ওমর বিশ্বাস
লেখা শুরু হলো রুবাইয়াৎ
………
আমার রুবাই লেখার ৫০তম রুবাই পূর্ণ হয়েছে ২৪ এপ্রিল ২০২৪ তারিখে। প্রথম লেখা শুরু করেছিলাম ২০১৯ সালে। ‘রুবাইয়াৎ-ই-ওমর বিশ্বাস’ নামেই সেই শুরু থেকে লিখছি। ৬ জুলাই ২০১৯ সালে প্রথম লেখাটি লেখা হয় ‘রুবাই’ বা ‘রুবাইয়াৎ’ এর উপর অনেকটা আগ্রহ নিয়ে। কবিতা যেহেতু লেখি, আর বিভিন্ন ফর্মে লিখি, রুবাই সেগুলোর অংশ হিসেবেই লেখা শুরু। এর আগে যে রুবাই লিখিনি তা নয়, তবে সেগুলো ছিল বিচ্ছিন্ন আর সংখ্যায় কম। এভাবে রুবাই সিরিজ হিসেবে শুরু করার পর শুরুর দিকেই এর একটা উদ্দেশ্য সামনে দাঁড় করে রেখেছিলাম। আর এ অর্ধশতক পূর্ণ হওয়ার কাছাকাছি পথে এসে মনে হলো এই অর্ধশতকের জন্য একটি ভ‚মিকা লেখার দরকার। এতদিনে তো একটা অনুভ‚তির অভিজ্ঞতা হয়েছে এই রুবাই নিয়ে। সেটাকেই না হয় একটু অনুভূতির আকারে লিখে রাখি।
রুবাই কি রুবাই কে
…………….
রুবাই কি? সম্প্রতি এক কিশোর আমার রুবাই সিরিজ দেখে জানতে চেয়েছে, রুবাই কে? আসলে রুবাই কবিতার একটি বিশেষ ফর্ম। রুবাইকে রুবাইয়াৎও বলা হয়। এই ‘রুবাই’ শব্দের মধ্যে একটা গূঢ় আকর্ষণ শক্তি আছে। এই নামের ভিতরও কেমন যেন একটা রোমাঞ্চ ভাব আছে। রুবাই কবিতার মতোই বিশেষ ফর্মে লেখা হয়। ‘রুবাই’ শব্দটি ফারসি। ‘রুবাইয়াৎ’ হচ্ছে বহুবচন। এটি একটি চারপদের কবিতা বিশেষ বা চতু®পদী কবিতা। ভাব থাকে একটি। এই একটি ভাবকে হৃদয়গ্রাহী করে তুলে ধরা হয় কবিতায়। এর ১ম, ২য় ও ৪র্থ লাইনের মধ্যে অন্তমিল থাকে আর ৩য় লাইন থাকে মুক্ত। যে কোনো ঢঙে রুবাই উপস্থাপন করা যায় এবং ভাবকে হৃদয়গ্রাহী করতে পারলে রুবাই হিসেবে তা উৎরে যায়। রুবাইয়ে প্রেম, রোমান্টিকতা আর আধ্যাত্মিকতা টানে বেশি। তাছাড়া দ্রোহ, আনন্দ, বিষাদ, আশা-আকাঙ্ক্ষার মতো যে-কোনো বিষয় হতে পারে।
মাত্রা বিন্যাস ও সৃজনে চলা
………..
