কাজী জহিরুল ইসলাম
শতবর্ষ পরে একটি কবিতা নিয়ে আলোচনা হওয়া, লেখালেখি হওয়া অভিনব ব্যাপার। এর আগে কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী কবিতা রচনার শতবর্ষ দেশব্যাপী উদযাপন করা হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘১৪০০ সাল’ কবিতায় লিখেছিলেন ‘আজি হতে শতবর্ষ পরে/ কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতাখানি/ কৌতূহলভরে’। কবিতাটি তিনি অক্ষরবৃত্ত ছন্দে লিখেছিলেন। এবং দূর ভবিষ্যতের পাঠকের কাছে তার প্রত্যাশা ছিল, আগ্রহভরে না হলেও কৌতুহলভরে পাঠক কবিতাখানি পড়বে। হ্যাঁ, আজকের কবিতার ভাষা বদলে গেছে, এখনকার শিক্ষিত পাঠকেরা আগ্রহ নিয়ে রবীন্দ্রনাথের কবিতা পাঠ না করলেও, শতবর্ষ আগের বাঙালি কবিরা কী লিখতেন তা জানার কৌতুহল অবশ্যই তাদের আছে। রবীন্দ্রনাথ এই দূরদর্শীতা দেখিয়েছিলেন, শতবর্ষ পরের পাঠক হয়ত অক্ষরবৃত্ত পাঠে স্থির থাকবেন, এই বিবেচনা থেকেই হয়ত ‘১৪০০ সাল’ কবিতাটি তিনি অক্ষরবৃত্ত ছন্দে রচনা করেন। আজকের কবিরা তার ভাষা পরিহার করলেও অক্ষরবৃত্ত ছন্দে এখনও স্থির আছেন, এই জায়গাটিতে তার দূরদর্শীতার প্রশংসা আমাদের করতেই হবে।
জসীম উদদীনের ‘কবর’ কবিতাতেও যে বেদনারস সঞ্চারিত, তা শতবর্ষ আগের ভাষাতেই উচ্চারিত। সাধুরীতির ক্রিয়াপদ এখনকার কবিরা আর উচ্চারণ করেন না, প্রকৃতপক্ষে আজকের কবিরা পারলে ক্রিয়াপদই তুলে দেন। কিন্তু আজ থেকে শতবর্ষ আগে এই মনোলগের মধ্য দিয়ে যে বেদনাবিধুর এক আবেগ কবি পাঠক-হৃদয়ে সঞ্চার করেছেন তা সেই সময়ের মানুষকে তো আলোড়িত, ভারাক্রান্ত করেছিলই শতবর্ষ পরেও এই কবিতা পাঠ করলে আমাদের চোখ অশ্রুসজল হয়ে ওঠে।
মাত্র বিএ ক্লাসের শিক্ষার্থী তিনি, লিখে ফেলেন ১১৮ লাইনের এক দীর্ঘ শোকগাথা। কবিতাটি ১৯২৫ সালে দীনেশরঞ্জন দাশ সম্পাদিত কল্লোল পত্রিকায় ছাপা হয়। বছরে একটি সংখ্যা ছাপা হলেও কল্লোল পত্রিকাটি সেই সময়ে বাংলা সাহিত্যে একটি যুগের সৃষ্টি করেছিল, যেটি সাহিত্যের ইতিহাসে আজ কল্লোল যুগ নামে পরিচিত। পত্রিকাটি কাজী নজরুল ইসলাম, জসীম উদদীন, বুদ্ধদেব বসুর মতো কবিদের লেখায় উজ্জ্বল ছিল। কল্লোলের প্রথম সংখ্যা ১৯২৩ সালে বের হয়, তার আগেই, ১৯২২ সালে নজরুল বিদ্রোহী কবিতা লিখে বিখ্যাত হয়ে যান। কল্লোল যুগের নায়ক যারা তারা হলেন বুদ্ধদেব বসু, অমিয় চক্রবর্তী, বিষ্ণু দে, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত এবং জীবনানন্দ দাশ, একত্রে যাদেরকে পঞ্চপাণ্ডব বলা হয়। এদের উত্থান কল্লোল যুগে বলে এদেরকে কল্লোল যুগের কবিও বলা হয়। নজরুলও কল্লোল যুগেরই কবি তবে তিনি নিজেই তার