প্রবীর বিকাশ সরকার
আজ ২৩ অক্টোবর, ২০২৪ সাল, ৪০ বছর আগে জাপান আগমনের দিন। ১৯৮৪ সালের এই দিন অপরাহ্ণ ৩টার সময় থাই এয়ারলাইন্সের একটি বোয়িং বিমানে চড়ে নারিতা আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে এসে অবতরণ করি।
আমি তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র। স্বৈরাচার শাসক এরশাদের আমল। সবদিক দিয়েই চরম হতাশাব্যাঞ্জক অবস্থা। পরিবারের জ্যেষ্ঠ সন্তান মাথার ওপর ভীষণ ভারী দায়দায়িত্ব। তাছাড়া আমার গভীর ব্যক্তিগত একটি সমস্যাও ছিল। উত্তরণের কোনো পথ খুঁজে না পেয়ে দেশত্যাগের সিদ্ধান্ত নিলাম। বাবা সবই তো জানত, সম্মতি দিল।
আমাদের পারিবারিক শুভাকাঙ্ক্ষী আবদুল লতিফ, যাকে মামা ডাকতাম। তাদের বাড়িতে আমরা কিছুকাল ভাড়াটে ছিলাম। সেই থেকেই গভীর সম্পর্ক। তিনি জাপানের ভিসার ব্যবস্থা করে দিলেন। জাপানি ভাষা ও সংস্কৃতির ছাত্র হিসেবে আগমন ঘটল।
প্রথম একটি বছর আদৌ ভালো অবস্থায় ছিলাম না। ভাষা জানি না, স্কুলটিও ভালো নয়। ভিসা নবায়নেও এশিয়ান ছাত্রদেরকে ইমিগ্রেশনে হয়রানি হতে হয়। স্টুডেন্ট জব পেতেও নানা ঝামেলা। তবুও সহ্য করে চালিয়ে যাচ্ছি। সন্ধ্যারাতে একটি কফি শপে পার্ট টাইম জব করি। সেখানে বেশ আনন্দে সময়টা কাটত। কারণ দু-তিনজন আমার বয়সী তরুণ-তরুণী কাজ করত। তাদের বন্ধু-বান্ধবীরা সন্ধ্যাবেলায় কাজ শেষে এসে আড্ডা দিত দোকান ১১টায় বন্ধ হওয়া পর্যন্ত। একমাত্র রোববার ছাড়া প্রতিদিনই আড্ডা হতো। আমি ইংরেজি জানার কারণে তাদের সঙ্গে দ্রুত বন্ধুত্বের বন্ধনে বাঁধা পড়লাম। তারাও বিদেশিদের খুব পছন্দ করত। আমেরিকা বলতে পাগল।
এদের মধ্যে স্থানীয় মিয়াজাওয়া নোরিকো নামে একটি মেয়ের সঙ্গে আমার খুব ভাব হয়ে গেল। কারণ সে আমেরিকার হাওয়াইই দ্বীপ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা ছিল। ইংরেজি এক-আধটু বলতে পারে। চালচলনে খুব স্মার্ট। হাই স্কুল পাশ করার পর টোকিওর সবচেয়ে ব্যয়বহুল এবং ফ্যাশনাবল শহর গিনজায় অবস্থিত ব্রিটিশ কসমেটিকস কোম্পানি মারি কোয়ান্টে চাকরি করে। বাবা-মা দুজনেই গ্রোসার শপের মালিক। বাবার কাছ থেকে উপহার পাওয়া তার ছোট্ট গাড়িটি দুর্ঘটনায় কিছুটা ক্ষতি হলে পরে মেরামতের জন্য টাকার দরকার হতে মাস কয়েক চাকরি করছিল ওই কফি শপে।
