spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদপ্রবন্ধআত্মযাপনে সরলতম উচ্চারণের কারিগর : তৈমুর খান

লিখেছেন : আবদুস সালাম

আত্মযাপনে সরলতম উচ্চারণের কারিগর : তৈমুর খান

আবদুস সালাম

যিনি জীবন যন্ত্রণায় মুখরিত আর্তনাদের বাঁশি বাজাতে বেশি ভালোবাসেন।যিনি বিষাদের ছবির এঁকে চলেছেন অজান্তেই।
“A good essay , more than a novel,a poem,a play or a treatise,is personality translated in to print .” ই ভি লুকাস
ব্যক্তিগত, মৃন্ময় প্রবন্ধ অনেক বেশি মৌলিক ও সৃজনশীলতার লক্ষণ যুক্ত। সহজ ও সরল ব্যক্তিত্ব মন্ডিত গদ্য বিশেষ উপলক্ষ বা প্রয়োজনে লেখা। সাহিত্য সৃষ্টির পেছনে প্রধান তাড়না হলো মানবমনের আত্মপ্রকাশ করার তীব্র আকাঙ্ক্ষা। ঈশ্বর যেমন সমস্ত পৃথিবীর আনন্দময় স্রষ্টা। তেমনি মানুষও নতুন নতুন ভাবনা নিয়ে অন্যদের কাছে নিজেকে মেলে ধরতে চায়।ব্যক্তিহৃদয়ের আত্মপ্রকাশের তীব্র বাসনার তাগিদ থেকেই জন্ম নেয় গদ্য।
উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় চার্লস ল্যাম্বের ESSAY OF ELIA এর আত্মজৈবনিক প্রবন্ধগুলো।
কবিগুরুর কথায় “অন্তরের জিনিসকে বাহিরের, ভাবের জিনিসকে ভাষার , নিজের জিনিসকে বিশ্বমানবের ও ক্ষণকালের জিনিসকে চিরকালের করিয়া তোলা সাহিত্যের কাজ।”
কবি তৈমুর খানের গদ্য যেন নিভৃতে কবিগুরুর কথার চিত্রকল্প তুলে ধরে চলেছেন অজান্তেই।
“A loose sally of the mind,an irregular, indigested price ,not a regular and orderly performance ” স্যামুয়েল জনসন
মানবজীবনের বহু বিচিত্র ও বহু কৌণিক বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যিনি তার কলমকে সচল করে চলেছেন তিনি কবি তৈমুর খান। একদম জীবনের কাছাকাছি, বাস্তব উপলব্ধির কাছাকাছি এসে, বাস্তব উপলব্ধির ঘাতপ্রতিঘাতে রচিত হয়ে চলেছে তাঁর আত্মযাপনের নিবিড় সরলতম উপলব্ধির সুন্দরতম উচ্চারণ।

“গ্রামের বাঁশ বন, বর্ষার জলকাদা রাস্তা, ঢোঁড়া সাপ ,ঘাস-কাটার দল,ধানগাছের গন্ধ, কদমফুলের থোক, ছেঁড়া-ময়লা রমণীর রূপসী যৌবন,কাকডাকা দিন আমাকে বারবার ডাকে”……

কবি আত্মমগ্নও আত্মপীড়ন ও নির্ভীক আত্মক্ষরণের রকমারি হাহাকার এঁকে চলেছেন নব্বইয়ের দশক থেকেই। এর জন্যই তিনি বিশেষভাবে কবিতা মহলে ব্যাপক সাড়া জাগানো এক নাম। তার পাশাপাশি লিখে চলেছেন সমান্তরাল গদ্য। অপ্রচলিত এক গদ্য ভাবনায় পাঠক সমাজের কাছে হয়ে উঠেছেন প্রিয় মানুষ, মনের মানুষ।
তাঁর গদ্যে আমরা জীবনের উষ্ণতা, জীবনযাপনের নিবিড় সরলতম উপলব্ধির সুন্দরতম তথ্যচিত্র পাই যা সহজেই পাঠকের মনে সাড়া জাগাতে পারে। তাঁর প্রতিটি গদ্য একজন ছাত্র থেকে পূর্ণ মানুষ হয়ে ওঠার গল্প। যা প্রতিটি মানুষের সংকটময় মুহূর্তকে ভাগ করে বেঁচে থাকার অঙ্গীকার। তাঁর কলমের যাদুতে সমকাল হয়ে উঠেছে মহাকাল।
“জামবাটিতে কয়েক গন্ডা ভেজা ভাত আর আধবাটি আমানি। একটু নুন মিশিয়ে খেয়ে যেতে হবে পরীক্ষা দিতে ভিন গাঁয়ে। সঙ্গে আছে শুকনো পুঁটি মাছ পোড়ানো। তাড়াতাড়ি করে খেয়ে দে ছুট। অনেকটা রাস্তা। বাবা বারোয়ানা পয়সা দিয়ে বলেছে ,আট আনার পাউরুটি, চার আনার ঘুগনি।” তখনকার দিনে চতুর্থ শ্রেণিতে পরীক্ষার সেন্টার হতো অন্য কোথাও। সেখানে রীতিমতো কড়াকড়ি। আমি ধুলো রাস্তা ভেঙে হাফপ্যান্ট পরা কিশোর পরীক্ষার হলে পৌঁছেছি। কোনো দিকেই মুখ ঘুরানো যাবে না। লম্বা ফর্সা লাল চোখ একজন শিক্ষক তর্জন গর্জন করে হাঁক দিলেন—
‘চেঁচামেচি করলে কারো দিকে তাকালে খাতা কেড়ে বের করে দেব খবরদার একদম কথা বলবে না কেউ’।
সময়ের একটা অকপট চিত্রকে সহজ করে তুলে দিয়েছেন। এখানেই তাঁর বিশেষত্ব
তৈমুর খানের গদ্য যেন নিভৃতে কাঁদে। অকপট স্বীকারোক্তি তাঁর গদ্যের আসল নৈবেদ্য ।
“আশির দশকের মাঝামাঝি সময় থেকেই রামপুরহাট মহাবিদ্যালয়ে তখন বাংলা সাম্মানিকের ছাত্র । ভয়ে ভয়ে কুঁচকে থাকি। গ্রাম থেকে আসা কাদার দাগ লাগা পাজামা পরা তরুণ। চার আনা পয়সাও থাকে না। টিফিনও নেই। সারাদিন মুখ শুকিয়ে যায় ।পুরনো চপ্পল পায়ে । সবাই তাকিয়ে দেখে ।ক্লাসে কোনো বন্ধু নেই, বান্ধবী নেই। বড়ো একা। একা। একাই।”
মানবমনের পবিত্র অধিকারী হয়ে ওঠা মানুষ ক্রমগত তাঁদের সৃষ্টি বৈচিত্র‍্যময় স্রষ্ঠা হয়ে ওঠেন।কবি,লেখক সাহিত্যিক হয়ে,একজন শিল্পী হয়ে সংস্কৃতি জগতে অমর হয়ে থাকেন। তেমনই মহান আর্তনাদের ভেতর কবি তৈমুর খান এর স্বরপুষ্ট শব্দগুলি পবিত্র নৈঃশব্দ্যের আলোকোজ্জ্বল অনুভূতিকাতরে জন্ম নিয়ে অমর হয়ে থাকবে। যেখানে পাঠক খুঁজে পাবেন বঞ্চিত নদীর স্রোতবিহ্বল ব্যথার স্মৃতিসমুদ্র। তৈমুর খান সেই স্মৃতিসমুদ্রের একজন দক্ষ নাবিক। আর তিনি সেই সমুদ্রগভীর থেকে এক একটি উজ্জ্বল রত্ন তুলে সাজিয়েছেন একাধিক কাব্যগ্রন্থ ও মণিমুক্তোখচিত গদ্যগ্রন্থ ‘আত্মক্ষরণ’, ‘আত্মসংগ্রহ’ ,’আত্মস্বর’ ইত্যাদিতে।
