তৈমুর খান
২১
পথের মাঝেই বারবার নির্মাণ করেছি সাঁকো
চাকরি পেয়ে মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জে আসার আগেই নলহাটি কলেজে পার্টটাইমার শিক্ষক থাকার সময় কবি জয় গোস্বামীর দু’খানা চিঠি পেয়েছিলাম। প্রথম চিঠি পেয়েছিলাম ‘দেশ’ পত্রিকায় ২০০২ সালের ৪ নভেম্বর ‘ঘাসকাটা’ কবিতাটি প্রকাশিত হওয়ার পর এবং ওই মাসেই শারদীয়া ‘দেশ’ পত্রিকায় লেখার আমন্ত্রণপত্র। প্রথম চিঠিতে তিনি খুব প্রশংসা করেছিলেন ‘ঘাসকাটা’ কবিতাটির। একটা যুগ পরিবর্তনের ইতিহাসের বৈশিষ্ট্য ছিল এই কবিতাটিতে। দীর্ঘ বামশাসনে জনগণের যখন নাভিশ্বাস উঠেছে, তখনই সমগ্র মানুষের কন্ঠস্বর হয়ে বেজে উঠেছে এই কবিতা। জয় গোস্বামীর চিঠি পেয়ে আমি প্রচণ্ডভাবে উৎসাহ পেয়েছিলাম। কিন্তু একটা অভিধা আমার নামের আগে প্রায় সর্বত্রই উচ্চারিত হতে শুরু করেছিল, সেটা হলো ‘ঘাসকাটা কবি’। ‘ঘাসকাটা কবি’ কথাটার মধ্যে আমি তাচ্ছিল্য দেখিনি, বরং সম্মানিতই বোধ করেছিলাম। আমার জীবনের যা তীব্র বাস্তব তারই অভিজ্ঞতার প্রতিফলন ঘটেছিল এই কবিতাটিতে। কবিতাটি একবার পড়া যাক:
“দু’বেলাই ঘাস কাটি মজুরের ছেলে
কাঠখড়ের উষ্ণতায় রাত্রি করি পার
তবুও পার্টির লোক আমার দরজায়
না বাপু, কামাই হ’লে আমিই উপোস
কী খাই কী খাই সারাদিন…
মিছিলের লাল ধুলো, ঘুরবে আকাশ
আর একটু দাঁড়াও কার্ল মার্কস,
কয়েক শতাব্দী আরও কেটে নিই ঘাস।”
মাঠে মাঠে ঘাস কেটে বস্তায় ভরে তা বিক্রি করতাম গ্রামেরই মোড়লদের বাড়িতে। এক বস্তা ঘাস বিক্রি করে পেতাম এক কেজি গম অথবা এক কেজি খুদ। সারাদিন পর তা-ই খেয়ে রাত কাটাতে হতো। তখন পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় বামপন্থী সরকার। আমাদের এমএলএ শশাঙ্কশেখর মণ্ডল আমাদের কলকাতা নিয়ে যেতেন এক্সপ্ল্যানেড ময়দানে মিছিলে। সারাদিন মিছিলে কেটে গেলে অবেলায় পেতাম দুটো রুটি আর সামান্য ভেলি গুড়। তা-ই পাওয়ার জন্য মারামারি কাড়াকাড়ি করতে হতো। কোনো কোনোদিন তাও পেতাম না। মিছিলে গেলে বাড়িতে ভাই-বোনরা কেহই খেতে পেতো না। তাই যেটি মুখের কথা ছিল, সেটিই লিখেছিলাম কবিতায়। বামপন্থী সরকার যতদিন থাকবে আমাদের মতো গরিবদের সেইভাবে ঘাসকেটেই জীবিকা নির্বাহ করতে হবে। অবস্থার কোনো পরিবর্তন হবে না। কয়েক শতাব্দী ঘাসকাটার লক্ষ্য নিয়েই আমাদের পথ চলা। একবার কলেজ সার্ভিস পরীক্ষায় ইন্টারভিউ দিতে গেলেও এই ঘাসকাটার প্রসঙ্গই আসে। সেখানেও আমাকে প্রশ্ন শুনতে হয়: “বামপন্থী শাসন আপনার পছন্দ নয় কেন? কবিতায় যা লিখেছেন তা তো বামপন্থা বিরোধী!”
