চোর কিংবা তোর শরীরে লুকিয়ে রাখা উষ্ণতা খেয়ে বেড়ে উঠা ভয়
সারাটা শহর উষ্ণতা খুঁজে খুঁজে ফিরে গেছে সংঘের চাকুরে।
শহরের কোথাও আর এততুকু উষ্ণতা নেই।
আগুন নেই।
রোদ নেই।
রেড ওয়াইনের গ্লাসে করে রোদের অবশেষটুকু নিয়ে গেছে আমেরিকান জাহাজ।
হোয়াইট হাউস উষ্ণ হবে। তারপর আবার ব্রুম ব্রুম …
আমি প্রচণ্ড শীতার্ত বাঁকা হেসে তোকে স্পর্শ করি …
তোর বন্দরেও কোন জাহাজ এসেছিল চুপি চুপি, কাল রাতে !
আব্বা নিমগাছ ভালোবাসেন
আব্বা ঘুমুচ্ছেন। আমি আব্বাকে খুব ভালোবাসি। আব্বা আমাকে খুব ভালোবাসেন। আমি আব্বাকে মুরগীর রান খাইয়ে ঘুমিয়ে দিই। আব্বা ঘুমুলে অফিসে যাই। আব্বা ঘুমুচ্ছেন। আব্বার কিডনীর রোগ। সিআরএফ রোগী। চারটে অপারেশন হয়েছে। শরীরে তাই অনেক ব্যথা। আব্বার শরীরটা ম্যাসেজ করে দিই। আব্বা আরাম পান। আমি আব্বার কপালে চুমু খাই। আব্বা ঘুমোন। আব্বা ঘুমের ভেতর স্বপ্ন দেখেন। আব্বা হাসেন। তাঁর হাসি দেখে আমার কষ্ট হয়। আব্বা আগের মতো জোরে হাসতে পারেন না। আব্বা ঘুমোন। ঘুমের ভেতর স্বপ্ন দেখে হাসেন।
আব্বা ঘুমোন। আমি স্বপ্ন দেখি। ঈদের নামাজ পড়ে আব্বার সাথে কোলাকুলি করি। আমাকে বুকে জড়িয়ে আব্বা সুখ পান। আব্বাকে বুকে জড়িয়ে আমি সুখ পাই। আমি আগের মতো জোড়ে হাসতে পারি না। আমি ঘুমোই। ঘুমের ভেতর স্বপ্ন দেখে হাসি।
আব্বা আমাকে খুব ভালোবাসেন। আব্বা নিমগাছ খুব ভালোবাসেন।
আমি আব্বাকে খুব ভালোবাসি। আমি কবরস্থান খুব ভালোবাসি।
আব্বা ঘুমুচ্ছেন। আব্বা আটসাল ঘুমুচ্ছেন। তাঁর কবরে নতুন করে মাটি ফেলি। মাথার কাছে একটা নিমগাছ লাগিয়ে দিই। আব্বা সিআরএফ রোগী। শরীরে অনেক ব্যথা। আমি শরীরটা ম্যাসেজ করে দিই। আব্বা আরাম পান। হাসেন। আব্বা আগের মতো জোরে হাসতে পারেন না। আব্বা ঘুমোন। ঘুমের ভেতর স্বপ্ন দেখে হাসেন।
একটা নতুন মানচিত্র হবে দুগ্ধবতী গাভীর বিপরীত
হাড়ের দৌরাত্মে মা শান্তির লবণ হারিয়েছে- দুর্ভিক্ষের হাট। ত্রান নিয়ে এবার বেরিয়ে পড়বো।
যে হাড়গুলো শুয়ে আছে মা’র কোলে তাকে বোন বানাতে মরুর কৌশলপত্রে স্বাক্ষর করি। এবার ত্রান নিয়ে আমরা বেরিয়ে পড়বো। দুধের সংকটে ঘুমাও ক্ষুধার চোয়াল নিয়ে ছোট্টবোন সাবসাহারা।
দুধের নগর নিয়ৈই আমরা বেরিয়ে পড়ি …
নাসপাতি চুম্বন তাড়া করে তাকে বিস্তির্ণ জলের সান্নিধ্য। তার জন্য জলের ভাতার নিয়ে আমরা বেরিয়ে পড়বো। রুটির বাজার বসিয়ে বিনিময় হবে দাসত্বের তিলক। আর এখন প্রার্থণা ও দয়ায় হাড় ও অস্থিগুলো অসুস্থ পরস্পর। আমরা উপযুক্ত দাওয়ায় নিয়ে বেরিয়ে পড়বো। সাবসাহারা গিলে খাক দুর্ভিক্ষের হাট। আর মানবিক কাঁচুলি খুলেই আমরা বেরিয়ে পড়ি …
