শুভ্র সাদিক
আজকে আমি কথা বলব, লুৎফর রহমান রিটনকে নিয়ে। এই লোক মূলত ছড়া লেখে থাকে। কিছুদিন আগে দেখলাম, পলাতক স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা তার একটা ছড়া পাঠ করেছে। ছড়াটি পাঠের আগে শেখ হাসিনা লুৎফর রহমান রিটনের নামের আগে কবি সম্বোধন করে। কিন্তু লুৎফর রহমান রিটন তো কবি নয়, তিনি একজন ছড়াকার। আর শেখ হাসিনা যেটা পাঠ করেছিল সেটাও কবিতা নয়, ছড়া।
শেখ হাসিনার হাতিয়ার হিসেবে এখন কাজ করছে লুৎফর রহমান রিটনের মত ছড়াকাররা। কারণ, সাহিত্যিকদের প্রতি মানুষের একটা শ্রদ্ধা কাজ করে। শেখ হাসিনাও ভাবছে, এসব ছড়াকারদের দিয়ে মানুষকে বোধহয় বিভ্রান্ত করা সহজ হবে। সে তাই এই লেখক ছড়াকারদের নিয়েই কালচারালি কিছু করতে চাইছে।
লুৎফর রহমান রিটনের ফেসবুক পোস্ট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তার ধারণায়, তিনি একজন পাঁড় আওয়ামী লীগার। আওয়ামী লীগ তার ধর্ম। এই ধর্মের অবমাননা কিছুতেই করা যাবে না। বাংলাদেশকে শাসন করার অধিকার রাখে শুধু আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের পতনে দেশ উগ্রবাদী জঙ্গিদের হাতে চলে গেছে।
জুলাইতে যে হাজার হাজার নিরীহ ছাত্র জনতাকে পুলিশ গুলি করে মেরেছে সেটা তার কাছে প্রতারণা, ম্যাটিকুলাস ডিজাইন।
লুৎফর রহমান রিটন ছড়া লিখতে গিয়ে লিখেছে,
“জুলাই মানে প্রতারণা
জুলাই মানে ধোঁকা,
জুলাই মানে মিট্টিকুলাস
মৃত্যু থোকা থোকা।
জুলাই মানে আলবদরের
লালবদরের ছানা,
জুলাই মানে বাটপারদের
সংঘবদ্ধ হানা।”
জুলাই তার কাছে প্রতারণা, ধোঁকা, ম্যাটিকুলাস ডিজাইন। জুলাইকে আওয়ামী লীগের কলাকুশলীরা পছন্দ করবে না, এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। জুলাই রিটনদের কাছে গলার কাঁটা। রিটনরা বাংলাদেশকে জমিদারি কায়দায় শাসনের বৈধতা এবং যাবতীয় সাংস্কৃতিক মৎউৎপাদন করেছিল আওয়ামী লীগের জন্য। কিন্ত জুলাই তাদের মসনদ কাপিয়ে দিয়েছিল, এটা স্বভাবতই তাদের পছন্দ হবে না।
লুৎফর রহমান রিটন বাস করে কানাডার অন্টারিও তে। সেখান থেকে বসে বসে আওয়ামী লীগের পক্ষে কালচারাল ন্যারেটিভ তৈরী করেন। আওয়ামী লীগের হাতে অনেক টাকা। শুনেছি, রিটনের দল আওয়ামী লীগ দেশে তার পক্ষে কথা বলার মত লোক খুঁজে পাচ্ছে না। জনরোষে পলাতক গণহত্যাকারী লীগের পক্ষে কেউই কথা বলবে না। এই দলের হাতে আছে, দুই হাজার মানুষের রক্ত, তিরিশ থেকে চল্লিশ হাজার আহতের আর্তনাদ, পনের বছরে হাজার হাজার গুম, খুন, ক্রসফায়ার এবং তিনটা অবৈধ নির্বাচন। রিটন বিদেশে বসে দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার, কুৎসা ও মিথ্যা রটায়। দেশে থাকলে নিশ্চয়ই তিনি এসব লেখার সাহস পেতেন না। নিশ্চয়ই রিটন জুলাই মানে প্রতারণা এসব ছড়া লেখার জন্য টাকা পান।
লুৎফর রহমান রিটন তার বর্ষপূর্তি সাতকাহন নামের ছড়ায় লিখেছে,
“পাঁচই আগস্ট কুলাঙ্গারের
সেকেন্ড স্বাধীনতা!
