মধুমৌমাছি ওড়া শহর
মধুমৌমাছি ওড়া এ শহর জানে
আলু ও বাদামক্ষেতের দিকে
ধাবিত হওয়া পতঙ্গরা জানে সাপের মতো কুন্ডলী পেচে
বসে থাকা
পাকস্থলীর ঘুম ও খিদেরা জানে
পাখিদের ছড়ানো ছিটানো
মৃতদেহ জানে
জানে গর্তজীবি কেঁচো ও কাঁকড়া।
সাপ ও শামুক স্বভাবের
মানুষরাও জানে।
কি জানে ?
জানে তারা জানে,
এ দমকা হাওয়ায়
অন্ধ হয়ে যাচ্ছে বালিপুস্তক ও তামাটে রঙের
বিজ্ঞ উদ্ভিদের চোখ।
ধুলোর মাঝে লুটোপুটি খাচ্ছে ঝিনুক রাত্রি।
অনুভূতিগুলো হয়ে যাচ্ছে মর্মরমূর্তি।
মানুষের অন্নের থালার পিঠে
বসছে
রাসায়নিকের হাটবাজার ।
হয়ে যাচ্ছে অন্ন, প্রেম
ও জীবন
রঙীন তাসের জোকার ।
হয়ে যাচ্ছে
বিষাক্ত সাপের লকলকে জিভ।
কচি কচি ঘাসের ফুলপাতা
অপার মাতৃত্বের নদী
বনজঙ্গল ও পাখিরা
হয়ে যাচ্ছে প্রকৃতির
অবাধ্য সন্তান !
মানুষের অন্নের গল্পে
মিশে যাচ্ছে
অশুভ আগুন।
অজৈব সার দিচ্ছে উঁকি
সারা মুখে তার খরস্রোতা
ঘামের নদী।
কে তুমি সাজাচ্ছ
ঘরদোর ও বিছানা
ঘনিষ্ঠ প্রহরে
ক্লোরোফিলের সংসার
বিছিয়ে দিচ্ছো গাছের নীচে –
মাটির পিদিম জ্বেলে ?
ভাল করে চেয়ে দ্যাখ,
সবুজ শেয়ালরা রাখছে নজর ঠুনকো জানালার কাচে।
নাগরিক হতে চাওয়া
ধূলিকণা আসছে উড়ে
ঘোলা জলের এই
ফাল্গুনরাতে।
দুই
এলজিইডি নির্মিত পাকা রাস্তার কোমল ত্বক খানাখন্দে ভরে উঠলে, জংলী অজগর হয়ে ভেংচি কাটে অনিয়মের নিরুপায় জনজীবনকে। মুখের মেকআপ গলে গলে পড়ে প্রখর সূর্যের ঝিরিঝিরি আগুনে হাওয়ায়।আপাতদৃষ্টিতে বুদ্ধের মতো ধ্যানমগ্ন তামাটে ইটগুলো শুষে নেয় আকাশের উড়াল রঙধনু রঙ।শুষে নেয় তামাটে মাটির ঘুম। মাছরাঙাদের অনিন্দ্য চোখের থিকথিকে আলো। একদা এক গ্রামীণ বালিকার বিবাগী অন্তর চেয়ে থাকে আনমনা মেঘবাড়ীর দিকে । চেয়ে থাকে মাছদম্পতিদের দিকে।
চিকচিকে ধুলোওড়া সে দেহ …. পোড়া মাংসের শরীর, শুকনো সজনেপাতার মতো মন… ভাতের হাড়ির সাথে পুড়ে পুড়ে হয়ে যায় কুমোরপাড়ার মাটির চুলোতে জ্বলতে থাকা বাউলা আগুন ।
.. শীতের সন্ধ্যেয় কালো কুয়াশায় মুখ ঢেকে রাখা নাগরিক বৃক্ষ – লতাপাতা, কংক্রিটের উত্তপ্ত বুকের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়া শীতল আত্মার বাতাস, ঘাস ও রুপকথার ঝুড়ি থেকে পালিয়ে আসা কালো বিড়ালের ঝাপসা চোখে চোখ রেখে, প্রাগৈতিহাসিক চাঁদের কোলে মাথা রেখে… . থই থই জলে পা ডুবিয়ে, সন্ধ্যার অনুরাগে আর সে হয়না জোনাকী। … অলস ঘুম ও বিচ্ছিন্নতার হাতে নিজেকে সঁপে দিয়ে, পড়ে থাকে সে অচেনা ভুগোলের এক কা-লী-দ-হ ঘা-টে।