( এখানে ভাঙা মাস্তুল, কীভাবে প্রাণময় করি আশার সাঁতার-
কেবল ডুবে ভাসে আহা সনাতন সাবসাহারা।)
আমাদের ত্রান কোনদিন পৌঁছে না
জলের সান্নিধ্য, দাওয়ায় কোনদিন পৌঁছে না
আমাদের কান্নাগুলো কোনদিন পৌঁছে না
তবু পরমায়ু পেয়েছে বোন। হাড় গুনে গুনে সযত্নে রাখি তার রুটির বিকার সভ্যতার ব্রেকফাস্টে …
জন্ম
রাত বাড়ে।
রাত বাড়লেই ক্ষুধা বাড়ে। কামনা বাড়ে। তখন ডাহুকের ডানার মতো তোমাদের বেহায়া ভঙ্গিমাগুলো পড়ে সংবেদনশীল কুয়াশাপ্রিন্টের শাড়ি। বসন ভেঙে ভেঙেই তারপর তৈরি হয় যাবতীয় উত্তেজনা। আমি প্রলুব্ধ হই। প্রলুব্ধ হতেই কামনার থালাগুলো হয়ে ওঠে সহস্রাব্দের পশ্চিমাজোট।
রাত বাড়ে।
রাত বাড়লেই ঘুমের আধিপত্যে বাড়তে থাকে একটি দুঃস্বপ্ন। রক্তের নাগাসাকি গড়িয়ে দাজ্জাল চুরি করে নিয়ে যায় তেলের মানচিত্র। সারাংশে দাঁড়িয়ে অট্টহাসেন স্বয়ং ঈশ্বর। ঈশ্বর একজন খুনি। মানুষের রক্তে তখন মানুষের জন্য তিনি প্রযুক্তি বানাতে ব্যস্ত।
রাত বাড়ে।
রাত বাড়লেই একটি ক্রন্দন শোনাতে থাকে বারুদের গদ্য। জীবনের এবড়ো থেবড়ো উঠোনে তখন প্রজননক্ষমতা হারাতে থাকে তেইশ জোড়া ক্রোমোজম, ক্রমশ …
রাত বাড়ে।
রাত বাড়লেই প্রার্থনারত একটি বৃক্ষের প্রশাখাসমেত হিমছায়ায় বসেন একজন কবি। কন্ঠে তার স্বরচিত মুক্তির মিছিল; অঙ্কুরোদগম হতে থাকে পৃথিবীর শেষ বোমা …
রাত বাড়লেই এখন পাখিদের ঠোঁটে ঠোঁটে ছুটে আসে আগামি ঈশ্বর; দ্রুতবেগে অমায়িক …
সুমন সৈকত
অপেক্ষায় ভেঙে গেলে ওজনস্তর একদিন সুমন নিরাশ হবেন। তখন বৃদ্ধ হয়ে পড়বে
আপনার সকল সময়। প্রশ্রয়ের খাতা থেকে একে একে কেটে পড়বে বেতনের মতো
কিছু আবেগ। তখন জনশুন্য হবে আপনার সকল সভা। সকল ঘুড়ি উড়ে যাবে,
মার্চ হবে বিজিতের পথে। তখন আপনি কাঁদবেন। আপনার চোখের নায়াগ্রা বিপক্ষের গ্যালারিতে দেবে হাততালি। আকাশ চৌচির করা কান্নায় একে একে খুলে পড়বে জেদ, সকল ভ্রান্তি। আর আমি তখন তেতাল্লিশে …
এখন আপনি তেত্রিশে। অন্তহীন জমিন আপনার পায়ের তলায় আকাশ নামিয়ে রাখে সকল ক্ষমতা।
এখন আপনি তেত্রিশে। দুপুরের চোখে চোখ রেখে আপনার একটিমাত্রই স্থিতবাক্য, ‘হও’।
এখন আপনি তেত্রিশে। চাঁদ থেকে চুরি করে আনেন প্রণয় আর চন্দ্রাচ্যুত আলোয় আপনার খুৎবা
মন্ত্রমুগ্ধের মতো মানুষকে কাতারে দাঁড়িয়ে দেয়।
এখন আপনি তেত্রিশে। আর তেতাল্লিশে আমার প্রস্থাণ …
এখন আমি তেত্রিশে। আপনার জন্যই একটি কবিতা, তারপর আপনি বললেন তাই আরো একটি। এভাবে চল্লিশ কবিতা লেখার আকাঙ্খা ও সাহসকে আমি সৈকত বলি।