পাক্সারবাদ পাপের সনে
বাপের কথকতা…”
পাঁচই আগস্ট ছিলো বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা। এটা অস্বীকার করে কেউ বাংলাদেশে রাজনীতি করতে পারবে না। সেখানে তিনি লিখেছেন, পাঁচই আগস্ট কুলাঙ্গারের সেকেন্ড স্বাধীনতা। কত বড় বদমাইশ হলে এ ধরনের লেখা তিনি লেখতে পারেন। ১৬ জুলাই থেকে ৫ ই আগস্ট বিকাল পর্যন্তও পুলিশ গুলি করে যাচ্ছিল। স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল, পুলিশ সরাসরি ছাত্র জনতাকে ফায়ারিং করছে, সেটা তার চোখে পড়লো না, রিটন কতটা অন্ধ, অমানুষ, বিকেকহীন, জানোয়ার, অপদার্থ হলে প্রকাশ্য দিবালোকে মানুষ হত্যাকে সমর্থন করতে পারে।
লুৎফর রহমান রিটন তার ছড়ায় আরো লিখেছেন,
“জুলাই মানে সব অর্জন
ধ্বংস করার প্ল্যান,
কারজাই-এর মতোই নতুন
পুতুল সুপারম্যান…
জুলাই মানে মাতৃভূমি
শ্বাপদসংকুল,
সংখ্যালঘুর আর্তনাদের
দৃশ্য হুলুস্থুল!”
জুলাই অভ্যুত্থান আওয়ামী লীগের পনের বছরের অবৈধ শাসনকে ভেঙে চুরে চুরমার করে দিয়েছে, সেটা মনে পড়লে রিটনদের গায়ে এখনো ফোস্কা পড়ে। যতদিন বেঁচে থাকবে রিটনরা সেটা ভুলতে পারবে না। জনগণের টাকায় পদ্মা সেতু, ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল করে তারা বলে শেখ হাসিনার টাকায় সেসব করেছে, কত বড় মিথ্যুক, ভণ্ড। এদেশের জন্য প্রধানত প্রয়োজন গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসন। এসবের প্রত্যেকটি হরণ করেছিল পলাতক আওয়ামী লীগ। একটা দেশকে নিজের বাপের জমিদারি করে চালাবা আর জনগণ তোমাদের অত্যাচার নীরবে সেসব শয়ে যাবে সেটা তো হবে না। লুৎফর রহমান রিটনদের কথা হচ্ছে, এটা তাদের বাপ মুজিবের দেশ, তারা যেভাবে চাইবে সেভাবেই দেশ চলবে। এখানে কেউ কারো অধিকার নিয়ে কথা বলতে পারবে না। কেউ যদি তার অধিকার নিয়ে কথা বলে সে হবে কিশোর গ্যাং, উগ্রবাদী, জঙ্গি, জামাত শিবির, ম্যাটিকুলাস ডিজাইন ইত্যাদি। রিটনরা বলতে চায়, লীগের পতনে সংখ্যালঘুরা খুব কষ্টে আছে। কিন্তু লীগ পালানোর পর দেখা গেছে, বৃহত্তর মুসলিম কমিউনিটির লোকজন সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় উপসনালয় ও বাড়িঘর পাহারা দিচ্ছে।
ড. ইউনূসকে কটাক্ষ করে লুৎফর রহমান রিটন ছড়া লিখেছে,
“আমি সুদী মাইক্রো মুদি
সুদের করি চাষ,
রোজ প্রতিদিন সুদটা হালাল
হালাল বারো মাস।
টাকার মইধ্যে লেখা থাকে?
হারাম নাকি হালাল?
ফের যদি তুই প্রশ্ন করিস
তুই ফেসিস্টের দালাল…”
কথা হচ্ছে, সুদ কে খায় না, লুৎফর রহমান রিটন কী সুদ খায় না? শেখ হাসিনা কি সুদ খায় না? আওয়ামী লীগের লোকেরা কী সুদ খায় না? তারা কী ব্যাংকে টাকা রাখে না? রিটনরা ড. ইউনূসের কোনো বিষয় নিয়ে টানাটানি করতে পারবে না, সেজন্য সুদ নিয়ে টানাটানি করে।
লুৎফর রহমান রিটন বাংলাদেশের ছড়া অঙ্গনের এক বাতিল মাল। ছড়া পাঠকদের উচিত হবে, এমন একজন দেশদ্রোহী ছড়াকারের পাঠ ত্যাগ করে বাংলাদেশের জনগণের পাশে থাকা।
আমাদের জুলাইবিপ্লবকে ধরণ করে এগিয়ে যেতে হবে।
এটাকে অনুধাবন করতে হবে।
সাহিত্যে এর প্রতিফলন ঘটাতে হবে।
রিটনদের বিপরীতে দ্বিগুণ উদ্যমে কাজ করতে হবে।
লুৎফর রহমান রিটন একজন বিদেশী গুপ্তচর, লীগের পেইড থিংকার এবং ৭১ এর স্বাধীনতার শত্রু। উনারা চান না, এ দেশ স্থিতিশীল থাকুক এবং এগিয়ে যাক।
সবার উচিত,এই অখাদ্য কবিকে (ছড়াকার ও কবি) পরিত্যাগ করা এবং ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলা।