spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদকবিতাতৃষ্ণার বিশ্রাম ও অন্যান্য কবিতা

লিখেছেন : মনজু রহমান

তৃষ্ণার বিশ্রাম ও অন্যান্য কবিতা


মনজু রহমান

১. তৃষ্ণার বিশ্রাম
……………
তোমার মুখশ্রী আঁকতে গিয়ে জলতুলিরং চলে যায় মুখোশের দিকে
তবু জনারণ্যের ভিড়ে তোমার মিথ্যা অহমের ভাঁজে তৃষ্ণার বিশ্রাম।
যদিও কুচক্রির শাণিত ছুরির আঘাতে উপমারা ভেঙে যায় সম্মুখে
শিরদাঁড়া যন্ত্রণার স্রোতের বাঁকে; নূতন অভিধানে ভুলে যাই নাম।

আজ কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশের বইমেলার অলঙ্কার শীতঘন বাউড়ির মন
কেনো যে টানে না বর্ণিল প্রচ্ছদ-শিল্প-জ্যামিতি- ত্রিভূজে রসালো কোণ!
ভরা উদ্যান ঘিরে তোমার অতীত প্রেমিকরা মাতিয়ে রাখে আবক্ষ পট
আমি ঘোরলাগা কোণায় বসে স্মৃতির মন্থর ধুলোয় উড়াই হিমেল দাপট।

বৃষ্টি থেমে গেলে যেমন আঁচড় থাকে; থমকে দাঁড়ায় কাদা-বৃষ্টির জল
নিভু নিভু মনের আলো; তেমনি নূপুর তরঙ্গ শুনি হারানো নূপুরের মল
তোমার জন্যই আবর্তিত জমানো ভাবাবেগ নিয়ে বছরান্তে স্মৃতিভস্ম ফাঁকে
দীর্ঘ দিন দেখা নেই, দেখি মেসেঞ্জারে, সরাসরি দেখবো না তোমাকে?

২. পলাতকা আখ্যান
………….
ছিলে তুমি একক সম্রাজ্ঞী–
অপ্রতিদ্বন্দ্বী–
হাতের তালুতে প্রতিহিংসার ঘুঙুর বাজাতে বাজাতে
খুনের খামারে চাষ করতে রক্তিম ভূমি

নূতন ইতিহাস তৈরিতে পারঙ্গম ছিলে
বলেই অতীতের অধ্যায় টুসকি মেরে তুমি
তোয়াক্কা করোনি বিস্তর জণরোষের পথ!

তুমি ভাবতেও পারোনি– স্বল্পদৈর্ঘ জীবনে
শেষ পরিণতি অপেক্ষা করছে
তোমার পলাতকা আখ্যান
+

৩. অলীক দেবী
………….
তুমি জলে চরকি ঘোরাও জলপোকা
তবু তুমি জোনাকি হতে পারলে না
তুমি লক্ষ্যভ্রষ্ট ছুঁড়ো তীর যায়নি রোখা
জেদী তুমি উলোটপালট করো বাসন
তোমার ষোল বছরেও টিকলো আসন?

তুমি ঘোরলাগা এক ঘোরের ভেতর স্তর
রোপন করলে খেয়াল মাফিক চারা
নিশ্চিত ঘোর কাটলে, ঘোরেই দিবে তাড়া
চোরাবালিই টানবে তোমার– পুলকিত অন্তর!

যতো তুমি বোশেখ টানো ততো উধাও চিত্র
ধূ-ধূ প্রান্তর চারিদিকে, কোথায় তোমার মিত্র?
এখন তুমি অলীক দেবী, নোংরা জলের পদ্ম
জলের তলায় বিবাগী প্রেম, ঘানি টানা গদ্য

৪. রাতভাঙা পাখি
…………
কী হারাচ্ছি আমি, আমার আলোকিত ঘর?
কেন তবে পালিয়ে যায় আলোর সরোবর?
ভেঙে যায় পালক, উষ্ণউচ্ছ্বাস বহরের সুর
মায়াবী চোখের দৃষ্টি, ঝলমলে বিকেলের রোদ
কেনো বাড়ে অন্ধ ব্যবধান, কোন অবরোধ!

ভেবেছিলাম, ধরবো এলোচুলের সুগন্ধি ফুল
ছুঁয়ে দেবো ঘামঝরা মৃদুদোলা নদীর দু’কূল
গন্ধ নেবো নাভীর অতল, বালিহাঁস পাখি
আলোর পথে তুমি সাতরঙে মিলিয়ে গেলে
নদীর ঢালু পথে, কোন কূলে বাঁধবো রাখি!

কিছুই হলো না দেখো– না প্রেম, না আলোর ভাসান
অপার আঁধার ধেয়ে আসে, আসে ডমরু বাদ্যের স্বর
আঙুলের নিখুঁত টোকায় ভাঙে নিশ্চিত দ্যুতিময় ঘর
মেঘের পাথারে উঁকি দেয় চাঁদ, আমি রাতভাঙা পাখি
একাকী স্বপ্ন ডুবে স্বপ্নের মধ্যেই তবু তোমাকেই রাখি

৫. হারিয়ে যায় কবিতার উপসর্গ
………..
শেলীর মতো আমিও ভাবি– কবিতা আমার জন্য নয়।

যখন কাব্যভুবনে দাঁড়াতে চাই ভেঙে যায় বর্ণ-উপমা-অনুসর্গ
চেয়ারে বসে পুরানো স্মৃতির অধ্যায় তড়পানো আর
তোমার অভিধানের বর্ণিল গিরিপথ থেকে চুঁয়ে আসা জলঢল
আমাকে নামিয়ে দেয় ভাটির পাদদেশে।
তারপরও স্নিগ্ধ রোদ্দুরের আশায় কবিতা, তোমার কথা ভাবিনি!
এমন নয়– ভেবেছি বলেই ধরতে চেয়েছি যুক্ত আঙুল, ভেবেছি
নির্ভরযোগ্য অই আঙুল দুটি হয়তো আলো দেখাবে নিবে গুহার মুখ।

আমি চাই জন্মজন্মান্তর–
যা আজও ধরতে পারিনি? এ আমার অব্যর্থ যন্ত্রণা
কূটকূট কাটে উন্মাদ ঘূণপোকা– জলন্ত চুল্লির মুখে ঠেলে দেয়
অগ্নিদহন স্রোত। আমি কিছুই করতে পারি না–
না এগোতে, না পিছোতে

আলগা করতে পারি না
উষ্ণতা, চায়ের কাপের ঢাকনা, দ্বিখণ্ডিত প্রেম
হিসেব করার মেসিনটা পড়ে আছে অচল-অলস ভঙ্গিমায়।

বন্ধু শেলীর মতো হারিয়ে যায় আমার কবিতার সবগলো উপসর্গ।

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

নয়ন আহমেদ on কবিতাগুচ্ছ
সাজ্জাদ সাঈফ on বাছাই কবিতা
নয়ন আহমেদ on বাছাই কবিতা
নয়ন আহমেদ on ১০ টি কবিতা
নয়ন আহমেদ on কবিতাগুচ্ছ