spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদপ্রবন্ধএকজন কবির অনিবার্য বিপ্লবের ইশতেহার ও কাব্যসমগ্র কথা

লিখেছেন : তাজ ইসলাম

একজন কবির অনিবার্য বিপ্লবের ইশতেহার ও কাব্যসমগ্র কথা

তাজ ইসলাম

কবি আসাদ বিন হাফিজ। জন্ম ১৯৫৮ সালের ১ লা জানুয়ারি। কবি হিসেবে খ্যাত হলেও সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় তার কলম সচল। কবির কোন দশক নাই। দশক বিভাজন কেবল একজন কবির উত্থানপর্বকে চিহ্নিত করতে সহায়ক। সফল কবি জীবনের সকল দশকের কবি হিসেবেই সার্থক পরিচিতি পান। মানোত্তীর্ণ ও কালোত্তীর্ণ কবিতা চিরকালীন। তবু দশক পরিচিতি সাহিত্যে আছে। সেমতে তিনি গত শতাব্দীর ৮০ দশকের কবি। বাংলাদেশের কাব্যাঙ্গনে স্পষ্টত দুটো ধারা বহমান। ডান ও বাম। ডান বাম বলয়ের পরিচিতি কবি ও কবিতার জন্য ক্ষতিকর। বলয়কে কেন্দ্র করে খারিজ করার হীনতাও কাজ করে। আসাদ বিন হাফিজ ৮০ দশকের প্রতিনিধিত্বশীল কবিদের অন্যতম একজন। তার কবিতাই তাকে চিহ্নিত করে। কবিতায় তার বিশ্বাসদীপ্ত উচ্চারণ তাকে স্বতন্ত্র কণ্ঠস্বরের কবি হিসেবে আলাদা পরিচিতি এনে দেয়।
সাহিত্যিক মান বিচারে তার কবিতা ঐতিহ্যিক আওয়াজের কবিতা। আমরা আসাদ বিন হাফিজকে পেয়েছি একমলাটে তার ” কাব্যসমগ্র” তে। কাব্যসমগ্র একজন কবিকে জানা বোঝার জন্য যথেষ্ট সহায়ক। সমগ্রে থাকে একাধিক গ্রন্থ।

আসাদ বিন হাফিজের মোট ছয়টি কবিতাগ্রন্থের এক মলাটের নাম “কাব্যসমগ্র”। এর প্রথম দুটি বই পূর্বে প্রকাশিত। অবশিষ্ট চারটি সমগ্রেই প্রথম প্রকাশ।

১.
কি দেখো দাঁড়িয়ে একা সুহাসিনী ভোর

কবিতা সংখ্যা : ৬৩

“একটি স্বাধীনতার জন্য / কী না করতে পারে মানুষ? নির্দ্বিধায় ঝাঁপিয়ে পরতে পারে সমুদ্র বক্ষে/…ছিঁড়ে ফেলতে পারে মাটি ও মায়ার বাঁধন/…. উড়ে যেতে পারে দুর্ভেদ্য শত্রু ঘাঁটিতে।/ আর তুমি? স্বাধীনতা চাও; / অথচ একটা ঘর ভাঙার / ঝুঁকি নিতে পারবে না,তা কি করে হয়!( স্বাধীনতার জন্য)”। কবি এ প্রশ্ন তোমাকে মানে অন্যকে যেমন করেছেন একই প্রশ্ন রেখেছেন নিজের জন্যও। তাই কালবিলম্ব না করে চলে যান ঘরে। ঘরে গিয়েই প্রিয়তমাকে লক্ষ করে বলেন, “গুডবাই কামরুন চললাম”। সে চলা তার কবি জীবন কিংবা কবিতা বই প্রকাশের শুরুর সময়। একথা তার প্রথম বইয়ে। শুরু তার জীবনে যৌবনে। সে চলার ঘোষণাপত্র পত্রস্থ হয়েছে তার প্রথম কবিতা কিতাবে। সেই কিতাবে বলেছিলেন, ” এই রাখলাম জীবন বাজী,বাইরে দিলাম পা/ স্বপ্নে দেখা গোলাপ ছাড়া ঘরে ফিরবো না/।( গোলাপ ছাড়া ফিরবো না)।”

তারপর তার সামনে এলো প্রতিপক্ষ। এলো জুলুম,নির্যাতন,জেল,জরিমানা,রক্ত,হত্যা,খুন গুম। তবু থেমে থাকেনি তার চলা। উপরন্তু তিনি প্রতিপক্ষকে সতর্ক করে জানিয়ে দেন নিজের বিস্তারিত। বলেন, ” কাকে পরাজিত করবে তুমি?/ মায়ের কোল ছেড়ে যে শিশু লাফিয়ে পড়লো/ জেহাদের নামে/ ঘাতকের হাত থেকে স্বদেশকে মুক্ত করবে বলে/ সে কি পরাজিত হতে পারে!/( কাকে তুমি পরাজিত করবে)।” তিনি থামেননি। তার সামনে কি তা তিনি স্পষ্ট করতে কবিতায় লিখেন, “রক্ত দিয়ে লিখেছি এবার রক্তে রাঙা নাম/ প্রতিবাদ নয়, সামনে শুধু প্রতিরোধ সংগ্রাম।( সংগ্রাম এনে দেবে)।”