কর্তৃপক্ষকে উত্তর দিয়েছিলাম, “আমার যা অনুভূতি সেই অনুভূতির কথাই প্রকাশ করেছি মাত্র। আমার অভিজ্ঞতা ও অনুভূতিতে কোনো ছলনা নেই। বামপন্থীর বিরোধিতা করে এ কবিতা লিখিনি। আমি কোনো রাজনৈতিক দলেরও সমর্থক নই।”
এই উত্তরটিও ওদের পছন্দ হয়নি। কলেজ সার্ভিসে আমি যে চাকরি পাবো না তা বহু আগেই বুঝতে পেরেছিলাম। তবে এটা বুঝেছিলাম, বামপন্থী মানুষেরা এতটাই বিচক্ষণ যে তাদের বিরোধীরা যত ক্ষুদ্রই হোক, তারা ঠিক খুঁজে বের করেন এবং মনেও রাখেন। তাই আমার মতো ক্ষুদ্র তুচ্ছ অনামি এক কবিকেও এই প্রশ্ন করেছিলেন। তবে এই কবিতাটি বহুদিন মানুষ মনে রেখেছেন। প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত আমাকে ওই ‘ঘাসকাটা’ নামেই চিহ্নিত করেন। বহু চিঠিতে যেমন প্রশংসা পেয়েছিলাম, তেমনি বহু চিঠিতে প্রশ্নবিদ্ধও হয়েছিলাম। কবিতা লিখে এত সাড়া পাওয়া যায় তা প্রথম বুঝেছিলাম। আমার নিজের ভিতরেও একটা বিক্রিয়া হয়েছিল। কবিতাটি প্রকাশ হওয়ার সংবাদে আমি এতই উচ্ছ্বসিত হয়েছিলাম যে, টিউশনি পড়াতে পড়াতে এক ছাত্রীর বাড়ি থেকে তড়িঘড়ি বের হতে গিয়ে উঠোনে শুকোতে দেওয়া ছাত্রীর মায়ের ব্লাউজের একটি হুঁক আমার পিঠের সোয়েটারে আটকে যায়। সেটি পতাকার মতো উড়তে থাকলে আমি কিছুই টের পাই না। সারা শহর সাইকেল চালিয়ে ব্লাউজ উড়িয়ে তোলপাড় করে বেড়াই।
‘দেশ’ পত্রিকার শারদীয়াতে সেবছর ‘সম্রাট’ নামে একটি প্রেমের কবিতা প্রকাশিত হয়। কবিতাটির প্রথম লাইন দুটি ছিল—
“তুমি খুব ভালো মেয়ে বাড়িতে তোমার আলোচনা
তবুও তোমাকে প্রেম জানানো হলো না।”
১৯৯৪ সালে মালদহ ট্রেনিং কলেজে পড়ার সময় এরকম একটা মেয়ের সাক্ষাৎ হয়েছিল। তার স্মৃতির ঢেউ একান্ত মুহূর্তগুলিতে এসে ধাক্কা মারত। সেই অনুভূতি একদিন কবিতা হয়ে জন্ম নিয়েছিল। পরের বছর ‘দেশ’ পত্রিকায় বেরিয়েছিল ‘বিবাহিতা প্রেমিকা’ কবিতাটি। যে প্রথম প্রেম আপনা থেকে এসে আবার আপনা থেকেই চলে গিয়েছিল বিপুল আলোড়ন রেখে—সেই প্রেমকে তখনও ভুলতে পারিনি। টিউশন করে রোদে রোদে সাইকেল নিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম। আর সেই দিনই দেখতে পেয়েছিলাম কলতলায় বাসন মাজছে প্রেমিকাটি। তার সদ্য বিয়ে হয়েছে। হাতে পায়ে লেগে আছে আলতার রং। টেপরেকর্ডারে হিন্দি গান বাজছে। মাজা থালাগুলি চকচক করছে। মাঝে মাঝে মুখ দেখেও নিচ্ছে আয়নার মতো। তখন মনে এসেছিল কবিতাটি—
“বেজে উঠছে বাসনকোসন
অদ্ভুত তোমার রাঙা হাত
কৃষ্ণটি কোথায় গেছে?