স্কুলের শিক্ষক খারাপ হওয়ার কারণে আমার জাপানি ভাষা কিছুতেই অগ্রসর হচ্ছিল না। নোরিকোকে আমি বলেছিলামও সেইকথা। ফলে তারা সকলে মিলে আমাকে জাপানি ভাষা শেখাত। বেশ শিখেওছিলাম। নোরিকো আমাকে বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে নিয়ে গিয়েছে। একসঙ্গে ডিসকোতে যাওয়া, সিনেমায় যাওয়া, জাতীয় উদ্যানে ঘোরাঘুরি করা প্রায় প্রতি সপ্তাহেই।
দ্বিতীবার যখন ভিসা নবায়ন করতে গেলাম তখন আমার স্কুলের নাম শুনেই অফিসারের মেজাজ বিগড়ে গেল! যাচ্ছেতাই মন্দ বলে ভিসা দিল না। ফাইনাল অ্যাপ্লিকেশন সিল মেরে বলল তিন দিনের মধ্যে জাপান ত্যাগ করার জন্য। তুমুল ঝগড়া করেও কোনো ফল হলো না। স্নোবিস অফিসারটি ভিসা নবায়ন করল না।
মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লেও মনে মনে আমি জাপান ছেড়ে চলে যাওয়ার চিন্তা করছিলাম। আমার রুমমেট স্বপনভাইকে বলছিলাম সেকথা। জাপান খুবই কঠিন দেশ। এদেশে প্রতিষ্ঠা পাওয়া সহজ নয়। স্বপনভাই বলতেন, এদেশে থাকা যদি কপালে থাকে কেউ তোমাকে ঠেকাতে পারবে না।
বিষণ্ণতায় ডুবে ছিলাম তিন দিন। বিমানের টিকিট কাটার জন্য টাকায় হচ্ছে না। কফি শপে কাজের বেতন আনতে গেলে সবাই ঘিরে ধরল আমাকে! তারা দুশ্চিন্তা করছিল। কিন্তু কেউ কিছু করতে পারছে না। বেতন নিয়ে ফিরছিলাম। নোরিকোর মন খুব খারাপ হয়ে গেল। সে স্টেশন পর্যন্ত এগিয়ে দিতে এলে আমি বললাম, আমি তো চলে যাব। আর দেখা হবে না। আমাকে সঙ্গ দেবার জন্য অশেষ ধন্যবাদ।
নোরিকো বলল, সত্যিই তুমি চলে যাবে? এত টাকা খরচ করে, এত দূর থেকে এসে লক্ষ্য পূরণ না করেই চলে যাবে?
আমি হেসে বললাম, না গিয়ে উপায় কি? ভিসা তো দিল না। সেরাতে আরও বেশ কথা হয়েছিল জাপান সম্পর্কে।
নোরিকো বিষণ্ণ চোখে আমাকে বিদায় দিল। আমি ট্রেনে চেপে কয়েকটা স্টেশন পার হতেই টের পেলাম বুকের ভেতরটা হা হা করে ভীষণ এক শূন্যতায়! দ্রুত নেমে পড়ে, ফিরে গেলাম সেই স্টেশনে। টেলিফোন বক্স থেকে নোরিকোকে ফোন করলাম যদি সে কষ্ট করে আসে! কথা আছে।
নোরিকো এলো। আমি বললাম, তোমাকে একটু কষ্ট দেব। আমার সঙ্গে ইমিগ্রেশনে যেতে পারবে? তুমি গেলেই ভিসা দেবে আমার মনে হয়।
নোরিকো বলল, নিশ্চয়ই যাব।
পরের দিন নোরিকোকে নিয়ে ইমিগ্রেশনে গেলাম। নোরিকো দরজার কাছে দাঁড়িয়েছিল। আমি পাসপোর্ট দিয়ে সেই একই অফিসারকে বললাম, ওই যে দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটি সে আমার বান্ধবী। আমার নতুন স্পন্সর। ভালোয় ভালোয় ভিসা দিয়ে দাও। আমি জাপানে থাকতে চাই, পড়তে চাই। আমাকে সাধারণ লেবার ভেবো না।
একবার অফিসার চোখ তুলে দেখল, তারপর লাল মুখ করে নতুন করে ৬মাসের ভিসার সিলছাপ্পর মারল। বলল, ভালো একটি স্কুলে ভর্তি হও। গুড লাক।
নোরিকো আমার স্পনসর হয়েছে। শিনবাশি শহরে গিনজার পাশেই, একটি ভালো স্কুল খুঁজে দিল।
১৯৮৫ সালের শেষদিকে আমরা বিয়ে করলাম। আমি তখনও ছাত্র। তারপর তো ইতিহাস।
১৯৮৬ সালে জাপানি ভাষা শেষ করে চাকরিতে প্রবেশ বহু কাঠখড় পুড়িয়ে। কারণ অত্যন্ত রক্ষণশীল জাপানে জাপানি কোম্পানি বিদেশিদেরকে পারমানেন্ট জব দিতেই চায় না। একজন জাপানি বয়স্ক বন্ধুর চেষ্টায় পেয়েছিলাম।
১৯৮৮-১৯৯০ পর্যন্ত বাংলাদেশ সোসাইটি জাপানের সাংস্কৃতিক ও প্রকাশনা সম্পাদক। সোসাইটির মাধ্যমে জাপানে প্রথম বাংলাদেশি জাতীয় শিল্পীদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ব্যবস্থা করেছিলেন সোসাইটির প্রেসিডেন্ট শরীফ চৌধুরী, আমি তখন সাংস্কৃতিক সম্পাদক।
১৯৮৮ সালে জাপানি বৌকে নিয়ে বাংলাদেশে ফেরা। মহাবন্যায় তখন দেশ ডুবে গেছে।
১৯৯০ সালে বঙ্গবন্ধু পরিষদের শাখা গঠনের প্রথম উদ্যোগ নিলাম এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ১৯৯১ সালে ১৫ আগস্ট উদযাপন পরিচালনা করলাম। অতিথি ছিলেন বিচারপতি কে এম সোবহান ও কণ্ঠশিল্পী আবদুল জব্বার।
১৯৯১ সালে জাপানে প্রথম মুদ্রিত বাংলা কাগজ মানচিত্র প্রকাশ। জাপানের প্রবাসী সমাজ এবং জাপানি গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন।
১৯৯১ সালেই কুমিল্লায় আধুনিক গ্রন্থবিতান মানচিত্র বইঘর চালু। এবং ১৯৯২ সালে অনিবার্য কারণে বন্ধ।।
১৯৯২ সালে একমাত্র সন্তান টিনার জন্ম।
১৯৯৪ সালে বন্ধু কবি মোতালেব শাহ আইয়ুব প্রিন্সকে নিয়ে সৃজনশীল পাঠচক্র আড্ডা টোকিও প্রতিষ্ঠা।
১৯৯৪ সালে চট্টগ্রামে ত্রৈমাসিক সাহিত্য ম্যাগাজিন প্রাচী প্রকাশ। আমি প্রধান ও নির্বাহী সম্পাদক শিল্পী, কবি, গল্পকার ও নাট্যজন সাফায়াত খান।
২০০০ সালে কুমিল্লা মায়ের স্বপ্ন বাস্তবায়ন বাড়ি নির্মাণ।
২০০২ সালে জাপান-বাংলা শিক্ষা-সাংস্কৃতিক বিনিময় শতবর্ষ উদযাপনের প্রধান উদ্যোক্তা।
২০০৩ সালে সম্পূর্ণ মিনি কাগজ অন্যচিত্র প্রকাশ, কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা কর্তৃক প্রশংসার্হ আলোচনা।