বইটি প্রকাশ পেয়েছে ১৯৯০ সালে। ষষ্ঠ মুদ্রণের তথ্য দেওয়া আছে। বোঝা যায় বইটি পাঠক প্রিয় ছিল। এতে আরও অনেক বিষয় আছে। কিন্তু সংগ্রাম, দ্রোহ,বিপ্লবের আধিক্যে অন্য সব বিষয় ধামাচাপা পড়ে গেছে। বিপ্লব আর বিদ্রোহের দ্রিমদ্রিম আওয়াজে ঢাকা পড়েছে বিষয়ের বৈচিত্রতা। আড়ালে চলে গেছে কবিতার গঠন, প্রকরণ,আকৃতি,উপমা,চিত্রকল্প,রূপক,উৎপ্রেক্ষার আবেদন। কবিতা তখন বক্তব্যকে ধারণ করেই উচ্চকিত। বিপ্লবের কেন্দ্রবিন্দু ছিল আমি। আমিই অবিনাশী। আমি জয় করে দেব,আমি এনে দেব মুক্তি,আমি চাই সংগ্রাম আর রক্তাক্ত সফল বিপ্লব। আমি কেন্দ্রিকতা থেকেই উচ্চারণ, ” চারদিকে প্রতিরোধ সংগ্রাম/ গুডবাই কামরুন চললাম”।

২.
অনিবার্য বিপ্লবের ইশতেহার

কবিতা সংখ্যা : ২৯

দ্বিতীয় গ্রন্থে এসে কবির আমি মিশে গেছে আমাদের মাঝে। আমি হয়ে গেছেন আমার ও আমাদের সিপাহশালার। কিংবা কালের মুয়াজ্জিন। ” আমি আমার জনগণকে আরেকটি অনিবার্য বিপ্লবের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার কথা বলছি”। তারপর প্রতিটি যুবকের হাত থেকে নারীর কোমল বাহু সরিয়ে ধরিয়ে দিয়েছেন উত্তপ্ত মেশিনগানের শরীর। সুগন্ধি রুমাল ধরা হাতে তুলে দিলেন বুলেট,বোমা,গ্রেনেড।
” আমি আমার জনগণকে সারাক্ষণ / বুকের মধ্যে বিপ্লবের চাষ করতে বলছি”। এই যে আমি থেকে আমার হয়ে যাওয়া। আমার জনগণ করে নেওয়া এটি একজন বড় কবির,নেতৃত্বদানকারী কবির হিম্মত। কাব্য সাহস। এই একটি কবিতা অন্য কবিতাগুলোকে গ্রাস করে ফেলেছে। সৃজনের ভিতরে বিনাশ সৌন্দর্য যেন। গ্রাস করেছে অন্যসব ভাষণ,বক্তব্য। কবিতার প্রকরণের খেলা। ” সময়ের ঘোড়া” কবিতায় খেলেছেন ছন্দের খেলা।” অলৌকিক চাবির বাহক ” কবিতা সাজিয়েছেন গদ্যের নতুনতর আঙ্গিকে। খালিদের তরবারী কিংবা “আরেকটি মোনাজাতের খসড়া ” আলোচনা হতে পারে। কিন্তু হয়নি। “অনিবার্য বিপ্লবের ইশতেহার” ঘোষণার পর লোকেরা কেবল এই ইশতেহার বাস্তবায়নের জন্য ” আকাশের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলছে–/’ চাই একজন মুহাম্মদ ও তাঁর সতের সওয়ার।’/( চাই একজন মুহাম্মদ ও তাঁর সতের সওয়ার।’)।

৩.
অবশেষে দেশপ্রেমিকরাই জয়ী হয়

কবিতা সংখ্যা : ২৭

মুহাম্মদ!/
আজন্ম তরুণ এক চিরকেলে/ প্রেমের নায়ক।/….

মুহাম্মদ!
অনন্ত সঙ্গীত মুখর প্রিয়তম এক গানের কোকিল/
যার সুরে দুলে ওঠে মোহময় এ তাবৎ নিখিল/…….