এখন আমি তেত্রিশে। আমার চোখের গুহায় যাবতীয় বিনয়কে আপনি জ্ঞান ভাবেন। আমার ছদ্মবেশকেই ভাবেন সেনাপতি।
এখন আমি তেত্রিশে। সকল নিস্তব্ধ কালোর ভিতর ফুটে ওঠা যে ভোরে আপনি দেখেন আলোর উরত; অন্তঃসারশুন্য সড়কেই তার বাস্তুভিটা।
এখন আমি তেত্রিশে। আর তেষট্টিতে আপনার প্রস্থান …
আমার এ সকল কথাগুলো কবিতা নয়। আমার এ সমস্থ কথাগুলোর নাম সংসার। আমার এ সকল সৃষ্টির নাম কবিতা নয়। আমার এ সমস্থ সৃষ্টির নাম সমাজ। একে চোখে দেখুন এবং বরাবরের মতো প্রত্যাক্ষাণ করুন। তেত্রিশেই জেনে রাখুন আপনার অনিবার্য সঙ্গীর নাম খন্দকার নয়। তেত্রিশেই জেনে রাখুন আপনার অনিবার্য শত্রুর নাম খন্দকার নয়।
তেত্রিশেই জেনে রাখুন এখন আপনি তেত্রিশে। আর তেতাল্লিশে আমার প্রস্থান …
বার্ণ ইউনিট
পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হলে একদিন এই লাশগুলো হবে
একটি সমাবেশ। নিহত ব্যথা নিয়েই একদিন ঘুমুতে যাবে
মা, স্ত্রী-পরিজন।
চোখের অজুহাতেই একদিন বাঙালি লজ্জা বানাবে।
একদিন এইসব ক্ষতগুলো থেকে জন্ম নিবে গণতন্ত্র।
সংবিধান একদিন মানুষ হবে।
নওগাঁ
আলোর জন্য আমাদের প্রার্থণা ছিল চোখে পড়ার মতো। আমরা কুসুম্বার মিনার থেকে কুড়িয়ে এনেছিলাম স্স্ববাধীন সুর্যোদ্বয়ের মতো এক মুঠো প্রখর রৌদ্র। আমি আর আমার প্রিয় সবুজাভ নগরী। ঘরে ঘরে সে সময় বধুদের রুদ্র অভিমান সহযোগে আলতা ও ধীবরদীঘির চিত্রিত ইতিহাস রান্না হচ্ছিল। আরো ছিল ভীমের প্যান্টির প্রোটোজম আর সোমপুর বিহারে বড় হওয়া রঙধনুর সাতটি রঙের সমন্বয়ে সুস্স্ববাদু সালাদ। এটা ছিল নগর বালিকার দুপুরের মেনু। কিন্তু আমরা লিটন ব্রিজের ওষ্ঠে পড়ে থাকা যুগল লজ্জাও ভুল করে কুড়িয়ে এনেছিলাম। আমাদের কুড়িয়ে আনা রৌদ্রের সাথে রাতের দ্বৈত লজ্জা মিশিয়ে তৈরি হলো একটি গৃহপালিত আগামি। এখন নগরীর বেহায়া মেধাশালা জুড়ে কেবলই নগ্ন উরুর ঘ্রাণ …
মালালা
রাইফেলের কব্জায় সমূহ নরক
জুড়ে কাটে ছেলেবেলা। প্রবল পতন
দেখে দেখে দূরবর্তী নগরের দ্যুতি
চোখের ডানায় বাড়ে বিপন্ন প্রস্তুতি
আফগানে অবিরত ফুলের যতন?
জামদানী জুড়ে যার বোমার সড়ক!
ঘরের উরতে রেখে প্রতিপাদ্য ভোর
উপত্যকায় সহস্র বর্গীর জাহাজ
তার মাঝে স্বরগ্রাম ধ্রূপদী মরদ
নাকফুল খুলে পড়ে বুলেট গারদ
বিচিত্র কৌশল খোলে প্রজ্ঞাবান রাজ?
দৃশ্যের অদৃশ্যে থাকে মানচিত্রচোর!
মৃত্যুর কাঁচুলি খুলে অনাগতকাল
তোমার দুয়ারে দেখো স্বগত সকাল।
পাথরবন্দনা
[পেস্তা, আপনার শোকে আপনি তো যন্ত্রণা দিয়ে দিয়ে কাঁদান পাথর।কিন্তু পাথররানী আপনি কি জানেন, আপনার হুইলচেয়ারটাকে কবি কতটা ভালোবাসে !]
… বহুবিধ শূন্যতা ঘিরে চারদিক রেখে শোকের আলো, নাগরিক বিচ্ছিন্নতা
নিয়ে পরিত্যক্ত জ্যোৎস্না হয়েছ। যমুনার জলে কলোজল খেলাগুলো
কী নিষ্ঠুরের মতো তোমার দীর্ঘশ্বাস হলে, যন্ত্রণার নগরে ফুলেরা সুবাসহীন
বিষাদ উনুনে তোমার সুখগুলো সখি পুড়িয়ে পুড়িয়ে পৃথিবীর সব শোক
শরীরে মাখো। আর সঙ্গমের তাড়াগুলো ধ্বংসের সঙ্গীত শেষে
মৃত্যুশোকের মতো পাথরবন্দনায় পাথরের আত্মা হলে সখি…
আর আমি ? কবিতা লেখার জন্য ক-তো হেঁটেছি…
ফসলের কীর্তন দেখেছি সেইসব হাঁটাহাঁটির দিনে; ফসলের লুট হয়ে
যাওয়াও। পথে পথে রক্তের প্রণয় দেখেছি আর মৃতদের স্বজনের
ক্রন্দনও। যমুনার ঘাটে কিশোরীর উচ্ছল সিনান দেখেছি আবার যমুনায়
যুবতীর আত্মহননও। ডাস্টবিনে টোকায়ের কী করুণ উৎসব খেলা,
বঞ্চিতের ফুটপাথ, পথঘাট- বাড়িঘর হওয়াও। আর শ্বেতশেয়ালের
কাছে আমাদের অর্ধেক আয়ু বিক্রয় হয়ে যাওয়াও দেখেছি হাঁটার সঙ্গীতে…
যান্ত্রিক ব্যস্ততার এই যে এইসব এই ভয়াবহ দুর্গন্ধে পাথররানী আর নাইবা হাঁটলে
হুইলচেয়ারটা খুব বোঝা হলে যুবতীপাথর তুমিই আমার কবিতা হও
আর হুইলচেয়ারটা ইতিহাস…
তোমার ভ্রান্তিগুলো ভেঙে ভেঙে সহানুভূতির সংজ্ঞা
যদি বোঝাতে পারতাম, হায় ! কবিদের ভালবাসা করুণা নয়।
প্রোৎসাহে সেদিন ছিল স্বর্গবাস
নক্ষত্রেশ অলীক তবু আমি কি অরিষ্টসূদন
কেন মোর বাঁশির মায়া …
লুব্ধলোচনে একদা গভীর রাতে নক্ষত্র নারীটি জল চেয়েছিল
অলিঞ্জরে ভয়ানক হিমজল আমার …
নারী, তোমার নৌবিদ্যা জানা আছে? পার করো জলের বিনিময়।
অবারে বসবাস বহুকাল …
অরিত্র ভেঙে গেলে মাঝগাঙে
একটি গোলাপী ত্বক বলেছিল, ‘ভালোবাস’
প্রোৎসাহে সেদিন ছিল স্বর্গে বসবাস …
পুনশ্চ : নক্ষত্রেশ অলীক, তবু চিরপ্রতিক্ষীত কবি নক্ষত্র নারীর মায়ায়।
পাহারাদার
আরব যুবতীর ব্রা’র হুকটা
এইতো খুলে ফেললেন মহাশয়
আজন্ম লোভ এসে তার চোখে
নোঙর ফেললে আহা সুন্দরী
দু’ফোটা অমিয় তাকে দাও।
মাঝপ্রাচ্যের নাভীতে তার লোভগুলো
স্নান সেরে নিম্নমুখী হওয়ায়
আরো দু’ফোটা …
তোমার লিপস্টিকের স্বাদে পশ্চিমা চুম্বন
অস্থিরতার সাঁতার কেটেছে বহুদিন
রক্তের নগরীফটকে
কান পেতে দেখি আজ
অনুগত শয্যায় বসন ভাঙার আওয়াজ …
আরো ক’ফোটা তেষ্টার অমল দিলে গো …
নির্জনপ্রদেশ লোভে
তোমার সালোয়ারের ফিতা
এইমাত্র খুলতে সফল হলেন তিনি
ভয় নেই প্রিয়তমা খোদার কসম
আমাদের লাশগুলো পাহারায় আছি।
কনফেসন
স্বতন্ত্র.
প্রভু ফিরে এসো এবং পুনঃ অধিষ্ঠিত করো তোমার জিকির। বিভক্ত করো আমাকে এবং
পাপ ও শিরকের গজল। আমাকে শরণ করো তোমার ক্ষমার অধিক। আমাকে দীর্ণ করে
এই বুকে দাও আলোর সাম্পান।
এই ধৈর্যচ্যুতি আমাকে নিয়ে যায় পঙ্কিলতায় বারবার
এবং এই প্রাণ ওষ্ঠাগত দমভারী বায়ুর আফিমে …
প্রভু ফিরে এসো; আমাকেও দিয়ে যাও শান্তির প্রভূত লেগুন। আর আমি শৃঙ্খলিত হতে চাই
পুনঃ তোমার অহির মোজেযায়।
সম্পাদক– বোল
সুলতানপুর, নওগাঁ।
ইথার- 01765759915
shahinkhandokar@gmail.com
অসাধারণ বুনন। মুগ্ধপাঠ।