আমান আবদুহু
দিল্লির গোলাম মাহফুজ আনাম গত পনেরো নভেম্বর, চব্বিশ একটি কলাম লিখেছে, শিরোনাম “সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের দায়মুক্তির অবসান: মুক্ত গণমাধ্যমের নতুন প্রতিবন্ধকতা”। কি বুঝা যায় এই বাক্যে? কিছুই না। এইটা মাহফুজের স্টাইল। সহজ শব্দে কঠিন অর্থের ইশারাবাহী সম্পূর্ণ নিরর্থক কথা বলা। তবে তারপর সে লেখার ভেতরে আসল বিষ উগড়ে দেয়। যেমন এই লেখাতে সে বুঝিয়েছে, বাংলাদেশে সাংবাদিকতা বর্তমানে সবচেয়ে দুর্দিনের ভেতর আছে।
তবে গত পনেরো বছরের ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা ও চর্চায় সাংবাদিকদের ভূমিকা কতটুকু ছিলো, তা নিয়ে মাহফুজের কোন কথা নাই। ঐ প্রসঙ্গে সে বোবা। তখন তার মুখের ভেতর শেখ হাসিনার কিছু একটা ভরা থাকে।
এই মাহফুজদের পরিচালিত দিল্লিস্টার অফিসের সামনে প্রতিবাদ কর্মসূচী নিয়ে বিভিন্নজনের বিভিন্ন মতামত দেখা যাচ্ছে। গণমাধ্যমের কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ না কি হুমকি ব্লা ব্লা ব্লা।
বাংলাদেশের মানুষ সাধারণত পশ্চিমা দুনিয়াকে সভ্যতার মাপকাঠি মনে করে। সেই পশ্চিমা দেশগুলোতে কি পত্র-পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলের অফিসের সামনে প্রতিবাদ করাকে অধিকার মনে করে, না কি গণমাধ্যমের উপর হামলা মনে করে? প্রটেস্ট ইন ফ্রন্ট অফ সিএনএন হেডকোয়ার্টার লিখে সার্চ দেন। বড় বড় ঘটনা আছে। এমনকি প্রতিবাদকারীরা সিএনএন অফিসে ঢুকে ভাঙচুরের ঘটনাও আছে। বিবিসি অফিসের সামনে প্রতিবাদ তো নিয়মিত ঘটনা।
যারা বলে গণমাধ্যমের অফিসের সামনে প্রতিবাদ করা যাবে না, তারা হয় গোলাম মানসিকতার। গোলামী তাদের রক্তে মিশে গেছে। অথবা তারা বাংলাদেশের মানুষকে গোলাম বানিয়ে রাখতে চায়। কিন্তু নিজেরা ঠিকই বিদেশের সুবিধা উপভোগ করে। আরব্য দুনিয়াতে কিন্তু আপনি এই প্রতিবাদ করতে পারবেন না। তো সেই আরব সংস্কৃতি অন্য কিছুতে চর্চা করতে গেলেই আবার এই পোগতিশলীদের অনেক কষ্ট শুরু হয়। মানে হলো যখন যেইটা সুবিধা সেইটাই আর কি। এইটাই হলো জগাখিচুড়ি বাঙু মনন।
২.
