spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদলিটল ম্যাগাজিনপরাধীনতা ছাড়া বাঙালি জাগে না!

লিখেছেন : প্রবীর বিকাশ সরকার

পরাধীনতা ছাড়া বাঙালি জাগে না!

dove

প্রবীর বিকাশ সরকার 

কুমিল্লার গৌরব সঞ্জয় ভট্টাচার্য্য। যিনি ছিলেন একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, অনুবাদক এবং সম্পাদক। গত শতকের ২০-৩০ দশকে কুমিল্লা শহরে প্রকাশ করেছিলেন অত্যন্ত প্রভাবশালী সাহিত্য সাময়িকী “পূর্ব্বাশা”, যা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বুদ্ধদেব বসু প্রমুখের বিশেষ নজর কেড়েছিল। 

কল্লোল, কালিকলম, চতুরঙ্গ, শীলাদিত্য প্রভৃতি সাহিত্য সাময়িকীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সাহিত্য-সংস্কৃতির রাজধানী কলকাতার বাইরে বহুদূরে অবস্থিত আঞ্চলিক শহর কুমিল্লায় এমন একটি অগ্রসর কাগজ প্রকাশের দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন কতিপয় সাহিত্যসাধক তরুণ। স্বাদেশিকতায় তারা উদ্বেল, উদ্ধুদ্ধ হয়েছিলেন। তাদের অন্যতম ছিলেন সঞ্জয় ভট্টাচার্য্য তার অগ্রজ অজয় ভট্টাচার্য্য। কী দুর্দান্ত একটি সাহিত্য আন্দোলন এই মফস্বল শহরে গড়ে উঠেছিল স্বদেশি সংগ্রামের যুগে–যা নিয়ে গবেষণা হয়নি। 

সমগ্র বাংলা সাহিত্যের প্রতিনিধিত্বকারী সাময়িকী “পূর্ব্বাশা”র উত্থান ও পতনের ইতিহাস অত্যন্ত চমকপ্রদ এবং দীর্ঘ। রামমালা গ্রন্থাগারে কয়েকটি সংখ্যা পড়ে কেঁপে-কেঁপে উঠেছিলাম ২০১৩ সালে। 

প্রচণ্ড সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এক-একটি সংখ্যা প্রকাশ করেছিলেন তরুণ তুর্কীরা। কিছুদিন কাগজটি সিনেমাসংক্রান্ত কাগজে পরিণত হয়েছিল অর্থের অভাবে। কাগজটিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য উদ্যোগ নিয়েছিলেন প্রসিদ্ধ ব্যবসায়ী নরেন্দ্রনাথ দত্ত। কিন্তু টেকেনি। তবে ইতিহাসে টিকে গেছে। 

“পূর্ব্বাশা” পর কুমিল্লা থেকে আর কোনো সাহিত্য কাগজ প্রকাশিত হয়নি যা বাংলা সাহিত্যের প্রতিনিধিত্ব করতে পেরেছিল। বেশ কয়েক বছর “অলক্ত” নামে একটি সাহিত্য কাগজ প্রকাশিত হয়েছে, বেশ আলোড়নও তুলেছিল, কিন্তু জাতীয়ভাবে প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। আঞ্চলিকতাদোষে তার বিস্তৃতি ঘটেনি। 

আঞ্চলিকতায় থেকেও বিশ্বকে ধারণ করা এবং বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়ার প্রবল ইচ্ছে বা তাড়না ব্রিটিশ চলে যাওয়ার পর দ্রুত হারিয়ে ফেলে বাঙালি। কলকাতার হাংরি জেনারেশন ও কৃত্তিবাস গোষ্ঠী কল্লোল ও পূর্ব্বাশা যুগের পর ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছিল দৈশিক-বৈশ্বিকভাবে। এরপর আর কোনো সাহিত্য আন্দোলন বা বড়মাপের সাহিত্য কাগজ বাঙালি করতে পারেনি। সুদীর্ঘ পরাধীনতার প্রভাব বাঙালিসত্তা, চেতনা ও আধ্যাত্মিকতার অভূতপূর্ব জাগরণ ঘটিয়েছিল যা এশিয়ার জাপান ছাড়া আর কোনো দেশে বা অঞ্চলে দেখা যায়নি। 

আজকের বাংলা অঞ্চলের অভ্যন্তরে গভীর দৃষ্টি দিলে ভবিষ্যতের এক হলুদ ব্যাধির ধোঁয়া ছাড়া আর কিছু দেখতে পাই না। এই ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন আমাদের বর্তমান সাহিত্য, যা ভবিষ্যতে বাঙালি জাতির প্রতিনিধিত্ব করতে ব্যর্থ বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। তার কারণ বাঙালির আধুনিক মনন যা জাগিয়েছিল এবং সৃষ্টিও করেছিল ব্রিটিশরা যুগপৎ তাদের কুশাসন এবং আধুনিক শিক্ষা দ্বারা সেরকম কিছু একটা জরুরি হয়ে পড়েছে যেন! অর্থাৎ একটা প্রবল ধাক্কা বা আঘাত অনিবার্য।

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