২০০৩ সালে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত ভারত-জাপান সংস্কৃতি কেন্দ্র: রবীন্দ্র ওকাকুরা ভবন নির্মাণ প্রকল্পের সঙ্গে সংযুক্তি।
২০০৪-৫ সালে জাপানের প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় তাকুশোকু বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি গবেষক।
২০০৮ সালে জানা অজানা জাপান প্রবন্ধ সংকলনের প্রথম খণ্ড প্রকাশ এবং ঢাকায় প্রকাশনা অনুষ্ঠান। আপাত ৫খণ্ড সমাপ্ত। দিল্লি থেকে প্রথম খণ্ডের হিন্দি অনুবাদ প্রকাশ।
২০০৭-২০১৩ সাল পর্যন্ত দুই দফায় কুমিল্লায় মাসিক কিশোরচিত্র কাগজ প্রকাশ।
২০১১ সালে রবীন্দ্রনাথের ১৫০তম জন্মবর্ষে প্রবন্ধ সংকলন রবীন্দ্রনাথ ও জাপান: শতবর্ষের সম্পর্ক প্রকাশ। আপাত ৩খণ্ড সমাপ্ত।
২০১২ সালে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন রাজনীতি ও আইন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. পেমা গিয়ালপো প্রতিষ্ঠিত Asian Solidarity Council for Freedom and Democracy সংস্থার সহপরিচালক। বর্তমানে অন্যতম সহসভাপতি।
২০১৮-২০২৩ পর্যন্ত গিফু মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় দক্ষিণ এশিয়া গবেষণা কেন্দ্রের বিশেষ গবেষক।
২০২০ সালে গবেষণাগ্রন্থ 日本がアジアを目覚めさせた (জাপান এশিয়াকে জাগ্রত করেছে) প্রকাশ এবং আমজন অনলাইনে এশিয়ার ইতিহাস ক্যাটাগরিতে বেস্ট সেলার।
এ পর্যন্ত ৩০টি গ্রন্থ রচনা করতে পেরেছি। সব কর্মকাণ্ডই চাকরি করার পাশাপাশি করে এসেছি।
বাংলাদেশে আমার এ পর্যন্ত প্রদত্ত টাকা:
মাসিক মানচিত্র প্রকাশ প্রায় ১২ বছর। প্রতি সংখ্যার বাজেট ১লাখ থেকে দেড়লাখ টাকা। মাসিক কিশোরচিত্র আড়াই বছর, প্রতি সংখ্যার বাজেট ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। মানচিত্র বইঘর বাবদ ব্যয় ৩ লাখ টাকা। দ্বিতীয় দফায় মানচিত্র বইঘর বাবদ ব্যয় ৮ লাখ টাকা। বাড়ি বাবদ ব্যয় ১৭ লাখ টাকা। ১৯৮৫ সাল থেকে প্রতি মাসে বাংলাদেশে বাবা-মার পরিবারে রেমিটেন্স ২০১৭ সাল পর্যন্ত পাঠানোর হিসেব জানা নেই। এখনো প্রতি দুমাস অন্তর বাড়ির দেখাশোনা বাবদ খরচ ২৮ হাজার টাকা। এসবের বাইরেও কত টাকা কতজনকে দিয়েছি তার হিসাব রাখিনি।
এই হচ্ছে জাপান প্রবাসী আমার ৪০ বছরের খতিয়ান।
২.
Good bye Jobs!