সাধারণ মানুষের অনুভূতি মামুলি জিনিসের প্রতি আমাদের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বোধ,ভঙ্গি,উচ্চারণ ও মনোভাব তাঁর নিজস্ব জীবন ও ঘটনাবহুল নির্মম বাস্তব মিলে মিশে একাকার। বিচিত্র ঘটনা বহু স্বরের ধ্বনি,শব্দ, কথা ভাষা, রুচি গন্ধ ও রং তাঁর জীবনের সাথে কীভাবে যে মানানসই হয়ে উঠেছে তা এক বিস্ময়। তাঁর গোটা জীবন একটি ধ্রুপদী উপন্যাস। যেখানে সংলাপ,গল্প,বিশ্বাস সংবেদন দৈনন্দিন যাপনপ্রবাহে জীবনের সম্পূরক হয়ে উঠেছে।
তৈমুর খানের গদ্যের যে বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাই তা পাঠকের মনের কথা । যা সকল মানুষের মনের কথা , সমাজের অলিতে গলিতে ঘুরে ঘুরে বেড়ানোর কথা। একদম আটপৌরে পরিবারের সচল নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। পাঠকের কাছে তার গদ্য ললিপপের মতো। গোগ্রাসে গিলতে থাকে । সাধারণ মানুষ যা ভাবে ,যা করে বেড়ায় তা জন সমক্ষে আনতে লজ্জা বোধ হয় । কবি তা অকপটে তুলে ধরেন পাঠকের কাছে।
কবির কথায় “যুদ্ধের বিরুদ্ধে আর এক যুদ্ধ” অনবরত যুদ্ধ করে চলেছি। যুদ্ধ কখনো থামেনা ।একদিকে মৃত্যুর মুখোমুখি ,অন্যদিকে কবিতা আর সুন্দরের হাতছানি নিয়েই জীবন কর্মমুখর ।কেননা শুষ্ক শুকনো জীর্ণ এই পার্থিবের প্রাপ্তহিকতা আমাদের কাছে বড় নির্মম। বড়োই করুণ । কবিতা যেমন কর্মের প্রেরণা মৃত্যুকেও মাধুর্যমণ্ডিত করে জীবনকেও রহস্য সিঞ্চিত করে। মাঝে মাঝে একজন কবির তাই মনে হতে পারে কলমটি তাঁর বন্দুক। কবিতাগুলো তার সৈনিক , সন্তান।
প্রকৃত যিনি কবি তিনি আত্মজীবনের ছায়ায় নিষিক্ত হন । তিনি তার জীবনের উষ্ণতা,আর বেঁচে থাকার একনিষ্ঠ অঙ্গীকারকে মৃত্যুর পথে নিয়ে যাননি।
শত অভিমান মেখে আত্মবোধির অন্বয়কে সরলতার পথে নিয়ে গেছেন । আত্মবোধের উদ্দীপ্ত হয়েও সকল মানুষের চিরন্তন আবেগ প্রকাশ করেছেন সহজ সরল ভাষায়। জীবনের চারপাশে শত শত মানুষের আবেগকে মূল্যবান লেখনী দ্বারা প্রস্তুত করে চলেছেন ।
তৈমুর খানের গদ্য সাহিত্যের মাপ কাঠিতে কতটা উত্তীর্ণ হয়েছে তা সময়ই বলবে। তবে একথা জোর দিয়ে বলায় যায় তার রচিত প্রতিটি গদ্য পাঠকের মনে আলোড়ন তোলে। জীবনের খণ্ড খণ্ড চিত্রকল্প, টুকরো টুকরো সামাজিক অনুষঙ্গ, সামাজিক বৈষম্য, অর্থ নৈতিক অভিঘাত, নানা প্রবঞ্চনা, ক্ষুন্নিবৃত্তির জন্য হন্যে হয়ে ভ্যাগাব্যান্ডের মতো ঘুরে বেড়ানো ।
সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গদ্বারা যেভাবে লাঞ্ছিত অপমানিত হয়েছেন তার নিখুঁত অকপট চিত্র তুলে ধরেছেন । তাঁর গদ্যে খুঁজে পাই মানবিক সঙ্কট, জীবনকে খুব কাছে থেকে দেখেছেন। তাঁর লেখা গদ্য জীবনরসে ঘনীভূত। সবচেয়ে বড়ো কথা সহজ সরল ভাষায় প্রকাশ।
কোনো রকম ভন্ডামী, শঠতার আশ্রয় নেননি। সহজ ও প্রাঞ্জল ভাষায় পাঠকের কাছে তুলে ধরেছেন অবলীলায়। এখানেই তাঁর বিশেষত্ব।
কবির হৃদয়ে শূন্যতার আলো জ্বলে ওঠে। তখন তিনি জাগতিক সুখ-অসুখ ,পাওয়া-না-পাওয়াকে মিলিয়ে তুচ্ছাতিতুচ্ছ ঘটনাকে সৃষ্টির প্লাবনে ভাসিয়ে ট্র দেন । তার সৃষ্টির কণাগুলি চেতনে, অবচেতন একত্রিত করে কবিতা ,গল্প, উপন্যাস ,প্রবন্ধ, সর্বোপরি নির্ভীক জীবনবেদের জন্ম দিয়ে চলেছেন।সেইসব জীবনবেদ,আত্মক্ষরণ, আত্মস্বর, আত্মখনন, আত্মসংগ্রহ।
