……….
এখন শোক নিঃশব্দ, ধীর
মাসুদুল হক
…………
শোকের কোনো ছবি নেই
এখন শোক নিঃশব্দ,ধীর
ভীষণ ধ্বংসাত্মক হয়ে
বিমানের উড়ালও
মাছির মতো ঢুকে পড়েছে
আমাদের শিশুদের ক্লাসে
…………
শ্বেত কপোত
আশরাফ আল দীন
………….
(মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজের সিনিয়র শিক্ষিকা শহীদ মাহরীন চৌধুরী স্মরণে)
তীব্র যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে এক সময়
শহীদের রুহটা বেরিয়ে এলো নশ্বর শরীর ছেড়ে।
আমি ভেজা চোখের ঝাপসা দৃষ্টিতে যেন দেখলাম,
শ্বেত-কপোতের মতো উড়তে উড়তে আল্লাহর আরশের ছায়ার দিকে
অদৃশ্যমান হয়ে যাচ্ছে রুহটি।
আসমানের ফেরেস্তারা ‘আহলান ওয়া সাহলান’ বলে স্বাগত জানাচ্ছে পরম মমতায়।
প্রশ্ন করা হলোঃ এত সুন্দর নির্ভীক উড়ে যাচ্ছে, কে এটা?
ইনি শহীদ মাহরীন চৌধুরী।
মায়ের মতো দরদী শিক্ষিকা ছিলেন,
হাসিমুখ,
স্নিগ্ধতা ছড়ানো তার বিমুগ্ধ ব্যক্তিত্ব টানতো সবাইকে,
সহকর্মী ছাত্র-ছাত্রী আর তাদের মায়েদের।
আজ হাওয়াটা বড্ড বে-চৈন করা গুমোট!
উদ্ভট অস্থিরতা পেয়ে বসেছিল তাঁকে।
তাই, খানিকটা একা হয়ে ক্লাসরুমে ফ্যান ছেড়ে বসে ছিলেন
আর, চোখ জুড়িয়ে দেখছিলেন সামনের এক চিলতে মাঠে
খেলছিল তার কিছু ছাত্র-ছাত্রী,
ছোট ছোট নিষ্পাপ মুখ,
আনন্দে হুল্লোড় করে খেলছে ফড়িং-এর মতো উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে;
নিষ্পাপ ফেরেশতারা খেলছে যেন ফুলের বাগানে, গুলশানে।
হঠাৎ বজ্রপাত হলো যেন,
কান ফাটানো শব্দে ভেঙ্গে পড়লো একটি বিমান স্কুলের মাঠে!
দাউ দাউ জ্বলে উঠলো হাবিয়া দোজখের আগুন!
হায়! হায়! আমার ছেলেমেয়েগুলো কই গেল?
তাড়াক করে লাফিয়ে উঠলেন মাহরীন।
মুহূর্তে ঝাঁপিয়ে পড়লেন অগ্নিকুণ্ডের ভেতর।
যেভাবে স্থির লক্ষ্যে ঠোঁট বাড়িয়ে প্রচন্ড বেগে পুকুরে ঝাঁপিয়ে পড়ে মাছরাঙ্গা!
তিনিও একটি বাচ্চাকে দু’হাতের ঠোঁটের ভেতর জাপটে ধরে বেরিয়ে এলেন খোলা বাতাসে।
ওখানে তো আরো অনেক শিশু আহত হয়ে আটকে আছে আগুনের ভেতর!
একটিকে রেখে আবার ছুটলেন তিনি!
সাহসের তলোয়ার হাতে অশ্বারোহী দুঃসাহসী সুলতান রাজিয়া যেন!
দুইটি-তিনটি-চারটি–
মাহারীনের ওড়না ও জামায় আগুন ধরে গেছে।
ড্যাম কেয়ার তিনি!
নয়টি-দশটি-এগারোটি–
নির্দয় আগুনে ভস্মীভূত মাহরীনের চুল, শরীরের চামড়া ও কাঁচা গোস্তে দাঁত বসিয়েছে গনগনে আগুন।
মাহরীনের একটাই লক্ষ্যঃ নিষ্পাপ মুখগুলোকে আগুনে ঝলসানো থেকে বাঁচানো!
নিজের যন্ত্রণা বোঝার সময় কই?
সতের-আঠারো-উনিশ–
বিশ নম্বর শিশুকে অগ্নিকুণ্ডের বাইরে এনে
আর দাঁড়াতে পারেননি মাহরীন চৌধুরী।
জ্ঞান-অজ্ঞানের ঊর্ধ্বে উঠে তিনি এই মুহূর্তে পেয়ে গেলেন শ্বেত-কপোতের ডানা,
নশ্বর শরীরটাকে ছেড়ে স্মিত হেসে উড়ে গেলেন
সকলের দৃষ্টির প্রান্ত সীমার দিকে! শাহাদাতের তামান্না কতটা নিঃশঙ্ক নির্ভীক করে তোলে কাউকে!
বিশ্ব দেখুক আমাদের মায়েরা বোনেরা কতটা সাহসী দুর্বার ও দরাজদিল।
মিরপুর, ঢাকা ২২/০৭/২০২৫
………..
ফুটফুটে মুখ গুলো
তূয়া নূর
………..
পাখির মতো উড়বে তারা হয় নি মেলা পাখা,
এপার ওপার পাড়ি দেবার আকাশ খুলে রাখা।
ফুটফুটে মুখ ফুলের মতো স্বপ্ন ছিলো জুড়ে,
হয় নি ফোটা আগুন লেগে পাপড়ি গেছে পুড়ে।
রঙে মাখা পাপড়ি গুলো পুড়ে হলো কালো,
কোন পাখিরা ডানা ভরে আনবে ভোরের আলো?
কতো মধুর কিচিরমিচির— ‘মা’ বলে ডাক মুখে,
সারা জীবন কষ্ট লালন পাথর চাপা বুকে।
……..
আহা
নয়ন আহমেদ
……..
এই কবিতাটি দাঁড়িয়ে আছে একটি ধ্বংসের হৃৎপিণ্ডের ওপর।
দিয়াবাড়ির পেটের ভেতর
মাইলস্টোন স্কুলের বুকের মধ্যে
উড়োজাহাজের উগড়ে দেওয়া গলিত আগুনের মতো
অশ্রুপাত নিঃশ্বাস নিলে
নেমে আসে ধানের চেয়ে বস্তুত আরও অনেক ধান
আরও অনেক কল ও কারখানার ধোঁয়াসম্রদায়
মানুষের বোকামির কতো উচ্চতা
একটি পোড়া ভূগোলের
রোদহীনতার গল্প
বিপর্যয় হাত-পা মেলে দিয়ে হুড়মুড় করে ছুটে আসে।
আহা!
ভাষাও কখনো কখনো চুপ হয়ে যায় ।
তার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে।
ফুল ফোটে না আর।
এই কবিতাটি পুড়ে পুড়ে ছাই হচ্ছে
— যেমন সভ্যতা।
কান্না কি তবে একটা বঙ্গোপসাগর?
২২ জুলাই ২০২৫
কবি মাসুদুল হক, আশরাফ আল-দিন এবং তুয়া নুর —এদের কবিতা পাঠে আনন্দ পেলাম ।।
মাসুদুল হক এই কবিতায় স্বল্পভাষী।
তিনি মানবসৃষ্ট বিপর্যয়ের কথা তুলে ধরেছেন
কবি আশরাফ আল দীন মাহরীন চৌধুরীর আত্মত্যাগকে মহীয়ান করে তুলেছেন।
তুহানুর —এর ভাষা হৃদয়গ্রাহী।