উজ্জ্বল উপস্থিতিও আমরা দেখতে পাচ্ছি।  নিশ্চয়ই  তাঁরাও পাদপ্রদীপের আলোয় অচিরেই  চকচক করে উঠবেন। 

     আজ আমি  কেবল আমাদের পরম কাঙ্ক্ষিত,স্বপ্নের ‘সাহিত্যের সাংবাদিক’  জনাব আহমাদ মাযহারকে অভিনন্দিত করি। আর তাঁর উজ্জ্বল ভবিষ্যত, সুসাস্থ্য ও দীর্ঘ নিরোগ জীবন কামনা করি।

২৯ এপ্রিল ২০২১

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