মুহাম্মদ!
হৃদয়ে শিহর তোলা স্বপ্নময় প্রেমের যুবক!/
( প্রেমের নায়ক)।
২.
মুহাম্মদ! /
এ বিশ্বচরাচরে এক অনুপম প্রেমের গুরু।/
( প্রেমের চাষ)।
৩.
হে রাসূল,/
আপনার উপর আল্লার রহমত বর্ষিত হোক।
( হে আমার আরাধ্য সুন্দর)।

৪.
ওগো প্রিয়তম রাসূল আমার/
আপনার উম্মতরা কি পৃথিবীব্যাপী/
এভাবেই সীমাহীন জিল্লতি,অপমান লাঞ্চনার /
শিকার হতে থাকবে?
( রহমতের প্রার্থনা)।
চারটি কবিতার ভাব, ভাষা,বক্তব্য ভিন্ন, কিন্তু কেন্দ্রবিন্দু এক। মহামানব, প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)।

বক্তব্যের ভিন্নতা থাকার পরও মনে হয় চারটি কবিতা যেন একই বিষয়ের একটি সিরিজ কবিতা। লাগাতার পাঠ করলে মনে হয় একই কবিতার পরবর্তী পর্ব। অবশ্য রাসূল (সাঃ) কে আবর্তন করে একজন নবী প্রেমিক কবির কবিতা প্রবাহ বহমান থাকা প্রেম ও আবেগেরই বহিঃপ্রকাশ। তবে কবিতা কিতাবে একই কেন্দ্রে আবর্তন পাঠক রুচির চাহিদায় যায় না। পাঠক বৈচিত্রতায় বিশ্বাসী।

আল্লার হাবিবকে কেন্দ্র করে কবি বলেছেন নিজের বিশ্বাসের কথা,সারাজীবনের কর্মব্যস্ততা,কর্ম পরিকল্পনার কথা। বর্ণনা করেছেন বিশ্ব মুসলিমের চালচিত্র। শেষমেশ নবীজিকে মাধ্যম ধরে প্রার্থনায় বলেছেন :
” হে প্রভু! আপনি আপনার হাবীবের/
গোনাহগার উম্মতের ওপর একটু রহম করুন।….
আপনার রহমত ছাড়া/ আমাদের যে আর কোন সম্বল নেই।”

“অবশেষে দেশপ্রেমিকরাই জয়ী হয়” গ্রন্থ একজন আদর্শবাদী কবির বিশ্বাসের পঙক্তিমালার বহিঃপ্রকাশ। এই গ্রন্থের কবিতাসমূহে প্রকাশ পেয়েছে কবির বাধভাঙ্গা আবেগ। আবেগ কবিতার চরণে প্রকাশ পেয়েছে অনিয়ন্ত্রিতভাবে। আবেগ অতিমাত্রায় প্রকাশ পেলে শিল্পমানের সতর্কতা থাকে না। নিজের বিশ্বাস,চিন্তা,আদর্শ ও রাজনৈতিক ভাবনা প্রকাশে কবি এখানে অকুতোভয়। দ্বিধাহীন চিত্তে প্রকাশ করেন :
” আল্লার আইন কায়েমের দাবিতে আমিও সরব ছিলাম/কেরামান কাতেবীনের মত আমিও ছিলাম ক্লান্তিবিহীন,/ সতত: তৎপর।( সাক্ষী থেকো)।
এমন সরাসরি বক্তব্য কবিতার সৌন্দর্য্য থেকে বিচ্যুত হয়ে বক্তব্য প্রধান হয়ে পড়ে। এতে কবিতা সর্বজনীনতার গুণ ক্ষুণ্ণ হয়। কবির আত্মপরিচয়ের পরিপূরক হয়েই হাজির হয়েছে আরও কিছু কবিতা। সেসব কবিতাতে বলা হয়,” আমাদের ঈমান/ জালিমের ত্রাস,খাপখোলা মুক্ত কৃপাণ”। ” তোমরা ভুলে গেছো” একজন বেলাল ও ভয়ার্ত বাদুড়ের কান্না” ও এসব কবিতারই প্রতিধ্বনি। তার দেশপ্রেম প্রকাশ করেন নিজের বিশ্বাসের আবরণেই। “দেশপ্রেম যদি হয় ঈমানের অঙ্গ/ মানুষের প্রেম হয় তার অনুসঙ্গ/….
যেখানে আইন নেই এক আল্লার/ সেখানেই চায় সবে আল্লাহর দ্বীন/( দেশপ্রেম)।”।
এই চাওয়া নিয়ে দেশপ্রেমে উজ্জীবিত নেতা জনতার জীবনে নেমে আসে ” “বুলেট,বেয়নেট,গুম,খুন,হত্যা,
সন্ত্রাস,কারাগার,নির্যাতন–” তখনও তারা অকুতোভয় তারা জানে “কারাগার মানে বিপ্লবের সূতিকাগার”। ” শহীদের একফোঁটা রক্ত/ নিমিষে লক্ষ কোটি জনতার মনে/ জ্বেলে দিতে পারে বিপ্লবের দাউ দাউ আগুন। “সমস্ত বাঁধা, ভয়কে তুড়ি মারতে প্রস্তুত কবি। তার ভাষ্যমতে, ” ইতিহাস পড়ে পড়ে জেনেছি চিরকাল/ অবশেষে দেশপ্রেমিকেরাই জয়ী হয়। ( অবশেষে দেশপ্রেমিকেরাই জয়ী হয়)।” তর্ক হতে পারে তাহলে ঈমানদাররা অবশেষে বিজয়ী হয় না,কেবল দেশপ্রেমিকরাই বিজয়ী হয়? সমাধানযোগ্য কথা হল যেহেতু কবিতাগুলোর পরম্পরা আছে সেহেতু একটি কবিতা আরেকটির সম্পূরক। কবি এই কিতাবে বিশ্বাসীদের প্রতিনিধিত্ব করছেন। কাছেই এই কবিতায় বলা না হলেও না বলা কথা হল ঈমানদার দেশপ্রেমিকরাই শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হয়।