এভাবে লিখতে লিখতে রুবাই নিয়ে কয়েকটি ভাবনা মাথায় ভর করে। এর মধ্যে একটি হলো, একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ রুবাই লেখা শেষ হলে সেগুলো নিয়ে একটি বই করার চিন্তা। এরজন্য প্রাথমিকভাবে অন্তত ১০০টি রুবাই হলেই চলবে। সেটাকে মাথায় রেখেই এগুলাম। লেখা শুরু করেছিলাম ৪+৪+৪+৪ মাত্রা বিন্যাসের পঙক্তিতে। অক্ষরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত ও স্বরবৃত্তের যে-কোনো বলয়ে থেকেই এই কাজটি স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে করার চেষ্টা করা হয়েছে। কয়েকটা লিখার পর সিদ্ধান্ত নিলাম এই বিন্যাসেই (৪+৪+৪+৪ মাত্রা) প্রথম ৫০টা পূর্ণ করব। এতে কোনো অতিপর্ব থাকবে না। এই চালটা ঠিক রাখাই ছিল দ্বিতীয় উদ্দেশ্য যাতে করে আমার রুবাই একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যময় হয়ে উঠতে পারে। তারপর ছেড়ে দেবো মাত্রার এই চাল। উন্মুক্ত থাকবে মাত্রার চাল ও এর পর্ববিন্যাস। তখন বিভিন্ন বিন্যাসে পঙক্তি সাজাবো, ইচ্ছেমতো। প্রয়োজনে ছন্দপ্রকরণ থেকেও উন্মুক্ত হবে। অর্থাৎ গদ্য ভঙির ব্যবহারও হতে পারে। সেটা নিয়েও পরীক্ষা-নীরিক্ষা হবে। এভাবেই অর্ধশতক রুবাইয়াৎ লেখা হয়েছে। পুরাটাই বিভিন্ন ছন্দে ৪+৪+৪+৪ চালে লেখা। এই চার মাত্রার চার পর্বেরও একটা উদ্দেশ্য ছিল। তা হলো, যেহেতু রুবাইকে চার লাইনের কবিতা হিসেবে চতুষ্পদী কবিতা বলা হয়, তাই রুবাই যে ছন্দেই লেখা হোক না কেন এর পর্ববিন্যাসও চারের চারটি চালে থাকবে এবং এর কোনো অতিপর্ব থাকবে না। এই বিন্যাস রীতিতে আল্লাহর রহমতে সেই চলার মধ্যে দিয়ে এই ৫০টা রুবাইয়াত পূর্ণ হয়েছে এবছরের (২০২৪) এপ্রিলের ২৪ তারিখে। এভাবে ধাপে ধাপে চিন্তা আর পরিকল্পনা সামনে এসে দাঁড়িয়ে যায়, চলতে থাকে সৃজনে চলা।
রুবাইয়ের ছন্দ
…………..
ওমর খৈয়ামের হাত ধরেই এদেশর মানুষ রুবাই সম্পর্কে বেশি জানে। নজরুল ওমর ষৈয়ামের রুবাইয়াৎ অনুবাদ করেছেন। কিন্তু তার নিজের কোনো রুবাই পাওয়া যায় না। রুবাই এর মধ্যে একটা আকর্ষণ আছে। পাঠক তার ভিতর একটা তৃপ্তি অনুভব করে। ওমর খৈয়ামের রুবাই কি ছন্দে লিখেছেন তার ব্যাখ্যা সেভাবে পাওয়া যায় না, অন্তত আমার চোখে পড়েনি। কিন্তু আমরা যারা রুবাই লেখি তারা বাংলা কবিতা ছন্দের বিভিন্ন ছন্দ ব্যবহার করে থাকি। নজরুল কোনো নির্দিষ্ট ফর্মে অনুবাদ করেননি।
রুবাই কি ছন্দে লেখা হয় তার কোনো আনুষ্ঠানিক নিয়ম-কানুন নাই। রুবাই কি? সেটা বোঝার মতো সংজ্ঞা পাওয়া যায়। কিন্তু এর ছন্দ মাত্রার সুনির্দিষ্ট গাইড লাইন বাংলা ভাষায় পাওয়া যায় না। আগেই স্বীকার করে নিচ্ছি যদি পাওয়া যায় তাহলে সেটা আমার জন্য বেশ ভালো হবে (একই সঙ্গে এই আলোচনায় যে-কোনো তথ্যগত ভুল থাকলে) এবং আমি সেটা কাজে লাগানোর চেষ্টা করব, যদি কেউ জানায় এবং আমার অজানাকে সাহায্য করবে। মূল ফারসীতে হয়ত একটা ছন্দপ্রকরণ থাকতে পারে। সেটাও আমার কাছে পরিষ্কার নয়। সেরকম ফ্রেম আমাদের দেশে নাই, থাকলে হয়ত আলোচিত হতো। এটা কিছু বিষয় ঠিক রেখে মোটামুটি চার লাইনে কতক বৈশিষ্ঠ্যপূর্ণ হলেই হলো।