প্রস্তর যুগ তার জন্য বয়ে আনে ধাতব রাত্রি। বয়ে আনে মুঠো মুঠো মৃত পাখির পালক। নিয়ে আসে উড়াল মাছের মতো কিছু দ্রবীভূত কান্নার উপকরণ।
এইযে রাত, অনন্ত রাত… অন্তিম জীবনের রাত… অনেক অন্ধ পাখপাখালি ও নিথর সমুদ্রের রাত… আকাশের দেহ থেকে নীলচে আভার পলেস্তরা খসে গেলে
সময়ের তলপেটে শুয়ে শুয়ে কালো বাতাসে উড়ে বেড়ানো কালো কাকের মতো এ সভ্যতার বিরুদ্ধে করে অসভ্য চি-ৎ-কা-র।
সে জিভ, সে শরীর, সে চিৎকার, সন্ধ্যার অন্ধকারে চোখ ঢেকে, কোন ভাষায় কথা বলে ? সাদা রোদ নাকি কালো কুয়াশার ? জানিনা সে শয্যা খোঁজে কিনা মানসিক হাসপাতালের। ক্ষুধা কি তার রাজত্বে উড়োমেঘ হয়ে ওড়ে ?
ক্ষুধা তুমি, জয়নুলের মায়ের সোনার হার খেয়েছ। নজরুলের ব্যাকুল কাব্য প্রতিভাকে সুতীব্র অনলে দাহ করেছ। সুকান্তকে অকাল মৃত্যুর বিছানায় শায়িত করেছ। এবার আমার দিকে তোমার রঙিন দু’হাত বাড়াও ….
অঘ্রাণের নবান্নের দুপুরটা আমিষবিহিন ভাতের থালায় উপুড় হয়ে শুয়ে থাকুক। ওর ধানের ঘামে ভেজা শরীর, শস্যরঙা দেহের সব রোদ তুমি নিংড়ে নিংড়ে নাও।
ক্ষুধা তুমি মনেহয় ডিহাইড্রেশনের রোগী। নুন মেশানো টেস্টি স্যালাইন খাও। ঝরা বকুলের কান্না খাও। পদতলের মাটি খাও। মানুষ নামের উড়াল পাখিগুলোকে চিবিয়ে চিবিয়ে খাও। মেঘ আর নীলিমার জ্যুস খাও। চায়ের দোকানের বাসি চা’পাতা খাও। বিলম্বিত পে-স্কেলে আমাদের অপেক্ষার চোখগুলো সুন্দরবনের হিংসুটে অজগরের মতো গিলে গিলে খাও। তবে …..
আমার মায়ের হাতের রুপকথার তালপাখার বাতাস খেওনা। বৃক্ষলতা আর ভালবাসা খেওনা।
গাছে গাছে পাখির কলকাকলি খেওনা।
নদীতে নদীতে উছলে ওঠা জোয়ার খেওনা।
ক্ষুধার রাজ্যে … অগোছালো দিন কাটে গতানুগতিক
বৃক্ষের ডালপালা … কাঁদে একটানা
ক্ষুধা তুমি … সমস্ত নগরী জুড়ে বিস্তৃত মাঘী পূর্ণিমার গল্পগুলো খেওনা। মানসিক অঙ্কসূত্রগুলো খেওনা।
শুধু মোহের পুস্তকে উড়ে উড়ে আসে বিষণ্ন সকাল।
… মগজের সচেতন কোষ ঠাঁই খোঁজে পুণ্ডবর্ধন নগরীতে … মুসাফির ঘুমের পাড়ায় পাড়ায়। মনসার সাপের ভয়ে বসে থাকে মেঘনদীর পিঠে । কে জানে কতটা চেতন … কতটা অচেতন … কতটা … গ-ভী-র ঘু-মে। জনসমুদ্রে জড়তা নিয়ে বেঁচে আছি এ কোন লাশের শহরে। মৃত আকাশ চলে গেছে মৃত্যুর অতলে। বনবাদুর পাখার বাতাসে মনেহয় অতল জলের ঢেউ পেরিয়ে, হতাশা ও ধোঁয়াওড়া মাঠ ভেদ করে, তুমি এলে ফিরে।
না, নেই।
চিনামাটির চায়ের কাপে চিনি ছাড়া সাদা গুঁড়োদুধের চা গুলো বিড়ালছানার মতো মিউমিউ করে ডেকে ওঠে !