“আল্লার আইন কায়েমের দাবিতে আমিও সরব ছিলাম/কেরামান কাতেবীনের মত আমিও ছিলাম ক্লান্তিবিহীন,/ সতত: তৎপর।( সাক্ষী থেকো)।

“কাতেবীনের মত” কবি অনুরূপ বুঝাতে মত ব্যবহার করেছেন। বোদ্ধাদের মতে অনুরূপের জন্য ব্যবহৃত হয় ” মতো” আর মতপ্রকাশের জন্য ব্যবহৃত হয় মত। হয়তো অনেকের কাছে দুটোতে কোন ফারাক নেই। কাজেই সর্বত্র মত ব্যবহার করে তারা।

৪.
কুসুম ফোটার দিন

কবিতা সংখ্যা : ২৮

কবিতা কখনো কখনো শাশ্বত বাণী হয়ে দোলা দেয় পাঠক মনে। ছন্দ, মাত্রা, তাল, লয় তখন গৌণ হয়ে যায়। উপমা উৎপ্রেক্ষা উপেক্ষা করে মন চমকে ওঠে বাণীর বিন্যাসে। কবি কিন্তু কবিতা লিখেন এসবের অনুবর্তী হয়েই। তবু মহৎ কথাই মাঝে মাঝে উত্তম কবিতা হিসেবে উপস্থিত হয়। আসাদ বিন হাফিজের কবিতার নিম্নে উদ্ধৃত পঙক্তির শেষ দু লাইন এমনই স্মরণযোগ্য পঙক্তি। কবির লেখা,
কসম খোদার,/
যে কবি ছিটিয়ে যায় ঘৃণার বারুদ/হৃদয়ের চরে বোনে বিভেদের বীজ/
হিংসার আগুন উস্কে দেয় ব্যস্ত লোকালয়ে/….
যে কবি কবিতার খাতায় ঘৃণা লেখেন/মনুষ্য সমাজে সে কালের ভিলেন। ( কবি ও ভিলেন)।

চমৎকৃত হওয়ার মতো একটি পঙক্তির জন্যও একটি কবিতাকে সফল কবিতা হিসেবে গণ্য করা যায়। চমৎকৃত পঙক্তি কোনটি এমন প্রশ্ন উত্থাপিত হওয়াই স্বাভাবিক। যে পঙক্তি হৃদয়কে নাড়া দেয়,অনুভূতিতে সাড়া দেয়; বাণী উপমা বাস্তবতায় পাঠক শিহরণ অনুভব করে, শিহরিত হয় পাঠক সত্তা
এমন পঙক্তিকেই হয়তো চমৎকৃত পঙক্তি বলা যেতে পারে।

আসাদ বিন হাফিজ অতিক্রম করে আসছেন কবিতা বা শিল্পের পথে একজীবন। একজন কবির হাত দিয়ে রচিত হয় একজীবনে অসংখ্য কবিতা। সেসব কবিতার কোন কোনটি পাঠক হৃদয়ে গেঁথে থাকে উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো। আসাদ বিন হাফিজেরও উল্লেখ করার মতো কবিতা থাকাই স্বাভাবিক।

আমরা লক্ষ করছি কবিতার শরীর। কবিতার শরীরে জড়ানো কবিতা শাড়ীতে আমাদের দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হয়েছে সে শাড়ীতে থাকা শব্দের সুঁই সুতোয় গাঁথা নন্দিত পাথরের মতো কিছু পঙক্তি। যা পোস্টার পঙক্তি হতে পারে অনায়াসে। করা যেতে পারে শ্লোগান পঙক্তিও। আমরা তার কিছু এখানে পেশ করছি।
১.
“কাবার দেয়ালের মত চকচকে নাইজেরিয়ান রমণী”
২.
“না বেহেশত,না দোযখ,নোম্যান্স ল্যান্ডের উদ্বাস্তু।”
৩.
“অগণিত/ সিরাজের রক্তে সিক্ত হয় পিলখানার সবুজ জাজিম।”
৪.
“রক্তে বুড়িগঙ্গার পানি হয়ে যায় পলাশ,শিমুল।”
৫.
” নির্মমতার পোষাক পরে মানুষ হয়ে যায় কবি”।
৬.
“বেহুলার নিপাট ঘরে সুতানলি সাপ “
৭.
“রূপসীর কেশে এক বেয়াড়া উকুন”
৮.
“কাঁটাতারে তড়পায় গুলিবিদ্ধ বাংলাদেশ”
৯.
“অরক্ষিত সীমান্ত দিয়ে হু হু করে ঢুকে পড়ছে মৃত্যু”।
১০.
“সুড়সুড় করে আমাদের ঘরে ঢুকে যাচ্ছে দুর্ভিক্ষের ইঁদুর।”

