| মাহমুদ নোমান |
ইদানিং ১০২টি দেশের উপর জরিপ চালিয়ে দেখা গেল বাংলাদেশ ৯৭তম। জরিপটি হল বই পড়ুয়ার সংখ্যা, এই তালিকায় এক নাম্বারে আমেরিকা, দুই নাম্বারে ভারত! মানে প্রতিবেশি দেশ ভারত দুই নাম্বারে আছেন বই পড়ুয়ার র্যাংকিংয়ে। তালিকাটি উপস্থাপনের উদ্দেশ্য হলো জানিয়ে রাখা যে এই দেশে সাহিত্য সমাজে নিজেকে দাঁড় করিয়ে রাখা রীতিমতো হাস্যরসের যোগান হওয়া। তদুপরি এই সময়ে একটা সাহিত্য পত্রিকার প্রকাশ ঘটলে কেমন স্রোতের বিপরীত কর্ম সেটি বুঝিয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না। কেননা আমিও তো ভুক্তভোগী, ৫বছর ধরে ‘দেয়াঙ’ নামের একটা সাহিত্য পত্রিকা একা চালিয়ে আসছি। যাঁদেরকে দেখবেন সাহিত্য সমাঝদার তাঁরা অন্য সেক্টরে লুটেপুটে এখানে শখে ভালো মানুষ সাজার জন্য আসে। তারা পাঠের তোয়াক্কা করেই না। একটা সাহিত্য পত্রিকা কিনবে না ১০০টাকায় অথচ লাখো টাকা খরচ করতে দ্বিধা নেই পার্টিতে,আমোদে! এসব কথা উগরে দিয়েছি নতুন একটা সাহিত্য পত্রিকা হাতে পেয়েছি, সেটি হল – বাংলা রিভিউ, বুঝতে পারছি বাংলাকে রিভিউ সিস্টেমে ফেলানোর প্রচেষ্টা; বুক ফুলিয়ে দ্বিতীয় সংখ্যাটি করলো- রবীন্দ্র সংখ্যা…
এতে বুঝা গেল, রবীন্দ্রনাথকে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয় বাঙালির অথচ সংখ্যাটির শুরুর লেখায় ফরহাদ মজহার তুলে ধরলেন রবীন্দ্রনাথ গীতাঞ্জলি এমনকি বাংলার জন্য নোবেল পাননি! নোবেল পেয়েছে গীতাঞ্জলিকে ইংরেজিতে অনুবাদ করার জন্য সরাসরি বললে ইংরেজি অনুবাদটির জন্য কিন্তু বাঙালিরা নোবেলকে ধ্যান-জ্ঞানে ভালোবাসা আবেগে শ্রদ্ধায় কত উচুতে তুলে ধরে আছে। বাঙালির আবেগে উচ্ছ্বাসের টিউনিং ধরতে আমরা রবীন্দ্রনাথকে সবকিছুই ভেবে নেওয়া অনর্থক, সেটিও তুলে ধরলেন ফরহাদ মজহার। কিঞ্চিৎ জীবনানন্দের তুলনাও আনলেন। বাঙালির আবেগ উচ্ছ্বাসে কাজী নজরুল ইসলাম কতটুকু উল্লেখযোগ্য দেখিয়ে দিয়েছেন ব্যাখ্যায় বিশ্লেষণে; এই প্রবন্ধটি পড়লেই নতুন পাঠক নতুন লেখক হতে আসাদের নতুনতর চোখের আলো দিতে পারে মনে করি। প্রবন্ধটির প্রতিটি লাইনই চমকপ্রদ; এটাও বিশ্বাস করি রবীন্দ্রনাথ বাঙালির আবেগ,সেটিতে ভিন্নচোখে কিছু বলা অনেকে মনে করে পাপ,সেখানে ফরহাদ মজহারের এমনতর নিরীক্ষা বুক ফুলিয়ে বলতে পারা আমাকে আশ্বস্ত করেছে। এরপরে মোরশেদ শফিউল হাসানের লেখাটিতে রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন গদ্যের রেফারেন্স টেনে টেনে শেষতক রবীন্দ্রনাথকে পাঠ করিয়েছে ‘ঔপনিবেশিক শিক্ষাদর্শের বিরোধিতায় রবীন্দ্রনাথ’ শীর্ষক প্রবন্ধটিতে; এরপরে কাজী জহিরুল ইসলামের ‘রবীন্দ্রনাথের রাশিয়া ভ্রমণ’ শীর্ষক লেখাটি ভ্রমণ কেন করে ভ্রমণ করলে কী হয় এসবে বেশিরভাগ ঘুরপাক খেয়েছে ; মুহম্মদ মতিউল্লাহ্ এর ‘তোরা শুনিসনি কি তার পায়ের ধ্বনি’ প্রসঙ্গ গীতাঞ্জলি- প্রবন্ধে গীতাঞ্জলিকে দেখিয়েছেন ব্যাখ্যায় বিশ্লেষণে- এক লৌকিক আর অমৃতলোকের সমীপরেখায় অবস্থিত অঞ্জলি আর হাফিজ রশিদ খানের ‘হিন্দুত্ববাদের’ বিপ্রতীপে নতুন রাবীন্দ্রিক বাংলায়ন- প্রবন্ধটি পাঠককে নতুনতর ধারণাই দেবে সুনিশ্চিত। এরমধ্যে কবি তৈমুর খান ও হাননান আহসানের রবীন্দ্রনাথকে নিবেদন করা গুচ্ছ কবিতাগুলো সংখ্যাটিকে করেছে আরও অর্থবহ; দুই ফর্মায় এতো টানটান স্লিম আর গ্রহণযোগ্য বিষয় নির্বাচনে রবীন্দ্রনাথকে তুলে ধরতে পারাও একটা বিশেষ অর্জন ছিল সম্পাদক সাজ্জাদ বিপ্লবের; সংখ্যাটি অবশ্যই সংগ্রহযোগ্য পাঠকের কাছে….