টিউশান সেরে রোদে রোদে
আমার সাইকেল
সারাদিন আমাকে ঘোরায়
টেপে বাজছে হিন্দিগান
একা তুমি কলতলায়
কৃষ্ণের জন্য কি আজ মাংস-ভাত?
ঝকঝকে থালায় মুখ।
স্বপ্নে ঢুকে যাব—
তোমার পেটের ভ্রূণ হয়ে
ফিরে আসব আজকে রাতেই।”
প্রেমিকার পেটে সন্তান হয়ে জন্মানোর স্বপ্ন প্রেমিকের। যে প্রেম ছিন্ন হয়ে গেছে, যে প্রেম সমস্ত সম্পর্ক মুছে দিতে চেয়েছে, যে প্রেমের মাঝখানে সমাজ-ধর্ম-সম্প্রদায়ের প্রাচীর—সেই প্রেমকে যদি মাতৃত্বের স্বাদে বাৎসল্যে বদলে দেওয়া যায়—তাহলে কে আর বাধা দেবে? প্রেমের মৃত্যু হয় না, জীবন তো প্রেমের কাছেই দায়বদ্ধ। শরীর থাক আর না থাক। ফুরিয়ে যাক। কিন্তু মানবীয় আবেগের শাশ্বত অভিব্যক্তি নিরন্তর জেগে থাকবে। তাই এই প্রেমকে বৃহত্তর সম্পর্কের চিরন্তনতায় উন্নীত করতে চেয়েছি। বলাবাহুল্য কবিতাটি নিয়ে অনেকে চিঠি লিখেছিলেন প্রশংসা সূচক বাক্য ব্যয় করে।
২০০৩ সালে ‘খা শূন্য আমাকে খা’ এবং ২০০৪ সালে ‘আয়নার ভেতর তু যন্ত্রণা’ বই দুটি কাঞ্চিদেশ প্রকাশনা থেকে বের হয়। ‘খা শূন্য আমাকে খা’ বইটির কবিতাগুলিতে অমোচনীয় দারিদ্র্য তুমুল এক নাথিংনেস প্রজ্ঞার জন্ম দেয়। জীবন শূন্য, বেঁচেথাকাও শূন্য, পার্থিব ভোগ্যবস্তুর প্রাপ্তির পরিণতিও শূন্য। যা পেলাম না, যা পেয়েছি, যা ভবিষ্যতে পাবো সমস্ত রেজাল্টই শূন্য। সুতরাং আমাদের জন্ম শূন্যে, বিলীন হয়ে যাওয়াও শূন্যে। এই দর্শনেই কবিতাগুলি উঠে এসেছে। ‘আয়নার ভেতর তু যন্ত্রণা’ নিছক প্রেমের কবিতা। ভুলতে না পারা প্রেমই মনের আয়নায় প্রতিফলিত প্রতিচ্ছবি। আর সেই প্রতিচ্ছবি যন্ত্রণার। যন্ত্রণাকে ‘তুই-তুকারি’ করা যায়, কেননা যন্ত্রণার মতো আপনজন আর কেউ নেই। উল্লেখ্য এই কাব্যগ্রন্থটি বীরভূম জেলা বইমেলায় রামপুরহাটে প্রায় ৩০০ কপি বিক্রি হয়েছিল। উঠতি যুবক-যুবতীরা অনেকেই কিনেছিল বইটি। এই বইটির একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে প্রতিটি কবিতার শেষে প্রেমিকার মুখের অস্পষ্ট একটা ছবি। যন্ত্রণা মানুষের সৃষ্টিতত্ত্বের বিষয়। প্রতিটি প্রাণ পৃথিবীতে আগমনের সঙ্গে সঙ্গেই যন্ত্রণার দেখা পায়। তার মনের আয়নায় যন্ত্রণার মুখ ভেসে ওঠে। এই সেই যন্ত্রণা আমাদের বোধ ও বোধি। জাগরণ ও কষ্ট। হাহাকার ও দীর্ঘশ্বাস। প্রতিটি কবিতার মধ্যেই সেই ক্ষরণের অভিরূপ, উদ্বেগের হিল্লোল, আত্মধ্বনির প্রকাশ ঘটেছে।