প্রতিভা এবং ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য ও সর্বগ্রাসী প্রভাবের কারণে একাই একটি যুগের স্রষ্টা হয়ে উঠেছিলেন। বলা যায় সময়ের নিরিখে কল্লোল যুগ ফুঁড়ে বেরিয়ে এসে তিনি একাই একটা ‘নজরুল যুগ’ তৈরি করেছিলেন। স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের কারণে জসীম উদদীনও কল্লোল যুগের নির্মাণ হয়েও নিজেই একটা স্বতন্ত্র ধারা তৈরি করতে পেরেছিলেন।
কল্লোল যুগের যারা নায়ক তাদের কাছে এই দুই কবি ছিলেন মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দুটি দ্বীপ। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ কালক্রমে সেই দ্বীপকেই বাংলাদেশ বলে শনাক্ত করে। এর প্রধান কারণ হলো তাদের কবিতার শেকড় প্রোথিত ছিল বাংলার জল-কাদায়, যখন কল্লোল যুগের নায়কেরা, এক জীবনানন্দ দাশ ছাড়া, কবিতাকে করে ফেলেছিলেন শেকড়বিহীন সুদৃশ্য স্বর্ণলতা। যারা ইউরোপীয় বৃক্ষের গায়ে জড়িয়ে বেড়ে উঠেছিল, বেঁচে থেকেছিল। সেই শেকড়বিহীন স্বর্ণলতা বাংলা কবিতার বাগান কতটা নষ্ট করেছে আর কতটা শোভাবর্ধন করেছে সেই হিসেব মেলাবার জন্য আমাদের আরো বহুকাল এই বিষয়ে গবেষণা করতে হবে।
জসীম উদদীনের কবর কবিতাটি ১৯২৫ সালে প্রকাশিত কল্লোলের তৃতীয় সংখ্যায় ছাপা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি বিখ্যাত হয়ে যান। শুধু তাই না কবি ছাত্র থাকাবস্থায়ই কবিতাটি মাধ্যমিকের সমমানের তৎকালীন প্রবেশিকা পরীক্ষার পাঠ্যপুস্তকের জন্য গৃহীত হয়। ফলে সারা দেশে বিপুল সাড়া ফেলে দেয়। সেই থেকে পরবর্তী ষাট বছর ধরে, ১৯৮৫ সালের নতুন পাঠ্যক্রম তৈরি হওয়ার আগ পর্যন্ত এই কবিতাটি পাঠ্যপুস্তকে ছিল। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে জসীম উদদীনের কবর এবং পরবর্তীতে তার নিমন্ত্রণ এবং আসমানী কবিতা এদেশের পাঠক মুখস্ত করে। ছাত্ররা নিজে পড়েছে, পিতার মুখে শুনেছে, দাদুর মুখে শুনেছে, ফলে কবর কবিতার বিষয় এবং আবেগ এদেশের মানুষের সাংস্কৃতিক প্রথার গভীরে প্রোথিত হয়ে গেছে। যে ডালিম গাছের তলায় পরিবারের সদস্যদের কবর দেবার শোকগাথা তিনি কবিতায় বর্ণনা করেছেন বাংলার মানুষ তাদের প্রিয়জনের কবরের শিয়রে সেইরকম একটি ডালিম গাছ রোপন করেছে বহু জায়গায়।
কবর কবিতায় এক বৃদ্ধ তার নাতিকে শোনাচ্ছেন নিজের দীর্ঘ জীবনের শোকগাথা। স্ত্রী, পুত্র, পুত্রবধু, কন্যা এবং নাতনী, একে একে পরিবারের পাঁচ সদস্যের মৃত্যু প্রত্যক্ষ করে আজো তিনি একটি শোকার্ত প্রস্তরখন্ড হয়ে বেঁচে আছেন। সবাইকে উঠোনের পাশে একটি ডালিম গাছের তলায় তিনি নিজ হাতে কবরে শুইয়ে দিয়েছেন, সেই পারিবারিক কবরস্থানে দাঁড়িয়ে নিজের পৌত্রকে শোনাচ্ছেন দুঃখের সুবিস্তৃত করুণ ইতিহাস।
