spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদকবিতাশামশাম তাজিল এর কবিতা

শামশাম তাজিল এর কবিতা

সম্পর্ক

আলতাফ, এই যে আমি, তোর ভাই;

এখন আমরা দু’জনেই বন্দী ভিন্ন মানচিত্রে!

আমাদের মাঝে ঝুলে আছে ফেলানির লাশ

মেঘভূত

ভূতের গলিতে কোনো ভূত থাকে না 

এই কথা বলেছে এক ভূত 

কালির দর্শন কভু পায় নি কালিদাস;

মেঘনাদের রাজ্যে কেউ লেখে নাই মেঘদূত 

বৃষ্টি নামের প্রেমিকা  

বলতো আমার চুলে, শরীরে কিসের সুবাস?

–বাতাবি লেবুর 

তুমি হেসে জবাব দিলে, না, বৃষ্টির 

বৃষ্টি নামে আমার কোনো প্রেমিকা ছিলো না,

মুখ থেকে এই কথা না সরতেই তোমার আকাশে মেঘ করে এলো|

প্রভুভক্তি

 ঠাকুরের ডেরায় কোনো কবি ছিলো না

ব্যর্থরা করতো তার বন্দনা, মগজহীন অসামান্য চাটুকার

 জিগির শাসিত জীবনে কিছু নাই,

সর্বাংশে অনুকারিতার কারবারি, তাই

মরফিন নিয়েছি রক্তের স্রোতে, নিজের দৃষ্টিকে রেখেছি পর্দায়

ঢেকে, বড়োই লাজুক শরীর, ব্যর্থতা আমাদের ভাই!  

ঠাকুর ঘরে কলা খেতে খেতে অনুপস্থিতি জানান দেই,

আমি কলা খাই না!

আমাদের ভেতর বাস করতো যে প্রাচীন জাদুকর,

অলৌকিক কবি, তাকে হত্যা করেছে প্রভুভক্তি

গুরুজীর সব কিছুই শ্রেষ্ঠ, বলতে বলতে রবীন্দ্রনাথের

কালো কোট থেকে বের হয়ে আসেন প্রভাতকুমার

অন্তর্লোকে স্বর ও ঈশ্বর

 হাসান মরে আজ ভূত।

কে বলেছে? শরীরটা রেল লাইনে পড়ে আছে,

 হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছে দেবদূত!

 ট্রেন আসে, ট্রেন চলে যায়

 কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে তাকিয়ে থাকি ট্রেনের জানালায়

দেখবো কার মুখ?

 মৃত্যু, ঘুমের মাঝে এসো– যখন আমি কোমল কোনো স্বপ্নে উন্মুখ

‘তুমি’ রাসেলের বিপদে নিরাপদ আশ্রয়

 তুমি কে? কে তুমি? কাটে না সংশয়

আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে খুব ধীরে রাস্তা হই পার

 আমাকে ইশারায় পথ দেখিয়ে দেন ফরহাদ মজহার!

 রাতের ট্রেনে যেনো কেউ কাটা না পড়ে, তেজগাঁও

 রেল লাইনের পাশে বসিয়েছেন চৌকি পাহারার

যমদূত ওপথে এগিয়ে লাভ নাই,

মৃত্যুর আগে ঈশ্বর খুলে দেবেন স্বপ্নের দ্বার

  তুমি সেই পথে এসে,

 ‘নিজের’ জান কবজ করে নিও শেষে

 ট্রেন আসে, শব্দের ভেতর মিশে যায় হাসানের      স্বর

 –ঈশ্বর তুমি মহান, ঈশ্বর

ডাক

সদর উদ্দিন আহমেদ চিশতির ‘মাওলার অভিষেক’ 

পড়তেছিলাম। আম্মা রুমে ঢুকে বললেন, আমারে না দেইখাই পড়তে বইসা গেছ?

আমি উত্তর দিলাম, আপনি ঘুমাইয়া ছিলেন, আমি

একবার তাকাইয়া আমার রুমে চইলা আসছি।

আম্মা বললেন, আমি ঘুমাই নাই। শুয়াছিলাম, ডাক

দিলা না কেন?

আমি ঘুমাইয়া গেলে বুঝি আম্মারে আর ডাকবা না?

 আমার ভেতর কে যেনো খুব কেঁদে উঠলো। আমি

স্পষ্ট শব্দ শুনতে পেলাম। কে কাঁদছে ঠাহর করতে পারলাম না!

দেবীর বুকে

 দেবীর বুকে কোনো শিশু মুখ রাখে না;

 দুধে আর্দ্র নয় পাথরের নির্বাক স্তন |

 –এই কথা জানে না কুমারী !