রুবাই যে কোনো ছন্দে লেখা যায়। পর্ব সংখ্যা এখানে অনির্দিষ্ট। অতিপর্ব থাকতেও পারে নাও পারে। আগেই বলেছি তারপরও বোঝার সুবিধার জন্য বলা যে, সবকিছুকে ঠিক রাখলে এর পর্ব বিন্যাস চারটা চারে হলে মানানসই হয়। সেই হিসেবে আমি প্রথম ৫০টি পরিকল্পিতভাবে একই ছন্দ গাঁথুনি ঠিক রেখে লেখার চেষ্টা করেছি। সেজন্যই আমি প্রথম ৫০টি রুবাই এ এই চারের চারটি পর্ব রেখেছি। রুবাই এমনিতেই চার পঙ্ক্তির কবিতা। তার উপর চার মাত্রা করে যদি চারটি পর্ব থাকে — সবখানে চারের আধিক্য বেশ প্রবল হয়ে ওঠে। এতে চার মাত্রার চার পর্বের চার লাইনের একটি চমৎকার গাঁথুনি দাঁড় করানো যায়। এই পরীক্ষাই এই অর্ধশতের ভিতর আমি সার্বক্ষণিক বজায় রেখে রুবাইকে গুণমানে বলিষ্ট করতে চেয়েছি। এতে কোনো অতিপর্ব রাখিনি। আর ছন্দ স্বরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত ও অক্ষরবৃত্ত ছন্দের যখন যেটা এসেছে কবিতার প্রয়োজনে তখন সেটাতেই নিবিষ্ট হয়েছি। আমি ৫০টি রুবাই লেখার পর ৫০ থেকে মাত্রার বিন্যাস আর ছন্দের চাল উন্মুক্ত করে দিয়েছি। এখন একেকটা একেক রকম ভাবে লেখা হচ্ছে। গদ্যরীতিও অনুসরণ করেছি। এখানে মাত্রা সংখ্যার ঠিক নেই, এটা ঠিক, তবে যে কোনো ছন্দে লিখলে সে ছন্দের চাল ঠিক রাখা ভালো। মাত্রা, পর্ব, অতিপর্ব কবিতার গঠনকে সুরক্ষিত করে পরিচালিত করে। আমি সেটাই চেষ্টা করেছি অর্ধশতকে, প্রতি লাইনে চার পর্বের মাত্রা চাল ঠিক রাখার– স্বরবৃত্ত অক্ষরবৃত্ত বা মাত্রাবৃত্ত বৃত্তের বলয়ের ভিতর থেকে।
রুবাইয়াতের আকর্ষণ এবং ১ম ও ৫০তম রুবাইয়াৎ
…………..
কিন্তু রুবাই কেন মানুষকে আর্কষণ করে, এর ভিতর একধরনের ঝংকার থাকে যা মানুষকে হৃদয়ের গভীরে নিয়ে গিয়ে টান দেয়। সেই টান থেকে হয়ত লেখার দিকে ঝুঁকে পড়েছি। এর মধ্যে দিয়ে সুন্দর একটা কাঠামোগত অবয়বের ভিতর দিয়ে অল্পে অনেক অভিব্যক্তিকে ব্যক্ত করা যায়। এই স্বল্প চার লাইনের ভিতর গভীর দ্যোতনা থাকে যা কাব্যিক হলে মানুষের হৃদয়ের মর্মমূলে গিয়ে পৌঁছায়। তা এমনভাবে আকৃষ্ট করে যে সেই ভাষা, শব্দ আর বাক্যর জন্য সে অপেক্ষা করছিল। তখন রুবাই হয়ে ওঠে অদম্য।
আমার ১ম ও ৫০তম রুবাইয়াৎ এখানে তুলে ধরা হলো:
১.
হৃদয় নদীর তীরে বসে দৃষ্টি ভরা ফুলের মেলা
দেখছি আমি দুচোখ ভরে হৃদয় জুড়ে সারাবেলা
হাজার ফুলের মধ্যমণি, কে আপনি? আমার প্রিয়া!
তুমি সে ফুল স্নিগ্ধ স্বপন্ জয় করেছি হৃদয় খেলা।
(০৬ ০৭ ২০১৯)
৫০.
ওমর বলে শব্দ নিয়ে ছন্দ তোলে কাব্য লেখে!
