spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদসাম্প্রতিকবিপ্লবের গ্রাফিতি : ফ্যাসিস্টের প্রতি ঘৃণার স্মারক

লিখেছেন : তাজ ইসলাম

বিপ্লবের গ্রাফিতি : ফ্যাসিস্টের প্রতি ঘৃণার স্মারক


তাজ ইসলাম

জুলাই বিপ্লবে রাজপথে,শহরের দেওয়ালে ছেয়ে গিয়েছিল গ্রাফিতিতে।গ্রাফিতি চব্বিশের আন্দোলনের নতুন প্রাণ সঞ্চারি সংযোজন।
গ্রাফিতি কি তা আর বলার প্রয়োজন পড়ে না।
অল্পকথায়
‘গ্রাফিতি হচ্ছে দেয়ালে বা যেকোনো সারফেসে র‍্যান্ডমলি আঁকা কোন চিত্র। সিম্পল কন্টেন্ট থাকবে, সিম্পল আঁকা থাকবে, কিন্তু পেছনের বোধটা থাকবে খুব গভীর। সহজ ভাষায় এটাই গ্রাফিতি।’
আন্দোলন মূহুর্তে গ্রাফিতি হল ফ্যাসিস্টের কুকীর্তির দেওয়াল চিত্র। সারাদেশে গ্রাফিতি এঁকে বিক্ষুব্ধ জনতার ক্ষোভ প্রকাশের আয়োজন করেছিল আঁকিয়েরা।
পনের বছর ক্ষমতায় ছিল ফ্যাসিস্ট হাসিনা।পালিয়ে যাওয়ার পরও প্রশাসনের স্তরে স্তরে রয়ে গেছে হাসিনার দোসর চক্র। তারা আগস্টের ৫ তারিখের পর সময়ে সময়ে গ্রাফিতি মুছে ফ্যাসিস্টের প্রতি মানুষের ঘৃণা চিহ্ন মুছে ফেলার অপচেষ্টা করছে।অনেক গ্রাফিতি মুছে ফেলতেও সক্ষম হয়েছে তারা। সম্প্রতি ঢাকা ভার্সিটির পাশে মেট্রোরেলের পিলারের গ্রাফিতিটি মোছার চেষ্টা করে।কিছু অংশ মুছেও ফেলে।এই গ্রাফিতিটি পালিয়ে যাওয়া স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার। শেখ হাসিনার ঐ গ্রাফিতিতে নিক্ষিপ্ত হয় শত মানুষের জুতা,ঝাড়ু,কাঁদা,গোবর। শেখ মুজিবের আরেকটা গ্রাফিতির পরিণতিও এমনই। এটি অবশ্যই হাসিনা প্রেমীদের জন্য লজ্জাজনক। গ্রাফিতি মূলত ঘৃণার চলমান প্রতীক। চলতি পথে মানুষের চোখে পড়বে আর ঘৃণা করবে।ভুলে যাওয়া মানুষকে বারবার স্মরণ করিয়ে দিবে। এজন্যই তারা চায় যতদ্রুত সম্ভব এগুলো মোছে ফেলা।চিহ্ন নিশ্চিহ্ন করে ফেলা।অপরপক্ষে আন্দোলনকারীরা বা জুলাই বিপ্লবের পক্ষের জনতা চায় গ্রাফিতি আছে,গ্রাফিতি থাকবে।কাউকে মুছতে দেওয়া হবে না।কেউ মুছে ফেললে আবার তা আঁকা হবে। হাসিনার গ্রাফিতিটি মুছে ফেলায় সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যপক প্রতিক্রিয়া হয়।এই লেখকও সকালে নিজের টাইমলাইনে পোস্ট করেন,

গ্রাফিতিগুলো মুছে ফেলা হচ্ছে। চিহ্ন নিশ্চিহ্ন করে ফেলার অসদুদ্দেশ্য নিশ্চয়ই।
গ্রাফিতি মুছে ফেলবেই তারা। কাজেই বিকল্প ব্যবস্থায় যেতে হবে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে গ্রাফিতি ওয়াল নির্ধারণ করে দিতে হবে। সেসব ওয়ালে গ্রাফিতি এঁকে নিষেধাজ্ঞা নোটিশ জারি করে রাখতে হবে।মোছা নিষেধ।

গ্রাফিতি স্তম্ভও করা যায়। অথবা অন্য কোন উপায়ে।গ্রাফিতি রাখতে হবেই। ভার্সিটি এড়িয়া,শাহবাগ,জিরো পয়েন্টে বড় আকারের গ্রাফিতি স্তম্ভ করা যেতে পারে।”
এটি একাধিক জনে শেয়ার করেন।

প্রতিবাদে ইনকিলাব মঞ্চের ফেসবুক পেইজে শরীফ ওসমান বিন হাদী লেখেন,
“এইখানে স্থায়ী একটা ‘ফেরাউন স্তম্ভ’ নির্মিত হবে ইনশাআল্লাহ।

ইনকিলাব মঞ্চ এর সঙ্গে যোগ দিলো সাংস্কৃতিক আন্দোলন

যাতে লেডি ফেরাউনের মুইছা দেয়া অবিকল পিছা-স্যান্ডেল খাওয়া ছবিটা অঙ্কিত থাকবে।”

কবি রহমান মাজিদ তার পোস্টে লেখেন, ‘
নাহ! পৃথিবীর কোন সৌন্দর্যই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কে পরিপূর্ণ করতে পারবে না। এমনকি পুরো বাংলাদেশকেও না। শুধুমাত্র একটি ছবি, হ্যাঁ এই একটি ছবিই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে এনে দিয়েছিল পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ গৌরব। বাংলাদেশকে এনে দিয়েছিল সূর্যের অপর পিঠে প্রজ্জ্বলিত আলোর দীপ্ত শিখা। তোমরা পুরো পৃথিবী নিয়ে যেতে পারো তবু মুছে দিতে পার না এই একটিমাত্র গ্রাফিতি। তোমরা হয়তো ভাবছো বড় কোন শিল্পীকে দিয়ে আঁকবে নান্দনিক কোন শিল্পকর্ম। ভিঞ্চি বা পিকাসোকে ডেকে আনতে পার কবর থেকে। বিশ্বাস কর এই ছবিটির মতো চোখ, নাক, কান, চুল, ভুরু, রক্ত, এর চার জমিনে জুতোর ময়লা ফুটকোনি এমনকি এর ভিতর দিয়ে প্রবাহিত গোপন সাহস আঁকতে পারে এমন কে আছে?

সুতরাং কথা ক্লিয়ার। পৃথিবীর কোন সম্পদকেই আমরা এর বিকল্প ভাবি না। এই ছবিই আমাদের লাগবে। অতি দ্রুত এই সৌন্দর্যকে তার পূর্বের জায়গায় প্রতিস্থাপন করতে হবে।,

তিনি তার বক্তব্যে আরও বলেন,’ আর যারা রাতের অন্ধকারে এই সৌন্দর্যকে মুছে দিয়ে বাংলাদেশকে আলোহীন করেছেন তাদের প্রকাশ্যে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। এটা যতদ্রুত করবেন তত বুদ্ধিমানের পরিচয় বহন করবেন।’

গ্রাফিতি মুছায় তীব্র প্রতিবাদ করেন কবি পলিয়ার ওয়াহিদ। তিনি লেখেন,
‘প্রতিবাদ স্বরূপ আজ সবাই এই ছবিটা প্রোফাইল করেন।
জনগণের আঁকা ছবি মুছে ফেলে তথাকথিত শিল্পকর্ম আমরা চাই না। খু নি র ছবি যে খনিকের পোলারা মুছে পরিস্কার করেছে তাদের হোলেও খুনির ছবি আঁকা হোক। মেট্টোরেলের উঁচু পিলারে নতুন করে গ্রাফিতি আঁকবে ছাত্র-জনতা। আর হে নিচুমহান ঢাবিয়ান ক্যাম্পাসটাও আপনারা বাপের মনে কইরেন না। বুকটা প্লিজ খোলা রাখেন। আবহাওয়া ভালো না! এইটা বুঝতে রকেট সায়েন্স লাগে?’
প্রতিবাদ,প্রতিক্রিয়ায় সোচ্চার ছিল জুলাই বিপ্লবের পক্ষের জনমত।
তাদের বক্তব্য গ্রাফিতি যত মোছা হবে তত আঁকা হবে।
জুলাই বিপ্লবে আঁকা গ্রাফিতি আন্দোলনের স্মারক।এগুলোতে ফোটে ওঠেছে মানুষের ক্ষোভ,ঘৃণা।পরাজিত শক্তির জন্য এগুলো অপমান স্বরূপ। তাই তারা চায় এসব লজ্জা, অপমানের চিহ্ন মুছে নিশ্চিহ্ন করে দিতে। বস্তুত গ্রাফিতি থাকলে আন্দোলন, বিপ্লবের চিহ্নগুলো জ্বলজ্বল করবে।আমজনতার চোখে ভাসবে স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে। ফ্যাসিস্টের নির্মমতার প্রতিচিহ্ন বহণ করে রাখবে গ্রাফিতি।গ্রাফিতি যেখানে যে অবস্থায় আছে সে অবস্থায় সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।ফটোগ্রাফি করে প্রিন্ট আকারে প্রকাশ করতে হবে। ডিজিটাল আকারে প্রচার প্রকাশ করে জনসমক্ষে হাজির রাখতে হবে।ফ্যাসিস্টকে ভুলে থাকতে দেওয়া যাবে না। রাজধানীর মোড়ে মোড়ে ঘৃণাস্তম্ভ গড়ে তুলতে হবে।সারাদেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতেও ঘৃণাস্তম্ভ তৈরী করতে হবে। এই দাবী জুলাই আন্দোলনের পক্ষের সকলের। ইতোমধ্যে যে গ্রাফিতি মুছা হয়েছে তা পুনরায় অঙ্কন করা হোক। বিশেষ করে ভার্সিটি এরিয়ার গ্রাফিতিটি অবশ্যই অঙ্কন করার জোর দাবী জানাই।টিএসসি,শাহবাগে, জিরো পয়েন্টে হাসিনা,মুজিবের গ্রাফিতি থাকুক। আগামী প্রজন্ম শহরে এসেই যেন ইতিহাসের কলঙ্ককে দেখে জানাতে পারে অন্তর থেকে ঘৃণা। কালের পাতায় জারি থাকুক বিপ্লবের গ্রাফিতি উপাদান। বিপ্লবের গ্রাফিতি ফ্যাসিস্টের প্রতি ঘৃণার স্মারক।তা আছে,থাকবে।
ইনকিলাব জিন্দাবাদ।

আরও পড়তে পারেন

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on কবিতার স্ফুলিঙ্গ, স্ফুলিঙ্গের কবিতা