আমাদের সমাজে ,রাজ্যে অথবা দেশে খেটে খাওয়া জনমজুর । দিন-আনা দিন-খাওয়া লোকের সংখ্যা চমকে দেবার মতো। সরকারি হিসাবের বাইরে কত কোটি মানুষ একবেলা পেটে পুরে খেতে পায়, এক বেলা খেতে পায় না। কত পার্সেন্ট লক্ষ লক্ষ মানুষ একদিন অন্তর একবেলা খাবার জোগাড় করতে পারে তা অনেকেরই কমবেশি জানা।
জীবনযন্ত্রণার এক সুন্দর চিত্র–
“পুরো আশির দশক আমার কৈশোর যৌবনের নিরন্ন দিনগুলি পার্টির মিছিলে ঘুরেছি। ভোর ভোর ট্রেনে উঠে দলীয় পতাকা হাতে কলকাতার রাস্তায়। এসপ্ল্যানেড ময়দান ভরিয়ে তুলেছি । ইনক্লাব ধ্বনি দিয়েছি। শেষে এক ঠোঙা ঘুগনিমুড়ি অথবা দুটো রুটি ও শুকনো গুড় পেয়েছি। তারপর বাড়ি এসে ঘুমিয়ে পড়েছি অচেতন হয়ে। কমরেড আবার ডাক দিয়েছেন । ছুটেছি । কোনো দিকে তাকানোর অবকাশ নেই। আশির দশক এভাবেই গেছে।”
বেকার জীবন যন্ত্রণার সুন্দর আলেখ্য। তাঁর গল্পের নায়ক তিনি নিজে এখানে নেই কোনো শঠতা।
তৈমুর খান তাঁদের একজন হয়ে শিশু থেকে যৌবনের অর্ধেক সময় কাটিয়েছেন। মাঠে ঘাটে,বাঁকে তাদের মতো করে । তিনি সারাদিন অভুক্ত আছেন যন্ত্রণা তাঁকে আঘাত দিতে পারেনি বরং আর্তনাদের ভেতর থেকে তাঁর সৃষ্টিকে উদরভর্তি করে ক্ষুধা দূর করেছেন। সৃষ্টির মহাড়ায় শরীর মন আলোকোজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। তিনি তাই সহজেই বলতে পারেন,” পাশ দিয়ে কত ঝড় চলে গেছে। ডানাওয়ালা মানুষ উড়ছে।পায়ে ঘুঙুর পরা মানুষ। কারও চোখে চোখ রাখতে পারিনি। কারও আঙুলে আঙুল। প্রতি মুহূর্তে শুধু খিদে পেয়েছে, পাহাড়ের মতো খিদে।”
‘আমার বাবার বাঁশি’ নামক এক গদ্যে দেখি বাস্তব জীবনের অকপট স্বীকারোক্তি।
“এখন আমি এক উচ্চতর বিদ্যালয়ের শিক্ষক ,কিন্তু এখনো আমার কোন আভিজাত্য তৈরি হলো না। সেইসব জৌলুস হীন সাজ পোশাক , ইঁদুরের গর্তওয়ালা একটা মেটে বাড়ি এবং আটপৌরে ডুরে শাড়ি পরা একটি গ্রাম্য বউ ।এখনো কচুশাক রান্না করে ,বেথোশাক রান্না করে। টিভি-ফ্রিজ-আলমারি তেমন কিছুই নেই।”
আবার বলেছেন: “—-চাকরি পাওয়ার আগে পর্যন্ত খুব দুঃখ-কষ্টে ছিলাম। প্রায়দিন আমাদের বাড়িতে ভাত হতো না। সন্ধ্যেবেলা কচু শাক সেদ্ধ খেয়েই ঘুমোতে হতো। ঘুম না ছাই, অন্ধকারের সঙ্গে কথা বলে রাত কাবার করতাম। মনে হতো রাক্ষস-খোক্ষসের পেটের ভিতর আছি। খিদে পেলে বাবা বলতেন ,গাছ খা, পাথর খা।
মা বলতেন আমাকে খা! ভয়ে ভয়ে আমরা চুপ করে যেতাম।”
জীবনকে পাঠকের হাতে তুলে দিতে তিনি কখনোই দ্বিধাবোধ করেননি। সত্যের কাছে আনত হতে কোনো রূপ দ্বিধা তাঁকে গ্রাস করে না। তাঁর কবিতা যেমন প্রাণের কথা বলে, মনের কথা বলে, দেশের জনগণের কাছে নত হয় তেমনি তাঁর গদ্যেও আমারা খুঁজে পাই বিপন্ন যন্ত্রণার বাস্তব কথাচিত্র।