ভালোই আছি জানান দিয়ে যাচ্ছি বলে – তারাই দেখে
হচ্ছে কিনা কিচ্ছুটি তা বলছে না তো — ভাবনা থাকে
মনের কলি বিশ্বাসের নাভির মূলে চিহ্ন রেখে।
(২৪.০৪.২০২৪)
প্রথম যখন লেখা শুরু করি কয়টা লিখবো তার কোনো টার্গেট ছিল না। তবে কয়েকটা লেখার পরে মনে হলো অন্তত ১০০টা পূরণ করতে পারলে ভালো। এতে একটা বইও সুন্দর করে করা যায়। এখন কিছু দিন পরপর যেভাবে লিখছি তাতে বেশ সময়ও লেগে যায়। তাই আপাতত ১০০টাই টার্গেটে স্থির করাকেও অনেক বিলম্বিত মনে হয়। প্রতিদিন লিখতে পারলে হয়ত এতদিনে অনেক হয়ে যেত। কিন্তু আমার লেখায় একটার পর আরেকটার সময় গ্যাপ মাসখানিকও পেরিয়ে গেছে। ১০০টা তো অনেক দূর! এর মধ্যে মনে উদয় হয় কত চিন্তা। ৫০টা কবে পূর্ণ হবে, ৫০টা কিভাবে লিখব, কেমনে লিখবো? — এসব চিন্তাকে সামনে রেখে শেষ পর্যন্ত যাওয়া কঠিন। এর জন্য ধৈর্যচ্যুতি ঘটে বারবার। তাড়াহুড়ো এসে যায়। চাইলেই তো আর লেখা যায় না। আসলে ভালো মানের ভালো লাগার মতো যে কোনো ধরনের কবিতা পরপর অনেকগুলো লেখা কঠিন। আমার একটা সুবিধা হয়েছে, তাড়াহুড়ো করিনি। তবে নিয়মিত গ্যাপ পড়েছে স্বাভাবিকভাবে লিখতে গিয়ে।
একাধিক অনুভূতি
…………..
এরকম চিন্তার ভিতর ঘটনাচক্রে এর সাথে একাধিক বিষয় জড়িয়ে যায়, যা আমাকে অভিভূত করে। আমাকে এই রুবাই লেখার জন্য আরো শক্তি জোগায়। আল্লাহর নাম নিয়ে যে কাজ শুরু করেছিলাম তা আরো গতিপ্রাপ্ত হয়ে আমাকে আরো অনুপ্রাণিত করে। এই সময়ের মধ্যে অনেকে এটা সিরিজি নিয়ে বই বের করার কথা বলে, বই বের করার কথা আমিও চেপে যাই। কেউ সিরিজ চালিয়ে যেতে বলে, কেউ অপেক্ষায় থাকে পরেরটা কবে দেব। আমি এসবের ভিতর দিয়ে তাদের অনুভ‚তিকে শ্রদ্ধা ও মর্যাদার সাথে নিরবে সমর্থন জানাই। যদিও সবটুকু তার বুঝতে দেই না।
কাজ শুরু করলে পরিকল্পনা দাঁড়িয়ে যায়। বিশ্বাস করি কোনো কাজই বৃথা যায় না। আমি আমার কাজের মাধ্যমে একজনকে হলেও আনন্দ দিতে পারছি। তার অনুভ‚তিতে নাড়া দিতে পারছি। সে সাড়া দিচ্ছে।– এই প্রাপ্তিই বা কম কি? অনেকজন বই বের করার কথা বলেছেন। সবগুলো রুবাই নিয়ে আমারও ইচ্ছা আছে। আর যেহেতু লেখালেখি করি বইও একটা গন্তব্য। তাই বই প্রকাশের চেষ্টা সকল লেখকেরই থাকে আমারও আছে। এটা মনে পোষণ করে রেখেছি সেই শুরু থেকে, যখন থেকে একটা একটা করে লেখা শুরু করলাম আর আগ্রহ ও অপেক্ষার গুরুত্ব উপলব্ধি করলাম, সে সব কাউকে ওভাবে আর বলিনি সেটা আগেই উল্লেখ করেছি।
দুটি বিশেষ উৎসাহব্যঞ্জক দিক
……………
লিখতে লিখতে এপর্যন্ত এনেছি। কিন্তু রুবাইয়াৎ কি সহজ জিনিস? এ প্রশ্ন এসে যায়। তবে কঠিনও না। এরজন্য একাগ্রতা থাকতে হয়। রুবাইয়াতের একটা ফর্ম আছে। যে কবিতা লিখতে জানে সে রুবাইয়াৎ লিখতে পারে। মানুষ তো লিখছে। রুয়াইয়াতের মান কেমন হবে সেটা পাঠক, সমালোচক বলবে। তবে রুবাইয়ের জন্য কবির গভীর আত্মমগ্নতা থাকতে হয়। লিখতে লিখতে নানা জায়গা থেকে সাড়া পাই। যার ফলে এগোতে সাহস পাই। বিরতি পড়লেও আবার ট্রাকে