থৈথৈ জল ও রোদ বীজ তাকায় দু’চোখ তুলে।
এ দেহ … নিয়ে যাও দূর্বাঘাস জন্মানো শরীরের ইতিহাস … এ নিঃশ্বাসের জোয়ার নিয়ে বন্ধুর পথ অতিক্রম কর জড় সভ্যতার মন্থর শকুন। এ শরীর … নিয়ে নাও অন্তিমকাল। এ শরীর নিয়ে খেলা করুক, … ‘ পাখী সব করে রব রাতি পোহাইল গানের কলরব। ‘
এ শরীর … নীলাভ শিখার মতো জ্বলতে জ্বলতে তুলুক অশরীরী সুর। এ শরীর …নিয়ে রাতভর ডাকুক ডাহুকের ডাক।
এ শরীর … হয়ে উঠুক নদীর উজান । এ শরীরের… মানস সরোবরে ডুব দিয়ে তুমি তুলে নাও, স্বপ্নের নীল শামুক ঝিনুক। এই শরীরের… গ্লাস উপচিয়া পড়ছে দ্যাখ, প্রশান্তির মাটির ঘর ও স্বপ্নের প্রবাল। এ শরীর… স্বপ্নের ধান ভাঙতে ভাঙতে, ইঁদুরের গর্ত থেকে ক্ষুদ কুঁটো কুড়োতে কুড়োতে হয়ে পড়েছে পেরেশান
এ শরীর … এক শকুন কুকুর
এ শরীর এক … ক্রুদ্ধ জেরুজালেম।এ শরীর …এক রাগান্বিত মাহমুদ দারবিশের দেশমাতৃকার কবিতা ।
এ শরীর… এক নিমজ্জিত প্রেতলোকের গল্পে গল্পে কেটে যাওয়া রাত।
শরীর… তুমি মাতাল, অসভ্য জানোয়ার। এ দেহ …তুমি মৃতহীরক বিষের নহর । আর প্রেম …
প্রেম … তুমি সক্রেটিসের হেমলকের নীলরঙের সাপ। কবিতা … তুমি আল্লামা ইকবাল, শেখ সাদী, কলম্বাস, ইবনে বতুতা, মাওলানা ভাসানীদের সহস্র জীবনকাল । শরীর … তুমি তথাকথিত গাড়লে ভরা বুদ্ধিজীবিদের দালাল !
না, না, না –
ও হ্যাঁ, শরীর- ই এ জীবন ঘনিষ্ঠ পত্রিকার একমাত্র মহামান্য সম্পাদক।
উফ্, প্রেম হলো বিপন্ন উদ্যানে অন্ধকারের বুক ফুটো করে দাঁড়ানো সোনালী বকের হলুদ নদীর তীরে, শীত আর শিশিরের জলে ভেজা শিরীষের অথবা কালো জামের বন ও জঙ্গলের মাঝে চুপি চুপি নেমে আসা জোসনা রাতের অমৃত আস্বাদ !