লেখকসত্তা ব্যক্তির দৃষ্টিকে প্রসারিত করে। সমগ্র বিশ্ব তখন তার দেশ। কবি হয়ে ওঠেন বিশ্বজনীন কণ্ঠস্বর। উচ্চারিত হয় “ত্রিপোলীর রক্তাক্ত আগস্ট” র কথা। কবি পদ্মা মেঘনা যমুনার জল সুতোয় গেঁথে নেন দজলা ও ফোরাতকে। একীভূত করেন ত্রিপোলী ও ঢাকার আগস্ট কাহিনী। তার কাছে তখন :
” মনে হয়,/ আগস্ট এলেই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে / ফুঁসে ওঠে অনিকেত মৌমাছি/… আগস্ট এলেই স্বৈরাচার পতনে/ রাজপথ ভরে যায় যুথবদ্ধ মিছিলে মিছিলে/ কী মিশর,কী বাংলায়। (ত্রিপোলীর রক্তাক্ত আগস্ট)”।

হাবিলদার রজব আলী ইতিহাসে মহানায়ক। পরাক্রমশালী বৃটিশের বিরুদ্ধে দ্রোহ করা স্বাধীনতা সংগ্রামী। বিপ্লবী মহাপুরুষ।দেশ মুক্তিকামী এই মহাপুরুষকে জানতে উপলক্ষ করেছেন মাস্টারদা সূর্যসেনের। আত্মপ্রত্যয়ী কোন এক রজব আলী প্রশ্ন তুলতেই পারে তার পূর্বপুরুষ রজব আলী কেমন আছে তা জানতে মাস্টারদা সূর্যসেনের কাছে যাওয়া কী অনিবার্য? ” মাস্টারদা সূর্যসেন,কেমন আছেন?
কেমন আছে আপনার সেই পূর্বসুরী/ হাবিলদার রজব আলী? “
ইতিহাসের নির্মমতা হল মাস্টারদারা রজব আলীদের ইতিহাস ভুলিয়ে রাখে,ভুলে থাকে,ইতিহাসের নানা বাঁকে চেপে রাখে। আসাদ বিন হাফিজদের মতো প্রাজ্ঞজন যখন নিজের ইতিহাস স্মরণ করতে অপ্রয়োজনীয়ভাবে অন্যদের টেনে আনেন তখন সরল পাঠক একটু অবাক হয়। যেমনটা করে প্রায় সবাই নজরুলের বেলায়। নজরুলের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য তার সৃষ্টিই উত্তম উদাহরণ। তা না করে অন্য কোন কবির তুলনায় যাবে। রজব আলীকে চিনতে আমরা তার কর্ম পর্যালোচনাকেই যথেষ্ট মনে করি। কে রজব আলী? ” বৃটিশের ত্রাস সেই বিপ্লবী রজব আলী–/ বৃটিশ জেনারেলকে হত্যা করে যিনি একদিন/ ভারতবর্ষে বিপ্লবের আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন,”।
আসাদ বিন হাফিজ রচিত” কুসুম ফোটার দিন” কবিতাগ্রন্থের কবিতাগুলো ইতিহাস,বিশ্বাস,আদর্শ ও শিল্পমিশ্রণের মহৎ কবিতার উত্তম সমন্বয়।

এই বইয়ের প্রথম কবিতা নিয়ে বিস্তর কথা বলা যেতে পারে।
” সম্ভ্রমের শহর বলেই মাকামে ইব্রাহীমে/ অনায়াসে পুরুষের পাশে সালাতে দাঁড়িয়ে যায়/ ইরানী আপেল…..এমনকি/ উগান্ডা ও মাদাগাস্কারের বন্য হাতি।”
এখানে বন্য হাতি উপমা ভুল কিংবা অশোভন,অবিবেচক উপমা হিসেবে ধর্তব্য। শালীনতা বর্জিতও বলা যায়। পুরুষের পাশে দাঁড়ায় ইরানী আপেল,কাশ্মীরী চেরি,পাকিস্তানি নাশপাতি। এরা হল সুন্দরী নারী। সুতরাং ধরে নেওয়া যায় বন্য হাতিরা হল উগান্ডা ও মাদাগাস্কারের বেঢপ নারী। কোন নারী কদাকার,কুৎসিত,বেঢপ হলেও কবি’’র তাকে বন্য হাতির সাথে তুলনা করা সঙ্গত নয়। পুরুষের পাশে মাকামে ইব্রাহীমে যারা সালাতে দাঁড়িয়ে যায় তাদের সকল অসুন্দর আড়াল করে ঠিকরে পড়ে রুকু,সেজদা,কিয়ামের সৌন্দর্য্য। তারা মগ্ন থাকে ইবাদাতে। বন্য স্বভাব তখন চাপা পড়ে। এভাবে কোন আদর্শবাদী কবি নারী ও সৃষ্টিকে তাচ্ছিল্য না করাই উত্তম। অথবা এখানে বন্য হাতি বলে যদি পুরুষকেও বুঝানো হয় তবু উপমা অসুন্দর বলাই যুক্তিযুক্ত।