২০০৪ সালে বারাসাতের কপোতাক্ষ পত্রিকা দপ্তর ‘বিষাদের লেখা’ নামে আরেকটি ছোট্ট কাব্য প্রকাশ করে। চাকরি পাওয়ার পর জীবনটাকে চাকা লাগানো একটা যন্ত্রের মতো মনে হলো। সংসারের দায়িত্ব বাড়ল। ইলেকশনে যেতে হলো। ভাড়ার ঘরে থাকতে হলো। নতুন সহকর্মীবৃন্দ। নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয়। সব কবিতাগুলির মধ্যেই জেগে উঠল সেইসব অভিজ্ঞতার কথা। শূন্যতা থেকে যন্ত্রণা, যন্ত্রণা থেকে বিষাদ আমার ভবিষ্যতের পথ নির্মাণ করে চলল। সেই পথেই আমি চলতে চলতে ফিরে তাকালাম।
অবশ্য দৌড় প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত বইগুলিতে জীবন অন্বেষণের এক গূঢ় রহস্যময়তা আগেই ফুটে উঠেছিল। ‘কোথায় পা রাখি’তে সংশয় পীড়িত অনিশ্চয়তায় ভরা এক ভবিষ্যতের দর্শন পেয়েছিলাম। তেমনি ‘বৃষ্টিতরু’তে এক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হয়েছে। নিজেকে মনে হয়েছে নিজেরই মৃত্যুর কবর। আর এই কবর বহন করেই বেঁচে থাকা। নিজের অস্তিত্বই খুঁজে পাইনি। কবিতায় রাতকান্নার শব্দেরা এসে বাসা বেঁধেছিল। ‘একা এবং দারুণ একাকী’ হয়ে রাস্তা হাঁটার পথ খুঁজছিলাম। সেই সময়ই শেখ মোহাম্মদ আজিম বের করত ‘সহেলি’ নামে পত্রিকা। প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে প্রেমিকা ‘সহেলি’র নামেই এই পত্রিকা। বেশ কিছু কবিতা এবং গদ্য এই পত্রিকায় লিখেছিলাম। শেখ আজিম পত্রিকা না বের করলে হয়তো বিভ্রান্ত হয়ে আত্মহত্যা করত। মনের মাঝে জমে থাকা দুঃখ, ভালবাসার মৃত্যুর শূন্যতা তাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিত। তাই পত্রিকা করে সে তার কষ্টগুলি লিখতে থাকল। শাঁখাচুড়ির দোকানও একসময় আমাদের কাছে এক ধ্বংসবাড়ি হিসেবে চিহ্নিত হলো। শঙ্করলাল রায়ও হারিয়ে ফেললেন জীবনের পথ। সেই বিষাদের পথে চলতে চলতেই নিজেকে মনে হলো ছন্নছাড়া, লক্ষ্মীছাড়া এক আয়ু ভিখারি। তখনকার একটা কবিতা খুব মনে পড়ে—
“সান্নিধ্য কোথাও নেই
#
কার সান্নিধ্যে যাব?
নারায়ণ সাহার চায়ের দোকানে বেলা গেল
ভাঙাবেঞ্চে বসে আছে কাক
উনুন নিভে গেছে
চারিদিকে পোড়া ছাই, মেঘবর্ণ আমার হৃদয়
পৃথিবী ঘুরতে ঘুরতে এগিয়ে যাচ্ছে কার দরজার দিকে?