তিন
পারদ বাতাসে কে যেন দোলা দেয়
অথচ যেদিকে তাকাই অবসাদমাখা জল আর জল।
প্রেম, তুমি এখনো হতে পারনি, নতুন পৃথিবীর চারা। হতে পারনি ভাতের থালায় লবনের একটুকরো দানা। আজন্ম তুমি কাঁচে ঘেরা নদী। হতে পারনি নীল রোদ্রমুখী। একটা অচিন বৃক্ষের মতো দাঁড়িয়ে থাক দীঘির অন্ধকারে। আমার সমস্ত বাতাস ভরে গ্যাছে দ্যাখ, সীসাগন্ধে। মিথেন পোড়া মেঘ কিচিরমিচির করে ভোরের জঙ্গলে।
চার
জীবন কতটা চেনা তোমার ? কতটা ? যতটা কয়লা চেনে জ্বলন্ত আগুনকে ? ভাইরাস জ্বর চেনে কোন শরীরে হানা দিলে রক্তধারা টগবগ করে ফুটে উঠবে? জীবন ও প্রেম, তোমরা রাজকাহিনী হতে পারনা। আমি গলিত আত্মার পুকুরের ভেতরে ডুব দিয়ে দেখেছি বিস্ফোরক দ্রব্যের মতো, বাদুড়ের ডানার মতো, জলঝিনুকের পাকস্থলীর মতো, তোমরা কেবলি এক তুমুল অন্ধকার।
পৌরাণিক পাখি
কথোপকথন – ১
রাত ও আমি মুখোমুখি দুজন।
ধুলোওড়া চোখে, দু’চোখে ডানা ঝাপটিয়ে চলে যায় ফালি ফালি হওয়া বসন্ত ও শীতঋতুর পাখিময় বিকেল। শিমুলগাছটার দিকে তাকালেই বুঝতে পারি, ওর ডালপালার চৌহদ্দিতে জাকিয়ে বসতে চাইছে মরচে পড়া আয়ু।
আমি ঈ-শ্ব-র দেখিনি, দে-ব-তা দেখিনি। কার সাথে করবো, কুশলাদি বিনিময় ? তাই ভুল অন্ধকারের বালিশে মাথা রেখে, জন্মান্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে সহস্র জীবন …
কাশ্মীর, আফগানিস্থানের গুমোট আগুনে আগুনে তেতে উঠে আধপোড়া খনিজ শরীর।
আমি জীবনের জন্মপরিচয় খুঁজি …
নিঃশ্বাসে মৃত্যুগন্ধ নিয়ে শুয়ে থাকা লাশটিকে উল্টায়ে বলি, মৃত্যু – তুমি কে ?
দুপুর রোদে হাসে মৃত্যু।
জ্বলন্ত দেহ আর লাল চোখ নিয়ে বলে, সীমাহীন তাপের আগুনে তোমার নিজস্ব রাত্রি জ্বলে গেলে, আলেয়ার আগুনের ঢেউ বুকের কাপড়ে মুছে দিলে দেখতে পাবে, আমি হয়ে গেছি, তোমার হাতের রঙতুলি। আর্টখাতার প্যাস্টেল, স্প্যাচুলা ।
আমার স্নায়ুর পালকীতে চড়ে দেখতে যেতে পার ঈ-শ্ব-রে-র ঘরবাড়ী।
মহামান্য ঈশা- যিশু, নুহুনবী, তাওরাত যাবূর ইনজীল ও বাইবেলের পৃষ্ঠা যেন রুপালী ফিতার ঢেউ। আমাদের পোড়া ফুসফুসের কি সাধ্য তাঁদের মহিমান্বিত প্রসাধনী অন্তরে মাখি ! এমনি আনাড়ি আমি বা আমি তুমি –
হায়রে অন্ধ চে-ত-না-পা-খি । হায়রে অন্ধ ব্যক্তিত্ববিজ্ঞান। কীভাবে যেন ভুল গ্রন্থপাঠে মগজের ভেতর ভুল অক্ষর ওড়ে । ভুল ময়শ্চারাইজারে ঠোঁট যায় পুড়ে পুড়ে। এখনো কি ফোরাত নদীর পাড়ে বসে ভুল সংবিধান লিখছে এজিদ একাকী ?
ঠোঁটে ক্ষুধা নিয়ে একটি পাখি দৌড়ে এসে বলে, খড়বিছানো মাটির মেঝে, শস্যে বোনা মায়ের মুখ, ঝাঁকের পর ঝাঁক কাদামাটি, পুকুরের গহীন তলদেশে লুকিয়ে থাকা নীল কাঁকড়া, জোনাকিরঙা মাছ, বাদলার দিনে ডাল-খিচুড়ি ও ইলিশ মাছের ডিম, শীতদুপুরে ঝিম মেরে শুয়ে থাকা নদীর জল
টোকাইয়ের কুঁড়েঘর …
এলোচুলে ওড়া কবিতাময় বিকেল …
ও মানুষের চেতনা
খুন হয়েছে খুন !