আত্মস্ফুরণের যে Stream of consciousness কে তুলে আনেন তা Self-confession হয়ে যায়। আর এই Self-confession একজন শিল্পীর কাছে খুবই আবশ্যক। আলবার্ট কামুজ এই জন্যই বলেছেন :
“A guilty conscience needs to confess.
A work of art is a confession.”
খুব মার্জিত শব্দবোধের চিত্রকল্প নির্মাণ তার সহজাত।
তাঁর কালচেতনায় ইতিহাস-বর্তমান-ভবিষ্যৎ মিশে যাচ্ছে গতিশীলতার মধ্য দিয়ে । তাঁর লেখনী অন্যতর এক বোধকে সংক্রমিত করে ।
স্বতন্ত্রতা তাঁর আঙ্গিকের অভিনবত্ব। আটপৌরে সংসারে ঘানি টানতে টানতে সমগ্র আখ্যান জুড়ে ঘটে চলে নির্মাণ–বিনির্মাণ। চরিত্রসৃষ্টির ক্ষেত্রে লেখক নির্মাণ থেকে বিনির্মাণ আবার বিনির্মাণ থেকে নির্মাণের পথে যাত্রা করেন। নির্মাণ বিনির্মাণের মধ্যে যে গতিময়তার প্রবাহ তাকেই তিনি ধরেছেন, ছেড়েছেন আবার নিজের খেয়ালে ভেঙে চলেছেন ।
মধ্যবর্তীকালীন সময়ের বেঁচে থাকার অভিজ্ঞতা অর্জন করিয়েছেন সব চরিত্রগুলিকে। তাই তিনি শুধুমাত্র একজন কবিই নন–তিনি একজন তত্ত্বনির্মাতা গদ্যকার। তাঁর সারাজীবনের সন্ধান সত্যকে উপলব্ধি করা । এখানে তিনি একজন ভারতীয় । তাঁর নিজের ভাষাতেই : “…সারাপৃথিবীর মধ্যে আমাদের এই বাংলার উপর দিয়েই বয়ে যায় রহস্যময় এক সামুদ্রিক বাতাস তার নাম মৌসুমী বায়ু । অথচ আমাদের উপন্যাসে সে-বিবরণ লেখা হল না–কোন খাত দিয়ে কী বাতাসে আমাদের গাছপালা দোলে। আর,এই নদী, এই বৃষ্টি, এই বাতাস, এই পাহাড়, এই সমতল আর এই সমুদ্রকে অন্বিত করে যে-মানুষ সে তার নিজের বাঁচার কাহিনি নিয়ে আমাদের উপন্যাসে এল না। আমরা উপন্যাসে কাহিনি খুঁজেছিলাম, কাহিনির সেই মায়ামৃগ আত্মপরিচয় থেকে আমাদের আরো দূরে দূরে সরিয়ে এনেছে।” বাংলার গল্প-উপন্যাসের আধুনিকতা তাই এখনো তাত্ত্বিক তর্কের বিষয়।
ব্যক্তিগত গদ্য যেমন পাঠকের মনের দুয়ারে আঘাত হানে তেমনি কবিতা সমন্বিত নিবন্ধগুলো, তাঁর লেখা ও ভাবনার এক বিশাল জগতের সামনে আমরা দাঁড়িয়ে আছি। আগামী সময় এই সমুদ্র থেকে পাঠকেরা নতুন অমৃত খুঁজে পাবেই। একজন সামান্য পাঠক হিসেবে তৈমুর খানের রচনার সামনে নতজানু হয়েই আগামী সময়ের লেখকদের কাছে আশাবাদী হয়ে রইলাম। অন্তত দ্বন্দ্ব হোক তাঁর ভাবনার সঙ্গে। আর সেই দ্বন্দ্বটি হওয়ার জন্যে তৈমুর খানকে পড়তে হবে আমাদের।

আরও পড়তে পারেন

1 COMMENT

  1. বাংলা রিভিউ কে ধন্যবাদ জানাই। নিবন্ধটি প্রকাশ করার জন্য।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

সাদ আব্দুল ওয়ালী on ৩টি কবিতা
নয়ন আহমেদ on ৩টি কবিতা
নয়ন আহমেদ on ৩টি কবিতা
সাদ আব্দুল ওয়ালী on লজ্জাবতী ও অন্যান্য কবিতা
সাদ আব্দুল ওয়ালী on লজ্জাবতী ও অন্যান্য কবিতা
রাবেয়া আখুঞ্জী on লজ্জাবতী ও অন্যান্য কবিতা
সাদ আব্দুল ওয়ালী on লজ্জাবতী ও অন্যান্য কবিতা
সাদ আব্দুল ওয়ালী on লজ্জাবতী ও অন্যান্য কবিতা
শামসুল হক এস এইচ নীর on নাকাবা কিংবা বিপর্যয়ের দিনগুলো