প্রবাস জীবনের ৪০ বছর পূর্তিতে চাকরি ছেড়ে দিলাম। সর্বমোট চাকরি করেছি ৩৮ বছর। ২০টির অধিক বিভিন্ন কোম্পানিতে কাজ করেছি।
১৯৮৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে স্টুডেন্ট জব বা পার্ট টাইম জবে প্রবেশ করেছিলাম। একাধিক পার্ট টাইম জব করেছি জাপানি ভাষার ছাত্র হিসেবে।
১৯৮৭ সালে প্রথম নিয়মিত কর্মী হিসেবে শিনোজুকা প্রিন্টিং কোম্পানিতে সেলস রিপ্রেজেনটেটিভ হিসেবে যোগদান করি। তার জন্য প্রচুর খঠখড় পোড়াতে হয়েছে। রক্ষণশীল জাপানে বিদেশিদের চাকরি পাওয়া ছিল তখন আকাশের চাঁদ ধরার মতো। অবশ্য বিদেশি তখন খুবই কম জাপানে।
এরপর যেখানে বেতন বেশি এবং কাজ শেখার সুযোগ আছে সেখানেই কাজ করেছি। এভাবে ২১টির বেশি কোম্পানিতে চাকরি করেছি। তাতে যে সুবিধাটি হয়েছে আমার জন্য, সেটা হলো প্রচুর জাপানি ও বিদেশির সঙ্গে প্রতিনিয়ত ওঠাবসা। তাদের রগরেষা বুঝতে সহায়ক হয়েছে। এসব কোম্পানির মধ্যে যেমন ছিল বিখ্যাত কলকারখানা তেমনি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি প্রায় ১০ বছর আদালতে বাংলা-জাপানি ভাষার দোভাষী ও অনুবাদকের কাজও করেছি।একঘণ্টা-দুঘণ্টায় প্রচুর সম্মানী! দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইতিহাস ও রাজনীতি বিষয়ে গবেষণা করার অমূল্য অভিজ্ঞতাও অর্জিত হয়েছে। ফলে তৃণমূল শ্রমিক থেকে শুরু করে আদালতের বিচারক পর্যন্ত মেলামেশা এবং মতবিনিময়ের সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছি।
একাধিক রাজনীতিবিদ, আইনজ্ঞ, অধ্যাপক, গবেষক, সাহিত্যিক, সম্পাদক, স্বেচ্ছাসেবকসহ নানা জনের নানাবিধ কাজ করে দিয়ে কম টাকা কামাইনি! পত্রিকায় সাক্ষাতকার দিয়ে পয়সা পেয়েছি। লিখে টাকা পেয়েছি। তাছাড়া, সময় করে বিভিন্ন কোম্পানির প্রচারপত্র রেল স্টেশনের সামনে দাঁড়িয়ে বিলি করেছি। ৮ ঘণ্টা রোববার ছুটির দিনে। ট্রেনভাড়া, দুপুরের খাবারের পয়সা আলাদা যেমন পেয়েছি, পেয়েছি মূল চুক্তির টাকা ১ মান ইয়েন মানে ১০০০০ ইয়েন। নব্বই দশকের কথা বলছি, জাপানে তখন অর্থনীতি বুদ বুদ করে ফুটছে। সর্বত্র রমরমা অবস্থা। কাজ করলেই টাকা!
যেমন কামিয়েছি তেমনি খরচও করেছি। পত্রিকা প্রকাশ, সংগঠন করা, গ্রন্থ প্রকাশ, বাংলাদেশের পরিবারে টাকা পাঠানো, বাংলাদেশে তিন বার বিনিয়োগ করে বিফল হওয়া, বিভিন্ন জনকে চাঁদা, সাহায্য তো ছিলই। আনন্দ-বিনোদনেও পকেট খালি করে দিয়েছি।
কোটিপতি হয়ত হতে পারিনি, এর জন্য কোনো দুঃখও নেই। বরং বাবা-মার দেখভাল করতে পেরেছি, ভাইবোনদের জন্য যথাসাধ্য করেছি যদিও কোনোটাই আমার কাজে লাগেনি। একমাত্র মেয়েটাকে মানুষ করতে পেরেছি, জগতখ্যাত প্রতিষ্ঠানে ক্রিয়েইটিভ কাজ করছে মনের আনন্দে। এর চেয়ে সুখের, আনন্দের আর কিছু নেই। তাই প্রিয়তমা স্ত্রীর কথামতো বর্তমান চাকরিটাকে ছেড়ে দিয়েছি ২৩ অক্টোবর তারিখে, যেদিন আমি প্রথম জাপানের মাটি স্পর্শ করেছিলাম ১৯৮৪ সালে।
কোমরের অবস্থাও ভালো নেই, ইদানীং ব্যথায় কাতর। তবুও পুরুষ মানুষের কাজ সহজে শেষ হয় না। আবারও কোনো কাজের সুযোগ এসে যাবে। কেননা আমার যে অভিজ্ঞতা জাপান সম্পর্কে তার নিশ্চয়ই মূল্য আছে!