তাকে চিনতাম না আমি আজ দেখি ঘোর লাগে চোখে-মুখে
সন্ধ্যার আড়ষ্ট গলি, কেউ দাঁড়িয়ে নেই
কারও চুড়ি আর বাজে না
এমন বিকেলে চুল খুলে চলে গেল সে এক ঝড়–
কোন্ পাহাড়ের পাদদেশে তার ঘুমের শহর?
শেষ দানা তুলে নিতে নিতে রোদপাখি
একবার ডেকেছিল তারপর উড়ে গেছে
সান্নিধ্য কোথাও নেই কিছু উষ্ণতা ছড়ানো আছে আজও চায়ের দোকানে”
এই উষ্ণতা বারবার স্মৃতিসিক্ত করে। কিছুতেই মন থেকে দূর করা যায় না। সুতরাং কবিতা জীবনের ভাষা। নিজের বড় হওয়া, আঘাতে-আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হওয়া, সব হারানো, চাকরি পাওয়ার পর কী অভিজ্ঞতা, মুর্শিদাবাদে এসে নিজেকে কেমন লাগছিল, নতুন কবিদের কবিতা, সমাজ-ধর্ম-সম্প্রদায় নিয়ে নানা উপলব্ধির কথা তখন ছোট ছোট গদ্যেও প্রকাশ করে চলেছিলাম। মধুমঙ্গল বিশ্বাস লেখাতেন গদ্য। বাংলাদেশের কারুজ, ঘাস, ভাস্কর, ঋতি, দ্বিতীয় চিন্তা, গাণ্ডীব, গন্দম, ময়ূখ প্রভৃতি পত্রিকায়ও বেশ কিছু গদ্য লিখেছিলাম। সেইসব গদ্য নিয়ে হলো ‘কবির ভাঁড়ারের চাবি’ যা শুধু কবিতা বিষয়ক গদ্যের সম্ভার। বের করল কাঞ্চিদেশ ২০০৬ সালে। অপরদিকে আত্মভাঙনের গদ্যগুলি নিয়ে বের হলো আত্ম-উপলব্ধির গদ্য সংকলন ‘আত্মসংগ্রহ’। বের করল ‘তবু অভিমান’ নামে একটি ছোট পত্রিকা দপ্তর বনগাঁর শঙ্খশুভ্র দে বিশ্বাস ২০০৭ সালে। পরবর্তীকালে এই ধারার বইগুলি হলো ‘আত্মক্ষরণ’(২০১৬, আবিষ্কার প্রকাশনী), ‘আত্মস্বর’(২০২১,বার্ণিক প্রকাশনী) এবং ‘এই কবিতাজীবন’(২০২৩,বার্ণিক প্রকাশনী)। এইসব আত্মগত গদ্য বইগুলিতে নিজের জীবনের নানা ঘটনার সন্নিবেশ রয়েছে। কিভাবে বেড়ে উঠেছিলাম, কারা কারা ছিল আমার আপনজন, সাহিত্য জগতে কাদের সান্নিধ্য পেয়েছিলাম, ব্যক্তিগত অভিমান এবং অভিমানের কবিতা রচনা, কলেজের দিনগুলি, পিতার কথা নানাভাবে ফিরে ফিরে এসেছে। কবিতা এবং গদ্য যে খুব কাছাকাছি অবস্থান করে এবং প্রকৃত সাহিত্য রচনায় যে কৃত্রিমতা থাকে না—তা পাঠক মাত্রই অনুধাবন করতে পারবেন। কিন্তু ওই যে পথ তৈরি হয়েছিল, সেই পথের মাঝেই বারবার নির্মাণ করেছি সাঁকো। সাঁকোতে দাঁড়িয়েই পার হতে চেয়েছি ইহকাল ও পরকাল। সাঁকোতে দাঁড়িয়েই তাচ্ছিল্য করেছি যশ-খ্যাতিকে, মোহ ও মহীয়ান হতে চাওয়াকে। ফজরের সময় হলে শয্যা ছাড়তে আর কালক্ষেপ করি না।