চেরোফোবিয়া ও অন্যান্য কবিতা
১.চেরোফোবিয়া
শব্দের ব্যবহার অনেকটা রান্না করার মতোই
প্রতিটি শব্দ সবজি
শব্দদের কেটে কেটে
ছলবাকল খুলে গুছিয়ে নিতে হয়
তারপর প্রয়োগের হাঁড়িতে চাপিয়ে
কিছুটা সৌন্দর্য;
কিছুটা স্বাস্থ্য;
কিছুটা সংযোগে
বোধপালিত শব্দ
কণ্ঠের চুলায় রান্না হয়ে বাক্য হয়ে ওঠে
তুমি দেখছি কবিতার সংসারে
বেশ ভালো রান্না শিখে গেছ;
আর আমি চেরোফোবিয়ায় ভুগছি!
২.বিধবা
দুপুরে মাছের বাজার নিভে গেলে
পথ খুলে
নিভৃতে সন্ধ্যা এসে দাঁড়ায়
কামিনীর তলে
রান্নাঘর গল্প করে
গরম তেল টগবগিয়ে ওঠে
সমুদ্র ফেরত লাস্যময়ী ইলিশের গায়ে
জীবনের কোথাও লবণের গন্ধ নেই!
৩.আমার দোষ
সব কিছুতেই আমার দোষ
ভুল করে আয়নায় দাঁড়ালে ঐ যে দুটো প্রতিচ্ছবি
মুখোমুখি
চেয়ে দেখে কে কার বয়স বেশি!
বাস্তবে বৃদ্ধ
আয়নায় তরুণ
এই দুজনের কাছেই আমি অসহায়!
২.
তোমার খোঁপায় ঝরা গোলাপ তুলে দিয়েও
আমি মুকুল ভেবে ভুল করি
জানি কুঁড়ি এলেই ফুলের প্রস্ফুটন লুকানো
যাবে না
তবু মৃত শীতের পিঠে বসন্তের উত্তাপে এখন–
সব কিছুতেই আমার দোষ!
৪.সন্ধিকেন্দ্রে আমি ও চাঁদ
চাঁদ আমার শত্রুদের মধ্যে একা
সঙ্গীহীন, অমাবস্যয় লুপ্ত।
চাঁদ বস্তুত শত্রু পরিবেষ্টিত, যার লাবণ্যবিভায়
সারারাত মনোজ গল্প সাজিয়ে আমি
গভীররাত্রি পর্যন্ত মেতে থাকি!
চাঁদ আমাকে ত্রিধা বিভক্ত করেছে
দেহ,আত্মা ও সমাজের ত্রিশূলে
এবং আমার নির্জন গভীর গোপনে
তার ঠোঁট নিয়েছে আশ্রয়
বুঝি তার চক্রে এমনি আমার ক্ষয়!
আমি হাওয়ার ঘরে
বরফের দেয়ালে আটকে থাকি
রত্নখচিত অঙ্গে চাঁদ এসে অবলীলায়
সে ঘরকে বানায় সন্ধিকেন্দ্র!
চাঁদ আমার শত্রুদের মধ্যে একা
রহস্যময়, ভালোবাসায় গুপ্ত।
৫.ইহুদি নারী
যখন প্রতিটি জিনিসের ছায়া জুতার ফিতার মতো
লাল বর্ণে অদৃশ্য বাইপোলার চোখ
সিডার কাঠের গন্ধে ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে
উলের রঙ্গিন স্কারলেট আগুনে
মনে হয় নিজেকে বদলে নেব
ফর্সা হবো ফর্সা!
তমুল ফর্সা!
৬.ফিলিস্তিন মেয়ে
জীবনের জোয়াল এখনো আমার ঘাড়ে
বছরের পর বছর যুদ্ধ
পালিয়ে বেড়ানো
পরাজয়, গ্লানি
তাই বুঝি আমি পৃথিবীর সবচেয়ে ফর্সা মেয়ে…
মাসুদুল হক ঢাকার জিন্দাবাহারে ৩রা জানুয়ারি ১৯৬৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন।
শিক্ষা স্নাতকোত্তর (দর্শন) জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; পিএইচডি করেছেন
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।বাংলা একাডেমির রিসার্স-ফেলো।
পেশায় সহযোগী অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ, দিনাজপুর সরকারি কলেজ, দিনাজপুর।
প্রকাশিত গ্রন্থ :
কবিতা: ৫টি বাংলা ও ২টি ইংরেজি ভাষায়
ছোটগল্প: ৪টি, উপন্যাস: ১টি
প্রবন্ধ-গবেষণা: ৬টি, অনুবাদ: ৩টি
সম্পাদিত গ্রন্থ: ৩টি, সাক্ষাৎকার গ্রন্থ: ১টি
লিটল-ম্যাগ (সম্পা): শ্রাবণের আড্ডা (১৯৮৭-২০০০)
পুরস্কার: বগুড়া লেখক চক্র পুরস্কার (২০১১); চিহ্ন সাহিত্য পুরস্কার (২০১৩); চর্যাপদ সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার (২০২২);
দিনাজপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি গুণীজন সম্মাননা (লোকসংস্কৃতি) ২০১৪।
“শব্দের ব্যবহার অনেকটা রান্না করার মতোই ” তার প্রমাণ রয়েছে ।