নিজের স্ত্রীর কথা দিয়েই শুরু করেন, ‘এইখানে তোর দাদীর কবর ডালিম গাছের তলে/ তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে’। শোকগাথা বর্ণনা করতে গিয়ে নাতির কাছে তাদের রোমান্টিক সম্পর্কের কথাটিও তুলে ধরতে ভুল করেননি বৃদ্ধ। সেই সঙ্গে তখনকার দিনের বাল্যবিবাহের চিত্রটিও ফুটে ওঠে পরিস্কারভাবে। ‘এতটুকু তারে ঘরে এনেছিনু সোনার মতন মুখ/ পুতুলের বিয়ে ভেঙে যেত বলে কেঁদে ভাসাইত বুক’। যুবক বয়সে তিনি ছিলেন বাংলার এক সুঠাম চাষী। লাঙল-জোয়াল নিয়ে মাঠে কাজ করতে যাওয়ার সময় কিশোরী বধুর মুখখানি বারবার ফিরে ফিরে দেখার আবেগ সামলাতে পারতেন না। এই দৃশ্যে অন্যরা মুখ টিপে হাসলেও আমাদের গ্রামীন সংস্কৃতিতে ভাবী স্থানীয় নারীরা তুমুল রসিকতায় মেতে উঠতেন। সেই দৃশ্যটিও তুলে আনতে ভুল করেননি কবি, ‘যাইবার কালে ফিরে ফিরে তারে দেখে লইতাম কত,/ এ কথা লইয়া ভাবি-সাব মোর তামাশা করিত শত।’। কী অপূর্ব দুটি পঙক্তির মধ্য দিয়ে গাঁয়ের বধুর বাপের বাড়ি নাইওরি যাওয়ার বিষয়টিও তুলে ধরেন, ‘বাপের বাড়িতে যাইবার কালে কহিত ধরিয়া পা,/ আমারে দেখিতে যাইও কিন্তু উজান-তলীর গাঁ।’ শোকগাথার মনোলগ হলেও গ্রাম বাংলার জীবন-যাপন কবিতাটিতে বিধৃত হয়েছে একেবারে উপযুক্ত শব্দশৈলীর নিপুন ব্যঞ্জনায়। ফলে গ্রামপ্রধান বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়কে খুব দ্রুত কবিতাটি স্পর্শ করতে পেরেছিল। আজ যারা ঢাকা কিংবা কলকাতার নগর সভ্যতায় জন্মগ্রহণ করছেন, বেড়ে উঠছেন তারা এই কবিতার আবেগকে সেইভাবে ছুঁতে পারবেন না, যদি না পারিবারিক ঐতিহ্যের কারণে গ্রামীন জীবনের সঙ্গে তাদের পরিচয় ঘটে থাকে।
অনেক দিন পর পিত্রালয়ে স্বামীর উপস্থিতি দেখে তরুণী বধু ‘নথ নেড়ে নেড়ে কহিত হাসিয়া, এতদিন পরে এলে,/ পথপানে চেয়ে আমি যে হেথায় কেঁদে মরি আঁখি জলে।’ এলে/জলে একটি দুর্বল অন্ত্যানুপ্রাস যদিও কিন্তু স্বামী-সান্নিধ্যের আবেগ এই পঙক্তিদ্বয়ে দারুণভাবে ফুটে উঠেছে। এরপরই কবি আসল কথাটি বলেন, ‘আমারে ছাড়িয়া এত ব্যথা যার কেমন করিয়া হায়,/ কবর দেশেতে ঘুমায়ে রয়েছে নিঝ্ঝুম নিরালায়।/ হাত জোড় করে দোয়া মাঙ্ দাদু, আয় খোদা, দয়াময়,/ আমার দাদীর তরেতে যেন গো ভেস্ত নাজেল হয়।’ এই চরণগুচ্ছে গ্রাম বাংলার জীবনাচারে যে বাঙালি মুসলমানদের একটা সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে তারও প্রমাণ মেলে, আয় খোদা, দোয়া মাঙ, দয়াময়, ভেস্ত নাজেল ইত্যাদি শব্দগুচ্ছের ব্যবহারে। কবর কবিতায় এটিও জসীম উদদীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তিনি গ্রাম বাংলার মানুষের জীবনাচারে ব্যবহৃত সংস্কৃতিতে ভাষার শুদ্ধতার জন্য আরোপিত শব্দের সমাহার ঘটাননি, প্রকৃত চিত্রটিই তুলে ধরেছেন। এটি একদিকে যেমন কবির সততা অন্যদিকে সাহসেরও ব্যাপার। এক নজরুল ছাড়া আর কোনো কবিই তখনও পর্যন্ত বাঙালি মুসলমানদের সংস্কৃতিকে সাহিত্যে উপস্থাপন করেননি। জসীম উদদীন নজরুলের চেয়েও এই ক্ষেত্রে একটু অধিক কৃতিত্বের দাবীদার, তিনিই গ্রামের দরিদ্র এবং কৃষিনির্ভর মুসলিম সমাজের চিত্রকে কবিতায় উপস্থাপন করেছেন।
নাতির কাছে বৃদ্ধ তার পুত্রের মৃত্যুর কথা বর্ণনা করতে গিয়ে বলছেন, ‘সেই ফাল্গুনে বাপ তোর এসে কহিল আমারে ডাকি,/ বা-জান, আমার শরীর আজিকে কি যে করে থাকি থাকি।/ ঘরের মেঝেতে সপ্ টি বিছায়ে কহিলাম, বাছা শোও,/ সেই শোওয়া তার শেষ শোওয়া হবে তাহা কি জানিত কেউ?’ পুত্রের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েন পুত্রবধু। কৃষক স্বামীর হালের লাঙল জোয়াল জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করতেন কৃষাণী বধু। এই দৃশ্য দেখে গাঁয়ের লোকও আবেগে অশ্রুসজল হয়ে উঠত। যারা বাংলার গ্রামীন জীবনের সঙ্গে পরিচিত তারা জানেন এটিই গ্রাম বাংলার প্রকৃত চিত্র। সহজ-সরল কাদামাটির মতো নরোম মনের অধিকারী গ্রাম বাংলার মানুষেরা পড়শির কষ্টে অবলীলায় অশ্রু বিসর্জন করেন। এই দৃশ্যটি কবি নিপুন এক দক্ষতায় ছন্দবদ্ধ করেন, ‘তোমার বাপের লাঙল-জোয়াল দু হাতে জড়ায়ে ধরি, তোমার মায়ে যে কতই কাঁদিত সারা দিন-মান ভরি।/ গাছের পাতারা সেই বেদনায় বুনো পথে যেত ঝরে,/ ফাল্গুনী হাওয়া কাঁদিয়া উঠিত শুনো মাঠখানি ভরে।/ পথ দিয়ে যেতে গেঁয়ো-পথিকেরা মুছিয়া যাইতো চোখ,/ চরণে তাদের কাঁদিয়া উঠিত গাছের পাতার শোক।’
এরপর একদিন পুত্রবধুও মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। স্বামীর পাশেই তাকে কবর দেওয়া হয়। রাতের ভীতিকর পরিবেশের মধ্যেও কবি গ্রাম বাংলার এক নান্দনিক দৃশ্যের অবতারণা করেছেন দুটো পঙক্তির মধ্য দিয়ে, ‘জোনাকি মেয়েরা সারা রাত জাগি জ্বালাইয়া দেয় আলো,/ ঝিঁঝিরা বাজায় ঘুমের নুপুর কত যেন বেসে ভাল।’
দারিদ্রপিড়িত গ্রাম বাংলার একটি চিরচেনা দৃশ্য বাল্যবিবাহ এবং নারী নির্যাতন। এই চিত্রকল্পটিও বাদ যায়নি সুচিন্তিত এই দীর্ঘ কবিতাটি থেকে। নাতনীর কবর দেখিয়ে তার মৃত্যুর কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে সেই আবহই তৈরি করেছেন কবি, ‘এইখানে তোর বু-জীর কবর, পরীর মতন মেয়ে,/ বিয়ে দিয়েছিনু কাজীদের ঘরে বনিয়াদী ঘর পেয়ে।