spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদসাম্প্রতিকধানমণ্ডি ৩২ নম্বর এবং আওয়ামী লীগের ভবিষ্যত

লিখেছেন : রায়হান হোসেন

ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর এবং আওয়ামী লীগের ভবিষ্যত

রায়হান হোসেন

৫ ই ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনা ভারত থেকে বাংলাদেশের মানুষের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দিবে এটা ছাত্র জনতা মেনে নিতে পারেনি। জনতা ক্ষুব্ধ হলো, একজন পলাতক খুনি অন্য দেশে বসে, যার নুন্যতম কোনো অনুশোচনা নেই সে কীভাবে জনগণের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে পারে! শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয়াধীন আছে। বাংলাদেশ সরকার শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর জন্য ভারত সরকারকে চিঠি দিয়েছে। ভারত এখনো কোনো জবাব দেয়নি।

বাংলাদেশ সরকারের কাছে শেখ হাসিনা একজন খুনের আসামি৷ একজন অপরাধীকে ভারতে আশ্রয় দেয়া বাংলাদেশের কূটনীতিক শিষ্টাচারের লঙ্ঘন। ভারত যেন ইউনূস সরকারকে পাত্তাই দিচ্ছে না। মোদি সরকার আওয়ামী লীগকেই বাংলাদেশের জনগণ মনে করে। 

আমরা এর আগে দেখেছি, সীমান্তে বাংলাদেশ ভারতের  জনগণের মুখোমুখি অবস্থান। ভারতীয় মিডিয়া সেদেশের জনগণকে উত্তেজিত করছে বাংলাদেশের জনগণের প্রতি। এই উত্তেজনার ফলে বাংলাদেশ হাইকমিশনেও হামলা চালিয়েছে ভারতের জনগণের উগ্রপন্থী একটা অংশ। শেখ হাসিনা যেহেতু এখন অন্য দেশের আশ্রয়ে আছে, বাংলাদেশ সরকারের আদালতে তার মামলা বিচারাধীন আছে সেহেতু তার  নৈতিক ও আইনগত কোনো অধিকার নেই প্রকাশ্যে জনগণের উদ্দেশ্যে কথা বলার।

৫ ই ফেব্রুয়ারি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহবায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন, ‘ ‘আজ রাতে ফ্যাসিবাদের তীর্থভূমি মুক্ত হবে।’ এই ঘোষণার পরই মূলত ছাত্র জনতা বুঝে যায় তিনি ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবের বাড়ির কথাই বলেছেন।

অনেক সুশীল বলতে পারে, ‘ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর কী দোষ কী করল? শেখ হাসিনার অপরাধের জন্য মুজিবের বাড়ি ভেঙ্গে ফেলা ঠিক নয়।’ এ ধরনের কথা বলছে, কিছু বাম এবং সফট আওয়ামী লীগার। তাদের কেউ কেউ জুলাই আগস্টে লোক লজ্জায় ছাত্রদের পক্ষে থাকলেও এখন তারা মুজিবের বাড়ি রক্ষার জন্য কাঁদছে।

তবে, ছাত্র জনতা মনে করছে, ‘শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ তাদের প্রত্যেকটা অপকর্ম জায়েয করার জন্য মুজিবকে ব্যবহার করত।’ মুজিব ছিলো ফ্যাসিস্ট আইকন। উল্লেখ্য, মুজিব নিজেও ছিলো স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম স্বৈরাচার। শেখ হাসিনা মনে করত, ‘তার বাবা যেহেতু বাংলাদেশ স্বাধীন করেছে সেহেতু তার ও তার দলের এই দেশে কোনো ভোট ছাড়াই ক্ষমতায় থাকার অধিকার আছে এবং এই দেশে অন্য কোনো দল মত থাকতে পারবে না।’

যাই হোক, শেখ হাসিনা ভাষণ দিবে শুনে বুধবার বিকেল থেকেই ছাত্র জনতা ফেটে পড়ে। তারা বুলডোজার ভাড়া করে। তবে, বুলডোজার আসার আগেই লোকজন সেখানে জড়ো হয়ে ভাঙচুর শুর করে দেয়। প্রায় প্রত্যেকটা গণমাধ্যম সেখানে উপস্থিত হয়ে লাইভ করা শুরু করে। 

বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত সেখানে বুলডোজার দিয়ে ভাঙচুর চালানো হয়। ভেঙে ফেলা হয় সুধা সদনও এবং সারাদেশে মুজিবের ম্যুরাল ও ভাস্কর্যও ভেঙে ফেলা হয়।