” যে শহরে / চুলখোলা কোন আয়েশা আকতার থাকে না,/ সেখানে শয়তানও থাকে না।” আবেগে উৎসারিত কথা বাস্তবের সাথে পুরোপুরি মিলে না। সে শহরের শয়তানদের প্রমাণ বিশ্ব মিডিয়া অহঃরহ ফলাও হয়। বায়তুল্লার এরিয়া নিরাপদ,তার শহরও নিরাপদ। কিন্তু শয়তান নেই, একথা দ্বিমত করবে অনেকেই।
সেই নগর, শহর,রাজধানীর শাসকবর্গের বহু কার্যক্রম ইসলামের সৌন্দর্যের সাথে সাংঘর্ষিক।
এতোসব কথার পরও নিঃসন্দেহে কাবা ও হজ্জের প্রেক্ষিতে নারী পুরুষ,সমঅধিকার,ইনসাফ বিষয়ক সুন্দরের যে কথা কবি তার কবিতায় তুলে ধরেছেন প্রশ্নাতীতভাবেই সমগ্র পৃথিবীতে অতুলনীয়।

” পশ্চিমা সভ্যতা নারীকে যতই/ মাদী কুকুর মনে করুক না কেন/” এই তুলনার পক্ষে বিপক্ষে মতামত থাকবে বলেই মনে হয়। এবং এটি নিন্দনীয় বিতর্কের সূত্রপাতও করতে পারে। কবিতা প্রকাশ হওয়ার পর তার পাঠক পক্ষ বিপক্ষ উভয় পক্ষের পাঠের বিষয়ে বিবেচিত। চিন্তার মিল আছে এমন পাঠক প্রশ্ন না তুললেও ভিন্ন চিন্তার পাঠকের কাছে নারীকে মাদী কুকুর হিসেবে উল্লেখ করা সহজে নেবে না। পশ্চিমা সভ্যতা নারীকে ভোগ্য পণ্য করে। কিন্তু মাদী কুকুরের মতো গণ্য করে কি না তা ভাববার বিষয়।

পাঠ বিচরণে আমরা কালবিলম্ব না করে মুহূর্তে এই কবিতা থেকে চলে যাই বইয়ের অন্য কবিতায়, এবং উপলব্ধি করি কবির আহবান :
সমঅধিকারের জন্য যারা কাঁদে/ তারা কাবায় আসে না কেন/…. সমঅধিকার চাইলে তারা কাবায় আসে না কেন?”

সমঅধিকার,শান্তি সৌন্দর্যের অনন্য দৃষ্টান্ত কাবার চত্ত্বর। স্রষ্টার বিধানকে মান্য করে সৃষ্টি এখানে কেবল আল্লার বান্দা হিসেবেই হাজির থাকে। ভুলে যায় আর সব ব্যবধান,বৈশিষ্ট্য। ভুলে যায় তারা নর নারী,ধনী গরীব,সাদা কালো,আরব অনারব,কূল মান সব ভেদাভেদ। তারা তখন শুধুই মানুষ। মানব জীবন এই শিক্ষা জারি থাকলে সমগ্র পৃথিবী মুসলমানদের এই শিক্ষাকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করতে বাধ্য হতো।

৫.
অজগর রাত

কবিতা সংখ্যা : ২৯

“মা,মাগো, তোমার চোখের আগুন যদি এখনি/ স্বৈরাচারের গদি পুড়িয়ে দিতে না পারে তবে/ বাংলার সবকটি ঘরের ঈদ সে একাই খেয়ে ফেলবে।”
কবি এখানে নিজের দেশের কথা বলেছেন। স্পষ্ট করে বলেছেন ” বাংলার”। স্বৈরাচারকে থামাতে হবে। না থামালে খেয়ে ফেলবে বাংলার সব ঘরের ঈদ। ঈদ এখানে একটি উপলক্ষ। তার তাৎপর্য ব্যপক।
ঈদ আনন্দ,স্বাধীনতা,ঐতিহ্য,ধর্ম,বিশ্বাস,মুক্তমত বৃহৎ অর্থে এসব কিছুরই প্রতিনিধিত্ব করে। ঈদ খেয়ে ফেলবে বলে কবি এক শব্দে বহুত কিছু বুঝিয়েছেন। এবং বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন।
স্বৈরশাসকের ” জিহ্বার নিচে,চুলের ডগায়,প্রতিটি লোমকুপে/ গুদামজাত হয়ে আছে ভয়ঙ্কর অন্ধকার ও কুৎসিত প্রতারণা।” তাকে না থামালে কবির সাফ কথা ( আজ আর কোন কবিতা নয়)।”