দিল্লিস্টারের সামনে গণজুম্মার বিষয়টার প্রতীকী গুরুত্ব আছে। ভারতপ্রভুদের সেবক প্রথম কালো এবং দিল্লিস্টার হলো বাঙালি মুসলমানের স্বার্থ, অধিকার এবং মর্যাদার শত্রু, এ বিষয়টা ওখানে নামাজ আদায়ের মাধ্যমে পরিস্কার বুঝানো হয়েছে। মঙ্গলপ্রদীপ দেখলে ওদের সুখ হয়, নামাজ দেখলে জ্বলে। আপনার শত্রুর যেখানে জ্বলে, সেখানে তো মরিচ ঘসতেই হবে।
তবে আমার মতে জুম্মা আদায়টা একটু নরম কর্মসূচী হয়ে গেছে। এতে করে তাদেরকে আসলে কিছুটা সম্মানও দেয়া হয়ে গেছে মনে হয়। তাছাড়া জুমার নামাজের কিছু নির্দিষ্ট ধর্মীয় উদ্দেশ্য এবং শর্ত আছে। এগুলো প্রতিবাদের সাথে যায় না। বরং কোন কোন ক্ষেত্রে জুমা না পড়াটাই প্রতিবাদ। দিল্লস্টাররা যে ধরণের শত্রু, আমি হলে নামাজের বদলে বরং গণহাগুর কর্মসূচী দিতেই পছন্দ করতাম। অন্ততপক্ষে গণমুতু। তবে সবাই প্রকাশ্যে হাগুমুতু ইত্যাদি করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে না, এছাড়া অনেকে হয়তো ধর্মীয় কিছু পালন করতে চাইবেন, সেক্ষেত্রে দিল্লিস্টারের সামনে তাদের জন্য গণমুনাজাতের কর্মসূচী ভালো হতো। চিন্তা করে দেখেন তাদের অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে মাইকে চিৎকার করে দোয়া করতেছেন, ইয়া মাবুদ, ভারতের কুকুর মাহফুজ আনামকে আপনি ভালো করে দিন, মোদীর শুয়োর মতিউর রহমানকে আপনি মানুষ হওয়ার তওফিক দান করুন — কত সুন্দর হতে পারতো ব্যাপারটা।
যাইহোক, কথা হলো, যা হইছে ভালোই হইছে। তবে আরো ভালো হতে পারতো আর কি। মতি-মাহফুজ কিন্তু আপনার-আমার মতো গবেট না। তারা প্রচুর ধুরন্ধর। বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ নামাজ কর্মসূচীকে জঙ্গি বানাতে গেলে তাদের পায়ের নিচে মাটি থাকবে না এইটা তারা আপনাদের চাইতে অনেক বেশি ভালো জানে। জানে বলেই তারা বায়তুল মোকাররমের খতিবের পায়ের কাছে বসে চাটাচাটি শুরু করে দিয়েছিলো যখন ঠেকা পড়েছিলো। ওদের দৌড় ওরা নিজেরা ভালো বুঝে, নিজ থেকে তাদেরকে বেশি ক্রেডিট দিয়েন না। দালাল শেষ পর্যন্ত দালালই।
৩.
পুলিশ হলো কুকুর। সে মালিকের ইশারা অনুসারে কামড়ায়। আগে মালিক ছিলো শেখ হাসিনা। এখন মালিক প্রথম আলো-ডেইলি স্টার। সুতরাং এখন প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টার গংকে থামানোর জন্য ট্রিটমেন্ট দিতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ কুত্তালীগকে তাড়িয়ে দিয়েছে। একটু চিন্তাভাবনা করে কর্মসূচী দিলে প্রথম কালো এবং দিল্লীস্টারকেও তাড়ানো অসম্ভব হবে না। তাদের অফিস সারা দেশ জুড়ে আছে। তাদের সাংবাদিক নামের কুত্তাবাহিনীও সারা দেশ জুড়ে আছে। সুতরাং তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের কাজগুলো শুধু ঢাকায় না রেখে কি সারা দেশে করা যায় না? শুধু এই দুইটা পত্রিকাকে বর্জন না, বরং এ দুইটা পত্রিকা যে কিনে এবং পড়ে, তাকেও বর্জন করেন। এ দুই পত্রিকার সাথে সংশ্লিষ্ট সব কিছুকে বয়কট করেন। এ পত্রিকাগুলোতে যারা বিজ্ঞাপন দেয় তাদেরকে বয়কট করেন। এ দুই পত্রিকার পক্ষে যে রাজনীতিবিদ কথা বলবে তাকে লাত্থি দিয়ে বের করে দেন আপনার অধিকারের জায়গা থেকে। বয়কট করা তো যে কোন মানুষের নাগরিক অধিকার। বাংলাদেশে কি অধিকার এখনো দূরবর্তী চিন্তা? মাহফুজ মতি হলো শেখ হাসিনার প্রেতাত্মা। হাসিনার যে ঘৃণা প্রাপ্য, এই দুইটারও একই ঘৃণা প্রাপ্য। আসিফ নজরুলরা যেহেতু ক্ষমতায়, বাংলাদেশের মানুষকে আরো পরীক্ষা দিতে হবে।