spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদগদ্যইফতেখার জামিলের পোস্টের সমালোচনা ও অন্যান্য

লিখেছেন : আবু তাহের তারেক

ইফতেখার জামিলের পোস্টের সমালোচনা ও অন্যান্য


আবু তাহের তারেক

১.
‘রোবায়েত আমাদের সময়ের একমাত্র বড় কবি….’ কথাটা বেশ আপত্তিকর। রোবায়েতের কবিতায় পূর্ববাংলার মুসলামানের নিত্যদিনের চিন্তা, ভাব, শব্দরাজী সেইভাবে আসে না, যেইভাবে আসে জহির হাসানের কবিতায়, এমনকি, মীর হাবিব আল মানজুরের কবিতায়। জহির হাসান উত্তর আধুনিক বাংলা কবিতায় সুফিবাদকে একটা সফল উপায়ে রোপিত করছেন। (আমাদের অনেকের কথা না বলি। আপনারা কবিতায় নিউ টেকনিক খুব একটা নিতে পারেন নাই বলেই, রোবায়েতের মডার্নিস্ট আপ্রোচের কবিতা পছন্দ করেন।)

রোবায়েতের কবিতা, মোটা দাগে, হয় না। সে শব্দের কাঁটার ভিতরে আটকে থাকে। সে বড়জোর কিছু ইমেইজ আর উপমা বানায়। ওর মইদ্যে ভাব নাই, বা অল্পই আসলে। এইটা সইত্য যে, ও ইসলামের মোড়কে কলকাতার মডার্নিস্ট সাহিত্যিক প্রবণতারে এইখানে মার্কেটজাত করে। (জাইনা, বা না জাইনা।) সাম্প্রতিক দুই একটা বইয়ে, তার মৈদ্যে কিছু নতুন প্রবণতা খিয়াল করা যায় যদিও।

তো, এইসবের অর্থ এই না, যে তার ভালা কবিতা নাই। এর অর্থ, ওরে যেইভাবে ইসলামের জায়গা হইতে রিড করা হয়, যেমন আপনে করলেন, এইটা খুব সলিড ক্রিটিকাল জায়গা না। অথবা, সে আমাদের কবিতায় কুনু বাঁক বদলও যে করতেছে, তাও বলব না। তার কবিতার ভাবে বা বর্ণনায় এমন আদেখলা বেপার নাই, যা আমরা আগেকার কারো কবিতায়ই পাইব না।

তা স্বত্ত্বেও, হাসান রোবায়েতের কবিতার প্রতি অনেকের বিরাগ আছে। এক, তার খ্যাতির কারণে। দুই, তার কবিতায় তথাকথিত মুসলমানি ইলামেন্টস থাকার কারণে। এইসব কারণে তার প্রতি সমালোচনা জারি রাখা অমূলক।

এছাড়া, বাকশাল বিরোধীতা তার মত আর কুনু কবিই, কবিতার জায়গা হৈতে এত তীব্রভাবে, এত দীর্ঘ সময় ধরে, করে নাই। ফলে, তার সমালোচনার পাশাপাশি, তার অর্জনের জায়গাও অল্প নয়। কিন্তুক, সেইগুলার এপ্রেসিয়েশন সে খুব একটা পাইছে, তা মনে হয় না।

২.

কবিতার লাগি রোবায়েতের লাইফের এইসব কুরবানি দিয়া আপনে কবিতা বিবেচনা করতে পারবেন না। হয়ত, এই স্যাক্রিফাইসগুলারে, প্যাসিভ বিবেচনায় রাখতে পারবেন।

মুসলমানি উপাদান নিয়া বলি–

পুব বাংলার ভাষায় কৃষকের জবানই মূলত (পুব বাংলার) মুসলমানরে বেশী রিপ্রেজেন্ট করে। এইখানকার গরীব্দের ভাষাই কওমের খাস ভাষা। এইখান হইতে কতিপয় আরবি ফার্সি শব্দরে আলাদা করি ‘টুপ্পি পিন্দানো’ ওয়াইজ বেপার না। এই ক্ষেত্রে, মুসলমানি উপাদান যদি বলতেই হয়, ‘ইসলামি টার্মিনলজি’গুলারে হয়ত তা বলতে পারবেন।

আমার কথা হইল, রোবায়েতের কবিতায় পুব বাংলার মুসলমানের জবান, গড়ে, খুব একটা আসে না। (ইদানিংকার কিছু কবিতা বাদে।) এদিকে, ইসলামি টার্মিনলজি নিয়া আসলেই যে কবিতা হইয়া যায়, তাও না। আল্লা খোদা, নবী, নামাজ ইত্যাদি নিয়া আমাদের ভাষায় অজস্র সফল সাহিত্য আছে:

আমি যাইমু ও যাইমু আল্লারও সনে..
আগে চিনো মুহাম্মদি নূর..
নামাজ আমার হইল না আদায়..
আল্লার নাম নিলাম না রে, দিলে গোমান করি..
আরে ও মদীনা যানে ওয়ালা (কারী আমির উদ্দিন)
জপোরে মুহাম্মদের নাম জপো (কারী আমির উদ্দিন)

