spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদবই নিয়েশব্দের সাহসী বুননে মহিবুর রহিমের কবিতাগ্রন্থ

লিখেছেন : ড. রিটা আশরাফ

শব্দের সাহসী বুননে মহিবুর রহিমের কবিতাগ্রন্থ


ড. রিটা আশরাফ

পড়ছিলাম কবিতা ‘ওরা’। প্রথমবার পড়লাম চেতনা নড়ে উঠল আমার। দ্বিতীয় বার পড়লাম-চেতনায় বজ্রাঘাত হলো আমার। তৃতীয় বার পড়লাম চেতনা জাগ্রত হল আমার। সুন্দরের দিকে। সত্যের দিকে। সৃষ্টির দিকে। এই হলো নব্বই দশকের অন্যতম কবি মহিবুর রহিমের একটি কবিতা। কবিতা যে শুধু কবিতা নয়, কবিতা ‘বিবেকের ক্ষরণ’। কবি মহিবুর রহিমের এই উপলব্ধিটি তার কবিতার মধ্যে দিয়ে কবিতাপাঠকদের উপহার দিয়েছেন খুবই চমৎকার ভাবে।
‘ওরা পাথর ছুড়ে মারছে একজন কবির প্রতি
নির্দয় আঘাত থেকে ঝরছে জীবনের রোদন
ক্ষত-বিক্ষত কবি সে আঘাত রেখে যাচ্ছেন শিল্পের ক্যানভাসে।’
’দঃখগুলো অনাদির বীজপত্র’ মহিবুর রহিমের রচিত কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছে একুশে বইমেলা-২০১০ এ। এই কাব্যগ্রন্থটিরই চব্বিশ নম্বর কবিতা ‘ওরা’। এছাড়া এ গ্রন্থটিতে রয়েছে আরও তেষট্টিটি কবিতা। প্রায় প্রতিটি কবিতাতেই রয়েছে শব্দের সাহসী বুনন, রয়েছে বিবেকের ক্ষরণ। যে ক্ষরণ ঘটেছে কবির অন্তর্গত তাবৎ অনুভূমির ভেতর থেকে কখনো সমাজ বাস্তবতা, কখনো কবিতার পাঠিকা, কখনো প্রেম, কখনো প্রকৃতির বুক চিরে কবির বিবেকের ক্ষরণ ঘটেছে তাঁর নিজস্বফর্মের কবিতাগুলোতে। গ্রন্থটির নামকরণের ভেতরই মূলত এই সত্যটি কিংবা কবির এই উপলব্দিটি নিহিত রয়েছে। প্রতিটি কবিতাতেই রয়েছে কবির মন ও মননের সমন্বয়। কবিতা পাঠের প্রতি যাদের বিপুলতা রয়েছে মহিবুর রহিমের এই কবিতাগলো তাদেরকে কবিতা পাঠের প্রতি নিঃসন্দেহে উৎসাহী করে তুলবে। গদ্যছন্দের প্রতিটি কবিতাই হৃদয়গ্রাহী। ‘মধ্যরাতের জঙ্গলবাড়ি’ কবিতাটিতে কবি একটি অতিপ্রাকৃতিক বর্ণনার মাধ্যমে ইতিহাসকে জীবন্ত করে তুলতে চেয়েছেন–
‘মধ্যরাতে জঙ্গলবাড়িতে পৌঁছে দেখি
প্রকৃতিকে ক্ষত বিক্ষত করছে নিশীথের নৃশংস ছুরি
গভীর নিঃস্তব্দতায় ঝরছে ইতিহাসের করুণ সাদা রক্ত’
কিংবা
’শুধু এক নিঃশঙ্ক চেতনা মসনদে আলা ঈশাখাঁর
স্মৃতি বিজড়িত এই জঙ্গল বাড়ির হিম কুয়াশায়
আমাদের হাতে তুলে দেয় অপরাজেয় ইতিহাসের দায়
যেন আজ আমাদের জন্যে প্রস্তুতি হয়ে আছে চন্দ্রিমার শব্দ ঘোড়া’।
এই যে পংক্তি তা সংগত কারণেই পাঠককে করে তোলে ইতিহাসের প্রতি আগ্রহী। এখানে কবির যে ইতিহাস চেতনাবোধ তা এ যুগের কবিদের মধ্যে দুর্লভ। তার সীমিত কাব্যিক পংক্তির ভেতর এখানে আবদ্ধ যেন জঙ্গলবাড়িতে ঈশা খাঁর পুরো শাসনামল। এখানেই কবি মহিবুর রহিম সমকালীন সব কবিদের থেকে উৎড়ে গেছেন। সৃষ্টি করেছেন সম্মোহক নিজস্বতা। তার ‘বপন’ কবিতায় আছে–
‘সম্ভাবনার উত্তরাধিকারী চাষি আমি
চেতনার বীজ রুয়ে গড়ে তুলেছি নার্সারি
প্রতিদিন বপন করে যাচ্ছি স্বপ্ন প্রেম মনুষত্ব
বপন করে যাচ্ছি দুর্মর স্বাধীন চেতনা’
কিংবা তার ‘মন থেকে’ কবিতায় কবির অসাধারণ ভাষ্য–
যখন একটা মন হয়ে যায় ব্যর্থতার সিদুঁরে আকাশ
বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে ঘরপোড়া কার্বনের দুঃসহ দুর্গন্ধ
সম্ভাবনার দেয়াল থেকে খসে পড়ে পলেস্তারা
আর বার্ডফ্লুতে মরে যায় পৃথিবীর লক্ষ কবুতর…

দারুণ প্রচ্ছদ আর চমৎকার মোড়কে বাঁধাই মহিবুর রহিমের চৌষট্টিটি কবিতা বর্তমান দশকের জন্য এক বিরাট সঞ্চয়। সঞ্চয় বলছি যে কারণে, একটি নিজস্ব সৃজনচেতনার সমন্বয়ে ‘দুঃখগুলো অনাদির বীজপত্র’ পরবর্তী প্রজন্মের জন্য উৎকৃষ্ট চারাগাছ সৃষ্টিতে সহায়ক হবে।

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

সাদ আব্দুল ওয়ালী on ৩টি কবিতা
নয়ন আহমেদ on ৩টি কবিতা
নয়ন আহমেদ on ৩টি কবিতা
সাদ আব্দুল ওয়ালী on লজ্জাবতী ও অন্যান্য কবিতা
সাদ আব্দুল ওয়ালী on লজ্জাবতী ও অন্যান্য কবিতা
রাবেয়া আখুঞ্জী on লজ্জাবতী ও অন্যান্য কবিতা
সাদ আব্দুল ওয়ালী on লজ্জাবতী ও অন্যান্য কবিতা
সাদ আব্দুল ওয়ালী on লজ্জাবতী ও অন্যান্য কবিতা
শামসুল হক এস এইচ নীর on নাকাবা কিংবা বিপর্যয়ের দিনগুলো