| মাহমুদ নোমান |
বিষাদের বিবিধ সৌন্দর্যে প্রস্ফুটিত সত্যের শামিয়ানা টাঙিয়ে চিত্রকল্পের দৃশ্যগত ইন্দ্রিয়গম্য ফিনিক নাদিম মাহমুদের কবিতা। আত্ম-দগ্ধে স্পন্দিত রিদ্মিকি শব্দের স্বেচ্ছায় সহজাত স্বরে উচাটন উপমার বন্ধন সারল্যে উপস্থাপিত-
এটা তো পুরনো কথা-
আমি মরে যাবো! না দাদা, এটা সুইসাইড নোট।
- সুইসাইড নোট;৯পৃ.)
কবিতাংশটি নাদিম মাহমুদের ‘নীল পাঁজর পুঁতেছি সরু গলিতে’ বইয়ের প্রথম কবিতার। সুইসাইড নোট কবিতাটি দিয়ে শুরু বইটি পড়তে গিয়ে যে কেউ থমকে দাঁড়াবে আত্মোপলব্ধিতে ঠেঁস দিয়ে; মনে হতে পারে নৈরাশ্যবাদীর যে-রকম ধারণার কিছু বয়ান, কেউ কেউ শিরোনাম দেখে বইটি বুকশেলফে তুলে রাখবেন; কিন্তু পড়া শুরু করলে বুঝবেন নাদিম মাহমুদের কবিতায় বিশেষ টিউনিং আছে, যেটা আপনাকে আরেকটা পথে নিয়ে যাবে; কেননা আমার মনে হয় কবির চোখ আলাদা রকমের- একজন কবির চোখ-ই সৃষ্টির সৃজিত সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে পারেন, অন্যরা কেবল হাতড়ে বেড়ায় আর খাওয়াদাওয়ার ঐ সংযোগ ঘটিয়ে যায় কেবল; নাদিম মাহমুদের বুঝ আর কবিতার টার্নিং চমৎকার, সহজ-সরল যাপিত বাস্তবতার মধ্যে শব্দের মার্জনা কবির কাছে সমর্পিত-
মানুষ কতটুকুই বা জানে!
ঘুম ভাঙার আগেই সব পুড়ে ছাই।
বেদুইন রোদ!
ফালি ফালি করে পুড়িয়েছে
আমাদের ঘুমন্ত শরীর।
সাপের মতোই মুচড়িয়ে মুচড়িয়ে
ছটফট করেও কী কোনো কূলকিনারার
সন্ধান মিলেছে!
মাঝিরা কই?
রাত দুপুরে, নদীর বুকে নিঃসঙ্গ গানের সুর?
কোথায় হারিয়ে গেল!
জল আর বৈঠার তুমুল শব্দ কোথায়?
অর্গানিক?
মাথার ওপর দিয়ে মানুষের কাফেলা
কোথায় ফিরছে সব, কৃত্রিম?
মাশুল দিতে হবে
সবকিছু বিদ্রোহ করবে
পার পাবে না কেউ।
- বেদুইন রোদ;১০পৃ.)
০২.
নাদিম মাহমুদ কবিতা’কে লেখেন এটাই বড় কথা, কবিতা’কে পাওয়া যায়; এখন বলতে পারেন- কবিতা কি? এটা একেকজনের কাছে একেকভাবে ধরা দেয়- কবিতা কী শুধু অনুভবের তীব্রতর উৎসাহী উৎসব? বায়বীয় এক মাধ্যম তবে কালি কাগজে মুদ্রিত হয়ে যে সৃজিত সৌন্দর্য সাধন করে এরপরে জ্ঞান আর বোধের সমন্বয়ে কবিতার বিভিন্ন অলংকারে পরিবেশনে একেক কবি একেক কবি থেকে আলাদা হয়ে যায় বরঞ্চ আলাদা হয়ে যাওয়াটা প্রথম শর্ত মনে করি; এখানে নাদিম মাহমুদ নিজের মতিগতি কোথায় সেট করেছে সেটি আমার জানবার কথা নয়- নাদিম মাহমুদে কবিতা আছে সেটি বলবার সময় এখন, তবে নাদিম মাহমুদেরই কবিতা সেটি সময় বলুক;
নাদিম মাহমুদের কবিতায় রসালো তেজ আছে কিন্তু পরিশীলিতভাবে উপস্থিত, ধাক্কাধাক্কির ব্যাপার নেই এটিই আশার কথা। উদীয়মান তারকা প্রকাশক রহিম রানার জাগতিক প্রকাশন থেকে প্রকাশিত ‘নীল পাঁজর পুঁতেছি সরু গলিতে’ বইটির নামকরণেই নাদিম মাহমুদের কবিতার মর্ম কথা ইঙ্গিত দেয়; নীল বিষে ছেঁয়ে যাওয়া পাঁজর পুঁতে দিয়েছে সরু গলিতে নাদিম মাহমুদ অর্থাৎ বিষে জরজর পাঁজরের সহজ সরল বয়ানে ভাবিত জ্ঞান তুলে ধরতে কোনও কার্পণ্য করেনি; এখানেই একজন কবির চারিত্রিক বাহাদুরি, যা বলতে চায় বলতে পারার সাহসিক সৌন্দর্য –
নদী দেখলেই ভেসে যেতে ইচ্ছে করে গন্তব্যহীন অন্তিম আশ্রয়ে
- নিয়তির হাসি;৮২ পৃ.)
খ.
হিসাব করে দেখি জীবন বেহিসেবী! শূন্যতা ছাড়া খাতায় কিছুই লিখতে পারিনি।
- নীল নিষিদ্ধ ভাষা; ৮৭পৃ.)
গ.
মানুষের কোনো বিজয় দিবস নেই
বিজয়ের খামে লেখা ছিল পরাজয়ের নতুন গান।
- আগন্তুক; ৯৬পৃ.)
ঘ.
ও-রাত, আমি তোর ভাসমান প্রেমিকের কসম খেয়ে বলি
যতদিন বেঁচে আছি তোর নামে শিরোনামহীন ফিচার লিখবো।
- ভূপাতিত ভালোবাসা; ১১পৃ.)
শেষে এসে বলি নাদিম মাহমুদের কবিতা পড়া উচিত, নাদিম মাহমুদের কবিতা আপনাকে একটা পথ দেবে- যে পথে ভালোবাসিবার বদনাম রটে গেছে!
//
নীল পাঁজর পুঁতেছি সরু গলিতে
নাদিম মাহমুদ
জাগতিক প্রকাশন
ফেব্রুয়ারি ২০২৪