“প্রেতরাত্রির অবধারিত সময় অতিক্রান্ত হলে” মুসলমানদের বিশ্বাসে জিন আছে। ভূত বা প্রেত নাই। মানুষ অপকর্ম করলে মরে ভূতপ্রেত হয়ে ফিরে আসে এটা অন্য বিশ্বাসের কথা। যথাসম্ভব এসব পরিভাষা পরিহার করা বিশেষ পক্ষের জন্য জরুরি। কবিরা বিভ্রান্তির উপত্যকায় ঘোরাফেরা করলে সহসায় বলতে পারে ” আমিই লখিন্দর” প্রয়োজনে তখন তারা ক্ষুদিরাম হয়। কিন্তু বিভ্রান্ত উপত্যকায় গিয়ে হুঁশ ফিরে যাদের তারা ইতিহাসে সটান দাঁড়িয়ে যায় তিতুমীর হয়ে।
” হে আমার মোলায়েম খরগোশ” “মৌমাছি ও নারী” শিল্পমানে উত্তীর্ণ উত্তম কবিতা। অন্যগুলো যে অধম তা না। উত্তম থেকে এগুলো উত্তমতর।

৬.
নমরুদের ঘিলু

কবিতা সংখ্যা : ৩১

নমরুদ, এই নাম উচ্চারণ করলেই ভেসে ওঠে একটি বিস্তৃত ইতিহাস। যে ইতিহাসে নমরুদ এক আল্লাহদ্রোহীর নাম, যার অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়নের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ ছিল আল্লাহপ্রেমিকদের উপর। এরপর এ মহাপ্রতাপশালীর পতন ঘটে অপদস্ততার সাথে ক্ষুদ্র মশার সূত্রে। পৃথিবীতে নমরুদ নাই, আছে তার ভাবশিষ্য। আছে অনুগত অনুসারী। আছে নমরুদীয় মগজের নমরুদ বুদ্ধিপুত্র। কবি সেই নমরুদ বুদ্ধিপুত্রদের নির্যাতন, নিপীড়ণের বিষদ বর্ণনা দিয়ে পরম করুণাময়ের কাছে আকুল আবেদন করে বলেন :
হে আল্লাহ/… কুদরতি সাহায্য পাঠাও।/মাবুদ,নমরুদের ঘিলু তছনছ করার জন্য/ একটি মশাই তো যথেষ্ট। /(নমরুদের ঘিলু)”।

আসাদ বিন হাফিজ এক দ্রোহী কবি। কেন দ্রোহ করেছেন,কার বিরুদ্ধে গর্জে ওঠেছেন সেসবের ব্যাখ্যাই তার কবিতা। আমজনতা কিংবা ভীতু সচেতনজন যখন কৌশলের মোড়কে চুপ থাকেন, তখন কবি তার কবিতায় গড়গড় করে বলে যান সব কথা। তিনি তার ভাই বন্ধুদের ডেকে বলেন, ‘বলো তোমরা উই রিভোল্ট”। কিন্তু তারা জাগে না। তারা চুপ থাকে। তখন কবি মগ্ন হন বিশ্ব ইতিহাস পাঠে। দেশে দেশে জনতার জিল্লতির কারণ হিসেবে চিহ্নিত করতে সক্ষম হন। জেনে নিশ্চিত হন : ” যে জাতি গাদ্দারকে নেতা বানায়/ জিল্লতির জীবন ছাড়া তারা আর কী আশা করতে পারে/( কাশ্মীরের দুঃখ)।”

সত্য বলার জন্য সবাই বলে। কিন্তু পরিস্থিতি বিপক্ষে থাকলে সত্য বলা মানা। মানা মানে না বলে চুপ থেকে কৌশলের কৌটায় আটকে থাকা। তখন কৌটা খুলে তার ব্যাখ্যা করা যেন পাপ। আসাদ বিন হাফিজের “নমরুদের ঘিলু” বইয়ের বর্ণিত কথা বিশ্লেষণ না করে পাঠ করাই শ্রেয়। তার কবিতায় দুর্বোধ্য কিছু নাই। নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা,রাজনৈতিক পরিবর্তন, প্রতিপক্ষ কিংবা বিপক্ষ হয়ে যাওয়ার পরিণতির কথাই বর্ণিত আছে কবিতায়। এসব কথা বলেছেন স্বদেশ বিদেশের ইতিহাস স্মরণ করে, বর্তমানকে উপলব্ধি করে। স্বদেশ প্রেম,মানবতার মুক্তি,বিশ্বাসের বিস্তার ও বাস্তবায়নের দৃঢ় বয়ানে বর্ণিত হয়েছে কবিতা। এসব বলেন বলেই : ” ওরা ভয় পায়,বড় ভয় পায়/ তাইতো ওরা আমার হাতে হাতকড়া পরায়।/(ওরা ভয় পায়)।”