মাত্র কিছু নমুনা দিলাম, বাউল গানের ধারা হইতে। তো, রোবায়েত এইসব ইসলামি উপাদান দিয়া, সফল কবিতা খুব একটা করতেছেন, এইরকম আমরা মনে করি না।

এই জায়গায়, ইসলামের মর্ম ধারণকারী অসাধারণ কিছু কবিতা জহির হাসান লেখছেন। তিনি পুব বাংলার আম জনতার মুখের জবানের কাছাকাছি বুলিতে কাব্য করেন। এইটা দু:খের, যে আমরা জহির হাসানের গুরুত্বপূর্ণ কামগুলারে চিহ্নিত করতে পারতেছি না।

রোবায়েত ইসলামরে খুব একটা ফিলোসফির জায়গা হইতে বুঝেন না। অথবা, উনি লং টাইম মাদ্রাসার পরিবেশে কাটানও নাই। এছাড়া, উনার কবিতা আংগিকের দিক দিয়া মডার্নিস্ট। এই জায়গায়, মীর হাবিব আল মানজুরের কবিতায় ইসলামি উপাদান, ইসলামের লগে বুঝাপড়া বেশ ম্যাচিওর।

আমি সাজেস্ট করব, আপনে জহির হাসান আর মানজুরের কবিতা পড়েন। জহিরের বই অনলাইনে সফট কপি আকারে পাওয়া যায়। আমার বিশ্বাস, উনার বিখ্যাত কবিতা ‘আম্মার হাঁসগুলি’ আপনারে মুগ্ধ করবে।

এর বাইরে, রোবায়েতের মইদ্যে জাতীয় কবি হইয়া উঠার যে কুশিশ, আমি তারে রেসপেক্ট করি। তার কওমরে ধারণ করার কুশিশও রেস্পেক্টেবল। অবশ্য, ও এখনো পুব বাংলার মুসলমানের সংগ্রাম, ফিলসফি, হিস্ট্রি– এইসব ক্রিটিকালি পাঠ করার, বা আল মাহমুদ বা নজরুলের মত স্পিরিট ধারণ করার কছাকাছি কোথাও নাই। (দোয়া করি, সে অইমত বড় হউক।)

৩.
সাম্প্রতিক বাংলা কবিতায় জহির হাসানের মত গভীরভাবে আর কেউ ইসলাম ও মুসলমানের লাইফ নিয়া কাম করে নাই। এরপরে আরো অনেকের নাম আসবে। কিন্তুক, কেউ যদি মনে করে মুহাম্মদ মুহাম্মদ বইলা চাইর পাচশ লাইনের কবিতা লেখলেই সেইটা নিয়া লাফাইতে হইব, তাইলে পরে তাদের উচিত আমাদের সাহিত্যে ইসলামরে কিভাবে ডিল করা হইছে, তার একটু পাঠ নেওয়া।

৪.
মুসলমানের কবি হিসাবে মীর হাবিব আল মানজুর যথেষ্ট আন্ডাররেটেড। ওর কবিতার শক্তি হইল, পষ্ট ভাষায় কথা বলা। মিন মিনা আধুনিকতা তার আরাধ্য নয়। সে অবলীলায় বলতে পারে, ‘মুহাম্মদ, আমি ত কাজ্জাব হয়ে যাচ্ছি’, অথবা, মন ভারী করে খোদার কাছে মিনতি করে এই বলে, ‘আমার নামাজে নাই খুশু খুজু’। এইসব বলিষ্ট লাইন বলতে হইলে ইসলামের কতটুকু ভিতরে থাকার দরকার, তা সমঝদার পাঠক মাত্রই বুঝবেন। মানজুর সেই লোক যার কবিতার বই প্রকাশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিছিল তথাকথিত সেকুলার মহলের গুরুত্বপূর্ণ অনেকেই। মানজুরের তকদির আসলেই ভাল, যে তারে ইসলামি শব্দ ধারণকারী কবির তকমা বইতে হয় না। অথবা ইসলামি কবিও তারে কেউ বলে না। (আমার জানামতে।) ইসলামি শব্দ ধারণকারী কবিতা, আদতে অখাদ্য জিনিসই হইবার কথা। ইসলামি কবি জিনিসটাও, ফালতুই। একজন মুসলমান কবির কবিতায় তার যাপন, জবান ও কৃষ্টির আলাপ আসবে। এইটাই স্বাভাবিক। ইন ফ্যাক্ট, এখনকার কবিদের অনেকের লেখায়ই মুসলমানের দিনযাপনের চিত্র পষ্ট। এর বাইরে, ইসলামি শব্দ ব্যবহারকারী লেখক, ইসলামী লেখক ইত্যাদি ইত্যাদি টার্ম লেখকের জন্য আপদ বিশেষ।

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

নয়ন আহমেদ on কবিতাগুচ্ছ
নয়ন আহমেদ on মরুভূমি