/ এত আদরের বু-জীরে তাহারা ভালবাসিত না মোটে।/ হাতেতে যদিও না মারিত তারে শত যে মারিত ঠোঁটে।’ বনেদী ঘর দেখে অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশু কন্যাদের বিয়ে দেওয়ার রীতি আজও গ্রাম বাংলার বহু স্থানে রয়ে গেছে। ফলশ্রুতিতে সেইসব কন্যারা স্বামীগৃহে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কবর কবিতার এই পঙক্তিগুচ্ছ সন্দেহ নেই মানুষের বিবেক জাগ্রত করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
সাপের দংশনে নিজের সাত বছরের শিশুকন্যার মৃত্যুদৃশ্য বর্ণনার মধ্য দিয়ে শেষ হয় ৫টি কবরের শোকগাথায় নির্মিত ১১৮ পঙক্তির এই মনোলগ।
জসীম উদদীনের অধিকাংশ কবিতাই ৬ মাত্রার পর্বে মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত। এই ছন্দের দ্যোতনাটিই তার মধ্যে সবচেয়ে অধিক কাজ করত। নিমন্ত্রণ, প্রতিদান প্রভৃতি জনপ্রিয় কবিতা তিনি ৬ মাত্রার মাত্রবৃত্ত ছন্দেই লিখেছেন। কবিতাটি নিখুঁত ছন্দে রচিত হলেও তাতে বেশ কিছু দুর্বল অন্তমিল রয়েছে। বিএ ক্লাসের একজন ছাত্রের রচনা বিবেচনায় আমি অবশ্য এটিকে বড়ো কোনো বিচ্যুতি মনে করি না।
১৯৭৩ সালে বিবিসি বাংলা রেডিওকে তিনি একটি সাক্ষাৎকার দেন, সেটি গ্রহণ করেন সৈয়দ শামসুল হক। সেই সাক্ষাৎকারে তিনি বলে, বিএ ক্লাস পর্যন্ত তিনি গ্রামেই ছিলেন, নিবিড়ভাবে তিনি গ্রামকে অধ্যয়ন করেছেন। তার হৃদয়ে গ্রামীন জীবন এবং গ্রাম বাংলার প্রকৃতিই দোলা দিত সবচেয়ে বেশি। তিনি গ্রামীন জীবনের কথাই তার কবিতায় তুলে আনার চেষ্টা করেছেন সারা জীবন। এবং হয়ে উঠেছেন পল্লী কবি। চরের হলুদ সরিষার খেত যখন বাতাসে দুলে উঠত তার কাছে মনে হত পুরো বালুচর দুলছে। তিনি খুব স্পষ্ট করেই বলেন, অন্যের ভাষায় তো আমি কবিতা লিখতে পারিনি, যখন নিজের ভাষায় নিজের কথা লিখতে শুরু করলাম তখনই হয়ে উঠল। এই সহজ স্বীকারোক্তির মধ্যেই তার গন্তব্য নির্ধারণের কারণ সুস্পষ্ট হয়।
এখনকার পাঠক হয়ত সাধু ভাষায় রচিত জসীম উদদীনের কবর কবিতাখানি ততটা আগ্রহ নিয়ে পড়বেন না কিন্তু এই কবিতায় যে সমাজচিত্র নির্মিত হয়েছে তা জানার জন্য আমাদের বারবারই এই কবিতার কাছে যেতে হবে। সেই সঙ্গে উত্তরাধুনিক কবি/লেখকদের জন্য কবর কবিতাটিসহ জসীম উদদীনের কাব্যভাণ্ডার এক বিপুল সম্ভার। জসীম উদদীনের কাব্যভাণ্ডার খনন করার মধ্য দিয়ে বাঙালি কবিরা সফল উত্তরাধুনিক কবি হয়ে উঠার অনেক রসদ পাবেন বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
হলিসউড, নিউইয়র্ক। ৪ মে ২০২৫
ভালো আলোচনা ।
প্রবন্ধোও জহির ভাই যে শক্তিশালী তার প্রমাণ রেখেছেন।
অনেক ধন্যবাদ ভাই