ভালোবাসি এই মাটি,মানুষের মন/
ভালোবাসি বাংলার প্রিয় জনগণ/…
ভালোবাসি ফুলপাখি পাহাড় নদী/ শাপলা শালুক আর ভরা জলধি/
ভালোবাসি উৎসব ভরা জনারণ্য/ তাদেরকে ভালোবেসে আমি ধন্য/(ভালোবাসি এই মাটি)”। এই স্বীকারোক্তির পর খোলাসা হয়ে যায় কবির দেশপ্রেমের নমুনা। তিনি দেশপ্রেমিক,প্রকৃতি প্রেমিক। এবং জনতার বন্ধু।

আমরা আলোকপাত করলাম সমগ্রের ছয়টি গ্রন্থ নিয়েই। দুটি পূর্ব প্রকাশিত তা আগেই বলেছি। সমগ্রে গ্রন্থিত সে দুটি বাদে প্রথমটির “অবশেষে দেশপ্রেমিকরাই জয়ী হয়” দেশপ্রেম,প্রকৃতি,মানবতা সবকিছু ছাপিয়ে এই কবিতা কিতাবে সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ের মতো উৎলে উঠেছে বিশ্বাস। বিশ্বাসের বিশাল আকাশে উড়াল দিতে মুক্ত ডানা মেলেছে আবেগ। আবেগ আর বিশ্বাসের বিস্তারেই প্রসারিত হয়েছে কবিতার আকাশ।
দ্বিতীয় গ্রন্থ ” কুসুম ফোঁটার দিন” সে বিশ্বাসের শৈল্পিক বয়ান বর্ণিত হয়েছে কবিতায় কবিতায়। বিষয় হিসেবে চলে এসেছে রাজনীতি,বিশ্বপরিস্থিতি,সমকালীন ঘটনা প্রবাহ।
তৃতীয় গ্রন্থে ” অজগর রাত” কবি আবেগকে করেছেন নিয়ন্ত্রণ। নিজের কথা বলেছেন ইতিহাসের মুখপাত্র হয়ে। মানব ইতিহাসের শুরু থেকে চলমান সময়ের ঘটনা প্রবাহ তার কবিতার বিষয়। কবি তার বক্তব্য প্রকাশের মাধ্যম করেছেন নদী রমণী, প্রেম প্রকৃতি,ইতিহাস ও মিথকে। কথা বলেছেন সন্তর্পণে।
কবিতা পরবর্তী কিতাবে কবিতা হয়ে উঠেছে “অবশেষে দেশপ্রেমিকরাই জয়ী হয়” কিতাবের কবিতা থেকে উত্তম রূপে।
সমগ্রের শেষে ” নমরুদের ঘিলু” তে প্রত্যাবর্তণ করেছেন তারুণ্যের দ্রোহ নিয়ে। মাটি ও মানুষের জন্য এক প্রবীণ বৃক্ষের গর্জে ওঠা দ্রোহ। ঘুমন্ত জাতিকে জাগিয়ে তুলতে তুমুল গর্জন তার কবিতায় কবিতায়। যৌবনের শুরুতে যে কবি বলেছিলেন, গুডবাই কামরুন চললাম/ সামনেই মুক্তির সংগ্রাম”। যে কবি বলতে পেরেছিলেন ” বিপ্লব মানেই যুদ্ধ/ বিপ্লব মানেই সংগ্রাম/ আমি আমার জনগণকে আরেকটি অনিবার্য / বিপ্লবের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার কথা বলছি/ ” তিনি এখনও বক্ষে ধারণ করেন অসীম সাহস।
” এক চিলতে স্বাধীনতার জন্য ” তিনি বীরদর্পে হুংকার ছেড়ে বলেন,
” উই রিভোল্ট”। আসাদ বিন হাফিজ’র কাব্যসমগ্র মোট ছয়টি গ্রন্থের সমন্বয়।

” কি দেখো দাঁড়িয়ে একা সুহাসিনী ভোর” ও
“অনিবার্য বিপ্লবের ইশতেহার” এই দুটি বই জনপ্রিয় এবং বহুল আলোচিত। অবশিষ্ট চারটি সমগ্রেই প্রথম প্রকাশ। আমরা অল্পবিস্তর কথা বলেছি সবগুলো বই নিয়েই। আরও বলা দরকার ছিল।

কাব্যসমগ্র : আসাদ বিন হাফিজ। প্রকাশক: কামরুন্নেছা মাকসুদা। প্রচ্ছদ শিল্পী: মোমিন উদ্দীন খালেদ। ৩১২ পৃষ্ঠার এই বইটির বিনিময় মূল্য : ৫০০ টাকা। একজন কবিকে একমলাটে জানার জন্য কাব্যসমগ্র একটি সহায়ক গ্রন্থ। তাই আপনার সংগ্রহে রাখুন।

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

Adv. Shahanara on যুদ্ধশিল্প
নয়ন আহমেদ on যুদ্ধশিল্প
কাজী জহিরুল ইসলাম on কবিতার জন্য নির্বাসন