তবে, এই যে মুজিবের ৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙার ফলে কিছু বাম, সুশীল লীগের মধ্যে যে মনোবেদনা লক্ষ্য করা গেছে, এর ফলাফল কী হতে পারে? আমি মনে করি, আওয়ামী লীগ পনের বছর ধরে জনগণের অধিকার যেভাবে হরণ করেছে, এর চাইতে বেশি আর কিছু হতে পারে না।

৩২ নম্বর গুড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের তীর্থস্থান গুড়িয়ে দেয়া হলো। একটা দেশে ফ্যাসিস্টের যখন পতন হয় তখন তার কোনো প্রতীক রাখা উচিত নয়, এটাই ফ্যাসিস্টের প্রতি সুবিচার। ফ্যাসিস্ট আবার ফিরে আসতে পারে যদি ফ্যাসিস্টের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করা হয়, তাকে স্পেস দেয়া হয় কিংবা তার প্রতীক গুলোকে কিছু না করা হয়।

অনেক সুশীল মনে করছে, ধানমণ্ডি ৩২ এ ধ্বংস করার ফলে আওয়ামী লীগের প্রতি মানুষের সহানুভূতি বাড়বে। কিন্তু আমি মনে করি, বাড়বে না। কারণ, একটা দল এত অপরাধ ও হত্যাকাণ্ড, এত লুটতরাজ করার পরও যদি মানুষের সহানুভূতি পায় তাহলে সলিমুল্লাহ খানের মত করেই বলতে হবে, আমাদের সমস্ত পড়াশোনা ব্যর্থ হয়ে যাবে।

মুজিবের ৩২ নাম্বারের বাড়ি ভাঙা মানে শুধু কিছু ইট পাথর ভাঙা নয়, এর সাথে একটা দল যেখান থেকে ফ্যাসিস্ট হওয়ার শক্তি যোগান পায় সেটিকে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ৩২ নম্বর গুড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে মূলত ফ্যাসিস্ট মনোবল ভেঙে দেয়া হয়েছে। তবে, জনতা আশা করছে, শুধু বাড়ি বা ভাস্কর্য ভাঙার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে হবে না, আওয়ামী লীগের রাজনীতি এদেশে নিষিদ্ধ করতে হবে।

৫ ই ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনা তার বক্তৃতায় সেই পুরনো ভাঙা রেকর্ডেরই পুনরাবৃত্তি করেছে। হাজার হাজার মানুষ গুলি করে হত্যা করা তার কাছে মেটিকুলাস প্ল্যান। বিন্দুমাত্র অনুশোচনা নাই তার কাছে। তার বক্তব্যই প্রমাণ করে সে যদি কখনো ক্ষমতায় আসতে পারে,  আবার গণহত্যা চালাতে পিছপা হবে না। 

মুজিবের ৩২ নম্বর বাড়ি ভাঙাকে কেন্দ্র করে সোশ্যাল মিডিয়া ছিলো উত্তপ্ত। হাসনাত আবদুল্লাহ ফেসবুকে লেখেন, ‘ফ্যাসিবাদের চিহ্ন বিলোপের সাথে সাথে খুনী হাসিনাসহ গণহত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত এবং আওয়ামীলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।’

সমন্বয়ক সার্জিস আলম লেখেন, ‘আবু জাহেলের বাড়ি এখন পাবলিক টয়লেট!’

এক্টিভিস্ট দিলশানা পারুল লেখেন, ‘আপনাদের সুশিলের তত্ত্ব আর প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী রাজনীতি করতে থাকলে জুলাই নির্মিত হতো না।’

কবি সাজ্জাদ বিপ্লব লেখেন, ‘ফ্যাসিবাদের প্রতীক ৩২ নাম্বার মুছে যাক।’

আরও পড়তে পারেন

1 COMMENT

  1. ফ্যাসিবাদের পরিনতি যেন সবাইকে সতর্ক ও সচেতন রাখে এটি তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

সাদ আব্দুল ওয়ালী on ৩টি কবিতা
নয়ন আহমেদ on ৩টি কবিতা
নয়ন আহমেদ on ৩টি কবিতা
সাদ আব্দুল ওয়ালী on লজ্জাবতী ও অন্যান্য কবিতা
সাদ আব্দুল ওয়ালী on লজ্জাবতী ও অন্যান্য কবিতা
রাবেয়া আখুঞ্জী on লজ্জাবতী ও অন্যান্য কবিতা
সাদ আব্দুল ওয়ালী on লজ্জাবতী ও অন্যান্য কবিতা
সাদ আব্দুল ওয়ালী on লজ্জাবতী ও অন্যান্য কবিতা
শামসুল হক এস এইচ নীর on নাকাবা কিংবা বিপর্যয়ের দিনগুলো