 ঠোঁটের স্পর্শে স্তনন জাগলে বুকে

 — জানবে সে পুরুষ — সন্তান তোমারই |

মাইদুলের চোখে দেখা প্রেমিকার মুখ

 অঙ্কের খাতায় দার্শনিকতা ফলিয়ে মিলবে না কিছু,

বরং বোনা যাক দুটি চারা, ধানের অথবা গোল মরিচের।

 তুলি হাতে নিলেও আকাশে মেঘ করে,

 জানালায় এসে দাঁড়ায় মৈনাক পাহাড়;

 — উপত্যকা ছাড়িয়ে হেঁটে যায় বালিকা,

তার পায়ের ছাপ ধরে হাঁটে মাইদুল।

সম্পর্ক গেছে অন্য পথে;

ক্যানভাসে ছবি আঁকতে আঁকতে একপশলা বৃষ্টি আমাকে ভিজিয়ে গেলো,

মাইদুল দেখছি মুছছে ক্যামেরার ল্যান্স।

 আজকাল শিশুরাও জানে:

ছবি তোলার জন্য ক্যামেরায় ফিল্ম ভরা লাগে না।

 মাইদুল, চলুন: উজ্জ্বলের পদছাপে বুনে দেই গোল মরিচের চারা।

 দার্শনিকেরা ততক্ষণে গণতন্ত্রের স্তুতি পাঠ করতে করতে

 মুখে ফেনা তুলে ফেলুক, আমরাতো জানি থুতুর বিবিধ ব্যবহার!

ঘুম

 প্রেমিকার সঙ্গে রাত ভালো কাটুক,

— বললেন প্রেমিকা

 ঘুম ভাঙলে দেখি বাতি জ্বলছে তখনো,

 আমার পাশে আমাকে

 অনুকরণ করে বসা ছায়া –আমার মতই একা

শঙ্কা  

ঘুম কেটে কেটে কবিতা লেখার অবসর তলিয়ে যাবে ঘুমে

  শরীর

তাপমাত্রা বেড়ে গেলে মুখেও শ্বাস ফেলতে হয়

বুকের উঠানামায় মুখস্ত করি জ্বরের নামতা

 পরিবর্তন

 নৌকা বাইবার জন্য হাত উত্তম|

 বৈঠা জলের বদলে মাথায়ও চালানো যায়,

 — এই কথা জানতো না নুহের যুগের মানুষ

সততা  

তালা বন্ধ করার আগে সিন্ধুকে রেখে দিতে হয় চাবি!

মূর্খেরা তা পকেটে নিয়ে ঘোরে, কিন্তু যেখানে

সেখানে তালা খোলার চেষ্টা করতে ভোলে না

………

কবিতা নিয়ে ভাবা কবির কাজ নয়; তার কাজ কবিতা লেখা। প্রশ্ন করতে পারেন তবে কি কামার কবিতা নিয়ে ভাববে? হে, আমি তাই চাই, কামার, জেলে, কৃষক – ওরা কবিয়া নিয়ে ভাবুক। জানি জীবন সহজ নয়। কৃষক কতো কিছু ভাবে, সে মাটিতে কান পেতে শোনে বীজের অংকুরোধগমনের শব্দ, বাতাসে কান পেতে ঝড়ের পূর্বাভাস। সে কবিতা নিয়েও ভাবুক। রাতে বন্যায় ফসল ভেসে যাবার চিন্তামুক্ত হয়ে সে বউকে কবিতা শোনাক। কথাগুলো অবাস্তব শোনাচ্ছে? স্বপ্ন স্বপ্ন শোনাচ্ছে? একজন কবি স্বপ্ন ছাড়া আর কি দেখাতে পারেন? কবিতা লেখা খুব স্বস্তিদায়ক কাজ নয়, লেখা হয়ে গেলে কিছু সময়ের জন্য হলেও স্বস্তি মেলে! কিন্তু লেখা বন্ধ হয়ে গেলেও তা খুব পীড়াদায়ক ঠেকে। নিজেকে নিঃশ্বসিত মনে হয়। কবিতা লিখতে হবে তাই জানি, লিখে তৃপ্তি খুঁজি, আরো অতৃপ্তি নিয়ে। কবিতার ভেতর দিয়ে নিজেকেই খুঁজে ফেরা, হয়তো এটাও এক প্রহেলিকা, স্বপ্ন! ঘুমের ভেতর প্রিয় কারো মুখ ভেসে এলে যে ভালোলাগা নিয়ে ঘুম ভাঙে সেই ভালোলাগা খুঁজে ফিরি কবিতায়। আবার কবিতা কেবল ভালোলাগা নয়, সে আমার ঘুম কেটে নিয়ে নিজেকে পরিপুষ্ট করে, আমার প্রেসার বাড়তে থাকে, বাড়ে ক্লান্তি, সেই সঙ্গে স্থুলতা, শরীরের! তবু মন কবিতাই চায়, তবু কবিতা হোক

শামশাম তাজিল জন্ম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার রসুল্লাবাদ গ্রামে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। পেশা অসরকারি কলেজে শিক্ষকতা। নেশা কবিতা আর আড্ডা। প্রকাশিত গ্রন্থ. : আদম পাহাড়(২০১৬)। সম্পাদিত কাগজ: তিতাসনামা

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