কে বা কারা সেই গণহত্যাকারী ?
জবাব দাও প্রাচীন বেথেলহেম, জবাব দাও বাইবেল, জবাব দাও প্রাচীন হরপ্পা, জবাব দাও পুবের ও পশ্চিমের সব দেশ, জবাব দাও পুণ্ডবর্ধনের চৌচির হয়ে যাওয়া ঐতিহাসিক তামাটে মাটির উল্কাময় ইট।
খুন হয়েছে চাঁপাফুল, সখার বুকের রাঙাগোলাপ। খুন হয়েছে ভাগে পাওয়া স্বাধীনতা।খুন হয়েছে কার দাপটে, নুনমেশানো ভাতের থালা ?
ভুল হয়েছে বৈষম্যের এই আলোকসজ্জার নগরীতে মরা বৃক্ষের ডালে , গরিব জলচড়ুই পাখি হয়ে জন্ম নেয়া।
কান পেতে শুনি – ঘাসে ঘাসে, পাহাড়ে ও জলে,
ফাল্গুনের কুহুতানে, মানুষের এপিঠ ওপিঠে
শুধু দুঃখবীজের ঘননিঃশ্বাস ফেলা
তবু আমি ক্ষুধা ও মিছিলের নীল দিগন্তজুড়ে, ওই স্বপ্নীল ঝিনুকের ডানামেলা শরীরে, পেতে রাখি স্বপ্নের ডালপালা মেলা দু’হাত। নগরীর পথে পথে রোপণ করি সাম্যের বৃক্ষ লতাপাতা। শিকড়ে ঢেলে দেই অথৈ শিশির। চোখের ভূমধ্যসাগর সেঁচে উপুড় করে ঢেলে দেই অজস্র জলধারা, শ্বাসপ্রশ্বাসের রক্ত, , সাঁকো সুড়ঙ্গ ও বৈশাখী মেঘের বৃষ্টিকনা। হায়রে জগত – কে শোনাবে আমাকে লতা ও গুল্মের মোহন বাঁশী ? কে শোনাবে আকাশপরী ও ঘাসফড়িং দের মাস্তি ? আমার মরণ চিতার উপর উপর কে বিছিয়ে দেবে রে নতমুখী ভাটিয়ালী গানের সুরের উল্লাস ? কেমন করে মানুষ হবে অনিয়মের নীল স্রোতে আর ঢেউয়ে ডুবতে থাকা আমাদের বখে যাওয়া সন্তান ? কোথায় সে অমিততেজী নীল তরোয়ালের ঘোড়সওয়ার ?কোথায় আলীর বীরবিক্রম ?
আশ্চর্য,….. এ মায়ামোহের শরীর উড়ছে নীলাম্বরী মেঘের কোল ঘেঁষে। জঙ্গলের পাখির ঘর থেকে নেমে আসছে ঘুম। টেবিলে জলের গ্লাস, তবুও ঘরে আসেনা প্রশান্তির নীল জোসনামাখা পরী। কথা বলেনা উজানগাঙের গ্রাম। পৌষময় পথ অজগরের মতো হাঁ করে, জিরাফের মতো হলুদ রঙের মিশেল লম্বা গলা মেলে, গিলে গিলে খাচ্ছে কুয়াশার লাশ।
… যাঃ, এত রাতেও খেলুরে জল সাপের মতো, হলুদ পাখির ডানার মতো দোলনায় দোল খাচ্ছে আকাশের আদুরে মেয়েটি ,যার একাধিক নাম থাকলেও সবাই ডাকে চন্দ্রিমা বলে।
ও চন্দ্রিমা, ও রক্ত- মাংসের চাঁদ
ও পাখি, ও পাখিনী – ও হাতে বুকে পিঠে বেদনার উল্কিমাখা অন্ধকার
আমি জেগে আছি অনন্তকাল ধরে
ফড়িং হয়ে সংসার পেতেছি ঘাসবনে