তৈমুর খান
১
প্রতিবাদ
এই বাঁচাটুকু ফুটবলের মতো
রাজনীতির মাঠে ওরা গড়াচ্ছে শুধু
লাথি মেরে মেরে গড়াচ্ছে আমাদের
চেঁচিয়ে বলছি:আমাদের অস্তিত্ব আছে
স্বাধীনতা আছে!
আমাদের নিরিবিলি আছে!
বিকেলে বেরোনো আছে কোথাও একাকী!
আমাদের মুখ আছে তবু ওরা বলে মুখ নেই
আমাদের ভাষা আছে তবু ওরা বলে ভাষা নেই
আমরা অনেক দীর্ঘ উঁচু হয়ে মাথা তুলে দাঁড়াই
তবু ওরা বলে আমরা গোল,শুধু ঢালু পথে গড়াই
আমাদের দীর্ঘশ্বাস শুধুই হাওয়া
আমাদের মরে যাওয়া শুধুই মুক্তি
আমাদের কামনা বাসনা ভালোবাসায়
শুধু জিহাদ জিহাদ আর কিছু নয়
লাথি খেতে খেতে
গড়াতে গড়াতে
ভেঙে যেতে যেতে
হয়তো এবার বেরিয়ে আসবে অদৃশ্য কোনও হাত
২
অমরত্ব
অমরত্ব খুঁজতে খুঁজতে চলে এসেছি বহুদূর
এখানে আর কোনো ঘর দেখছি না কারও
কোনো মানুষ হাঁটার রাস্তাও নেই কোথাও
শুধু কন্টকিত অরণ্য আর হিংস্র জন্তুর গর্জন
সূর্য ডুবতে যাচ্ছে বলে নিরাপদ আশ্রয় দরকার
অন্ধকার কি লুকিয়ে রাখতে পারবে আমাদের?
একটি বিষণ্ন নদী বয়ে গেছে মহাকালের দিকে
কিছুটা জল পান সেরে তীরে দাঁড়িয়েছি
বিপন্ন মুহূর্তগুলি রোদছায়ায় ছুটোছুটি করে
কিছুক্ষণ পর অন্ধকার এসে গ্রাস করে নেবে
সমস্ত আকাশ জুড়ে অনেক কবিতা ছড়িয়ে আছে
কাদের কবিতা এরা? শূন্যে ভেসে ভেসে যায়
ক্ষণিক কম্পন তোলে তারপর ধুলো হয়ে ঝরে
দীর্ঘশ্বাস আর কান্নায় ভেজা তাদের শব্দভার
এরাও তো ব্যর্থ হয়েছে অমরত্ব চেয়ে বারবার
এরাও তো মহাকালের নদীটি হতে চেয়েছে পার!
এখান থেকে কি ফিরতে পারব আর?
অমরত্ব আসলেই প্রতারক
কবিতা তারই প্রক্রিয়া নিজেকে ধ্বংস করার
এই বিকেল টুকুই ভাগ করে খায় আমাদের হাহাকার!
৩
মৃত্যুর আগে কিছুক্ষণ ভেবে নিতে হবে
উচ্ছ্বাসের বন্যায় হিংস্র প্রাণীরাও দারুণ উচ্ছ্বসিত
সবাই নেমেছে সভ্যতার পথে
এবার নিধন হব আমরাও তবে
সেইসব খাদকের কাছে?
এই স্তব্ধতায় কিছুক্ষণ ভেবে নিতে হবে
তারপর হেঁটে যাব মৃত্যুর দিকে!
এমন উগ্র ধার, ক্রুদ্ধ বাক্যবাণ ছুটে আসে
দিশাহীন মৃত্যুর কাছে দাঁড়াই
ক্ষতবিক্ষত হয় এই জন্ম, এই বাঁচার আকুতি
সহিংস প্রলাপে দগ্ধ হতে থাকে দিন
আঁধারের মতো ওরা রাষ্ট্রক্ষমতায় সমাসীন
মানুষ হইনি তবে? শুধু এক সম্প্রদায়?
আর কিছু নয়?
কে শেখালো ধর্ম তবে?
চেতনাহীন পাশবিক বিপ্লবে
এ রাষ্ট্র, এ সভ্যতা পরিচালিত হবে!
কার গুরু তুমি! কী পোশাকে দাঁড়াও
কী ভাষণে ভাসো,নিধনের মশলাপাতি ছড়াও
রক্ত-মাংস চায় তোমার?
আর শুধু মৃত্যু চাও আমাদের?
তবে তাই হোক—মারো—
ঘরে ঘরে পাঠাও তোমার সেনাদের!
৪
হারানো বিকেল
নিজের বিকেলটা বিক্রি করিনি
নিজের পাখিটা খাঁচায় পুরিনি
কিন্তু কোথাও বিকেল নেই
কিন্তু কোথাও আকাশ নেই
পথের ধারে গাছটি একা দাঁড়িয়ে আছে
আজ ওর কোনও পাতা নেই
অনুভূতির ডালপালাতে আজ আর কোনও ছায়া নেই
মনখারাপের এই বাতাসে বসন্ত যায় কার যে বাড়ি!
পদ্মপাতাও ডাকে না আর
জলের ওপর হাসে কি ওর চিকন নাভি?
হলুদমাখা ওই বিকেলটা রোজ আসত আমার কাছে
তারপরে ও ঢেউ তুলত,ঢেউয়ে দুলত পদ্মকুৃঁড়ি
ভিজতে ভিজতে গোধূলিতে পাখি ডাকত
শুধু কি পাখি?
নরম ঠোঁট, রঙিন ডানা, চোখ সরোবর
আলতো ছোঁয়ার গল্প হত, নীরব সেসব গল্পকথা
পড়তে বসে সন্ধেবেলা নেমে আসত সাদা পাতায়
৫
রূপক বেড়াল
বেড়ালের ভেতরে বেড়াল
সমস্ত রূপক ভেদ করে তার কাছে যাই
দেখি সেও মানুষ—অবিকল বেড়ালের মতো চোখ-মুখ-দাঁত-নখ আর নরম সোনালি লেজ খাড়া হয়ে আছে
চারিদিকে হিমঝরা রাত
নৈঃশব্দ্য কান্নায় সতর্ক দীর্ঘশ্বাস
বেদনার নৈবেদ্য সাজায় ঘরে ঘরে
বিভ্রান্তির রাস্তায় হেঁটে যায় মরীচিকার আলো
যদিও আগুন আর দাহ
ছাইরঙা কোনও অন্তর্ঘাত খেলা করে
বেড়ালেরা এসে গলা ধরে, চুমু খায়
তারপর ঘন্টা বেজে ওঠে—
সেসব মৃত্যুর ঘন্টা : থেকে থেকে বাজে
আমাদের মরমের লাশগুলি জমা হয় মনের ভেতরে