উঠতে পারছি– এই বড়। কেননা সাহিত্যের অনেক ক্ষেত্রে কিছু কিছু গ্যাপ পড়েছে, তা এখনো ট্রাকে উঠাতে পারিনি। এক্ষেত্রে দুটি উৎসাহব্যঞ্জক ঘটনা আমার মাথায় সবসময় কাজ করে। দুই জন ব্যক্তির স্বতঃস্ফূর্ত উৎসাহ ও সমর্থন প্রবলভাবে পেয়েছি ইতোমধ্যে। তাদের উৎসাহ পেলাম, অনেকের পরামর্শ পেলাম, সাহস বেড়ে গেল। ছন্দ উপকরণ বিষয়বস্তু নিয়ে ভাবতে হয় নিয়মিত। কবিতা আসেও না সব সময়। সেসবই প্রেরণা রুবাইয়ের চলার গতিতে উৎসাহ যুগিয়েছে।
আমার অত্যন্ত প্রিয়ভাজন ছোটবেলার ছোটভাই রেদওয়ান হাবীব এর মধ্যে একজন। তার চোখ যেদিন থেকে আমার রুবাইয়ের উপর পড়েছে সেদিন থেকে আর একটাও মনে হয় তার চোখ এড়ায়নি। সে নিয়মিত পাঠক হিসেবে রুবাইয়াৎ পড়ছে এবং প্রতিটি রুবাইয়াতে মন্তব্য করছে– এতে আমি দারুণ আনন্দিত হই ও পুলক অনুভব করি। উৎসববোধ করি তার অপেক্ষার জন্য। ফলে আমার রুবাইয়ের চর্চা আরও গতিপ্রাপ্ত হয়। সে আমাকে পরবর্তী রুবাইয়ের জন্য তাগিদ দিয়েছে। এখনো সে পরেরটার জন্য অপেক্ষা করে। কখনো বিলম্ব হলে সে অন্য কোনো প্রসঙ্গে স্বপ্রণোদিত হয়ে রুবাইয়ের কথা জানিয়ে মন্তব্য করেছে।
অনেক সময় এক একটা রুবাই লেখে তার কথা মনে করেছি এর মধ্যে এসে পড়েছেন আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু ভাই। একজন খ্যাতিমান সংবাদিক, সাহিত্যিক, অনুবাদক। তিনি কলম ধরলেই লিখতে পারেন। সম্প্রতি তিনি লিখেছেন, ‘রুবাইয়াৎ-ই-ওমর খৈয়াম’ ও সাম্প্রতিক রুবাই চর্চা– শিরোনামে একটি প্রবন্ধ। দারুণ চমৎকৃত হয়েছি সেই প্রবন্ধ দেখে। তিনি সেখানে উলে¬খ করেছেন, “আমি বাঙালি কবি বন্ধুদের যে রুবাইগুলো পড়ছি এবং আগে যাদের রুবাই পড়েছি, তাদের কয়েকজনের ‘রুবাই’ এর সঙ্গে আমার কবি বন্ধু ছাড়াও কবিতাপ্রেমী বন্ধুদের পরিচয় করিয়ে দিতে প্রত্যেকের একটি করে ‘রুবাই’ উপস্থাপন করছি। আশা করি তারা আমার কবি বন্ধুদের ‘রুবাই’ সম্পর্কে জানতে পারবেন।”
এরপর তিনি আমার কয়েকজনের সাথে আমার একটি রুবাই তুলে ধরেন।
“প্রশ্ন ছিল মনের ভিতর যাচ্ছি কোথায় মাতাল সুরে
স্বপ্নভূমি ছুঁয়ে দিলাম সুখের বিলাস একটু দূরে
থাকবে পড়ে ভোরের শপথ কল্পনা ও আলপনা মন
ত্যাগের নদী শব্দ কাটে নিঃসঙ্গতায় আপনি ঘুরে।”
প্রবন্ধের শুরুতে তিনি “এ মুহূর্তে আমি আমার ঘনিষ্ট তিনজন কবির ‘রুবাই’ পাঠের সুযোগ লাভ করছি” উল্লেখ করে তিনি আমাকে সংযুক্ত করে কৃতার্থ করেছেন। আমার রুবাই তার মতো রুবাইপ্রেমিকের হৃদয় আকৃষ্ট করতে পেরেছে এটা আমার রুবাই চর্চার একটা আনন্দ, এ আনন্দ অন্তরের গভীর থেকে অনুভ‚ত হয়। আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞ। “আমাদের কাব্য প্রতিভার কাছেও তিনি আনত” বলে উল্লেখ করে আরো বেশি প্রেরণাদায়ক কাজ করেছেন।
এই দুটি বিষয় এখন আমাকে আরো বেশি করে টানে রুবাইয়ের দিকে। পঞ্চাশ ছুঁয়ে গেছে, আরো অনেক কয়টা লেখা হয়েছে। দেখি কতদূর যেতে পারি। সব মিলিয়ে রুবাইয়াৎ-ই-ওমর বিশ্বাস-এর অভিজ্ঞতা দারুণ।
২৫.১১.২০২৪